প্রয়াত নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির সাবেক গোয়েন্দা প্রধান
ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আবদুল্লাহ আল সেনুসিকে লিবিয়ার কাছে হস্তান্তর দাবি
করা হয়েছে। মৌরিতানিয়ায় তাকে আটকের পর লিবিয়া আনুষ্ঠানিকভাবে সে দেশের কাছে
এই অনুরোধ করেছে।
এ খবর দিয়ে অনলাইন বিবিসি জানায়, লিবিয়ায় এখন ক্ষমতায় রয়েছে অন্তর্বর্তী
সরকার। ওই সরকারের মুখপাত্র মোহাম্মদ আল হারিজি মৌরিতানিয়াকে ওই অনুরোধ
পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছেন গতকাল। ওদিকে আবদুল্লাহ আল সেনুসির বিরুদ্ধে হেগে
আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালতে মানবতাবিরোধী অভিযোগ আছে। ১৯৮৯ সালে
ফ্রান্সের একটি বিমানে বোমা হামলা হয়েছিল। তার সঙ্গে সেনুসি জড়িত বলে
অভিযোগ আছে। ফলে তার বিচার করতে একদিকে লিবিয়া চাইছে তাকে তাদের কাছে
হস্তান্তর করা হোক। আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ আদালত চাইছে তাকে পেতে এবং
ফ্রান্সও তার বিচার করতে চাইছে। এমন অবস্থায় তাকে কোন কর্তৃপক্ষের হাতে
তুলে দেয়া হবে তা ঠিক করেনি মৌরিতানিয়া। তারা বলছে, তারা পরীক্ষা-নিরীক্ষা
করে দেখছে সেনুসিকে কারও কাছে হস্তান্তরের জন্য কোন আবেদন আছে কিনা। এ
বিষয়ে তারা তদন্ত, বিশ্লেষণ করে দেখবে। বিবিসি আরও জানায়, একটি ভুয়া
পাসপোর্ট ব্যবহার করে মরক্কো থেকে তিনি মৌরিতানিয়ায় সফরে যান বিমানে করে।
কিন্তু মৌরিতানিয়ার রাজধানী নকছোটে বিমানবন্দরে পৌঁছানোর পরই তাকে আটক করা
হয়। তবে মৌরিতানিয়া তাকে আটক করার কোন ঘোষণা দেয়নি। ধারণা করা হচ্ছে,
সেনুসিকে আটক করে মৌরিতানিয়ায় একটি গোয়েন্দা সংস্থার অফিসে আটকে রাখা
হয়েছে। গত বছর লিবিয়ার নেতা মুয়াম্মার গাদ্দাফির ক্ষমতার মসনদ যখন
বিদ্রোহীদের ও আন্তর্জাতিক মহলের আক্রমণে টলটলায়মান তখন ৬৩ বছর বয়সী সেনুসি
লিবিয়া থেকে পালান। তাকে আটকের পর লিবিয়ার অন্তর্বর্তী সরকার ন্যাশনাল
ট্রানজিশনাল কাউন্সিল (এনটিসি)-এর মুখপাত্র মোহাম্মদ আল হারিজি বলেছেন,
আমরা আশা করি সেনুসিকে আমাদের কাছে প্রত্যর্পণ করা হবে। তাকে আটকের খবরে
শনিবার লিবিয়ার রাজধানী ত্রিপোলিতে আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। এর কারণ,
ত্রিপোলির এক বাসিন্দা মুস্তাফা জাইমা বলেন, সেনুসিকে লিবিয়ার নেতা
মুয়াম্মার গাদ্দাফির ব্লাকবক্স বলে মনে করা হয়। তার কাছে গাদ্দাফি সম্পর্কে
অসংখ্য তথ্য আছে। তার হাতেও রয়েছে রক্তের দাগ। এজন্য তাকে লিবিয়ায় ফিরিয়ে
এনে তার বিচার করা উচিত। তবে বিশ্লেষকরা মনে করেন, জেনারেল সেনুসিকে
লিবিয়ায় ফিরিয়ে আনা হলে তাতে এনটিসির হিতে বিপরীত হতে পারে। কারণ, এনটিসির
অনেক নেতার বিরুদ্ধে অনেক অভিযোগের প্রমাণ তার কাছে আছে। এনটিসির ওই সব
নেতা ছিলেন গাদ্দাফি প্রশাসনের অংশ। ফলে তাদের বিরুদ্ধেও সেনুসির কাছে আছে
দুর্নীতি ও অনিয়মের অসংখ্য প্রমাণ।
ফলে এনটিসির ওই নেতারা চাইবেন না
সেনুসিকে লিবিয়ায় ফিরিয়ে আনতে। মানবাধিকার বিষয়ক সংগঠন হিউম্যান রাইটস ওয়াচ
এবং অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল বলছে, জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের অধীনে
জেনারেল সেনুসিকে আইসিসির কাছে হস্তান্তর করতে বাধ্য মৌরিতানিয়া।
অ্যামনেস্টির উত্তর আফ্রিকা বিষয়ক উপ-পরিচালক হাসিবা হাজ শাহরাউয়ি এক
বিবৃতিতে বলেছেন, লিবিয়ার বিচার ব্যবস্থা এখনও রয়েছে দুর্বল অবস্থায়। তারা
সেনুসির বিরুদ্ধে যেসব অভিযোগ আছে তার কার্যকর তদন্ত করতে পারবে না।
এ
অবস্থায় যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উইলিয়াম হেগ সবার প্রতি আহ্বান
জানিয়েছেন আইসিসি’কে সহায়তা করতে। গত বছর জুনেই জেনারেল সেনুসির বিরুদ্ধে
গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেছে আইসিসি। তাতে বলা হয়েছে, লিবিয়ায় হত্যা ও
মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের সঙ্গে পরোক্ষ সম্পর্ক রয়েছে তার। ১৯৯৬ সালে
লিবিয়ার একটি কারাগারে ১ হাজারেরও বেশি বন্দিকে হত্যা করা হয়। এর সঙ্গেও
তার যোগসূত্র থাকার অভিযোগ আছে।
No comments:
Post a Comment