Tuesday, March 20, 2012

জীবন বাঁচাতে ২২ বছর মাটির গর্তে





















ইরাকের প্রয়াত প্রেসিডেন্ট সাদ্দাম হোসেনের আমলে পাওয়া মৃত্যুদণ্ড থেকে প্রাণ বাঁচাতে দীর্ঘ ২২টি বছর জাওয়াদ আল সাম্মারি (৫০) তার ঘরের মেঝের নিচে গর্ত খুঁড়ে সেখানে লুকিয়ে ছিলেন। সরকারবিরোধী ইসলামিক দাওয়া পার্টির সদস্য হিসেবে কাজ করার অপরাধে ১৯৭৯ সালে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তাকে। প্রাণদণ্ড থেকে বাঁচতে তিনি তার মাকে সঙ্গে নিয়ে ১ বছরেরও বেশি সময় বিভিন্ন স্থানে আত্মগোপনে ছিলেন। কিন্তু, সাদ্দাম হোসেনের অনুগত সেনাদের চোখে ধুলো দিতে নতুন পন্থা খুঁজতে লাগলেন। শেষমেশ সাম্মারি ও তার মার জন্য নিজ ঘরের মেঝে খুঁড়তে শুরু করেন। মাত্র আধা মিটার প্রস্থ ও ২ মিটার গভীর একটি গর্ত তৈরি করে ফেলেন তিনি। সঙ্গে নিলেন একটি ছোট কম্বল, রান্নাবান্নার কিছু সরঞ্জাম, একটি রেডিও ও পবিত্র কোরআন। এরপর মাকে নিয়ে সেখানেই থাকতে শুরু করে দিলেন। সাম্মারির মাও কম যান না। তিনি গর্তে একটি প্লাস্টিকের নলের ব্যবস্থা করেন, যাতে গর্তে বাতাস আসা-যাওয়া করতে পারে। কিছুদিন পরপর পরিবারের সদস্যরা তাদের সঙ্গে দেখা করতো এবং খাবার ও পানীয় সরবরাহ করতো। বার্তা সংস্থা এএফপি’র কাছে সাম্মারি বলেন, ২ যুগ গর্তে অবস্থান করা ছিল এক দুঃসহনীয় ব্যাপার। এমনকি এ সময়ে তার ভাইয়ের মৃত্যুদণ্ড হয়। কিন্তু ভাইয়ের জানাজায় অংশ নিতে পারেননি সাম্মারি। এদিকে গর্তে হঠাৎ একবার অসুস্থ হয়ে পড়লেন সাম্মারির বৃদ্ধা মা। খাবার ও পানির তীব্র সঙ্কট চলছিল। ভেবেছিলেন ছোট গর্তটিই হবে তার মায়ের শেষ ঠিকানা। তবে, তার আশঙ্কা ভুল প্রমাণিত হয়। বেঁচে যান তার মা। সাম্মারির স্বাস্থ্যেরও অবনতি ঘটতে থাকে। কয়েক বছরের মধ্যেই একে একে পড়ে যায় সব দাঁত। তবে নামাজ পড়ে, কোরআন তেলাওয়াত করে আর রেডিও শুনে কোনমতে কেটে যায় একে একে ২২টি বছর। ২০০৩ সালে পতন হয় সাদ্দামের। তখনই গর্ত থেকে বের হয়ে আসেন সাম্মারি। কখনও তিনি এমন দিনের কথা স্বপ্নেও ভাবেননি। নিজেকে মৃত মানুষ মনে করতেন। ৭ বছর আগে গর্তের বাইরে বেরিয়েই একটি চাকরি জোগাড় করে নেন তিনি। তবে দুঃখের বিষয় হলো, ইরাকি সরকার এখনও তাকে সাজা থেকে মুক্তি দেয়নি। এমনকি রাজনৈতিক বন্দি হিসেবেও স্বীকৃতি পাননি তিনি। গর্ভধারিণী মা-ই তার কষ্টকর দিনগুলোর একমাত্র সাক্ষী। এছাড়া আর কোন প্রমাণ নেই সাম্মারির কাছে।

No comments:

Post a Comment