Monday, December 14, 2015

ভারত-পাকিস্তান গোপন কূটনীতি

ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে দীর্ঘদিন যে কাশ্মির নিয়ে বিরোধ, কখনো কখনো তা যুদ্ধে পরিণত হয়েছে, সেই কাশ্মির নিয়ে এবার দেশ দুটি গোপন কূটনীতিতে নেমেছে। পাকিস্তানের সাবেক স্বৈরশাসক পারভেজ মোশাররফ ও ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং প্রশাসন এই সংঘাত উত্তরণে যে উদ্যোগ নিয়েছিলেন দেশ দুটি নতুন করে যেন তা অনুসরণ করার চেষ্টা করছে। তারই ধারাবাহিকতায় সম্প্রতি থাইল্যান্ডের রাজধানী ব্যাংককে দু’দেশের পররাষ্ট্র সচিবদের গোপন বৈঠক হয়েছে। এরপর আফগানিস্তান নিয়ে পাকিস্তানে আয়োজিত ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দেন ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ। অনলাইন এক্সপ্রেস ট্রিবিউন বলেছে, সন্ত্রাস থেকে কাশ্মির বিরোধসহ বিভিন্ন ইস্যুতে নতুন নাম ‘কমপ্রিহেনসিভ বাইল্যাটারেল ডায়ালগ’ নামে শান্তি আলোচনা শুরু করেছে ভারত ও পাকিস্তান। পাকিস্তানের সরকারি সূত্রগুলো বলেছে, প্রধানমন্ত্রী নওয়াজ শরীফ ও ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তাদের পারস্পরিক আস্থাকে কাজে লাগিয়ে কাশ্মির ইস্যুতে অধিকতর আলোচনা ‘ব্যাক চ্যানেলে’র মাধ্যমে চালিয়ে নিতে। কমপ্রিহেনসিভ বাইল্যাটারেল ডায়ালগ-এর অধীনে দুই দেশের পররাষ্ট্র সচিবরা শান্তি, নিরাপত্তা সহ কাশ্মির ইস্যু নিয়ে আলোচনা করবেন। সূত্রগুলো বলেছে, পররাষ্ট্র সচিবরা এ ইস্যুতে আলোচনা চালিয়ে নেয়ার অনুমোদন পেলেও তারা সিদ্ধান্ত নিতে পারবেন না। সরকারি একটি সূত্র বলেছে, যতক্ষণ কাশ্মির ইস্যুর মতো জটিল ইস্যু নিয়ে উদ্বেগ থেকে যাবে ততদিন ব্যাক চ্যানেলের মাধ্যমে আলোচনা এগিয়ে চলবে। কাশ্মির ইস্যু সমাধানের লক্ষ্যে দেশ দুটি অতীতে এভাবে কাজ করেছে। পাকিস্তানের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী খুরশিদ কাসুরি তার এক বইয়ে বলেছেন, সাবেক সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফের শাসনকালে কাশ্মির ইস্যুতে নয়া দিল্লি ও ইসলামাবাদ গোপনীয় আলোচনা চালিয়েছিল। ওই সময় দু’দেশের জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টারা কোন ডকুমেন্ট বিনিময়ও করেন নি। ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের পয়েন্ট ম্যান হিসেবে পরিচিত এসকে লাম্বা এবং পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট মোশাররফের ঘনিষ্ঠ সহকর্মী তারিক আজিজ তখন খসড়া চুক্তি নিয়ে দুবাই ও কাঠমুন্ডুতে কমপক্ষে দু’ডজন গোপন বৈঠক করেন। এতে কাটে ২০০ ঘন্টারও বেশি সময়। প্রস্তাবিত ওই চুক্তিতে বলা হয়েছিল, কাশ্মিরের দু’পাশে দু’পক্ষ যৌথভাবে ব্যবস্থাপনা করবে এবং বিরোধপূর্ণ এলাকা থেকে সামরিক বাহিনীকে সরিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু ২০০৭ সালে পাকিস্তানে পারভেজ মোশাররফের বিরুদ্ধে লং মার্চ করেন আইনজীবীরা। মূলত ওই আন্দোলন ক্রমশ বেগবান হয়ে মোশাররফের পতন হয়। এর ফলে সেই সংলাপ বা শান্তি প্রক্রিয়া আর এগোয় নি। এরই মধ্যে কেটে গেছে ৮টি বছর। এখন নতুন করে ‘ব্যাক চ্যানেলের’ মাধ্যমে আবার সেই প্রক্রিয়া শুরু করেছে ভারত ও পাকিস্তান। তবে এবার ব্যাংককে জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টাদের মধ্যে যে গোপন বৈঠক হয়েছে তা কি গোপন কূটনীতিকে এগিয়ে নেবে নাকি দু’পক্ষ অন্যকোন মধ্যস্থতাকারী ব্যবহার করবে। সূত্র বলেছেন, যখন সমঝোতা প্রক্রিয়া শুরু হবে তখন কাশ্মির সমস্যা সমাধান করতে মোশাররফ ও মনমোহন প্রশাসনের মধ্যে যে খসড়া চুক্তি হয়েছিল তা নিয়ে আলোচনা হবে। অক্টোবরে ভারতীয় মিডিয়া খবর প্রকাশ করে যে, ওই সময়কার গোপন বৈঠক ও খসড়া চুক্তির বিষয়ে বিষয়ে পুরোপুরি ব্যক্তিগতভাবে রেকর্ড রাখতেন মনমোহন সিং। পরে নরেন্দ্র মোদি প্রধানমন্ত্রী হলে তা তিনি হস্তান্তর করেন মোদির কাছে। সরকারের একজন সিনিয়র ব্যক্তি বলেছেন, ভারত কতদূর এগুবে তা নিয়ে উপসংহার টানার সময় এখনো আসে নি। নরেন্দ্র মোদি পাকিস্তান ইস্যুতে যে পদক্ষেপ নিয়েছেন তা কখনো গরম, কখনো নরম। ওদিকে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী সুষমা স্বরাজ গতকাল তার পাকিস্তান সফর সম্পর্কে ভারতের পার্লামেন্টকে অবহিত করেন। গত সপ্তাহে দু’দিনের ‘হার্ট অব এশিয়া’ সম্মেলনে যোগ দিয়ে তিনি মূলত পাকিস্তানের সঙ্গে কি কথা বলেছেন তা নিয়ে রাজনীতিবিদ ও বিশেষজ্ঞদের জানার কৌতুহল। সে বিষয়ে তিনি গতকাল বলেন, পাকিস্তানের কাছে ভারত মুম্বই হামলার ইস্যু তুলে ধরেছে। একই সঙ্গে ওই হামলায় জড়িতদের বিচার করতে আহ্বান জানিয়েছে পাকিস্তান সরকারকে। সুষমা স্বরাজ ভারতীয় পার্লামেন্টের উচ্চকক্ষ রাজ্যসভায় বলেন, আমরা ২৬/১১ মুম্বই হামলার ইস্যু তুলে ধরেছি। তিনি আরও বলেন, পাকিস্তান ও ভারত শান্তি, নিরাপত্তা ও কাশ্মির সহ সব ইস্যুতে বিস্তারিত আলোচনা চালিয়ে যাবে। সন্ত্রাসের থাবায় সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত কাশ্মির।

No comments:

Post a Comment