Thursday, December 27, 2012

বছরের রগরগে কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি



এ বছর বিশ্বে ঘটে গেছে বেশ কয়েকটি নারীঘটিত কেলেঙ্কারি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান জেনারেল ডেভিড পেট্রাউসের গোপন সম্পর্ক উদঘাটনের বিষয়টি। পলা ব্রডওয়েল নামের এক নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ার অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি সিআইএ থেকে পদত্যাগ করেছেন। বছরের শেষের দিকে এসে ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি (৭৬) নতুন করে প্রেমে পড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ৫০ বছরের কম বয়সী ফ্রান্সেসকা পাসকেল নামের এক যুবতীর সঙ্গে তার চুটিয়ে প্রেম চলছে বলে প্রকাশ করেছেন। এ বছর ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনের নগ্ন ছবি প্রকাশ করে ফ্রান্সের ম্যাগাজিন ‘ক্লোজার’। তা নিয়ে তোলপাড় হয় বৃটেন সহ সারা বিশ্বে। ওই ছবি আর প্রকাশ না করতে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। তারপরও কয়েকটি ম্যাগাজিন সেই ছবি প্রকাশ করে। ওদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার ও ক্ষমতাসীন পিপিপি’র সভাপতি বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তবে ওই রিপোর্টকে অসত্য বলে দাবি করা হয়েছে। এ বছরেই আসামের গুয়াহাটিতে এক যুবতীর ওপর প্রকাশ্যে যৌন নির্যাতন চালায় একদল দুর্বৃত্ত। ওই যুবতী একটি বার থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামামাত্র তাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করে তারা। তার পোশাক খুলে নেয়ার চেষ্টা করে। তবে এ বছরে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যসভার অধিবেশন চলাকালে মোবাইল ফোনে পর্নো ছবি দেখা অবস্থায় গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়েন তিন মন্ত্রী। তারা হলেন- সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী লক্ষণ সাবাদি, নারী ও শিশু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী সি. সি পাতিল এবং বন্দর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী কৃষ্ণ পালেমার। তবে প্রায় সারা বছরই টুইটারে নগ্ন ছবি পোস্ট করার কারণে আলোচনায় ছিলেন সেক্সবোম পুনম পাণ্ডে। এ বছরই তিনি বিবস্ত্র হয়ে প্লেবয় ম্যাগাজিনের জন্য পোজ দিয়েছেন। একেবারে রগরগে সে সব ছবি ছাপা হওয়ার আগেই ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়েছে। এমন আরও অনেক ঘটনা সারা বছর আলোচনায় ছিল।
সিআইএ (সাবেক) প্রধান জেনারেল ডেভিড পেট্রাউসের সঙ্গে তার জীবনীকার পলা ব্রডওয়েলের ছিল ২০১২ সালের সবচেয়ে বড় যৌন কেলেঙ্কারি। এ কারণে তাকে চাকরি হারাতে হয়েছে। সারা বিশ্বে যে গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ দাবড়ে বেড়ায় তার প্রধানের এমন কাণ্ডে হতবাক যুক্তরাষ্ট্র সহ সচেতন মানুষ। তবে তাদের এই গোপন প্রণয়ের কথা ধরা পড়ে জিল কেলি নামের আরেক নারীর কারণে। জিল কেলি-ও পেট্রাউসের ঘনিষ্ঠ। এ জন্য পলা ব্রডওয়েলের ভয় ছিল পেট্রাউস হয়তো একদিন জিল কেলির প্রেমে পড়ে যাবেন। তখন তার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবেন। তাই জিল কেলিকে দূরে সরিয়ে দিতে তাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে ই-মেইল পাঠান পলা ব্রডওয়েল। হুমকি পেয়ে জিল কেলি তা জানান এফবিআই’কে। এফবিআই তদন্ত করতে গিয়ে ধরে ফেলে ডেভিড পেট্রাউসের সঙ্গে পলা ব্রডওয়েলের প্রেমের কাহিনী। গত ৬ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বলা হয়, এফবিআই এই নির্বাচনের আগেই পেট্রাউস-পলার সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে এমন বিবেচনায় এফবিআই ওই তথ্য প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। অনুসন্ধানে দেখা যায় জিল কেলির সঙ্গে আবার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে আফগানিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার  জেনারেল জন অ্যালেনের। বলা হয়, তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক হাজার গোপন ফাইল বিনিময় হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। তবে তার শেষ এখনও জানা যায় নি। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়া রিপোর্ট প্রকাশ করে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খারের গোপন সম্পর্ক নিয়ে। বলা হয়, তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রেম চলছে। তা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও বিলাওয়ালের পিতা আসিফ আলী জারদারির নজরেও পড়েছে। কিন্তু বিলাওয়াল ও হিনা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে সেখানে বসত করার পরিকল্পনা করেন। রিপোর্টে বলা হয়, হিনা রব্বানি খারের স্বামী ফিরোজ গুলজার। তিনি ওই কথা শোনার পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বিস্তারিত জানতে  চেয়েছেন। ওইসব রিপোর্টে বলা হয়, হিনা রব্বানি তার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে ছেদ ঘটিয়ে বিলাওয়ালকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে চলে যেতে পরিকল্পনা করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিলাওয়ালকে হিনা রব্বানি প্রেমপত্রও দিয়েছেন বলে জানানো হয়। কিন্তু পরে জানানো হয়, ওইসব রিপোর্ট আসলে গুজব। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের তিন মন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে সবাই হতবাক হয়ে যায়। কারণ, তারা পার্লামেন্ট অধিবেশন চলার সময় মোবাইল ফোনে নীল ছবি দেখছিলেন। ৮ই ফেব্রুয়ারি নয়া দিল্লি থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ওই ঘটনার পর পদত্যাগ করেছেন তিন মন্ত্রী লক্ষণ সাবাদি, সিসি পাতিল ও কৃষ্ণ পালেমার। গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ে তাদের পর্নো ছবি দেখার দৃশ্য। এরপর সেখানকার পার্লামেন্টে তোলপাড় হয়। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বলা হয়। কারণ, তারা সবাই উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র নেতা। তাই তাদেরকে নিয়ে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে দল। দলেই শুধু তাদের বিরুদ্ধে কথা বলাবলি হয়েছে এমন নয়। তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামে মানবাধিকার বিষয়ক কর্মীরা, ডানপন্থি হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলো। নারী উন্নয়ন বিষয়ক কেন্দ্রীয় সাবেক মন্ত্রী ও কংগ্রেস সদস্য রেণুকা চৌধুরী এর সমালোচনায় বলেন, আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি যেখানে মানসিকতা এরকম। নারীদের এখানে পণ্য মনে করা হয়। এটা দুঃখজনক ঘটনা যে, যারা ক্ষমতায় আছেন, যাদের দায়িত্ব সবকিছু দেখভাল করার তাদের মানসিকতা বাইরের অন্যদের থেকে আলাদা নয়। তারা পর্নো ছবি দেখায় ব্যস্ত থাকেন। অবশেষে ওই তিন মন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই ভারতেরই আরেক বিস্ময় পুনম পাণ্ডে। গত বছর তিনি তো ‘স্ট্রিপ কুইন’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ বছরে তিনি শুধু প্লেবয় ম্যাগাজিনেই নগ্ন পোজ দেননি, পাশাপাশি টুইটারে নিজেই পোস্ট করেছেন নিজের নগ্ন ছবি। তাতে আবার লিখেছেন রগরগে সব বাক্য। আগস্ট মাসে তিনি টুইটারে পোস্ট করেন গোসল করার দৃশ্য। একটি-দু’টি নয়, একাধিক ছবি। ওই দিনটি যেন তারই ছিল। ছবিগুলো পোস্ট করার পর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে তা দেখার জন্য। ওই ছবিতে তাকে দেখা যায় বাথটাবে তিনি গোসল করছেন। তার সারা শরীর ভেজা। তিনি নগ্ন হয়ে গোসল করছেন। এদিন তিনি টুইটারে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন- ফ্রেস মর্নিং, জাস্ট হ্যাড এ হট শাওয়ার বাথ। হ্যাভ এ ব্লেসেড সানডে # ফ্রেশ মর্নিং। এভাবে তিনি বেশ কতগুলো ছবি পোস্ট করেছেন। তাতে কোনটাতে তিনি অনুসারীদের উন্মাতাল না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একটিতে লিখেছেন- পুনম পাণ্ডে হট থেকে হটার হয়ে উঠছে। এভাবে তিনি  গোসল করার বিভিন্ন রকম পোজের সঙ্গে লিখেছেন নানা উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মন্তব্য। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন প্লেবয় ম্যাগাজিনে পোজ দিয়ে। তা নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায় চারদিকে। ওদিকে বিবিসি’র প্রয়াত জিমি স্যাভিলের যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে বিবিসি মহা বিপদে পড়ে। এ ঘটনায় কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করে বিবিসি থেকে।

No comments:

Post a Comment