একজন সালমাকে নিয়ে এক বাংলাদেশীর কাণ্ড

কুয়েতে এবার যৌন বাণিজ্যের অভিযোগ উঠেছে এক বাংলাদেশী ও
এক ভারতীয় নাগরিকের বিরুদ্ধে। ভারতীয় ওই নাগরিক ফিলিপাইনের এক
গৃহপরিচারিকাকে ২০০ দিনারে বিক্রি করে দেয় বাংলাদেশী এক দালালের কাছে। সে
তাকে কিনে নিয়েই বাধ্য করে দেহ ব্যবসায় নামতে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন আরব
টাইমস। এতে বলা হয়, ফিলিপাইনের ২৯ বছর বয়সী যুবতী গৃহপরিচারিকা সালমা
(পরিবর্তিত নাম)। ২০১১ সালের ১৫ই ফেব্রুয়ারি তিনি কুয়েতে যান কাজ নিয়ে। কাজ
করছেন কুয়েতে এক বাসায়। কিন্তু সেখানে অতিরিক্ত কাজ করানো হতো তাকে দিয়ে।
পর্যাপ্ত ঘুমানোর সময় পেতেন না। এ কারণে তিনি ১৭ই জুলাই সাবাহিয়া এলাকায়
তার মালিকের বাসা থেকে পালান। এরপরই পড়েন ভারতীয় এক দালালের খপ্পরে। এ
সম্পর্কে সালমা বলেন, আমি আর কাজের ভার সইতে পারছিলাম না। তাই আমি মালিকের
বাসা থেকে পালাই। ওই বাসায় প্রতিদিন আমাকে সকাল ৬টায় ঘুম থেকে উঠতে হতো।
বিরতিহীন কাজ করতে হতো দুপুর ১টা পর্যন্ত। আমি ঠিকমতো ঘুমাতে পারতাম না।
ঠিক এমন অবস্থায় আমাকে একজন ফোন করে। সে নিজেকে ভারতীয় বলে পরিচয় দেয়।
আস্তে আস্তে সে আমার বন্ধু হয়ে ওঠে। এক পর্যায়ে সে আমাকে অন্যত্র ভাল চাকরি
দেয়ার লোভ দেখায়। ওই সময় আমি খুব বিরক্ত ছিলাম। আমি সিদ্ধান্ত নিতে
পারছিলাম না। এরই মধ্যে আমাকে মালিকের এক ভাই ধর্ষণের চেষ্টা করে। তাই
পালিয়ে যাই। ওইদিন আমার মালিকের বাসার সামনে দাঁড়িয়ে ছিল ওই ভারতীয়। আমি
বাসা থেকে বের হওয়ামাত্র সে আমাকে একটি গাড়িতে ওঠায়। কিন্তু আমার মধ্যে
সন্দেহ দানা বাঁধে। আমি তাকে বলি, আমার কাজ দেয়া এজেন্সির কাছে পৌঁছে দিতে।
কিন্তু সে আমাকে নিয়ে যায় জিজিব আল শুইয়খ এলাকায়। সেখানে এক বাংলাদেশীর
কাছে আমাকে বিক্রি করে দেয়। আমি সেখান থেকে পালিয়ে আসার চেষ্টা করি। কিন্তু
তারা আমাকে একটি রুমের ভিতর আটকে রাখে। তারপর ওই বাংলাদেশী আমাকে ধর্ষণ
করে। আমি তখন সাহায্যের জন্য চিৎকার করি। কিন্তু সে আমাকে হুমকি দেয়। বলে,
চিৎকার করলে আমাকে হত্যা করবে। আমার ঠোঁট কেটে ফেলবে। এর দু’দিন পর সে
আমাকে একটি যৌনপল্লীতে নিয়ে যায়। আমি মুক্তি পাওয়ার জন্য আর্তনাদ করি।
কিন্তু আমার সব কান্না বিফলে গেল। আমাকে সেখানে একটি জীর্ণ রুমে আটকে রাখা
হয়। সেখানে শুধু কিছু মাদুর ছিল। বিভিন্ন দেশের পুরুষ আমার রুমে আসা শুরু
করলো। তারা সবাই আমার শরীর ভোগ করলো। প্রতিদিন কতজন খদ্দেরের মনোরঞ্জন করতে
হয়েছে আমার তা ঠিকমতো মনে নেই। এসব বলতে বলতে কান্নায় ভেঙে পড়েন সালমা।
তিনি বলেন, একেক দিন আমাকে এক এক জায়গায় নিয়ে রাখা হতো। প্রতিজন খদ্দেরের
কাছ থেকে ওই বাংলাদেশী ৫ দিনার করে আদায় করতো। এর ভিতর থেকে ওই বাংলাদেশী
আমাকে দিতো মাত্র ১ দিনার। আমি ফের মুক্তি চাইলাম। কিন্তু সে আমাকে হত্যার
হুমকি দেয়। সালমা বলেন, এ অবস্থায় ওই পতিতালয়ে আমি ফিলিপাইনের ৩ জন মেয়েকে
দেখতে পাই। এছাড়া, সেখানে ইন্দোনেশিয়ার মেয়েও ছিল। কিন্তু আমাদেরকে একের
সঙ্গে অন্যকে কথা বলতে দেয়া হতো না। আমি মুক্তির পথ খুঁজতে থাকি। গত ১০ই
আগস্ট ওই বাংলাদেশী ও তার সহযোগীরা সকাল ৭টায় যখন গভীর ঘুমে তখন আমি পালাই।
কারণ, তখন আমার রুম তালা দেয়া ছিল না। তাই আমি চুপিসারে রান্নাঘরে যাই।
সেখানে ছোট্ট একটি জানালা। সেটাতে তোয়ালে, তার সঙ্গে বাঁধি একটি বেডশিট। তা
বেয়ে নেমে যাই একতলায়। সেখান থেকে লাফিয়ে নিচে পড়ি। তারপরই একটি ট্যাক্সি
ধরে এর চালককে ফিলিপাইনের দূতাবাসে যেতে বললাম। সেখানে গিয়ে সালমা কান্নায়
ফেটে পড়েন। তিনি গালফ টাইমসের কাছে আকুতি জানান, ওই বাংলাদেশীকে ও তার
সহযোগীদের যেন উপযুক্ত শাস্তি দেয়া হয়। সালমা তার দেশের দূতাবাসে যাওয়ার
পর সেখানকার অ্যাসিস্ট্যান্স টু ন্যাশনালস ইউনিট হেড দালিডিগ ইব্রাহিম
তানান্দাতো দূতাবাসকে নির্দেশ দেন- ওই পতিতালয়ে আটক অন্য তিন ফিলিপাইনের
মেয়েকে উদ্ধারের পদক্ষেপ নিতে। তদন্তের স্বার্থে ওই বাংলাদেশী ও তার
সহযোগীদের নাম প্রকাশ করা হয়নি রিপোর্টে।
No comments:
Post a Comment