Tuesday, June 19, 2012

মিশরে সেনা বাহিনীর নতুন ঘোষণা

ফের মিশরের ক্ষমতা নিজেদের দখলে রাখার ঘোষণা দিল সেনাবাহিনী। এক ঘোষণায় ক্ষমতাসীন সুপ্রিম কাউন্সিল অব আর্মড ফোর্সেস বলেছে, একটি স্থায়ী সংবিধান প্রণয়ন না হওয়া পর্যন্ত নতুন কোন সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে পারবে না। বিরোধী জোটগুলো এ পদক্ষেপের নিন্দা জানিয়ে একে সামরিক অভ্যুত্থান বলে উল্লেখ করেছে। গতকাল এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এতে বলা হয়, ওই ঘোষণা বলে আইন প্রণয়নের ক্ষমতা, বাজেট নিয়ন্ত্রণ ও স্থায়ী সংবিধান রচনার নিয়ন্ত্রণ তাদের অধীনে থাকবে। রোববার সামরিক কাউন্সিল এ ঘোষণা দিলেও গতকাল তারা বলে, সদ্য অনুষ্ঠিত প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীর হাতে এ মাসের শেষের দিকে ক্ষমতা হস্তান্তর করা হবে। ওইদিকে মিশরের প্রথমবারের মতো অবাধ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের দ্বিতীয় দফা ভোটে বিজয় দাবি করেছেন মুসলিম ব্রাদারহুডের প্রার্থী মোহাম্মদ মোরসি। বেসরকারিভাবে গণনা করা ভোটে দশ লাখের বেশি ভোটে এগিয়ে থাকার বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার পর গতকাল সকালে এক সংবাদ সম্মেলনে মুসলিম ব্রাদারহুড প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তাদের প্রার্থীর বিজয় দাবি করে। সংবাদ সম্মেলনে মুসলিম ব্রাদারহুড দাবি করে, সারা দেশের ১৩ হাজার ভোট কেন্দ্রের মধ্যে ১২ হাজার ৭৯৩টি কেন্দ্রে মোট ১ কোটি ২৭ লাখ ভোট পেয়ে মোরসি এগিয়ে রয়েছেন। অপরদিকে, তার প্রতিদ্বন্দ্বী প্রেসিডেন্ট প্রার্থী আহমেদ শফিক পেয়েছেন ১ কোটি ১৮ লাখ ৪০ হাজার ভোট। এ ঘোষণায় ব্রাদারহুডের অন্যান্য কর্মী ও সমর্থকরা উল্লাসে ফেটে পড়ে। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক সংবাদ মাধ্যমগুলোর দেয়া তথ্যমতেও নির্বাচনী প্রতিযোগিতায় এগিয়ে রয়েছে মুসলিম ব্রাদারহুডের মোরসি। তবে এ পর্যন্ত প্রকাশিত সব ফলাফলই ঘোষণা করা হয়েছে অনানুষ্ঠানিক ভোট গণনার ভিত্তিতে। নির্বাচনের চূড়ান্ত ফলাফল আনুষ্ঠানিকভাবে ঘোষণা করা হবে সপ্তাহের শেষে। অনানুষ্ঠানিক ফলাফল প্রকাশের পর প্রেসিডেন্ট পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতাকারী মোরসি নিজের অনুভূতি ব্যক্ত করেছেন এবং সেনা শাসনের বিরুদ্ধে অভ্যুত্থানে নিহতদের স্মরণ করে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠার অঙ্গীকার করেছেন। মিশরের সবাই হবেন আমার পরিবারের সদস্য। মিশরের খ্রিষ্টান ধর্মাবলম্বীদের প্রতি সহানুভূতি প্রকাশ করে মোরসি বলেছেন, আমি কোন প্রতিশোধ নিতে চাই না। বরং আমি সব মিশরীয়র জন্য কাজ করার শপথ করছি। সেই সঙ্গে সৃষ্টিকর্তার প্রতি ধন্যবাদ জ্ঞাপন করে তিনি আধুনিক, সাংবিধানিক ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের জন্য কাজ করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তার প্রতিপক্ষ আহমেদ শফিকের সমর্থকরা অবশ্য মুসলিম ব্রাদারহুডের ঘোষিত এ ফলাফল মেনে নেবে না বলে জানিয়েছে। তারা চূড়ান্ত ফলাফলের জন্য অপেক্ষা করবে। সাবেক বিমানবাহিনীর প্রধান এবং হোসনি মুবারকের অধীনস্থ সাবেক প্রধানমন্ত্রী আহমেদ শফিক ব্রাদারহুডের এ বিজয় দাবিকে বিচিত্র আচরণ বলে অভিহিত করেছেন। মুসলিম ব্রাদারহুডকে তিনি প্রতারক বলে অভিযোগ করেছেন। এক বিবৃতিতে তিনি বলেছেন, মুসলিম ব্রাদারহুডের সমর্থকরা ভোটারদের উদ্বুদ্ধ করতে অর্থ এবং খাদ্য সামগ্রী ঘুষ হিসেবে পাঠিয়েছেন। তারা আহমেদ শফিকের সমর্থকদের ভয়ভীতি এবং হুমকিও দিয়েছেন বলে এতে উল্লেখ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় টেলিভিশনও এক রিপোর্টে জানিয়েছে, প্রাথমিক ভোট গণনায় দেখা গেছে,  মোরসি এগিয়ে আছেন। মুসলিম ব্রাদারহুডের বিজয় দাবির কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই মোরসির সমর্থকরা ঐতিহাসিক তাহরির স্কোয়ারে জড়ো হয়ে আনন্দ মিছিল করতে থাকে। আল-জাজিরা জানিয়েছে,  সুপ্রিম প্রেসিডেন্সিয়াল ইলেকশন কমিশনের নির্দেশ অনুযায়ী আগামী ২১শে জুন এ নির্বাচনের ফলাফল ঘোষণার কথা ছিল। কিন্তু অতীত অভিজ্ঞতায় দেখা গেছে, প্রতিটি নির্বাচন কেন্দ্রেই মুসলিম ব্রাদারহুড তাদের প্রতিনিধি পাঠিয়ে নির্বাচন গণনা প্রত্যক্ষ করেছে। তাই তাদের দাবি করা ফলাফল নির্ভুল বলেই ধরে নেয়া যেতে পারে। মিশরের বেসরকারি দৈনিক এল-শোরৌক জানিয়েছে, মোরসি পেয়েছেন ৬৮২০৯৪৪ ভোট এবং আহমেদ শফিক পেয়েছেন ৫৪৯০১৫৮ ভোট। এদিকে রোববার নবনির্বাচিত প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সংক্রান্ত নতুন সাংবিধানিক অধ্যাদেশ জারি করেছে মিশরের সুপ্রিম কাউন্সিল অব দ্য আর্মড ফোর্সেস (এসসিএএফ)। নতুন এ অধ্যাদেশ অনুসারে প্রেসিডেন্ট এসসিএএফ’র অনুমতি সাপেক্ষে যুদ্ধ ঘোষণা করতে পারবে। দেশের অভ্যন্তরীণ বিদ্রোহ দমনে সেনাবাহিনীকে আহ্বান করার ক্ষমতাও প্রেসিডেন্টকে দেয়া হয়েছে। তবে খসড়া সংবিধানটির ৫৬ অনুচ্ছেদের প্রথম ধারা অনুসারে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত দেশের শাসনভার এসসিএএফ’র হাতেই থাকবে।
উল্লেখ্য, সাবেক শাসক হোসনি মুবারকের পতনের পর পুরনো সংবিধানকে বাতিল ঘোষণা করা হয়। পরবর্তীতে নতুন সংবিধান প্রণয়নের চেষ্টা করলেও মিশরের রাজনৈতিক দলগুলো মতৈক্যে পৌঁছতে ব্যর্থ হয়। এর পরিপ্রেক্ষিতে রোববার এসসিএএফ একটি খসড়া সংবিধান প্রকাশ করে। সংবিধান প্রণয়নের কাজ সম্পন্ন করার জন্য পার্লামেন্টে ১শ’ জনের একটি দলকে অনুমোদন দেয়া হবে বলে জানা গেছে। তবে মুসলিম ব্রাদারহুড তাদের এক তাৎক্ষণিক টুইটার বার্তায় এসসিএএফ’র প্রেসিডেন্টের ক্ষমতা সংক্রান্ত  ঘোষণাকে অসাংবিধানিক এবং অকার্যকর বলে অভিহিত করেছে।

No comments:

Post a Comment