Friday, June 8, 2012

ধৈর্যসীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে

পাকিস্তানের বিরুদ্ধে এবার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষা মন্ত্রী লিওন প্যানেটা। তিনি বললেন, পাকিস্তান তালেবান জঙ্গিদের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে বলে অভিযোগ আছে। এ বিষয়ে ওয়াশিংটন তার ধৈর্য হারিয়ে ফেলছে। গতকাল এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি।
এতে বলা হয়, তিনি গতকাল অকস্মাৎ কাবুল সফরে যান। সেখানে তিনি বলেন, হাক্কানি নেটওয়ার্কের জঙ্গিরা আফগানিস্তানে ন্যাটো সেনাদের বিরুদ্ধে হামলা চালাচ্ছে। ইসলামাবাদকে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। দক্ষিণ আফগানিস্তানের ভয়াবহ হামলার একদিন পরই গতকাল তিনি আফগানিস্তান সফরে যান। সেখানে সমপ্রতি যেসব হামলা হয়েছে তা নিয়ে তার আলোচনার কথা রয়েছে। তবে কোন জঙ্গিকে আশ্রয় দেয়ার অভিযোগ বরাবরই অস্বীকার করছে পাকিস্তান। আফগানিস্তানের প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে লিওন প্যানেটা আলোচনার পর ইঙ্গিত করেন গত কয়েক বছরে আফগানিস্তানে যত হামলা হয়েছে তার বেশির ভাগের জন্য দায়ী হাক্কানি নেটওয়ার্ক। তিনি বলেন, ওই নেটওয়ার্ক পাকিস্তানের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় উপজাতি এলাকাকে তাদের ঘাঁটি হিসেবে ব্যবহার করছে। তালেবানরা সমপ্রতি ন্যাটো সেনাদের বিরুদ্ধে হামলা জোরালো করেছে। এ নিয়ে সামরিক নেতাদের সঙ্গে আলোচনা করতে গতকাল কাবুল যান প্যানেটা। এর আগের দিন বুধবার আত্মঘাতী হামলাকরীরা কান্দাহারে ন্যাটোর একটি ঘাঁটির কাছে হামলা চালিয়ে কমপক্ষে ২০ জনকে হত্যা করে। আফগান কর্মকর্তারা বলেন, অন্যদিকে ন্যাটোর বিমান হামলায় লোগার প্রদেশে নিহত হয়েছে কমপক্ষে ১৮ বেসামরিক ব্যক্তি। প্যানেটা বলেন, পাকিস্তানকে যতদিন সন্ত্রাসীদের স্বর্গরাজ্য হিসেবে ব্যবহার করবে ততদিন আফগানিস্তানে শান্তি অর্জন করা কঠিন। এ বিষয়ে পাকিস্তানের পদক্ষেপ নেয়া খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সন্ত্রাসীদের অভয়াশ্রমের বিষয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। আমাদের ধৈর্যসীমা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। এবারই প্রথম নয়, অনেক বছর ধরে পাকিস্তানকে তার সন্ত্রাসী গ্রুপগুলো বিশেষ করে হাক্কানি নেটওয়ার্কের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে আহ্বান জানাচ্ছে ওয়াশিংটন। ওদিকে গত মে মাসে পাকিস্তানের অ্যাবোটাবাদে আল কায়েদার নেতা ওসামা বিন লাদেনকে যুক্তরাষ্ট্রের নেভি সিলের সদস্যা এককভাবে হত্যা করার পর থেকেই যুক্তরাষ্ট্র ও পাকিস্তানের মধ্যে সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে। এছাড়া পাকিস্তানের সীমান্তের ভিতরে যুক্তরাষ্ট্রের ড্রোন হামলা নিয়েও উত্তেজনা বিরাজ করছে। গত ২৪শে নভেম্বর ন্যাটোর বিমান হামলায় পাকিস্তানের ২৪ সেনা সদস্য নিহত হয়। এর পর থেকে আফগানিস্তানে ন্যাটো সেনাদের জন্য রসদ সরবরাহ লাইন বন্ধ করে দেয়। এসব নিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পাকিস্তানের টানাপড়েন চলে। সর্বশেষ সমপ্রতি যুক্তরাষ্ট্রে ৮ জাতির জি-৮ সম্মেলনে যোগ দিতে যান পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলী জারদারি। তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার সঙ্গে দেখা করতে চাইলেও ওবামা তাতে সাড়া দেননি। তবে বিশ্লেষকরা বলেন, আগামী ২০১৪ সালের শেষের দিকে আফগানিস্তান ছাড়তে চায় ন্যাটো সেনারা। কিন্তু আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার জন্য পাকিস্তানের সহযোগিতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। গত সেপ্টেম্বরে যুক্তরাষ্ট্রের বিদায় নেয়া জয়েন্ট চিফ অব স্টাফের চেয়ারম্যান এডমিরাল মাইক মুলেন বলেন, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইএর বিশ্বস্ত হাত হিসেবে কাজ করছে হাক্কানি নেটওয়ার্ক। তার পরের মাসেই পাকিস্তানের সেনাপ্রধান জেনারেল আশফাক পারভেজ কিয়ানি যুক্তরাষ্ট্রকে সতর্ক করে দেন। তিনি বলেন, পাকিস্তানকে সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে হামলা চালানোর পথে নামানোর পরিবর্তে যুক্তরাষ্ট্রের উচিত আফগানিস্তানের স্থিতিশীলতার দিকে নজর দেয়া।

No comments:

Post a Comment