‘যেন এক নরকে বাস করছি’

মনে হচ্ছে আমি এক নরকে বাস করছি। আমাদের দেখার কেউ
নেই। আমাদের যাওয়ার কোন জায়গা নেই। আমাদের বেঁচে থাকার জন্য উপার্জনের কোন
ব্যবস্থা নেই। বুকচাপা কষ্টের এমন বহিঃপ্রকাশ ঘটাচ্ছিলেন মিয়ানমারে দাঙ্গার
শিকার এক মুসলমান কাইও মিন্ট। তিনি রাখাইন রাজ্যের রাজধানী সিতওয়ের কাছেই
দিচাউঙ্গ আশ্রয় শিবিরে কোনমতে ঠাঁই পেয়েছেন। তিনি বললেন, মুসলমানদের সঙ্গে
বৌদ্ধদের যে সংঘাত সৃষ্টি হয়েছে তা সমাধানে কর্তৃপক্ষ এগিয়ে আসছে না।
সেনাবাহিনীও আমাদেরকে নিরাপত্তা দিচ্ছে না। গত ২১শে অক্টোবর নতুন করে সৃষ্ট
দাঙ্গায় এ পর্যন্ত সরকারি হিসাবে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে কমপক্ষে ৮৮।
কিন্তু বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থার হিসাবে তা কয়েক শত। গতকাল বার্তা সংস্থা
এপি জানায়, নতুন এ দাঙ্গায় ৩২ হাজারেরও বেশি মানুষ গৃহহীন হয়েছে। এর শিকার
রোহিঙ্গা মুসলমান ও বৌদ্ধরা সরকারের ব্যর্থতার কড়া সমালোচনা করেছে। এ
সঙ্কট নিয়ে আন্তর্জাতিক পর্যায়ে ব্যাপক উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। বিষয়টি
মিয়ানমারের সংস্কারপন্থি প্রেসিডেন্ট থেইন সেইনের সামনে অন্যতম বড় সমস্যা
হিসেবে দেখা দিয়েছে। এরই মধ্যে নতুন করে প্রায় ৫ হাজার বাড়িঘর জ্বালিয়ে
দেয়া হলেও এখনও সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো কোন পদক্ষেপের কথা শোনা যায় নি।
অন্যদিকে আগামীতে মিয়ানমারের প্রেসিডেন্ট হিসেবে যে অং সান সুচিকে দেখা হয়,
যিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পেয়েছেন তিনি এ নিয়ে টুঁ-শব্দটি পর্যন্ত
করেন নি। এ নিয়ে নানা মাত্রিক বিতর্ক হচ্ছে তাকে নিয়ে। রাখাইন রাজ্যের
মুখপাত্র মিউ থান্ট বলেছেন, নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ওই এলাকায় অধিক পুলিশ ও
সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। তবে তিনি বিস্তারিত কিছু জানাতে অস্বীকৃতি জানান।
মিয়ানমারে প্রায় ৮ লাখ রোহিঙ্গার বসবাস। তাদের বেশির আবাস রাখাইন রাজ্যে।
সেখানে গত জুনে সৃষ্ট দাঙ্গার পর থেকে নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে সরকারি
হিসাবে ১৫০। রাখাইনে বসবাসকারীদের মধ্যে বেশির ভাগ আবার বাস করেন মুঙড,
বুথিডাঙ ও রাথেডাংয়ে। তাদেরকে সরকার ও স্থানীয় মিয়ানমারের নাগরিকরা বিদেশী
হিসেবে দেখে থাকে। এর মধ্য দিয়ে রাখাইনের বৌদ্ধদের সঙ্গে তাদের দূরত্বের
সৃষ্টি হয়েছে।
No comments:
Post a Comment