বাংলাদেশে ইউটিউব বন্ধ ,বিতর্কিত চলচ্চিত্রের অভিনেত্রী বললেন, নির্মাতা প্রতারক

মহানবী হযরত মুহাম্মদ
(সাঃ)কে নিয়ে নির্মিত কটাক্ষমূলক চলচ্চিত্রের ট্রেলর ও অন্য সব ভিডিওচিত্র
নিষিদ্ধ করেছে বাংলাদেশ। এ নিন্দনীয় ছবিটি গুগলের ইউটিউবে প্রচার করা
হয়েছে। এ নিয়ে বাংলাদেশ সহ সারা মুসলিম জাহানে তীব্র উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এরই প্রেক্ষিতে এগুলো যাতে এ দেশে দেখা না যায় সে জন্য গুগলকে ব্যবস্থা
নিতে বলেছে বাংলাদেশ। এ বিষয়ে গুগলকে চিঠি দিয়েছে সরকার। রোববার রাতে
বাংলাদেশ সরকারের পক্ষে বাংলাদেশ টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি)
ওই চিঠি লেখে। এ সংস্থার ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান গিয়াসউদ্দিন আহমেদ বলেছেন,
ওই ভিডিও ফুটেজ সরিয়ে নিতে গুগলকে চিঠি দেয়া হয়েছে। এর আগে এ ছবির তীব্র
নিন্দা জানান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও বিরোধীদলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া।
যে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’ ছবির জন্য সারা মুসলিম জাহান উত্তেজিত, সেই ছবির
অভিনেত্রী সিন্ডি লি গারসিয়া (৫৫) বললেন, এই ছবি একটি প্রতারণা। প্রতারণার
আশ্রয় নিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’। এর নির্মাতা তাকে
বলেনি যে, এটি ইসলামবিদ্বেষী ছবি। নির্মাতার ফাঁদে ওই ছবিতে অভিনয় করায়
তাকে হত্যার হুমকি দেয়া হয়েছে। ফলে তিনি পরিবারসহ আত্মগোপন করে আছেন। গতকাল
অনলাইন নিউ ইয়র্ক ডেইলি নিউজ এ খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, সিন্ডি লি গারসিয়া
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসকারী অভিনেত্রী। ইসলামবিদ্বেষী ওই
ছবিটির কারণে লিবিয়া থেকে মিশর, পুরো মধ্যপ্রাচ্য, দক্ষিণ এশিয়ার বেশির ভাগ
দেশ, অস্ট্রেলিয়ার সিডনি, আফ্রিকার বিভিন্ন দেশে উত্তেজনা তুঙ্গে। সিন্ডি
লি সোমবার বলেছেন, ইন্টারনেটে আমাকে হত্যার হুমকি দেয়া হচ্ছে। লোকজন বলছে,
তারা আমাকে কেটে টুকরো টুকরো করবে। আমার পরিবারেরও একই দশা হবে। তিনি
বলেছেন, এ হুমকির বিষয়ে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থা এফবিআইকে
জানিয়েছেন। সিন্ডি লি গারসিয়ার ফেসবুকেও হুমকি দেয়া হয়েছে। তার ফেসবুকের
পেজ এমন হুমকিতে সয়লাব। এরই মধ্যে তিনি ছদ্মনাম ধারণ করে আত্মগোপন করেছেন।
তিনি বলেন, এখন বেঁচে থাকার জন্য আমরা নতুন বাসস্থান খুঁজছি। আমার স্বামী
ভীষণ ভয় পেয়ে গিয়েছে। আমার পুরো পরিবার মূর্ছা অবস্থায় রয়েছে। তিনি বলেছেন,
নাতিপুতিদের নিরাপত্তার জন্য তাদের কাছ থেকে চলে গেছেন তিনি। ‘ইনোসেন্স অব
মুসলিমস’-এ এক যুবতীর মায়ের চরিত্রে দেখা যায় সিন্ডিকে। সেখানে মহানবী
(সা.)কে উদ্দেশ্য করে অবমাননাকর মন্তব্য করতে শোনা যায় তাকে। তিনি বলেছেন,
তাকে এ ছবির যে পাণ্ডুলিপি দেয়া হয়েছিল তা ছিল অংশবিশেষ। তাতে মুসলমান বা
ইসলামের কোন প্রসঙ্গ ছিল না। গারসিয়া বলেন, আমাকে পূর্ণাঙ্গ পাণ্ডুলিপি
দেয়া হয় নি। আমি শুধু আমার ভূমিকার সংলাপগুলো হাতে পেয়েছি। আমি বুঝতে
পারিনি যে নির্মাতা এর মাধ্যমে ইসলামকে বিদ্রূপ করে ছবি নির্মাণ করছে। এ
অসম্মানজনক কাজে আমি জানলে কখনও জড়িত হতাম না। এসব কারণে নির্মাতা নাকৌলা
বাসেলি নাকৌলাকে তাই গারসিয়া অপরাধী হিসেবে দায়ী করেন। বলেন, সে-ই দায়ী।
আমি নির্দোষ। সে একজন প্রতারক। সে আমাকে পুরোপুরি ভুলপথে পরিচালিত করেছে।
ওদিকে ‘ইনোসেন্স অব মুসলিমস’-এর প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশসহ বিশ্বের
প্রায় সব মুসলিম দেশ। বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত সহ বিভিন্ন দেশে ইউটিউব
বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। ওদিকে এ ছবির তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন লেবাননে
হিজবুল্লাহ নেতা হাসান নাসরাল্লাহ। সোমবার তিনি জনসমক্ষে বেরিয়ে এসে হাজার
হাজার সমর্থকের উদ্দেশে রাজধানী বৈরুতে বক্তব্য রাখেন। এভাবে তার জনসমক্ষে
বেরিয়ে আসা এক বিরল ঘটনা। ৬ বছরের মধ্যে এদিন তিনি ৫ম বারের মতো বেরিয়ে
আসেন। এতে তিনি বলেন- হে নবী (সা.) আপনার জন্য আমরা মরতে পারি। আমার
অস্তিত্ব, আমার রক্ত সবই আপনার জন্য। জনতার সমুদ্রে তিনি এ ভাষণ দিয়ে তার
প্রতিধ্বনি তুলতে বলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাদের সমস্বরে উচ্চারণে বৈরুত যেন
কেঁপে ওঠে। এতে তিনি বলেন, আমেরিকাকে অবশ্যই বুঝতে হবে এ ধরনের ছবি মুক্তি
দেয়া কতটা ভয়াবহ, অত্যন্ত ভয়াবহ, সারা বিশ্বে এর রয়েছে সুদূরপ্রসারী
প্রতিক্রিয়া। ওদিকে বৈরুতের মার্কিন দূতাবাসের কূটনীতিকরা গোপনীয় মার্কিন
নথিপত্র পুড়িয়ে ফেলতে শুরু করেছেন। মধ্যপ্রাচ্য, উত্তর আমেরিকার বিভিন্ন
দেশসহ লেবাননে মার্কিনবিরোধী বিক্ষোভের কারণে সতর্কতার অংশ হিসেবে এ উদ্যোগ
নেয়া হয়েছে। মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক রিপোর্টের উদ্ধৃতি দিয়ে
এপি জানিয়েছে, বৈরুত দূতাবাসের নিরাপত্তা প্রক্রিয়া পুনর্মূল্যায়ন করে
সেখানকার গোপনীয় নথিপত্র ধ্বংস করার কাজ শুরু করা হয়েছে। এতে আরও বলা
হয়েছে, ইসলামের জন্য আপত্তিকর একটি চলচ্চিত্র নিয়ে হিজবুল্লাহর বিক্ষোভের
প্রেক্ষিতে দূতাবাসে কর্মরত স্থানীয়দের আগেভাগেই ছুটি দেয়া হয়েছে। ওয়াশিংটন
থেকে মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক মুখপাত্র বলেছেন, কড়া
নিরাপত্তাধীন বৈরুতের মার্কিন দূতাবাসে আশু কোন হুমকি নেই। উল্লেখ্য, গত
মঙ্গলবার থেকে বেশ কয়েকটি মার্কিন দূতাবাসে বিক্ষোভকারীদের হামলার ঘটনা
ঘটেছে।
No comments:
Post a Comment