Saturday, July 21, 2012

মিশরে নারীদের ভিন্নধর্মী টিভি চ্যানেল

গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে মিশরে হোসনি মুবারকের পতনের পর সেখানে সর্বত্রই পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। মুবারক পরবর্তী মিশরে পা থেকে মাথা পর্যন্ত কালো বোরকা আবৃত নারী সমাজই যেন সেখানকার সংস্কৃতিক অভ্যুত্থানের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছেন। এখন তারা নতুন চালু হওয়া একটি টেলিভিশনে সংবাদ পাঠ এবং উপস্থাপনেরও দায়িত্ব নিচ্ছেন। সমপ্রতি প্রচারে আসা মারিয়া টেলিভিশনের জন্য ইসলামিক মূল্যবোধে অনুপ্রাণিত বোরকা পরা নারীদেরই নিয়োগ দেয়া হয়েছে। নতুন এই চ্যানেলটি যেন পুরুষদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করছে। সেখানকার ফোন অপারেটর থেকে শুরু করে ক্যামেরার সামনে, নেপথ্যে দায়িত্ব পালনকারী সবাই আপাদমস্তক বোরকা পরিহিত নারী। সমপ্রচারে আসা এ চ্যানেলটিকেই মিশরে মুবারক পরবর্তী সামাজিক পরিবর্তনের প্রতীক হিসেবে বিবেচনা করা হচ্ছে। মুবারক পরবর্তী বর্তমান মিশর ইসলামিক মূল্যবোধের প্রশ্নে আগের চেয়ে অনেক বেশি কট্টরপন্থি। ঐতিহ্যগতভাবে মিশরের সমাজ ব্যবস্থা রক্ষণশীল এবং মুসলমান অধ্যুষিত হলেও এর আগে শিক্ষাসহ চাকরির ক্ষেত্রে বিশেষ করে টেলিভিশনে কাজ পাওয়ার ক্ষেত্রে হিজাব পরিহিত নারীরা বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ রয়েছে। কোন কোন ক্ষেত্রে হিজাব ব্যবহারকারীকে ইউনিভার্সিটিতে পরীক্ষা দেয়ারও অনুমতি দেয়া হতো না বলেও অভিযোগ রয়েছে। মারিয়া টেলিভিশনের প্রধান এল-শেখা সাফা রেফাই দাবি করেছেন, গণঅভ্যুত্থানের মাধ্যমে হোসনি মুবারকের পতনের পর দেশ কতটা এগিয়েছে সেটার প্রমাণ হচ্ছে এই চ্যানেলটির অস্তিত্ব। সংবাদ পরিবেশনের সময় নেকাব ব্যবহারের বিষয়ে তিনি বলেন, শারীরিক ভাষায় ভাব বিনিময়ের জন্য এ পদ্ধতি খুব একটা কার্যকর হবে না বলে আমাকে বলা হয়েছিল। তবে সংবাদ পরিবেশনকারীর গলার আওয়াজের মাধ্যমে তিনি তার আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করতে পারেন। তিনি বলেছেন, পূর্ণাঙ্গভাবে ইসলামিক পোশাক পরে টেলিভিশনে উপস্থিত হয়ে তিনি দেখাতে চান যে, নেকাব পরা অবস্থাতেও নারীরা সফল হচ্ছেন। কায়রোর প্রখ্যাত আমেরিকান ইউনিভার্সিটি থেকে স্নাতক ডিগ্রি অর্জনের পর কেবল নেকাব ব্যবহার করার কারণে আবীর শাহীন উপযুক্ত কোন চাকরি পাচ্ছিলেন না। কিন্তু এখন তিনি মারিয়া টিভিতে চাকরি পেয়েছেন। তিনি আশা করছেন, এবার মিশরের জনগণের মধ্যে নেকাব ব্যবহার নিয়ে যে বিভ্রান্তি রয়েছে, সেটা চিরতরে দূর হয়ে যাবে। শাহীন বলেছেন, নেকাব পরা নারীরা যে কেবল ধর্মপরায়ণ গৃহবধূই হতে পারে, সেটা মনে করা ঠিক নয়। তিনি একজন ডাক্তার, একজন অধ্যাপিকা বা একজন প্রকৌশলীও হতে পারেন। টেলিভিশনে উপস্থাপনার ক্ষেত্রে শারীরিক ভাবভঙ্গি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। কিন্তু গলার আওয়াজের মাধ্যমেই আমরা আমাদের আবেগ-অনুভূতি প্রকাশ করতে পারি বলে তিনি মন্তব্য করেন। মুবারক পরবর্তী নতুন স্বাধীন মিশর সমাজে এত দিন ধরে নিষ্পেষিত নারীরা এখন সমাজে নতুন করে স্থান করে নেয়ার স্বপ্ন দেখছেন।

No comments:

Post a Comment