২০০৪ সালের পর ভারতে প্রথম মৃত্যুদণ্ড কার্যকর হওয়ার কথা। কিন্তু
তার আগেই ভারতকে ওই মৃত্যুদণ্ড স্থগিত করার জন্য আহ্বান জানিয়েছে
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। পাঞ্জাবে আগামী ৩১শে মার্চ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
হওয়ার কথা রয়েছে বলবন্ত সিং রাজোয়ানা নামে এক ব্যক্তির। তার আগেই ওই রায়
কার্যকর না করতে ভারতের প্রধানমন্ত্রীর কাছে খোলা চিঠি লিখেছে অ্যামনেস্টি।
অ্যামনেস্টির এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের পরিচালক স্যাম জারিফি ওই চিঠিতে
লিখেছেন- আমরা বলবন্ত সিংয়ের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর না করার আহ্বান জানাচ্ছি।
এই চিঠিতে তিনি ভারতে সব অপরাধের মৃত্যুদণ্ড দ্রুত প্রত্যাহারেরও আহ্বান
জানান। ওদিকে অ্যামনেস্টি জানিয়েছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উদ্বেগজনক হারে
বাড়ছে মৃত্যুদণ্ডের ঘটনা। ২০১১ সালে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে যেসব মৃত্যুদণ্ড
দেয়া হয়েছে তার ওপর একটি প্রতিবেদনে এমন উদ্বেগ প্রকাশ করেছে মানবাধিবার
বিষয়ক আন্তর্জাতিক সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল। ‘ডেথ পেনাল্টি ২-১১:
এলার্মিং লেভেলস অব এক্সিকিউশন ইন দ্য ফিউ কান্ট্রিস দ্যাট কিল’ শীর্ষক ওই
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত বছর বিশ্বের ১৯৮টি দেশের মধ্যে ২০টি দেশে
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। সারাবিশ্বে এমন দেশের শতকরা হার ১০ ভাগ।
ব্যভিচার, সমকামিতাসহ বিভিন্ন অপরাধে এসব মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। ইরানে
ব্যভিচার ও সমকামিতা, পাকিস্তানে ব্লাসফেমি, সৌদি আরবে জাদু, কঙ্গোতে
মানুষের হাড় পাচারের জন্য মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এছাড়া ছিল মাদকের মতো
ঘটনা। গত বছর যেসব মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে তার মধ্যে রয়েছে শিরশ্ছেদ,
ফাঁসিতে ঝোলানো, প্রাণঘাতী ইঞ্জেকশন প্রয়োগ ও গুলি করে হত্যা। গত বছরে
বিশ্বে কমপক্ষে ৬৭৬ জনের মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয়েছে। এরপরও মৃত্যুদণ্ডের আদেশ
মাথায় নিয়ে দণ্ড পাওয়ার জন্য অপেক্ষায় ছিল ১৮ হাজার ৭৫০ জন। তবে চীনে যে
হাজার হাজার মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তা এসব সংখ্যার ভিতরে হিসাব করা হয়নি। কারণ
সেখানে কতগুলো মানুষকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হয় তা কেউ ঠিক করে বলতে পারে না।
এতে আরও বলা হয়, বিশ্বব্যাপী গত বছর মৃত্যুদণ্ডের সংখ্যা ৭৮ ভাগ বৃদ্ধি
পেয়েছে। এসব মৃত্যুদণ্ডের ৫০ ভাগই কেবল মধ্যপ্রাচ্যে দেশগুলোতে কার্যকর করা
হয়েছে। গতকাল প্রকাশিত এক রিপোর্টে অ্যামনেস্টি বলেছে, ২০১১ সালে বিশ্বের
২০টি দেশে কমপক্ষে ৬৭৬ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২০১০ সালে ২৩টি
দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকরের সংখ্যা ছিল ৫২৭। এতে দেখা যাচ্ছে, মৃত্যুদণ্ড
কার্যকরের পরিমাণ ৭৮ ভাগ বৃদ্ধি পেয়েছে। অ্যামনেস্টি বলছে মধ্যপ্রাচ্যের
দেশগুলো ৫০ ভাগ বৃদ্ধি পেয়ে এ সংখ্যা গত বছর ৫৫৮টি দাঁড়িয়েছে। সারা বিশ্বে
শিরশ্ছেদ, ফাঁসি, প্রাণঘাতী ইনজেকশন প্রয়োগ এবং গুলি করে সাধারণত
মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়ে থাকে। তবে অ্যামনেস্টি বলছে, সারা বিশ্বে যে
পরিমাণ মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়ে থাকে চীন একাই তারচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড
কার্যকর করে। চীনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করার সংখ্যা রাষ্ট্রীয়ভাবে গোপন
রাখা হয়। অ্যামনেস্টিও চীনে কার্যকর মৃত্যুদণ্ডের কোন সংখ্যা প্রকাশ করে
না। তবে অ্যামনেস্টি বলছে, চীনে প্রতি বছর হাজার হাজার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
করা হয়ে থাকে। ২০১১ সালে বিশ্বের ৬৩টি দেশে কমপক্ষে ১৯২৩ জনকে মৃত্যুদণ্ডের
শাস্তি দেয়া হয়েছে। ২০১০ সালে এ সংখ্যা ছিল ২০২৪। অ্যামনেস্টির রিপোর্টে
বলা হয়েছে, ২০১১ সালের শেষ নাগাদ বিশ্বব্যাপী কমপক্ষে ১৮৭৫০ জন
মৃত্যুদণ্ডের শাস্তির আওতায় ছিল। এর মধ্যে কেবল পাকিস্তানেই ছিল ৮৩০০ জন।
চীনের পর সবচেয়ে বেশি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে ইরানে। সেখানে কমপক্ষে
৩৬০ জনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে। ২০১০ সালে এ সংখ্যা ছিল ২৫২। সৌদি
আরবে এ সংখ্যা ছিল কমপক্ষ ৮২টি। ২০১০ সালে ছিল কমপক্ষে ২৭টি। আর ইরাকে ২০১১
সালে ৬৮টি মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করা হয়েছে বলে অ্যামনেস্টি উল্লেখ করেছে। এর
পরপরই রয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ৪৩টি, ইয়েমেন ৪১টি। যুক্তরাষ্ট্রই হচ্ছে একমাত্র
দেশ যারা জি এইট ভুক্ত দেশ হওয়া সত্ত্বেও ২০১১ সালে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
করেছে। ইউরোপের মধ্যে কেবল বেলারুশেই ২০১১ সালে দুজনের মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
করেছে। গত ১৯ বছরের মধ্যে এবার প্রথম ২০১১ সালে জাপানে কোন মৃত্যুদণ্ড
কার্যকর করা হয়নি। ওই রিপোর্টে এশিয়া-প্রশান্ত অঞ্চলের রিপোর্টে বলা হয়, গত
বছর এই অঞ্চলে সর্বোচ্চ শাস্তির বৈধতা নিয়ে যে ইতিবাচক প্রশ্নে সৃষ্টি
হয়েছে তা সহজবোধ্য। ধারণা করা হয়, চীনে কয়েক হাজার মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
হয়েছে। তবে এশিয়া প্রশান্ত অঞ্চলের ৭টি দেশে কমপক্ষে ৫১টি মৃত্যুদণ্ড
কার্যকর করা হয়েছে। এ অঞ্চলের ১৮টি দেশে নতুন করে ৮৩৩টি মৃত্যুদণ্ড দেয়ার
কথা জানা গেছে। মধ্যপ্রাচ্য ও উত্তর আফ্রিকার বিষয়ে বলা হয়, এ অঞ্চলের ৮টি
দেশে কমপক্ষে ৫৫৮টি মৃত্যুদণ্ডের বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া গেছে। মধ্যপ্রাচ্য ও
উত্তর আফ্রিকায় যেসব মৃত্যুদণ্ড হয়েছে তার মধ্যে শতকরা ৯৯ ভাগই হয়েছে সৌদি
আরব, ইরাক, ইরান ও ইয়েমেনে। আলজেরিয়া, জর্ডান, কুয়েত, লেবানন, মরক্কো,
কাতারে মৃত্যুদণ্ডের বিধান চালু হয়েছে। কিন্তু এসব দেশে মৃত্যুদণ্ড কার্যকর
করা থেকে বিরত রয়েছে।
No comments:
Post a Comment