তাদের এ স্বপ্ন সত্যি করেছে ‘ইনফো লেডিস’ নামের একদল নারী। এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট মডেম নিয়ে ঘোরেন। গ্রামের পিছিয়ে পড়া নারী ও অন্যদের তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা দেন। স্কাইপ ব্যবহার করে তারা বিদেশে অবস্থানরত স্বজনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। বিনিময়ে এক ঘণ্টার জন্য তারা নেন ২০০ টাকা। গতকাল বার্তা সংস্থা এপি এমন খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, ইনফো লেডিস প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। স্থানীয় উন্নয়নমূলক গ্রুপ ডি ডট নেট (উ.হবঃ ) নামের একটি সংস্থা ও অন্যান্য কয়েকটি সংগঠন মিলে চালু করে এ প্রকল্প। এর অধীনে বেকার নারীদের সংগ্রহ করে তাদেরকে তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদেরকে শিখানো হয় ইন্টারনেট, প্রিন্টার ও ক্যামেরা চালানো। এরপর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাদেরকে বাইসাইকেল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে সহায়তা দেয়া হয়। ডি ডট নেটের নির্বাহী পরিচালক অনন্য রায়হান বলেছেন, এ পদ্ধতিতে আমরা বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে গ্রামকে ক্ষমতায়নে এগিয়ে নিচ্ছি। এ প্রকল্পে যেসব নারীকে নেয়া হয় তারা সাধারণত গ্রামের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আন্ডারগ্রাজুয়েট। এ রকমই এক ইনফো লেডি যখন আমিনা বেগমের উঠোনে উপস্থিত হন, ল্যাপটপে মডেম যোগ করে স্কাইপ চালু করে দেন। প্রক্রিয়া শেষ করা মাত্র ল্যাপটপে ভেসে ওঠেন আমিনার স্বামী। আমিনা তাকে দেখে খানিকটা লাজুক হয়ে যান। কতদিনের দেখা নেই! তারপর আবার ছবি নয়, জীবন্ত স্বামী তাকে দেখছে, তিনি স্বামীকে দেখছেন তার পাশে বসে যেমন কথা বলতেন ঠিক তেমনি কথা বলতে পারছেন- এমনটা ভেবেই আমিনা বেগম শিহরিত হয়ে উঠেন। গাইবান্ধা জেলার একটি ছোট্ট গ্রামে আমিনার বাড়ি। পাশের গ্রাম সাঘাটার ১৬ বছর বয়সী তামান্না ইসলাম দীপা তার স্বামীর সঙ্গে এই সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি করে দিয়েছেন। আমিনা বলেন, আমার কোন কম্পিউটার নেই। যখন ইনফো লেডি সাইকেল চালিয়ে আমাদের বাড়ি আসে, আমি তার ল্যাপটপ ব্যবহার করি। আমার ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গেও আড্ডা দেই। আমরা শৈশবকালের বিয়ে, যৌতুক ও নারীদের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে তাতে কথা বলি। ইনফো লেডিরা মাঝে মধ্যেই সামাজিক দায়িত্ব পালন করে। কখনও তারা ফি নেয়। কখনও নেয় না। তারা টিনেজ মেয়েদের সঙ্গে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, বয়ঃসন্ধিক্ষণের বিভিন্ন বিষয়, জন্মবিরতিকরণ ও এইচআইভি নিয়ে কথা বলে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে সরকারি সেবার বিষয়ে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করে দেয়। তারা ক্ষেতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের সঠিক ব্যবস্থা সম্পর্কে কৃষকদের সহায়তা করে। তারা ১০ টাকার বিনিময়ে ছাত্রছাত্রীদের কলেজের ফরম অনলাইনে পূরণের সুবিধা করে দেয়। এমনকি এসব ইনফো লেডি রক্তচাপ ও রক্তে চিনির মাত্রা পরিমাপ করতেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ডি ডট নেটের নির্বাহী পরিচালক অনন্য রায়হান বলেন, তাকে এই প্রকল্পের ধারণা দিয়েছেন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই মুহাম্মদ ইউনূসই ২০০৪ সালে গ্রামীণ নারীদের জন্য প্রথম মোবাইল ফোন চালু করেন। বর্তমানে সেই ধারা অনুসরণ করে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ২০ লাখ। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৯টিতে প্রায় ১৬ জন ইনফো লেডি এখন দায়িত্ব পালন করছে। অনন্য রায়হান আশা করেন, ২০১৬ সালের মধ্যে তারা ১৫০০০ নারীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন। গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ইনফো লেডিদের বিনা সুদে ঋণ দিতে রাজি হয়। প্রথম দফায় ঋণ বিতরণ শুরু হবে আগামী মাসে। এ অর্থের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা। প্রবাসীদের কাছে অনন্য রায়হান এসব ইনফো লেডিকে সহায়তা করতে অর্থ পাঠানোর আহ্বান জানান দেশে। বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তিবিদ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এ পদক্ষেপকে অত্যন্ত গঠনমূলক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ উপকৃত হবে। সাথী আকতার নামে এক ইনফো লেডি বলেন, তিনি যদি একজন স্কুলশিক্ষক হতেন তাহলে যে অর্থ আয় করতেন তার চেয়ে এ কাজ করে বেশি অর্থ আয় করতে পারছেন। তিনি বলেন, ল্যাপটপ ও সরঞ্জামাদি কিনতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণ শোধ করার পর এখন তিনি গড়ে মাসে ১০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন। তিনি বলেন, আমরা শুধু অর্থই উপার্জন করছি না। আমরা একই সঙ্গে তথ্যের দিক দিয়ে নারীদের ক্ষমতায়নে সহায়তা করছি।
Sunday, November 4, 2012
ড. ইউনূসের ধারণা ব্যবহার করে প্রবাসী স্বজনের সঙ্গে সেতুবন্ধন গড়ছেন ইনফো লেডিস
তাদের এ স্বপ্ন সত্যি করেছে ‘ইনফো লেডিস’ নামের একদল নারী। এরা বাংলাদেশের বিভিন্ন গ্রামে ল্যাপটপ আর ইন্টারনেট মডেম নিয়ে ঘোরেন। গ্রামের পিছিয়ে পড়া নারী ও অন্যদের তারা ইন্টারনেটের মাধ্যমে সেবা দেন। স্কাইপ ব্যবহার করে তারা বিদেশে অবস্থানরত স্বজনের সঙ্গে কথা বলিয়ে দেন। বিনিময়ে এক ঘণ্টার জন্য তারা নেন ২০০ টাকা। গতকাল বার্তা সংস্থা এপি এমন খবর দিয়েছে। এতে বলা হয়, ইনফো লেডিস প্রকল্পটির যাত্রা শুরু হয় ২০০৮ সালে। স্থানীয় উন্নয়নমূলক গ্রুপ ডি ডট নেট (উ.হবঃ ) নামের একটি সংস্থা ও অন্যান্য কয়েকটি সংগঠন মিলে চালু করে এ প্রকল্প। এর অধীনে বেকার নারীদের সংগ্রহ করে তাদেরকে তিন মাসের প্রশিক্ষণ দেয়া হয়। তাদেরকে শিখানো হয় ইন্টারনেট, প্রিন্টার ও ক্যামেরা চালানো। এরপর ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে তাদেরকে বাইসাইকেল ও প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম কিনতে সহায়তা দেয়া হয়। ডি ডট নেটের নির্বাহী পরিচালক অনন্য রায়হান বলেছেন, এ পদ্ধতিতে আমরা বেকার নারীদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছি। একই সঙ্গে গ্রামকে ক্ষমতায়নে এগিয়ে নিচ্ছি। এ প্রকল্পে যেসব নারীকে নেয়া হয় তারা সাধারণত গ্রামের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর আন্ডারগ্রাজুয়েট। এ রকমই এক ইনফো লেডি যখন আমিনা বেগমের উঠোনে উপস্থিত হন, ল্যাপটপে মডেম যোগ করে স্কাইপ চালু করে দেন। প্রক্রিয়া শেষ করা মাত্র ল্যাপটপে ভেসে ওঠেন আমিনার স্বামী। আমিনা তাকে দেখে খানিকটা লাজুক হয়ে যান। কতদিনের দেখা নেই! তারপর আবার ছবি নয়, জীবন্ত স্বামী তাকে দেখছে, তিনি স্বামীকে দেখছেন তার পাশে বসে যেমন কথা বলতেন ঠিক তেমনি কথা বলতে পারছেন- এমনটা ভেবেই আমিনা বেগম শিহরিত হয়ে উঠেন। গাইবান্ধা জেলার একটি ছোট্ট গ্রামে আমিনার বাড়ি। পাশের গ্রাম সাঘাটার ১৬ বছর বয়সী তামান্না ইসলাম দীপা তার স্বামীর সঙ্গে এই সম্পর্কের সেতুবন্ধন তৈরি করে দিয়েছেন। আমিনা বলেন, আমার কোন কম্পিউটার নেই। যখন ইনফো লেডি সাইকেল চালিয়ে আমাদের বাড়ি আসে, আমি তার ল্যাপটপ ব্যবহার করি। আমার ফেসবুক বন্ধুদের সঙ্গেও আড্ডা দেই। আমরা শৈশবকালের বিয়ে, যৌতুক ও নারীদের যৌন হয়রানির বিরুদ্ধে তাতে কথা বলি। ইনফো লেডিরা মাঝে মধ্যেই সামাজিক দায়িত্ব পালন করে। কখনও তারা ফি নেয়। কখনও নেয় না। তারা টিনেজ মেয়েদের সঙ্গে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা, বয়ঃসন্ধিক্ষণের বিভিন্ন বিষয়, জন্মবিরতিকরণ ও এইচআইভি নিয়ে কথা বলে। তারা কর্তৃপক্ষের কাছে সরকারি সেবার বিষয়ে অভিযোগ জানানোর ব্যবস্থা করে দেয়। তারা ক্ষেতে সার ও কীটনাশক প্রয়োগের সঠিক ব্যবস্থা সম্পর্কে কৃষকদের সহায়তা করে। তারা ১০ টাকার বিনিময়ে ছাত্রছাত্রীদের কলেজের ফরম অনলাইনে পূরণের সুবিধা করে দেয়। এমনকি এসব ইনফো লেডি রক্তচাপ ও রক্তে চিনির মাত্রা পরিমাপ করতেও প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত। ডি ডট নেটের নির্বাহী পরিচালক অনন্য রায়হান বলেন, তাকে এই প্রকল্পের ধারণা দিয়েছেন বাংলাদেশের একমাত্র নোবেল পুরস্কার বিজয়ী প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনূস। এই মুহাম্মদ ইউনূসই ২০০৪ সালে গ্রামীণ নারীদের জন্য প্রথম মোবাইল ফোন চালু করেন। বর্তমানে সেই ধারা অনুসরণ করে দেশে মোবাইল ফোন ব্যবহারকারীর সংখ্যা ৯ কোটি ২০ লাখ। বাংলাদেশের ৬৪টি জেলার মধ্যে ১৯টিতে প্রায় ১৬ জন ইনফো লেডি এখন দায়িত্ব পালন করছে। অনন্য রায়হান আশা করেন, ২০১৬ সালের মধ্যে তারা ১৫০০০ নারীকে প্রশিক্ষণ দিতে পারবেন। গত জুলাইয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক ইনফো লেডিদের বিনা সুদে ঋণ দিতে রাজি হয়। প্রথম দফায় ঋণ বিতরণ শুরু হবে আগামী মাসে। এ অর্থের পরিমাণ ১০ কোটি টাকা। প্রবাসীদের কাছে অনন্য রায়হান এসব ইনফো লেডিকে সহায়তা করতে অর্থ পাঠানোর আহ্বান জানান দেশে। বাংলাদেশের তথ্য প্রযুক্তিবিদ ড. জামিলুর রেজা চৌধুরী এ পদক্ষেপকে অত্যন্ত গঠনমূলক বলে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেন, এ প্রকল্পে তৃণমূল পর্যায়ের মানুষ উপকৃত হবে। সাথী আকতার নামে এক ইনফো লেডি বলেন, তিনি যদি একজন স্কুলশিক্ষক হতেন তাহলে যে অর্থ আয় করতেন তার চেয়ে এ কাজ করে বেশি অর্থ আয় করতে পারছেন। তিনি বলেন, ল্যাপটপ ও সরঞ্জামাদি কিনতে ১ লাখ ২০ হাজার টাকা ঋণ নিয়েছিলেন। সেই ঋণ শোধ করার পর এখন তিনি গড়ে মাসে ১০ হাজার টাকা উপার্জন করছেন। তিনি বলেন, আমরা শুধু অর্থই উপার্জন করছি না। আমরা একই সঙ্গে তথ্যের দিক দিয়ে নারীদের ক্ষমতায়নে সহায়তা করছি।
Subscribe to:
Post Comments (Atom)
No comments:
Post a Comment