Thursday, April 12, 2012

বাকি টাকা গেল কোথায়?

Source: http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=40404:2012-04-11-18-07-44&catid=48:2010-08-31-09-43-22&Itemid=82
রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদারের গাড়িতে ছিল চার কোটি ৭০ লাখ টাকা। এপিএস-এর ঘনিষ্ঠ সূত্র থেকেই জানা গেছে এমন তথ্য। অথচ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীসহ বিভিন্ন মাধ্যম থেকে পাওয়া তথ্যে জানা গেছে, মুচলেকা দেয়ার সময় বিজিবি’র কাছে বলা হয়, গাড়িতে ছিল মোট ৭০ লাখ টাকা। তাই এখন চার কোটি টাকার গরমিল স্পষ্টত দেখা যাচ্ছে। বাকি টাকা কোথায় গেল? এমন নানা প্রশ্ন এখন চারদিকে ঘুরপাক খাচ্ছে। সদ্য ৩৫ লাখ টাকা দিয়ে কেনা নিজের লেটেস্ট মডেলের গাড়িটি রেখে মন্ত্রীর দপ্তরের গাড়িটিকে টাকা লেনদেনের নিরাপদ যানবাহন হিসেবে মনে করেছিলেন এপিএস। এজন্য নিজের গাড়ি রেখে তিনি মন্ত্রীর দপ্তরের গাড়ি নিয়ে যান। সংশ্লিষ্ট একাধিক সূত্র মতে, আটক হওয়া গাড়িতে চার কোটি ৭০ লাখ টাকা ছিল। ওমর ফারুক জানিয়েছিলেন ২৫ থেকে ৩০ লাখ টাকার কথা। অথচ একেক সময় একেক কথা বলছেন তিনি। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, রেলওয়েতে ওয়েম্যান, নাম্বার টিকার, খালাসি, জুনিয়র অডিটরসহ বিভিন্ন পদে ৭৫০০ লোক নিয়োগ চলছে। এ নিয়োগকে কেন্দ্র করে শুরু হয়েছিল ব্যাপক নিয়োগ-বাণিজ্য। চাকরিপ্রার্থীর কাছ থেকে এক থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত ঘুষ নেয়া হয়। ওই ঘুষের টাকা সংগ্রহের দায়িত্বে ছিলেন রেলওয়ের পূর্বাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার ইউসুফ আলী মৃধা ও পশ্চিমাঞ্চলের জেনারেল ম্যানেজার তোফাজ্জেল হোসেন। পূর্বাঞ্চলের ঘুষের টাকারই একটি অংশ নিয়ে তারা মন্ত্রীর বাসায় যাচ্ছিলেন। ওদিকে এপিএসের এ টাকা প্রসঙ্গে সারা দেশে ব্যাপক আলোড়নের সৃষ্টি হয়। মন্ত্রী, মন্ত্রী পদমর্যাদায় প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টা ও প্রতিমন্ত্রীরা এ নিয়ে খোঁজ খবর নেন। কোন কোন মন্ত্রী ও প্রতিমন্ত্রীকে তৃপ্তির ঢেকুর তুলতে শোনা গেছে। তারা বলেন, দুর্নীতিবাজের সব সময় শাস্তি পাওয়া উচিত। এপিএস কার স্বার্থে দুর্নীতি করেছে এটা এখনই দেখা উচিত।
এপিএসকে বরখাস্ত করলেন সুরঞ্জিত: অর্থ কেলেঙ্কারির পর সমালোচনার মুখে নিজের সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) ওমর ফারুক তালুকদারকে বরখাস্ত করেছেন রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত। রেলমন্ত্রীর একান্ত সচিব মো. আখতারুজ্জামান গতকাল তথ্যটি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, তাকে (ফারুক) সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে। বিকালে চিঠি জারি করা হয়েছে, এটা আমিই স্বাক্ষর করেছি। বুধবার (গতকাল) সকাল থেকে তা কার্যকর হয়েছে। এর আগে গত সোমবার রাতে ফারুককে বহনকারী একটি গাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ টাকা উদ্ধারের পর তা নিয়ে বেশ গুঞ্জন চলছে, সমালোচনায় পড়েছেন দীর্ঘ রাজনৈতিক জীবনে এই প্রথম মন্ত্রী হওয়া সুরঞ্জিতও। ওই টাকার উৎস এবং তাদের আটক হওয়ার খবর নিয়ে মন্ত্রী স্পষ্ট কিছু না বললেও তিনি ওই ঘটনার জন্য গাড়ির চালককে দায়ী করেছেন।
এপিএসের নানা সম্পদ ও যে কারণে বিগড়ে যান চালক: গাড়িচালক আলী আজম এক লাখ টাকা চেয়েছিলেন। এর মধ্যে ফারুক তাকে ৫০ হাজার টাকা ভাগ দেয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। কিন্তু তারা চালককে ১০ হাজার টাকা দেন। এ নিয়ে পিএস ও চালকের মধ্যে বাগবিতণ্ডা হয়। এতে ক্ষিপ্ত হয়ে চালক গাড়িটি বিজিবি’র সামনে নিয়ে যায়। ওদিকে এপিএস ওমর ফারুক কোটি কোটি টাকার সম্পত্তির মালিক। মোহাম্মদপুরে রয়েছে তার বাড়ি। বর্তমান মহাজোট সরকার ক্ষমতাসীন হওয়ার পরই তিনি এ বাড়ি কেনেন। তার রয়েছে লেটেস্ট মডেলের গাড়ি। নিজের গ্রামের বাড়ি ছাড়াও দেশের বিভিন্ন স্থানে তার জায়গা রয়েছে।
যেসব পদ নিয়ে টাকা সংগ্রহ: রেলওয়েতে সহকারী লোকোমোটিভ মাস্টার পদে ১৮২, অফিস সহকারী পদে ৪১২, খালাসি পদে এক হাজার ৪৪১, সুইপার পদে ২৪৮, ট্রলিম্যান পদে ১৪৩, ট্রেড অ্যাপ্রেন্টিস পদে ৪০০, চৌকিদার পদে ১১২, এটেডেন্ট পদে ১৪৩ এবং জুনিয়র অডিটর পদে ১২৪ জনের নিয়োগ নিয়েই টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে। ওদিকে পূর্বাঞ্চলীয় ও পশ্চিমাঞ্চলীয় রেলওয়ের ৬৮ পদে ৭২৭৫ জন কর্মচারী নিয়োগে অনিয়ম হচ্ছে বলে সরকারের বিভিন্ন দপ্তরে লিখিত অভিযোগ করেছিলেন রেলওয়ে সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি মোহাম্মদ আবদুল খালেক। এ ছাড়া লোক নিয়োগে অনিয়মের কথা উল্লেখ করে গত ২৫শে ডিসেম্বর রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্তকে রেজিস্টার্ড ডাকযোগে একটি অভিযোগপত্র পাঠান ভিশন-২০২১ ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন নাগরিক ফোরামের মহাসচিব মোহাম্মদ মাসুদ চৌধুরী।

No comments:

Post a Comment