
সাবেক বৃটিশ প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচার এবং সাবেক মার্কিন
প্রেসিডেন্ট রোনাল্ড রিগ্যানের মধ্যকার সম্পর্ক ছিল সাপে নেউলে।
ব্যক্তিত্বের ক্ষেত্রেও দু’জনের মধ্যে যথেষ্ট বৈসাদৃশ্য ছিল। বৃটিশ
ঐতিহাসিক অধ্যাপক রিচার্ড আলডোয়াসের লেখা একটি বইতে তাদের মধ্যকার এ বৈরী
সম্পর্কের বিষয়টি তিনি তুলে ধরেছেন। তবে নিজেদের মধ্যে এমন সম্পর্ক থাকা
সত্ত্বেও আশির দশকের বিশ্ব রাজনীতিতে তাদের সম্পর্ক আধিপত্য বজায় রেখেছিল।
সম্মিলিত প্রচেষ্টায় তারা তৎকালীন সোভিয়েত ইউনিয়নের পতন ঘটাতে বাধ্য
করেছিলেন। এতদিন মনে করা হতো তাদের দু’জনের মধ্যকার সম্পর্ক বেশ স্বাভাবিক
এবং বন্ধুত্বপূর্ণ ছিল। কিন্তু রিচার্ড অ্যালডোয়াস লিখেছেন, তাদের মধ্যকার
সম্পর্ককে কেবল দীর্ঘদিনের বিবাহিত জীবনের তিক্ত সম্পর্ক বা তার চেয়েও
খারাপ কিছুর সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। থ্যাচার ও রিগ্যানের সম্পর্ককে বেশ
কাছে থেকে দেখেছেন এমন বেশকিছু ব্যক্তির মতামত এবং বেশকিছু অপ্রকাশিত নথি
প্রকাশিত হবার পর অ্যালডোয়াস তাদের সম্পর্কের ব্যাপারে অনেক তথ্য তুলে
ধরেছেন। বৃটিশ স্বার্থের ব্যাপারে রিগ্যানকে সহযোগী মিত্র মনে না করে একজন
আপদ বলেই বিবেচনা করতেন থ্যাচার। ওয়াশিংটনে দায়িত্ব পালনকারী সাবেক এক
বৃটিশ দূত বলেছেন, প্রেসিডেন্ট রিগ্যান সম্পর্কে থ্যাচারের সত্যিকারের
মনোভাবের কথা যদি আমি প্রকাশ করতাম তাহলে তা বৃটিশ-মার্কিন সম্পর্কে
নেতিবাচক প্রভাব ফেলতো। তবে তাদের মধ্যকার সম্পর্ক এমন হলেও বরাবরই একে
অপরের প্রতি প্রবল শ্রদ্ধাবোধ ছিল। ১৯৭৫ সালে ক্যালিফোর্নিয়া থেকে মার্কিন
প্রেসিডেন্ট প্রার্থী রিগ্যানের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেছিলেন মার্গারেট থ্যাচার।
একজন প্রত্যক্ষদর্শী ওই সাক্ষাতের ব্যাপারে বলেছেন, তারা তখন এমনভাবে আলাপ
করছিলেন যেন দীর্ঘদিনের বন্ধু। কিন্তু আসলে তাদের মধ্যে স্টাইল এবং
ব্যক্তিত্বের দিক থেকে যথেষ্ট ভিন্নতা ছিল। রিগ্যান সব সময় সংক্ষিপ্ত এবং
হালকাভাবে যে কোন বিষয় মোকাবিলা করতেন। আর থ্যাচার ছিলেন পলিসিনির্ভর এবং
গভীরভাবে বিশ্লেষণ ক্ষমতার অধিকারী। নিজেদের মধ্যে সামঞ্জস্য না থাকলেও
দু’দেশের প্রতিনিধি হিসেবে বাইরে তারা নিজেদের গ্রহণযোগ্য করেই উপস্থাপন
করতেন। দু’জনের মধ্যে প্রথমবারের মতো প্রকাশ্য বিরোধ দেখা দিয়েছিল
যুক্তরাষ্ট্রের প্রযুক্তিগত যন্ত্রপাতি সরবরাহের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা
আরোপের মাধ্যমে। বাহ্যত কমিউনিস্ট পোল্যান্ডের সমালোচকদের শায়েস্তা করতে এ
পদক্ষেপে নেয়ার কথা বলা হলেও এর প্রকৃত কারণ ছিল মস্কোর বিরুদ্ধে নিজের
অস্তিত্ব জাহির করা। যুক্তরাষ্ট্রের এ নিষেধাজ্ঞার ফলে যুক্তরাষ্ট্রের
কোম্পানিগুলো ট্রান্সসাইবেরিয়ান গ্যাস পাইপলাইন নির্মাণে ২০০ মিলিয়ন পাউন্ড
ক্ষতির মুখে পড়ে। থ্যাচার অবশ্য এর প্রতিবাদে ওয়াশিংটনের বিরুদ্ধে ক্ষোভ
ঝেড়েছিলেন। ১৯৮২ সালে ফকল্যান্ডে আর্জেন্টিনার আগ্রাসনের সময় তাদের মধ্যে
দ্বিতীয়বারের মতো মতবিরোধ হয়েছিল। থ্যাচার কারও পরামর্শ না মেনেই সেখানে
অভিযান অব্যাহত রেখেছিলেন। রিগ্যান প্রশাসন ফকল্যান্ডস যুদ্ধে বৃটেনকে
সহযোগিতা করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছিল। কিন্তু বৃটিশ বাহিনী আর্জেন্টিনা
বাহিনীকে পরাজিত করার মাধ্যমে থ্যাচার বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছিলেন তিনি
উপেক্ষা করার পাত্রী নন। রিগ্যানও অবশ্য তখন থ্যাচারের ভূমিকার প্রশংসা না
করে পারেননি। থ্যাচারের সঙ্গে রিগ্যানের সম্পর্কের ব্যাপারে তার নিজের
মনোভাব ছিল- তিনি একজন নারী। তিনি অনেক কথা বলতে চান। তাই তিনি (রিগ্যান)
তাকে তার (থ্যাচার) নিজের মতো করে কাজ করতে দিতেই স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন।
No comments:
Post a Comment