মুসলমানদের উপহাস করে মার্কিন চলচ্চিত্র-বেনগাজীর হামলায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতসহ নিহত ৪

লিবিয়ার পূর্বাঞ্চলীয় বেনগাজী শহরে মার্কিন কনস্যুলেট
অফিসে বিক্ষুব্ধ হামলা হয়েছে। এতে সেখানে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত
ক্রিস্টোফার স্টিভেন্স নিহত হয়েছেন। অনলাইন আল জাজিরা জানিয়েছে, মঙ্গলবার
রাতে ওই হামলা হয়। এতে স্টিভেন্স ও তিন দূতাবাস কর্মীও নিহত হয়েছেন। আগুনের
কারণে সৃষ্ট ধোঁয়ায় দম বন্ধ হয়ে ক্রিস্টোফার স্টিভেন্সসহ তার সঙ্গে থাকা
দুই মার্কিন নিরাপত্তাকর্মী মারা গেছেন বলে লিবিয়ার নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ
জানিয়েছেন। এতে আরেকজন কনস্যুলেট কর্মকর্তাও নিহত হয়েছেন। তবে তার পরিচয়
জানা যায়নি। এ ঘটনায় ঢাকার গুলশানে কূটনৈতিক পাড়ায় নিরাপত্তা জোরদার করা
হয়েছে। একটি মার্কিন চলচ্চিত্রে মহানবী হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) এবং ইসলাম
ধর্মকে হেয় ও অবমাননা করার অভিযোগে এ বিক্ষোভ হয়। এ ঘটনায় মুসলিম বিশ্ব
ক্ষোভে ফেটে পড়েছে। দেশে দেশে প্রতিবাদ বিক্ষোভ হচ্ছে। ফলে অনেক দেশেই
মার্কিন দূতাবাসে নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে। কনস্যুলেট ভবনে হামলার সময়
মার্কিন রাষ্ট্রদূত সেখানে সংক্ষিপ্ত সফরে ছিলেন বলে আল-জাজিরা উল্লেখ
করেছে। নিহতদের মরদেহ ত্রিপোলি হয়ে জার্মানির মার্কিন ঘাঁটিতে পাঠানোর কথা।
লিবিয়া সুপ্রিম সিকিউরিটি কমিটির মুখপাত্র আবদেল মোনেম আল হুর বলেছেন,
পাশের একটি প্রতিষ্ঠান থেকেই কনস্যুলেট লক্ষ্য করে রকেটচালিত গ্রেনেড হামলা
করা হয়েছে। তিনি বলেছেন, মার্কিন কনস্যুলেটের বাইরে লিবিয়ার সেনাবাহিনী
এবং সশস্ত্র মিলিশিয়াদের মধ্যে ভয়াবহ সংঘর্ষ হয়েছে। কনস্যুলেটের আশপাশের
সড়ক বন্ধ করে দেয়া হয়েছে। নিরাপত্তা কর্মীরা ভবনটি ঘিরে রেখেছে। তবে
আক্রান্ত কনস্যুলেট ভবন থেকে যুক্তরাষ্ট্রের অন্য কর্মীদের সরিয়ে নিরাপদ
স্থানে নিয়ে যাওয়া হয়েছে বলে লিবিয়ার সহকারী স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়ানিস আল
শরিফ জানিয়েছেন। আল-জাজিরা জানিয়েছে, ‘ইসলামি আইনের সমর্থক’ বলে দাবি করে
একটি সংগঠন ওই অবমাননাকর চলচ্চিত্রের প্রতিবাদে এ হামলা চালানোর কথা
স্বীকার করেছে। এছাড়া, মঙ্গলবার মিশরের রাজধানী কায়রোতেও মার্কিন দূতাবাসের
সামনে বিক্ষোভ করে প্রতিবাদকারীরা। তারা এ সময় দূতাবাসের দেয়াল টপকে ভেতরে
ঢুকে পড়ে। সেখানে তারা মার্কিন পতাকা ছিঁড়ে ফেলে এবং একটি কালো ইসলামি
পতাকা স্থাপন করে। যুক্তরাষ্ট্র সন্ত্রাসী হামলা চালানোর বার্ষিকী পালনের
দিনই এ দু’টি ঘটনা ঘটলো। মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি ক্লিনটন
কনস্যুলেট কর্মকর্তাদের মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে এক বিবৃতিতে বলেছেন, এ
ভয়ঙ্কর ঘটনায় আমাদের হৃদয় ভেঙে গেছে। তিনি বলেন, ইন্টারনেটে উস্কানিমূলক
পোস্টের জবাবে কেউ কেউ এ ধরনের হামলার যৌক্তিকতা খোঁজার চেষ্টা করছেন।
যুক্তরাষ্ট্র অন্য ধর্ম বা মতের অবমাননাকর যে কোন প্রচেষ্টারই নিন্দা
জানাচ্ছে।
‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’
যে চলচ্চিত্র নিয়ে এ ঘটনার সূত্রপাত
তার নির্মাতা ক্যালিফোর্নিয়ায় বসবাসকারী ৫৬ বছর বয়সী ইসরাইলি চলচ্চিত্র
নির্মাতা স্যাম বাসিল। তিনি এখন পলাতক। এটি প্রযোজনা করেছে ক্যালিফোর্নিয়া
প্রবাসী ইসলাম-বিদ্বেষী এক মিশরীয় কপটিক খ্রিস্টান মরিস সাদেক। অজ্ঞাত
স্থান থেকে বার্তা সংস্থা এপিকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে বাসিল এখনও নিজের
অবস্থানে অটল থেকে ইসলামকে ক্যান্সার বলে উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, এ
ছবি নির্মাণের উদ্দেশ্য ছিল রাজনৈতিক বক্তব্যকে আরও উস্কে দেয়া। তিনি
স্বীকার করেন, তার নির্মিত ছবির জন্য এতটা ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে তিনি তা আশা
করেননি। মার্কিন কনস্যুলেটের ঘটনায় তিনি দুঃখ প্রকাশ করেছেন। একই বিষয়ে তার
২০০ ঘণ্টার একটি সিরিজ পরিকল্পনা করছেন বলে তিনি জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন,
ছবিটি তিনি ইংরেজি ভাষাতেই নির্মাণ করেছেন। কে বা কারা এতে সাবটাইটেল যুক্ত
করেছে সেটা তার জানা নেই। তিনি দাবি করেন, ছবিটি এখনও কোথাও দেখানো হয়নি।
আপাতত তিনি এর বিপণনের বিষয়টি স্থগিত রেখেছেন। ‘ইনোসেন্স অব মুসলিম’ নামের
দুই ঘণ্টার ছবিটিতে তীব্র ইসলামবিদ্বেষী প্রচারণা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ
করেছেন প্রতিবাদকারীরা। ৫০ লাখ ডলারের বাজেটের এই ছবিটি আরবি অনুবাদসহ
ইউটিউবে পাওয়া যাচ্ছে।
No comments:
Post a Comment