
Source: http://www.mzamin.com/details.php?nid=MTkxNTc=&ty=MA==&s=MTk=&c=MQ==
25-08-12
বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল
(বিএনপি) চেয়ারপারসন এবং দুই মেয়াদে নির্বাচিত সাবেক প্রধানমন্ত্রী বেগম
খালেদা জিয়াকে নিয়ে আরব নিউজে স্মৃতিচারণ করেছেন সে দেশের সিনিয়র সাংবাদিক
ফারুক লোকমান। গতকাল প্রকাশিত ‘খালেদা জিয়া : ফর্ম এ হাউস ওয়াইফ টু দ্য
করিডর অব পাওয়ার’ শীর্ষক শিরোনামে তিনি লিখেছেন- বাংলাদেশের খালেদা জিয়া
আমাকে ভীষণভাবে ফিলিপাইনের সাবেক প্রেসিডেন্ট কোরাজন একুইনোর কথা মনে করিয়ে
দেন। কারণ তিনি ছিলেন একজন সাধারণ গৃহবধূ। এক মর্মান্তিক ঘটনার পর তিনি
দেশের সর্বোচ্চ আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছেন। দু’জনের স্বামী ঘাতকদের গুলিতে
নির্মমভাবে প্রাণ হারিয়েছেন। একুইনোর স্বামী নিহত হয়েছিলেন দোষী সাব্যস্ত
এক অপরাধীর হাতে। বাংলাদেশের প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান নিহত হয়েছিলেন এক
সামরিক ক্যু’র মাধ্যমে। খালেদা জিয়া হলেন তারই বিধবা পত্নী। তিনি পরে
বিশ্বের অন্যতম বৃহৎ মুসলিম রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী নির্বাচিত হয়েছেন।
দেশের ইতিহাসে প্রথম এবং মুসলিম বিশ্বে গণতান্ত্রিক দেশের দ্বিতীয় নারী
প্রধানমন্ত্রী হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার পর তিনি ১৯৯১ থেকে ১৯৯৬ সাল পর্যন্ত
ক্ষমতায় ছিলেন। এরপর তিনি ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্তও প্রধানমন্ত্রিত্বের
দায়িত্ব পালন করেছেন। খালেদা জিয়া ১০ বছর ক্ষমতায় থাকার পাশাপাশি তিনি
১৯৯১, ১৯৯৬ এবং ২০০১ সালে পাঁচটি নির্বাচনী এলাকার জনপ্রতিনিধি নির্বাচিত
হয়েছেন। ফোর্বস ম্যাগাজিন যখন বিশ্বের ১০০ ক্ষমতাসীন নারীর মধ্যে ২০০৫ সালে
তাকে ২৯তম এবং ২০০৬ সালে ৩৩তম বলে ঘোষণা দিয়েছিল তখন তিনি ১৪৭ মিলিয়ন
বর্গকিলোমিটার এলাকার ১৫০ মিলিয়ন জনগোষ্ঠীর দেশের নেতৃত্বে ছিলেন। তার
উল্লেখযোগ্য শাসনামল এবং বাংলাদেশের আরেক সাহসী নারী হাসিনা ওয়াজেদের সঙ্গে
প্রতিদ্বন্দ্বিতার সময় বাংলাদেশে তেমন যাওয়ার সুযোগ না হলেও আমার তার
সঙ্গে সাক্ষাৎ এবং কথা বলার সুযোগ হয়েছিল। মক্কা রোডে আমার বাড়ির কাছেই
তিনি তখন অবস্থান করেছিলেন। সৌদিতে বাংলাদেশের দূতাবাস তখন মক্কা রোডেই
ছিল। আমি খালেদা জিয়ার সঙ্গে সাক্ষাৎ করার জন্য দূতাবাস থেকে ফোন পাওয়ার
পরপরই রাজি হয়েছিলাম। তৎক্ষণাৎ গাড়ি নিয়ে আমি দূতাবাসে হাজির হলাম। সেখানেই
আমি সব ধরনের বাধা বিপত্তি অতিক্রম করে রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া
চমৎকার সেই নারীর সাক্ষাৎ পেলাম। স্বামীর উত্তরসূরি হিসেবে তিনি নানা
সমস্যায় জর্জরিত একটি দেশের সর্বোচ্চ পদে আসীন হয়েছেন। অত্যন্ত দরিদ্র দেশে
তখন মাথাপিছু আয় ৮০০ ডলারের বেশি ছিল না। কিন্তু মোট তিন মেয়াদে তার ১০
বছরের শাসনামলে নিজেকে তিনি যোগ্য এবং জয়ী হিসেবে প্রমাণ করেছেন। ভবনের
ভেতরে ঢুকে সিঁড়ি দিয়ে উপরে ওঠার সময় আমি বাংলাদেশের সংগ্রামী মানুষের
চিত্র দেখতে পাচ্ছিলাম। একই সঙ্গে আমি সেই দেশকে শাসন করার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ
করায় সেই গৃহবধূর উদ্যম এবং সাহসের প্রশংসা করছিলাম। দ্বিতীয় তলায় ছোট
ছিমছাম একটি বসার ঘরে আমাদের বসার ব্যবস্থা করা হয়েছিল। খালেদা জিয়া
বসেছিলেন একটি সোফায় আর আমি তার মুখোমুখি একটি চেয়ারে বসে ছিলাম।
বাংলাদেশের বিভিন্ন বিষয় এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট এরশাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে আমরা
কথা বলেছিলাম। আমি বেশ অবাক হয়েছিলাম যে একটি হ্যান্ডগান রাখার অপরাধে
সরকার তার বিরুদ্ধে মামলা করার পরিকল্পনা করছে। অভ্যুত্থানের পরপরই তার
বাড়িতে তল্লাশি অভিযানের সময় সেই হ্যান্ডগানটি পাওয়া গিয়েছিল। তিনি আমার
দিকে তাকিয়ে জিজ্ঞেস করেছিলেন কেন আমি এতে অবাক হয়েছি? আমি তাকে বলেছিলাম
একজন ব্যক্তি জোর করে একটি দেশের ক্ষমতা দখল করেছিল তাই একটি হ্যান্ডগানের
বিষয়টি এতো গুরুত্বপূর্ণ কেন? তার শাসনামলে তিনি তো ইচ্ছে করলে ভারী
অস্ত্রশস্ত্র দখল করতে পারতেন এবং বিমানবাহিনীকে দিয়ে যা ইচ্ছে তাই করতে
পারতেন। এ কথা শুনে তিনি (খালেদা জিয়া) বেশ উদারভাবে হাসছিলেন যেন তিনি
আমার সঙ্গে একমত পোষণ করছেন। তবে এরশাদের বিরুদ্ধে অন্যান্য অভিযোগে
পাশাপাশি হ্যান্ডগান রাখার দায়েও অভিযোগ আনা হয়েছিল। সৌদি আরব এবং অন্যান্য
উপসাগরীয় অঞ্চলে বাংলাদেশীদের কর্মসংস্থানের ব্যাপারে আমি তাকে যে পরামর্শ
দিয়েছিলাম তিনি তা শুনেছিলেন। আমার সেই পরামর্শকে তিনি বেশ গুরুত্বের
সঙ্গে বিবেচনা করেছিলেন। আর তাই এখন সৌদি আরবে পাঁচ লাখ বাংলাদেশীর
পাশাপাশি উপসাগরীয় অঞ্চলের অন্যান্য দেশেও হাজার হাজার বাংলাদেশী কাজ
করছেন। গত ২০ থেকে ৩০ বছর ধরে ভারতীয় এবং পাকিস্তানিরা যেভাবে দেশের
অর্থনীতিতে অবদান রাখছেন ঠিক একইভাবে এখানে কর্মরত বাংলাদেশীরাও তাদের
দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখছেন। তিন মেয়াদে তার শাসনামলে শিক্ষা
ক্ষেত্রে বিনাবেতনে বাধ্যতামূলক শিক্ষার প্রবর্তন, দশম শ্রেণী পর্যন্ত
ছাত্রীদের উপবৃত্তি এবং শিক্ষার জন্য খাদ্য কর্মসূচি অন্তর্ভুক্ত রয়েছে।
তিনি বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি চালু করেছিলেন এবং যমুনা সেতুর নির্মাণকাজ শুরু
করেছিলেন।
No comments:
Post a Comment