নোবেলপ্রাপ্তির সংবাদ আমার হৃদয়ের দরজা খুলে দিয়েছিল

শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার ২০ বছরও পরে নরওয়ের
অসলোতে ঐতিহাসিক ভাষণ দিলেন মিয়ানমারের গণতন্ত্রের নেত্রী অং সান সুচি।
নোবেলপ্রাপ্তি উপলক্ষে দেয়া গতকালের ভাষণে তিনি বললেন, শান্তিতে নোবেল
পুরস্কার আমার বাস্তব বোধকে পুনঃপ্রতিষ্ঠিত করেছে। রেডিওতে প্রথম যখন শুনতে
পাই নোবেল পুরস্কার বিজয়ের কথা তখন আমার কাছে তা অবাস্তব মনে হয়েছিল। তবে
তা আমার হৃদয়ের দরজা খুলে দিয়েছিল। গতকাল তিনি অসলোতে ভাষণ দেন। এ সময় তিনি
মিয়ানমারের পরিবর্তনে পশ্চিমাদের সমর্থন ও তাদের অবদানের কথা স্মরণ করেন।
নানা কারণে তার এই ভাষণ ঐতিহাসিক। ১৯৯১ সালে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার
পাওয়ার পর তাকে দেশ থেকে বের হতে দেয়নি সামরিক জান্তা অথবা রাজনৈতিক কৌশল
হিসেবে তিনি দেশের বাইরে বের হননি। এরপর কেটে গেছে প্রায় দু’দশক। এ সময়ের
বেশির ভাগ সময় সুচি ছিলেন গৃহবন্দি না হয় বন্দি। এবার মিয়ানমারে রাজনৈতিক
সংস্কারের ফলে তিনি দীর্ঘ সময় পর দেশের বাইরে সফর করছেন। নরওয়েকে বলা হয়,
বিশ্বের বাঘা বাঘা কূটনীতিকদের স্থান। সেই অসলোতে তিনি পৌঁছে গেছেন
শুক্রবার। তার মুখ দিয়ে কি বাণী বের হয় তা শোনার জন্য বিশ্বের কোটি কোটি
মানুষ উৎসুক ছিলেন। শুক্রবার তিনি সুইজারল্যান্ড থেকে নরওয়ে পৌঁছার পর
জাতীয় রাজনৈতিক নেতা, আর্টিস্টরা তাকে উষ্ণ অভিনন্দন জানান। নরওয়ের
প্রধানমন্ত্রী জেন্স স্টোলটেনবার্গ এরপর সুচিকে তার সরকারি বাসভবনে
আমন্ত্রণ জানান। এরপর শুক্রবারই তারা রাষ্ট্রীয় ভাবধারার নৈশভোজে যোগ দেন।
গতকাল সুচি তার নোবেল ভাষণে গৃহবন্দি থাকার দিনগুলো সম্পর্কে স্মৃতিচারণ
করেন। বলেন, যখন আমি গৃহবন্দি ছিলাম আমার কাছে মনে হতো আমি এই বাস্তব
দুনিয়ার আর কোন অংশ নই। তাই নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হয়ে আর একবার বাস্তবতা
অনুধাবন করলাম। এটা আমাকে আরও পিছনে মানুষের সমাজে নিয়ে গেছে। আমরা
মিয়ানমারে যখন গণতন্ত্র ও মানবাধিকারের জন্য লড়াই করছিলাম তখন আমাদেরকে কেউ
ভুলে যান নি। বিশ্ব সমপ্রদায় দীর্ঘদিন নিঃসঙ্গ হয়ে থাকা মিয়ানমারের বিষয়ে
যে পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে তাকে তিনি স্বাগত জানান। তিনি বলেন, আন্তর্জাতিক
সমপ্রদায় দৃঢ়তার সঙ্গে চেষ্টা করেছে। তারা আমার দেশকে সঠিক পথে সাড়া দিতে
বাধ্য করেছে। মিয়ানমারের রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য সামাজিক ও অর্থনৈতিক
অগ্রগতিকে সামনে এগিয়ে নিতে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে শক্তিশালী করতে হবে। এ
জন্য আমি মিয়ানমারের জন্য সহায়তা ও বিনিয়োগ আহ্বান জানাবো। ওদিকে যৌথ
সংবাদ সম্মেলনে নরওয়ের প্রধানমন্ত্রী স্টলটেনবার্গ প্রশংসা করেন সুচির।
তিনি বলেন, আপনি আপনার দেশের গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে জীবন উৎসর্গ
করেছেন। আপনি আমাদের সবার কাছে অনুপ্রেরণার উৎস। মিয়ানমারে যে অগ্রগতি
হয়েছে তা উল্লেখ করার মতো।
No comments:
Post a Comment