ফেসবুকে যৌন নিপীড়নের ফাঁদ

প্রথমে ফেসবুকে অপরিচিত একাউন্ট থেকে ফ্রেন্ড
রিকোয়েস্ট আসে। একসেপ্ট করলে পরিচয় হয়। তারপর চলতে থাকে চ্যাট অনলাইন
আড্ডা। আস্তে আস্তে ঘনিষ্ঠ হয়ে দেখা করার প্রস্তাব। দেখা করতে যাওয়া মানেই
প্রতারক চক্রের ফাঁদে পা দেয়া। প্রথমে অপহরণ করে প্রতারক চক্র। তারপর আটকে
রেখে ধর্ষণ, নিপীড়ন-নির্যাতন, সর্বস্ব বিলীন করে এক সময় পতিতালয়ে বিক্রি
করে দেয়। এভাবেই প্রতিনিয়ত সামাজিক যোগাযোগের জনপ্রিয় সাইট ফেসবুকের
মাধ্যমে প্রতারণার শিকার হয়ে আসছে ইন্দোনেশিয়ার হাজার হাজার শিশু ও কিশোরী।
সমপ্রতি ইন্দোনেশিয়ায় অনলাইনে এমন প্রতারণার বিষয়ে একটি প্রতিবেদন তুলে
ধরেছে বার্তা সংস্থা এপি। এতে কয়েকটি ঘটনা তুলে ধরা হয়। ১৪ বছর বয়সী এক
কিশোরী অপরিচিত প্রাপ্তবয়স্ক এক লোকের ফ্রেন্ড রিকোয়েস্ট পায়। অনেকটা
কৌতূহল মেটাতেই এটা একসেপ্ট করে সে। এভাবেই প্রতারকের হাতে নিজেকে সঁপে দেয়
হাইস্কুলের ওই ছাত্রী। নিজেকে ২৪ বছর বয়সী ইয়োগি পরিচয় দেয় প্রতারক।
কিছুদিন চ্যাট করার পর তাদের মধ্যে ফোন নাম্বার বিনিময় হয়। এক সময় শপিংমলে
এসে দেখা করার প্রস্তাব দেয় প্রতারক। প্রথম দেখাতে তাকে ভালো লাগে মেয়েটির।
আবারও দেখা করার বিষয়ে রাজি হয় তারা। মাকে চার্চ থেকে আসার সময় অসুস্থ
বান্ধবীকে দেখতে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে পড়ে সে। রাজধানী জাকার্তার উপকণ্ঠের
বাসার সামনে থেকে তাকে নিজের গাড়িতে তুলে নেয় বন্ধুবেশী প্রতারক। নিয়ে যায়
পশ্চিম জাভা শহরের বোগর এলাকায়। সেখানে ছোট্ট একটি রুমে আটকে রেখে বার বার
ধর্ষণ করে। সেখানে তার সঙ্গে ১৪ থেকে ১৭ বছর বয়সী আরও ৫টি মেয়ে ছিল। এভাবে
এক সপ্তাহ আটকে রাখার পর প্রতারক তাকে নারী ও শিশুদের পতিতাবৃত্তির জন্য
পরিচিত ব্যাটাম দ্বীপের একটি পতিতালয়ে বিক্রি করে দেয়ার কথা জানায়। ফুঁপিয়ে
কাঁদতে থাকে মেয়েটি। শত অনুনয় করে বাসায় ফিরে যাওয়ার জন্য। খুনের ভয়
দেখিয়ে তাকে কান্না থামাতে বলে প্রতারক। ৩০শে সেপ্টেম্বর একটি বাস স্টেশনে
পাওয়া যায় মেয়েটিকে। এভাবেই ইন্দোনেশিয়ায় প্রতিদিন অনেক মেয়ে ও শিশু
প্রতারণার শিকার হয়ে যৌন নিপীড়ক চক্রের ফাঁদে পড়ছে। এ বছর ১২৯ শিশু অপহরণের
শিকার হয়েছে দ্বীপ দেশটিতে। এর মধ্যে কমপক্ষে ২৭ শিশু ফেসবুকে পরিচয়ের
সূত্র ধরে অপহরণের শিকার হয়েছে বলে জানিয়েছে দেশটির ন্যাশনাল কমিশন ফর
চাইল্ড প্রটেকশন। এ ২৭ শিশুর মধ্যে একটিকে মৃত পাওয়া গেছে। ইন্দোনেশিয়ায় ৫
কোটি ফেসবুক ইউজার রয়েছে। সামাজিক যোগাযোগের সাইটটি ব্যবহারে
যুক্তরাষ্ট্রের পরেই শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে দেশটি। ২৪ কোটি জনসংখ্যার দেশ
ইন্দোনেশিয়ায় প্রতি বছর ৪০ থেকে ৭০ হাজার শিশু অপহরণের শিকার হয়। এদেরকে
পাচার, পর্নোগ্রাফি ও পতিতালয়ে ব্যবহার করা হয়। যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র
দপ্তর সতর্ক করে দিয়ে বলেছে, এসব ক্ষেত্রে বেশির ভাগ মেয়েকেই সামাজিক
যোগাযোগের সাইটের মাধ্যমে সংগ্রহ করা হয়।
No comments:
Post a Comment