অসাধারণ এক প্রেমের গল্প

বাঙালি মেয়ে জোসনা বাস্কার ও নেপালের জনপ্রিয় অন্ধ
গায়ক ঈশ্বর অমর্ত্য দম্পতি রচনা করেছেন অসাধারণ এক প্রেমের গল্প। এ বছরই
তাদের বিয়ের ২০ বছর পূর্তি হচ্ছে। স্কুল পড়ুয়া এক সন্তান নিয়ে স্বাচ্ছন্দ্য
ও সুখী পরিবার তাদের। তবে এ অবস্থানে আসার পেছনে অনেক ত্যাগ ও সংগ্রামের
মুখোমুখি হতে হয়েছে । নিরন্তর সংগ্রাম করতে হয়েছে দারিদ্র্যের বিরুদ্ধে।
তাদের এই সংগ্রামের কাহিনী উঠে এসেছে বিবিসির এক প্রতিবেদনে। জন্মগতভাবে
অন্ধ ঈশ্বর টুকটাক গান গাইতেন। নেপালের রাজধানী কাঠমুন্ডু থেকে ২শ’ কিমি
দূরের শহর পোখারায় গান শুনিয়ে আয়ের চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ঈশ্বর। কিন্তু
অন্ধ হওয়ায় খুব একটা পাত্তা পাচ্ছিলেন না কারও কাছে। সামান্য খাদ্যের
বিনিময়ে একটি হোটেলে গান শোনাতেন। এমন সময় সেখানে আগমন ঘটে প্রবাসী বাঙালি
কন্যা জোসনার। তিনিও গিয়েছেন কাজের খোঁজে একই রেস্টুরেন্টে। ওই সময় গান
করছিলেন ঈশ্বর। তার ওপর চোখ পড়লো বাঙালি ললনার। প্রেম মানে না কোন বাধা। এই
প্রবাদকে বাস্তবে পরিণত করে ঈশ্বরের প্রেমে পড়ে গেলেন জোসনা। এক্কেবারে
লাভ ইন ফার্স্ট সাইট। দিনে দিনে ঈশ্বরের কঠিন ভক্তে পরিণত হলেন তিনি। মাত্র
এক মাসের মাথায় ঈশ্বরের ব্যান্ড দলের এক সদস্যের মাধ্যমে জানিয়ে দিলেন
তিনি তাকে ভালোবাসেন। বিয়ে করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। প্রস্তাব পেয়ে ঈশ্বর তো
হতভম্ব। কিছুটা দ্বিধান্বিতও বটে। একে তো অন্ধ, তার ওপর দরিদ্র। জানিয়ে
দিলেন তিনি শারীরিকভাবে প্রতিবন্ধী। ভালোবাসার মানুষের জন্য আরাম সামগ্রী
জোগাড় করাও তার পক্ষে সম্ভব নয়। জবাবে সত্যিকারের প্রেমের জয় হয়- প্রমাণ
করলেন জোসনা। জানিয়ে দিলেন কোন বিলাসবহুল জীবন নয়- ঈশ্বরের সঙ্গী হয়েই
থাকতে চান তিনি। হয়ে গেল বিয়ে। ঈশ্বর বিবিসিকে বলেছেন, অন্ধ হিসেবে রেডিও
শুনেই গানের প্রতি তার অনুরাগ জন্মে। বিয়ের পর নববধূ জোসনাও হয়ে উঠলেন তার
জন্য অনুপ্রেরণার উৎস। হাতে হাত ধরে স্বামীকে নিয়ে গেছেন দেশব্যাপী বিভিন্ন
গানের পালায়। উৎসবে ও নিজের গানের কনসার্টে। তবে বর্ণনার মতো এত সহজ ছিল
না তাদের বিয়ে। দু’জন দুই ভিন্ন সমপ্রদায়ের হওয়ায় বিয়ে মেনে নেয়নি কোন
পরিবার। তার ওপর মেয়ে পড়েছে অন্ধের প্রেমে। কিভাবে মেনে নেবেন জোসনার
পরিবার। জোসনার বাবা কোনভাবেই মেনে নিতে পারেননি মেয়ের এই কাণ্ড। ফিরে আসতে
বলেছেন বাড়িতে। কিন্তু না, রাজি হননি তিনি। বাকি জীবন ঈশ্বরের সঙ্গেই
কাটিয়ে দেবেন বলে চলে গেছেন। এরপরই নতুন জীবন পেলেন ঈশ্বর। তাকে অন্য সব
কিছু থেকে বিরত রেখে কেবল গানে মনোযোগ দেয়ার সুযোগ করে দিয়েছেন জোসনা।
ক্রমেই হয়ে উঠেছেন নেপালের জনপ্রিয় গায়ক। ৩শ’র বেশি গান রেকর্ড হয়েছে তার।
গানের রয়্যালটি দিয়ে ভালই জীবন কাটান স্ত্রী ও নেপালের সবচেয়ে দামি স্কুলে
পড়ুয়া ছেলেকে নিয়ে। এখনও জোসনার বাবা নিয়ে যেতে চান মেয়েকে। সঙ্গে নিয়ে
যেতে চান জামাইকেও। কিন্তু যেতে রাজি নন জোসনা। তবে কি পছন্দের স্বামী পেয়ে
জন্মদাতা বাবাকেও ভুলে গেছেন তিনি। না ব্যাপারটি এমন নয়। এখন তার ভয়, তিনি
চলে গেলে কিভাবে চলবেন প্রথম দেখাতেই প্রেমে পড়া প্রাণপ্রিয় স্বামীর। কে
তার দেখাশোনা করবে। তাই সব নেপালি নারী যেখানে উপোস করেন স্বামীর দীর্ঘ
জীবনের প্রার্থনায়, সেখানে জোসনার চাওয়া স্বামী যেন তার আগেই মারা যান।
তাতে অন্তত অন্যের করুণার ওপর নির্ভর করতে হবে না প্রিয় মানুষটিকে। ঈশ্বর
খুবই ইতিবাচক ও স্ত্রী ভক্ত। নিজের গানের প্রতিভার সঙ্গে স্ত্রীকেও
স্রষ্টার দানই মনে করেন তিনি। কোন অনুতাপ নেই জোসনার জীবনেও। তিনি বলেছেন,
একজন নারী ভালবাসা ও সমঝদার স্বামী প্রত্যাশা করেন। দু’টিই পেয়ে সৌভাগ্যবান
আমি।
No comments:
Post a Comment