Sunday, November 4, 2012

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হতে চান ফৌজিয়া কোফি




আফগানিস্তানের পরবর্তী প্রেসিডেন্ট হতে ইচ্ছুক ফৌজিয়া কোফি। কিন্তু তার ইচ্ছে আফগানিস্তানের প্রেক্ষাপটে অনেকটাই অগ্রহণযোগ্য। কারণ, তিনি হচ্ছেন একজন নারী। তবে দেশের প্রেক্ষাপটে বিষয়টি প্রায় অসম্ভব হলেও তিনি ইতিমধ্যেই এ ব্যাপারে আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের দৃষ্টি আকর্ষণে সক্ষম হয়েছেন। সমপ্রতি যুক্তরাষ্ট্রের সিএনএনকে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে তিনি দেশের রাজনীতির ব্যাপারে তার মতামত তুলে ধরার পাশাপাশি দেশের নানা সমস্যার ব্যাপারে কথা বলেছেন। কট্টরপন্থি তালেবানরা স্পষ্টভাষী ফৌজিয়াকে ইতিমধ্যেই বেশ কয়েকবার হত্যার চেষ্টা করেছে। আফগান পার্লামেন্টের সদস্য হিসেবে বাড়ি থেকে বের হওয়ার সময় প্রতিবারই তিনি দুই কন্যার কাছ থেকে শেষবারের মতো বিদায় নিয়ে আসেন। প্রতিবারই তার মনে হয়, আর হয়তো তিনি মেয়েদের কাছে ফিরে আসতে পারবেন না। সিএনএনের ক্রিস্টিন আমানপুরের সঙ্গে দেয়া সাক্ষাৎকারে ফৌজিয়া বলেছেন, আমাদের মানসিক কাঠামো পরিবর্তনের ব্যাপারে এবার আমাদেরকে চিন্তা-ভাবনা শুরু করা উচিত। এখনও আমাদের সমাজে সংস্কৃতি এবং ঐতিহ্য নিয়ে ভুল ধারণা বহাল রয়েছে। তবে এ নিয়ে লড়াই করতে হবে। কোন একজনকে ঝুঁকি নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে। তিনি বলেন, আফগান নারীদের মধ্যে প্রতি ১০ জনের মধ্যে মাত্র একজন অক্ষরজ্ঞান সম্পন্ন। অবশ্য ২০০১ সালের পর এ সাক্ষরতার হার তিন গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। জোট বাহিনীর সেনাদের আফগানিস্তানে ১১ বছর অবস্থানের পরও কেবল অন্য পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক রাখার সন্দেহে তালেবানরা একজন নারীর মৃত্যুদণ্ড কার্যকর করতে পারে। এছাড়া ধারণা করা হচ্ছে, ২০১৪ সালের শেষ নাগাদ প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের দ্বিতীয় মেয়াদে পাঁচ বছরের ক্ষমতা শেষ হওয়ার পরেও তিনি ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার চেষ্টা করবেন। অবশ্য আমানপুরের সঙ্গে গত এপ্রিলে দেয়া এক সাক্ষাৎকারে হামিদ কারজাই এ ধরনের অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছিলেন, এ ধরনের প্রশ্ন শুনলেই তার বিস্ময় জাগে। 


কারজাইয়ের পক্ষ থেকে ক্ষমতা আঁকড়ে থাকার যে ঝুঁকি রয়েছে সে বিষয়টি স্পষ্ট করে ৩৭ বছর বয়সী ফৌজিয়া বলেছেন, তিনি (কারজাই) হয়তো তার ঘনিষ্ঠ কাউকেই ক্ষমতায় বসানোর ব্যাপারে সমর্থন করবেন। কারণ ক্ষমতায় আসার সব উপকরণই তাদের নিয়ন্ত্রণের মধ্যে রয়েছে। ২০১৪ সালে আন্তর্জাতিক বাহিনীর আফগানিস্তান ছাড়ার ব্যাপারে ফৌজিয়া বলেন, এর ফলে আফগানিস্তানের নিরাপত্তা পরিস্থিতির অবনতি ঘটতে পারে। আর এক্ষেত্রে আফগানিস্তানে নির্বাচন অনুষ্ঠানের সম্ভাবনা ক্ষীণ থেকে ক্ষীণতর হবে। তবে ফৌজিয়ার মতে, কারজাই ক্ষমতা আঁকড়ে থাকবেন এর চেয়েও আফগানদের জন্য বড় আশঙ্কা হচ্ছে পরিস্থিতি আবার সেই গৃহযুদ্ধ আর তালেবানদের আধিপত্যের অন্ধকার ইতিহাসের দিকে ফিরে না যায়। একজন নারী হিসেবে ফৌজিয়া চান না সেখানকার রক্ত এবং সম্পদ বৃথা যাক। তিনি বলেছেন, এ দেশের নারীরাই সবচেয়ে বেশি শান্তির দাবিদার। তবে সেই শান্তি হতে হবে সমন্বিত। যাতে গত ১০ বছরে আমাদের যে অর্জন সেটা যেন কোনভাবেই হারাবার আশঙ্কা না থাকে। যুক্তরাষ্ট্র তালেবানদের সঙ্গে আলোচনার ভিত্তিতে শান্তির পক্ষপাতী। তবে এ পর্যন্ত এ ধরনের  আলোচনা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছে। এ প্রসঙ্গে ফৌজিয়া বলেন, আমরা সবাই মনে করি সহিংসতা নয়, কেবল আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই এ বিষয়টি সুরাহা করা সম্ভব। তবে তালেবানরা যদি রাজনৈতিক অংশীদার হতে চায় তাহলে তাদের অবশ্যই অস্ত্র পরিহার করতে হবে। আফগানিস্তানের সংবিধানকে তাদের সম্মান করতে হবে। 

আফগানিস্তানের প্রেসিডেন্ট হওয়ার জন্যই কেবল ফৌজিয়া আফগান নারীদের দুর্দশা পরিবর্তনের ব্যাপারে মরিয়া নন। শিশু অবস্থায় তার বাবা-মা তাকে তপ্ত সূর্যের নিচে তাকে ফেলে গিয়েছিল। পরে তাদের মন পরিবর্তন হওয়ায় তারা হয়তো তাকে আবার তুলে নিয়ে গিয়েছিলেন। ফৌজিয়া বলেন, আফগানিস্তানে যে বিষয়টি সবচেয়ে বেশি ঘটে সেটি হচ্ছে ঐতিহ্যগতভাবেই তারা সবকিছু করে থাকেন। তারা ভুলভাবে ধর্মকে বুঝছেন। হয়তো আমার মা একজন নারী হিসেবে যথেষ্ট ভোগান্তির শিকার হয়েছেন। তিনি হয়তো চাননি তার মতো আরেকটি মেয়ে পৃথিবীতে একই রকম ভোগান্তির শিকার হোক। ফৌজিয়া আফগানিস্তানের এই বাস্তবতারই পরিবর্তন চান।

No comments:

Post a Comment