দুই ওবামা’র দুই ভুবন
মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ওভাল অফিসে বসে দেশ
শাসনের সঙ্গে সঙ্গে এয়ারফোর্স ওয়ানে করে বিশ্ব ভ্রমণের স্বাদ নিচ্ছেন।
কিন্তু তারই সৎভাই জর্জ ওবামা আফ্রিকার সবচেয়ে জঘন্য বস্তিতে জীবন ধারণ
করছেন। বারাক ওবামা যখন ক্ষমতার সিঁড়ি বেয়ে ওপরে উঠছেন ঠিক তখনই তার সৎভাই
জর্জ লড়াই করছেন মাদকাসক্তির সঙ্গে। এক সময়ে তিনি হেরোইনেও আসক্ত ছিলেন। ৩০
বছর বয়সী জর্জ বলেছেন, নিজের নামের উপাধি এখন তার কাছে প্রায়ই বোঝা বলে
মনে হয়। ডেইলি মেইল জানিয়েছে, এই দুই ওবামার পিতা একজন হলেও বারাক ওবামা
হলেন আমেরিকান মায়ের সন্তান। হাওয়াইতে তার জন্ম। আর জর্জ ওবামা জন্মেছেন
কেনিয়াতে ওবামা সিনিয়রের চতুর্থ স্ত্রীর গর্ভে। আজ বারাক ওবামা হোয়াইট
হাউসে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট। এয়ারফোর্স ওয়ানে করে সারা বিশ্বে ঘুরে
বেড়াচ্ছেন। বিশ্বব্যাপী তার আজ বন্ধুর অভাব নেই। আর জর্জ ওবামার অবস্থান
আফ্রিকার বস্তিতে। দারিদ্র্যের কষাঘাতের সঙ্গে তিনি যেন লোহার শেকলের মতো
বাঁধা পড়ে আছেন। বারাক ওবামার কট্টর সমালোচক বলে পরিচিত এক ব্যক্তি একটি
প্রমাণ্যচিত্র নির্মাণের প্রয়োজনে জর্জকে অংশ নিতে রাজি করায় তার
জীবন-যাপনের বিস্তারিত সংবাদ শিরোনামে চলে আসে। ‘২০১৬’ শিরোনামের
প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করছেন ‘শিন্ডলার’স লিস্ট’ এর সঙ্গে জড়িত নেপথ্যের
নির্মাতারা। এ প্রামাণ্যচিত্রে মূলত ওবামা আবার নির্বাচিত হলে পরিস্থিতি
কেমন হতে পারে- সেটাই তুলে ধরা হয়েছে। অবশ্য প্রামাণ্য চিত্রে জর্জ সরাসরি
বারাক ওবামার কোন সমালোচনা করেননি। এর মূল পরিকল্পনা করেছেন মার্কিন লেখক
ডিনেশ ডি’সুজা। তার ‘দি রুট অব ওবামা’র রেজ’ এ ওবামাকে তিনি একজন
আত্মকেন্দ্রিক প্রেসিডেন্ট হিসেবে তুলে ধরেছেন। জর্জ নিজে ‘হোমল্যান্ড’
নামের একটি স্মৃতিকথা লিখেছেন। ২০১২ সালে প্রকাশিত এ স্মৃতিকথায় তিনি
কেনিয়াতে একজন মধ্যবিত্ত ব্যক্তির বেড়ে ওঠার স্বরূপ তুলে ধরেছেন। এর
মুখবন্ধে বলা হয়েছে, জর্জ ওবামা নাইরোবির বস্তিতে থাকতেই পছন্দ করেন।
সেখানে তিনি বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে বস্তিবাসীদের বিশেষ করে
শিশুদের সহযোগিতার লক্ষ্যে কাজ করতে চান। স্মৃতিকথাতে জর্জ বলেছেন, আমার
ভাই বেড়ে উঠেছেন বিশ্বের সবচেয়ে ক্ষমতাবান দেশের নেতৃত্ব দেবার জন্য।
কেনিয়াতে আমার উদ্দেশ্য হচ্ছে এখানকার বস্তিতে বসবাসকারী বিশ্বের সবচেয়ে
দরিদ্র জনগণের নেতা হওয়া। শুনতে অনেকটা হলিউডের সিনেমার চিত্রনাট্যের মতো
হলেও জর্জ নিজেকে বস্তির একটি ফুটবল দলের মূল চালিকা শক্তি হিসেবে দাবি
করেন। ‘ওবামা’স চ্যাম্পস’ নামের এ ফুটবল দলটিকে তিনি কেনিয়ার একটি শ্রেষ্ঠ
দল হিসেবে গড়ে তোলার স্বপ্ন দেখেন। এ ধরনের ভাল কাজ করায় কেনিয়ার অনেকেই
চাইছেন জর্জ যেন কেনিয়ার প্রেসিডেন্ট হিসেবে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। তারা
মনে করেন, একই পদবির অধিকারী তার ভাই বিশ্বের সবচেয়ে শক্তিশালী রাজনীতিবিদ
হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাই তার প্রভাবও জর্জের জীবনে পড়বে সেটাই তারা
স্বাভাবিক মনে করছেন। জর্জ অবশ্য হেরোইন বা কোকেইন ব্যবহারের কথা অস্বীকার
করেছেন। তবে তিনি এখন স্থানীয়ভাবে চাঙ্গা নামে পরিচিত বিশেষ এক ধরনের চোলাই
মদ পান করেন। ইথানল এবং ব্যাটারির এসিডের সমন্বয়ে এ চোলাই মদকে আরও কড়া
বানানোর চেষ্টা করা হয়। এ পানীয় পান করে অনেকেই অন্ধ হয়ে গেছেন বা
মৃত্যুবরণ করেছেন বলে অভিযোগ রয়েছে।
No comments:
Post a Comment