
Source: http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=41897:2012-04-27-16-34-46&catid=48:2010-08-31-09-43-22&Itemid=82
বিরোধীদলীয় নেতাসহ রাজনৈতিক কর্মীদের ‘একের পর এক উধাও’ হওয়ার ঘটনায় গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করে অবিলম্বে ‘নিরপেক্ষ ও স্বাধীন’ তদন্তের দাবি জানিয়েছে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ (এইচআরডব্লিউ)। গতকাল এক বিবৃতিতে নিউ ইয়র্ক ভিত্তিক সংস্থাটি এসব ঘটনার উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেছে, বিএনপি’র কেন্দ্রীয় নেতা এম ইলিয়াস আলীসহ বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনায় সরকারকে অবশ্যই ব্যবস্থা নিতে হবে। হিউম্যান রাইটস ওয়াচ বলেছে, সামপ্রতিক দিনগুলোতে বাংলাদেশে বিরোধীদলীয় নেতা ও রাজনৈতিক কর্মীদের নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে গেছে। ইলিয়াস আলীর অন্তর্ধানও এমনই একটি ঘটনা। এর আগে গত ৪ঠা এপ্রিল শ্রমিক নেতা আমিনুল হকের ‘নিখোঁজ’ বা ‘গুম’ হওয়ার ঘটনায়ও উদ্বেগ জানিয়েছিল এইচআরডব্লিউ। তাদের বিবৃতিতে আইন ও সালিশ কেন্দ্রের পরিসংখ্যানের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, কেবল ২০১২ সালেই অন্তত ১২ জন এভাবে ‘নিখোঁজ’ হয়েছেন। বাংলাদেশের আরেক মানবাধিকার সংস্থা অধিকারের হিসাব অনুযায়ী, ২০১০ সালের পর থেকে এ পর্যন্ত ‘গুম’ হয়েছেন অন্তত ৫০ জন। এইচআরডব্লিউর এশিয়া অঞ্চলের পরিচালক ব্র্যাড অ্যাডামস বিবৃতিতে বলেছেন, এই যে ক্রমবর্ধমান নিখোঁজ হওয়ার ঘটনা, বিশেষ করে বিরোধীদলীয় সদস্যদের উধাও হয়ে যাওয়া- এর গ্রহণযোগ্য ও স্বাধীন তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। তিনি বলেন, সরকার এ পর্যন্ত ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনাগুলোর তদন্তে কোন কার্যকর উদ্যোগ নেয়নি। এ ধরনের ঘটনা বন্ধেরও কোন পদক্ষেপ দেখা যায়নি। অ্যাডামস বলেন, শেখ হাসিনার সরকার বারবার এ ধরনের নিপীড়ন বন্ধ এবং ন্যায়বিচার ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। কিন্তু এ ধরনের প্রতিশ্রুতি দেয়া সত্ত্বেও নিরাপত্তা বাহিনীর হাতে অব্যাহত নিপীড়নের তথ্য-প্রমাণ প্রত্যাখ্যান বা নাকচ করেছে। আর এ কারণে এসব ঘটনার ক্ষেত্রে অনতিবিলম্বে সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া প্রয়োজন। এর পাশাপাশি পুলিশকে বিক্ষোভকারীদের অপরাধ ঠেকাতে অতিরিক্ত শক্তি প্রয়োগ করতে দেয়া যাবে না বলে তিনি উল্লেখ করেন। এর দক্ষিণ এশিয়া বিভাগের পরিচালক মিনাক্ষী গাঙ্গুলি গতকাল বিবিসিকে বলেছেন, এ ঘটনাগুলো মানবাধিকারের মারাত্মক লঙ্ঘন। তিনি বলেন, ইলিয়াস আলী কোথায় আছেন কেউ কিছু জানেন না। আমরা চাইছি, এ বিষয়টা খুব ভাল ভাবে তদন্ত করা হোক। এটা কারা করছেন, কেন করছেন এবং যারা এটা করছেন তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দেয়া হোক- সেটাই আমরা চাইছি। আমরা চাইছি, এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সরকার অনতিবিলম্বে ব্যবস্থা গ্রহণ করুক। তিনি বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে অনেক সময় এ ধরনের ঘটনার তদন্ত করা হলেও কোন ব্যবস্থা নেয়া হয় না। মিনাক্ষী বলেন, আমরা চাই এবার যদি তদন্ত হয় সেই তদন্তের পরবর্তী পদক্ষেপও যাতে জনগণকে জানানো হয়। এর ফলে গুমের শিকারদের পরিবার বুঝতে পারবে সরকার এ ব্যাপারে শক্ত ব্যবস্থা নিচ্ছে। তিনি বলেন, গুমের এসব ঘটনা সরকার স্বীকার করছে না বলেই এর সংখ্যা ক্রমে বৃদ্ধি পাচ্ছে। এ ব্যাপারে সরকারের পক্ষ থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন প্রতিক্রিয়া দেয়া হযনি। তবে আইনমন্ত্রী ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ গতকাল বিবিসিকে বলেছেন, সরকার এ ধরনের ঘটনার তদন্ত করছে না এটা বলা ভুল হবে। তিনি বলেন, সরকার সব ঘটনার ক্ষেত্রেই গুরুত্বের সঙ্গে তদন্ত করছে। কারও কোন অভিযোগ থাকলে সংশ্লিষ্ট বিভাগকে সুনির্দিষ্টভাবে জানানো উচিত বলে তিনি মনে করেন। এইচআরডব্লিউর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ইলিয়াস আলী ‘নিখোঁজ’ হওয়ার ঘটনায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পুলিশকে তদন্তের দায়িত্ব দিয়েছেন। তবে তিনি এও বলেছেন যে, সরকারের বিরুদ্ধে ‘আন্দোলনের ইস্যু’ তৈরি করতে দলের নির্দেশেই ইলিয়াস লুকিয়ে আছেন বলে তিনি মনে করেন। বিরোধী দলের হরতালের সময় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর ‘অত্যাধিক শক্তিপ্রয়োগের’ ঘটনাতেও উদ্বোগ প্রকাশ করেছে এইচআরডব্লিউ। ২১শে এপ্রিল ইলিয়াস আলীর নির্বাচনী এলাকা সিলেটের বিশ্বনাথে হরতাল চলাকালে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে দুইজন নিহত ও শতাধিক আহতও হওয়ার ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের জন্যও সরকারের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে এ মানবাধিকার সংস্থা। গত ১৭ই এপ্রিল মধ্যরাতে রাজধানীর মহাখালী এলাকা থেকে নিখোঁজ হন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও সাবেক সংসদ সদস্য ইলিয়াস আলী। পুলিশ ওই রাতে তার গাড়িটি পরিত্যক্ত অবস্থায় উদ্ধার করে। ইলিয়াসের সঙ্গে নিখোঁজ হন তার গাড়িচালক আনসারও। এরপর গত ১০ দিনে র্যাব পূবাইল ও ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালিয়েও এই বিএনপি নেতার ‘সন্ধান’ পায়নি। সরকারের বাহিনীই ইলিয়াসকে ‘গুম’ করেছে- এমন অভিযোগ এনে গত রোববার থেকে টানা তিন দিন সারাদেশে হরতাল করেছে বিএনপি। শনিবারের মধ্যে তাকে পাওয়া না গেলে বিরোধীদলীয় নেতাদের কাছ থেকে নতুন করে হরতালের ইঙ্গিতও দেয়া হয়েছে।
No comments:
Post a Comment