
মুসলমানদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রে পুলিশি গোপন নজরদারির ঘটনা প্রকাশ হয়ে পড়ার পর এখন এফবিআইয়ের কর্মকর্তারা মুসলিম নেতাদের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার চেষ্টা করছেন। এ জন্য নিউ জার্সির এফবিআইর শীর্ষ কর্মকর্তা মাইকেল ওয়ার্ড প্যাটারসন মসজিদ সফরে যাওয়ার কথা ছিল। কিন্তু মসজিদ কর্তৃপক্ষের অস্বীকৃতির কারণে তিনি ওই সফর স্থগিত করেন। ওই মসজিদটি পুলিশি গোপন নজরদারিতে রয়েছে বলে গোপন তথ্য সমপ্রতি ফাঁস হয়ে পড়ে। এ খবর দিয়েছে বার্তা সংস্থা এপি। ওদিকে সমপ্রতি নিউ ইয়র্ক টাইমস একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে। তাতে বলা হয়, আমেরিকার মুসলমানদের ওপর নজরদারি করতে নিউ ইয়র্কের পুলিশ বিভাগের একটি বিশেষ কর্মসূচি চালু করা হয়েছে। এ কর্মসূচি বাস্তবায়নে হোয়াইট হাউসের লাখ লাখ ডলার খরচ করা হচ্ছে বলে এপি এক রিপোর্টে জানিয়েছে। রিপোর্টে বলা হয়েছে, মাদক সংক্রান্ত অপরাধ কমানোর লক্ষ্যেই হোয়াইট হাউসের এ অর্থ বরাদ্দ করা হতো। কিন্তু ২০০১ সালের সেপ্টেম্বরের সন্ত্রাসী হামলার পর বুশ এবং ওবামা প্রশাসন নিউ ইয়র্ক ও নিউজার্সির এইচআইডিটিএ বলে পরিচিত হাই ইনটেনসিটি ড্রাগ ট্রাফিকিং এরিয়া প্রোগ্রামের মাধ্যমে সাড়ে তের কোটি ডলার প্রদান করেছে। এ অর্থের বেশ কিছু অংশ সাদা পোশাকে মুসলমানদের ওপর নজরদারি করা পুলিশ কর্মকর্তাদের পেছনে ব্যয় করা হয়েছে বলে রিপোর্টে দাবি করা হয়েছে। তবে কর্মসূচিটি খুব একটা নজরদারিতে নেই বলে ঠিক কি পরিমাণ অর্থ এ খাতে দেয়া হয়েছে সেটা নিশ্চিতভাবে জানা যায়নি। মুসলমান কলেজ শিক্ষার্থী, মসজিদের বক্তৃতা এবং তাদের বিভিন্ন সামাজিক কর্মকাণ্ডের তথ্য সংরক্ষণের উদ্দেশ্যে কম্পিউটার কেনার জন্যও হোয়াইট হাউস অর্থ ব্যয় করেছে বলে রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে। নিউ ইয়র্ক পুলিশ কমিশনার রেমন্ড কেলি যখন এ ব্যাপারে নানা তৎপরতা নথিভুক্ত করেছেন তখন তার বিবৃতিও এইচআইডিটিএ’র কম্পিউটারে তৈরি করা হয়েছে। পুলিশের গোপন নথি এবং সাবেক ফেডারেল এবং স্থানীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এপি হোয়াইট হাউসের এ অর্থ ব্যয়ের বিষয়টি নিশ্চিত হয়েছে। ডিজিটাল স্বাক্ষর সংবলিত বেশ কিছু নথিও এপির হাতে এসেছে যাতে প্রতীয়মান হচ্ছে সেগুলো এইচআইডিটিএ’র কম্পিউটারে তৈরি এবং সংরক্ষণ করা হয়েছে। এইচআইডিটিএ’র কর্মসূচিটি হোয়াইট হাউসের ন্যাশনাল ড্রাগ কন্ট্রোল পলিসির অফিস থেকেই তত্ত্বাবধায়ন করা হয়। আমেরিকান মুসলমানদের ওপর নজরদারিতে মার্কিন প্রশাসন বলতে গেলে সিদ্ধহস্ত। প্রশাসনের পক্ষ থেকে বলা হয়, সমগ্র জনগোষ্ঠীকে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার সন্দেহের দৃষ্টিতে দেখা উচিত নয়। ওবামা প্রশানের পক্ষ থেকে অবশ্য এ ধরনের অর্থ সরবরাহের কথা অস্বীকার করা হয়েছে। হোয়াইট হাউসও গত সপ্তাহে এ ব্যাপারে কোন মন্তব্য করতে অস্বীকার করেছে। ওবামার শীর্ষ সন্ত্রাস বিষয়ের উপদেষ্টার জন ব্রেনান গত বছর নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের তৎপরতাকে বীরত্বের বলে উল্লেখ করে প্রশংসা করেছিলেন। তবে তিনি এ ব্যাপারে বিস্তারিত কিছু বলেননি। নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগকে বিশাল অঙ্কের তহবিল সরবরাহকারী এবং মুসলমানদের সঙ্গে পুলিশের সম্পর্ক স্থাপনে সহযোগিতাকারী হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগের মন্ত্রী জেনেট নেপোলিটানো গত কয়েক মাসে বেশ কয়েকবার চেষ্টা করা সত্ত্বেও এ বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। আইন মন্ত্রণালয়ের শীর্ষ নাগরিক অধিকার রক্ষাকারী আইনজীবী টম পেরেজও নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগকে নিয়ে প্রশ্নের জবাব দিতে বেশ কয়েকবার অস্বীকৃতি জানিয়েছেন। ওয়াশিংটনের বাইরেও নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের এ তৎপরতা নিয়ে গত সপ্তাহে বেশ সমালোচনা হয়েছে। কলম্বিয়ার ইয়েলের কলেজ প্রশাসকসহ অন্যরাও মুসলমান শিক্ষার্থী এবং তাদের স্কুলের ওয়েবসাইটে অনুপ্রবেশের কারণে নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের তীব্র সমালোচনা করেছেন। নিউজার্সির গভর্নর এবং সেখানকার সবচেয়ে বড় শহরের মেয়রও নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের বিরুদ্ধে বিস্তৃত নজরদারির অভিযোগ করেছেন। মাদকের বিরুদ্ধে অভিযান জোরদারের জন্য হোয়াইট হাউসের এইচআইডিটিএ কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়েছিল। মাদক অপরাধীদের রোধ করতে পুলিশকে সহযোগিতার লক্ষ্যে গত দশকে স্থানীয় কর্তৃপক্ষকে ২৩০ কোটি ডলার দেয়া হয়েছিল। ১১ই সেপ্টেম্বরের হামলার পর আইন প্রয়োগকারী সংস্থাকে ওই অর্থ সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কাজে খরচ করার অনুমতি দেয়া হয়েছে। তবে এইচআইডিটিএ’র কি পরিমাণ অর্থ গোয়েন্দা বিভাগের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে সেটা স্পষ্ট নয়। এ কর্মসূচির জন্য অর্থ অনুমোদনকারী কংগ্রেসের কাছে এ ব্যাপারে কোন সুনির্দিষ্ট তথ্য নেই। ২০০৬ থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত কংগ্রেসের কাছে দেয়া নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের নিউ ইয়র্ক-নিউ জার্সি অঞ্চলের বার্ষিক রিপোর্টেও এ ব্যাপারে কোন উল্লেখ নেই। এপি’র পক্ষ থেকে হোয়াইট হাউসের অর্থ এবং গোয়েন্দা বিভাগ সম্পর্কে দু’দফা প্রশ্ন করে মেইল করা হলেও নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের মুখপাত্র পল ব্রাউন কোন জবাব দেননি। নিউ ইয়র্ক এবং নিউ জার্সির এ কর্মসূচির পরিচালক চাউন্সি পার্কার অবশ্য বলেছেন, হোয়াইট হাউস থেকে বরাদ্দ করা বেশির ভাগ অর্থই মাদকের বিরুদ্ধে লড়াইয়ের কাজে ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের গোয়েন্দা কাজে ব্যবহৃত যানবাহনের খাতে ১৩ লাখ ডলারের কম ব্যয় করা হয়েছে। পার্কার বলেন, নিউ ইয়র্ক বা অন্য কোন স্থানে সন্ত্রাসী হামলা প্রতিহত করার অংশ হিসেবেই তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের কাজে এসব গাড়ি ব্যবহার করা হয়েছে। তিনি বলেন, সন্ত্রাস বিরোধী কোন সুনির্দিষ্ট কাজে যদি এ অর্থ ব্যবহার করা হয়ে থাকে তবে সেটা হয়েছে এ যানবাহন খাতেই। তবে সাবেক কর্মকর্তারা এপিকে বলেছেন, এসব যানবাহন মূলত ব্যবহার করা হয়েছে বিভিন্ন মসজিদের ছবি তোলা এবং সেখানে যাতায়াতকারীদের লাইসেন্স প্লেটের রেকর্ড সংরক্ষণের কাজে। যানবাহন খাতে হোয়াইট হাউসের অর্থ ব্যবহার করা ছাড়াও গোয়েন্দা বিভাগের অফিসের ভাড়া পরিশোধের জন্যও হোয়াইট হাউস অর্থ ব্যয় করেছে। যেসব মুসলমান নিজের নাম পরিবর্তন করে আমেরিকর উপযোগী নাম গ্রহণ করেছেন তাদের তালিকাও পুলিশ সংগ্রহ করে এইচআইডিটিএ’র কম্পিউটার সার্ভারে সংরক্ষণ করেছে। গত অক্টোবর পর্যন্তও এ প্রক্রিয়া অব্যাহত ছিল বলে কর্মকর্তারা জানিয়েছেন। মুসলিম এলাকাতে নজরদারি করা গোয়েন্দা কর্মকর্তাসহ নিউ ইয়র্ক পুলিশ বিভাগের অনেক গোয়েন্দা কর্মকর্তারই এইচআইডিটিএ’র ইমেইল ঠিকানা রয়েছে। পুলিশ কমিশনারকে অবহিত করার সব তথ্যই এইচআইডিটিএ’র কম্পিউটারে তৈরি করা হতো। পুলিশের তথ্যদাতারা মসজিদে কি শুনেছে এবং কোন কোন মুসলমান পণ্ডিতরা কোন সম্মেলনে যোগ দিয়েছেন সেসব তথ্যই এতে উল্লেখ করা হতো। এপির হাতে আসা ২০০৭ সালের এক অভ্যন্তরীণ নথিতে দেখা গেছে, যখন কোন পুলিশ কর্মকর্তাকে কোন গোপন তথ্যদাতাকে অর্থ প্রদান করতে হতো তখন তাকে এইচআইডিটিএ’র ওয়েবসাইটে ওই তথ্য দাতার ব্যাপারে তথ্য সংরক্ষণ করতে হতো।
No comments:
Post a Comment