বহু পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক, মেয়ে বললো- পুরুষখেকো

বৃটিশ ভারতের সর্বশেষ ভাইসরয় লর্ড লুইস
মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রী এডুইনা মাউন্টব্যাটেন। বহু পুরুষের সঙ্গে ছিল তার
প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক। সম্পর্ক ছিল স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী
পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সঙ্গেও। এটি গোপন কোন বিষয় ছিল না। পরিবারের
স্বামী-কন্যাসহ সবাই জানতো তার এমন বিচিত্র সম্পর্কের কথা। দেখে নিজের মাকে
‘পুরুষ শিকারি’ বলে উল্লেখ করেছেন এডুইনার মেয়ে পামেলা মাউন্টব্যাটেন।
সমপ্রতি মাকে নিয়ে নিজের লেখা স্মৃতিকথাতে বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে মায়ের
সম্পর্ক, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছেন পামেলা। এতে
তিনি বলেছেন, ১৯৩০-এর দশকে লন্ডনে এডুইনা মাউন্টব্যাটেন ছিলেন সেলিব্রেটি
দম্পতি। ১৯২২ সালে তাদের বিয়ে হয়। মাউন্টব্যাটেন ছিলেন তৎকালীন বৃটিশ
সম্রাটের আত্মীয় ও বিশ্বস্ত অনুচর। নৌবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে
বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকতেন তিনি। এ কারণেই চপল এডুইনা পরপুরুষে আকৃষ্ট হয়ে
পড়েন। পামেলা লিখেছেন, এমনিতেই অনেকেই পাণিপ্রার্থী ছিলেন তার মায়ের। তবে
সবার স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে তাকে বিয়ে করেন মাউন্টব্যাটেন। বিয়ের পর স্বামীর
অনুপস্থিতিতে বঞ্চিত সে সব যুবককে সঙ্গ দিয়ে তাদের মনোরঞ্জন করেছেন এডুইনা।
তার মেয়ের ভাষায় কমপক্ষে ৫ জন এডমিরাল সব সময় মায়ের সঙ্গ পাওয়ার অপেক্ষায়
থাকতেন। তিনি শুধু তাদের সঙ্গে থাকতেন, গাইতেন ও আনন্দ করতেন এমন নয়। তাদের
সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতেন, বিছানায় যেতেন। তরুণ অফিসাররা তার
সান্নিধ্যের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন। পামেলার ভাষায় তার মায়ের ওসব
প্রেমিকদের কাছে আঙ্কেলের পূর্ণ ভালবাসা পেতেন তিনি ও তার বড় বোন
প্যাট্রিসিয়া। তাদের বাবা বেচারা নৌ অফিসার মাউন্টব্যাটেন এসব দেখেও না
দেখার ভান করে থাকতেন। নিজেদের তারকা খ্যাতির কারণে বাইরে এসব পারিবারিক
সমস্যা বুঝতে দিতেন না। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী’র অন্য মানুষদের সঙ্গে প্রেমের
বিষয়টি পূর্ণরূপে জেনে দু’জনে একটি চুক্তিতে আসেন। বাইরে স্বামী-স্ত্রী’র
মতো আচরণ করলেও তাদের বিছানা ছিল আলাদা। দু’টি জীবন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন।
অথচ মানুষ জানতো তারা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সুখী দম্পতি। নিজের মায়ের এমন
অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সহানুভূতির দৃষ্টিতেই দেখছেন পামেলা। তিনি লিখেছেন,
মায়ের এসব আচরণের কারণ ছিল তার একাকিত্ব। কেবল আনন্দ পাওয়ার জন্য
ক্রমান্নয়ে নৌ অফিসারদের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তিনি। কারণ তিনি তখন
ছিলেন কেবলই ২১ বছর বয়সী এক নববধূ। যার স্বামী কর্তব্য পালনে দূরে অবস্থান
করছিলেন। তবে পরক্ষণেই পামেলা লিখেছেন, নির্ভরশীল হয়ে পড়া কয়েকজন
নৌ-কর্মকর্তার সঙ্গে গভীর প্রেমে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তার মা। তাদের মধ্যে
বান্নি ফিলিপস নামের এক অফিসারের সঙ্গে একাধিকবার এডভেঞ্চারে আফ্রিকা,
এশিয়া, চীনসহ অনেক দেশে বেড়াতে গেছেন। বান্নি ছিলেন সুদর্শন ও চিত্রাকর্ষক।
ফিলিপসের উপর এতো বেশি নির্ভরশীল ছিলেন এডুইনা, যে মেয়ে পামেলা বাবার সব
আদর সোহাগ পেয়েছেন তার কাছ থেকেই। এমনকি নিজের মেয়ের মতো স্কুলে নিয়ে
যাওয়া, চা খাওয়ানো সব কাজই পামেলার জন্য করতেন মায়ের প্রেমিক ফিলিপস। ১৯৩৯
সালে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তার প্রেমিক এসব অফিসার বিভিন্ন দেশে
চলে যান তখন অনেক বেশি মর্মাহত ছিলেন এডুইনা। এমনকি ফিলিপসের বিরহে ভেঙে
পড়েন তিনি। নাওয়া-খাওয়া, কথাবার্তা পর্যন্ত ছেড়ে দেন। সে সময়
মাউন্টব্যাটেনকে পাঠানো হয় ভারতের সর্বশেষ ভাইসরয় হিসেবে। সঙ্গে স্ত্রী
এডুইনা ও মেয়েদের নিয়ে ভারতে আসেন তিনি। ভারতে এসেও অনেকের সঙ্গে সম্পর্কে
জড়িয়ে পড়েন এডুইনা। এ সময় রাজনীতিক থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ স্বদেশী
কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়। তবে সবচেয়ে আলোচিত সম্পর্ক ছিল স্বাধীন
ভারতের প্রধান প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে। পণ্ডিতজীর
সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। পামেলা লিখেছেন, তাদের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল
ভালো। এডুইনা নেহেরুকে নিজের সঙ্গী ও সমচিন্তক মনে করতেন। এক সঙ্গে তারা
অনেক সময় কাটাতেন। ভারতে এসে স্ত্রীকে কোন বাধা দেননি মাউন্টব্যাটেন। এর
কারণ ছিল স্ত্রীর উচ্ছৃঙ্খলতা কমে যাওয়া ও নেহরুর প্রতি অগাধ বিশ্বাস। এ
সময় অনেকবার এমন হয়েছে এডুইনা, মাউন্টব্যাটেন, পামেলা ও নেহেরু একসঙ্গে
হাঁটছেন। তবে পামেলা ও মাউন্টব্যাটেন থাকতেন সামনে। আর পেছনে খোশগল্পে মগ্ন
হয়ে পাশাপাশি হাঁটতেন এডুইনা-নেহরু। পামেলা লিখেছেন- তারা এতো মগ্ন থাকতেন
যে, আমি ও বাবা ইচ্ছা করে পেছনে চলে গেলেও তারা টের পেতেন না।
এডুইনা-নেহরুর অনেক চিঠি পামেলার হাত হয়ে যেতো। তাই তিনি বুঝতে পারেন তাদের
মধ্যে কেমন গভীর সম্পর্ক ও ভালোবাসা ছিল। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর লন্ডনে
ফিরে গিয়েও নেহরুর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ১৯৬০ সালে ৫৮ বছর বয়সে মারা যান
এডুইনা। এতো কিছুর পরও স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা কমেনি মাউন্টব্যাটেনের।
তাইতো স্ত্রীর মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।
No comments:
Post a Comment