Thursday, December 20, 2012

বাসে গণধর্ষণ: ভারতে তোলপাড়


চলন্ত বাসের ভেতরে এক যুবতীকে গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে ভারতে। বিষয়টি নিয়ে পার্লামেন্টে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী নাখোশ। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল সিন্ধে ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শিলা দিক্ষীতকে কড়া ভাষায় চিঠি লিখেছেন। তাতে এ ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে। ওদিকে অল ইন্ডিয়া ডেমক্রেটিক ওমেন্স এসোসিয়েশন নয়া দিল্লিতে বিক্ষোভ করেছে। প্রতিবাদ হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে ও বহুল আলোচিত যন্তরমন্তরে। গতকাল বার্তা সংস্থা পিটিআই যখন এ খবর জানায় তখনও ধর্ষিতা রয়েছেন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায়। এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। তার মধ্যে গতকাল দিল্লি পুলিশ মুকেশ সিং, পবন গুপ্ত ও বিনয় শর্মাকে আদালতে তোলে। সেখানে এর মধ্যে দু’জন নিজেদের দোষ স্বীকার করেছে। বিনয় আদালতে দোষ স্বীকার করে নিজেই বলেছে- এ জন্য আমার ফাঁসি হওয়া উচিত। ঘটনার মূল নায়ক বাসচালক রাম সিংকে ৫ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে দেয়া হয়েছে। সোনিয়া গান্ধীর চিঠি পেয়ে গতকালই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল সিন্ধে ও দিল্লির পুলিশ কমিশনার নীরাজ কুমার বৈঠক করেছেন। তারা বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে- সব বাস থেকে রঙিন গ্লাস সরিয়ে ফেলা হবে। পর্দাও সরিয়ে ফেলা হবে। সব বাসে এখন থেকে চালকদের মোবাইল ফোন নম্বর ও লাইসেন্স নম্বর মোটা হরফে লেখা থাকবে। সমপ্রতি এক বন্ধুর সঙ্গে বাসে করে বাসায় ফেরার পথে বাসের ভেতরে কমপক্ষে ৬ জন মিলে গণধর্ষণ করে ২৩ বছর বয়সী ওই যুবতীকে। তিনি একটি প্যারামেডিকের ছাত্রী। এ সময় তাকে প্রহারও করে তারা। তার বন্ধুকেও প্রহার করে। তারপর তাদের বাস থেকে বাইরে ফেলে দেয়। ওই যুবতীকে উদ্ধার করে ভর্তি করানো হয়েছে নয়া দিল্লির সফদারগঞ্জ হাসপাতালে। এ নিয়ে সারা ভারতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হলে মঙ্গলবার রাতে সোনিয়া গান্ধী তাকে দেখতে ওই হাসপাতালে যান। এ সময় তিনি কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, এই রকম হায়েনার অপরাধ আর ঘটতে দেয়া যাবে না। তিনি ১৫ থেকে ২০ মিনিট অবস্থান করেন হাসপাতালে। এ সময় কথা বলেন চিকিৎসক ও নির্যাতিতার পিতা-মাতার সঙ্গে। চিকিৎসকরা তাকে জানান, ধর্ষিতার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সেখান থেকে ফিরে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠিতে লেখেন- ‘এ ঘটনা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এই দেশের রাজধানীতে একটি চলন্ত বাসের ভেতর একজন যুবতীর ধর্ষিত হওয়ার জন্য দায়ী আমরা, আমাদের নিরাপত্তা। এ ঘটনাকে তিনি দানবীয় অপরাধ হিসেবেও অভিহিত করেন। এ ঘটনায় শুধু বিশ্বজুড়ে নিন্দা জানানো হচ্ছে না, সরকারেরও অতি জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের মেয়ে, বোন ও মায়েরা প্রতিদিন যেসব বিপদ মোকাবিলা করছেন, সে বিষয়ে পুলিশ ও অন্য সংস্থাগুলোকে সচেতন থাকতে হবে। এ জন্য নিরাপত্তা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রয়োজনীয় অস্ত্র দিতে হবে। আমি আশা করব, এসব বিষয়ে আপনি জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবেন। শিলা দিক্ষীতকে লেখা চিঠিতেও তিনি একই রকম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওদিকে এখনও কিভাবে এই অপরাধের রহস্য অনুদঘাটিত থাকে তা জানতে চেয়ে পুলিশের প্রতি সুয়োমোটে জারি করেছেন দিল্লির হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি. মুরুগেস্বানের সভাপতিত্বে পরিচালিত হাইকোর্টের বেঞ্চ গতকাল শহরের পুলিশ কমিশনারকে দুই দিনের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগেই সুপ্রিম কোর্ট সম্পূর্ণ রঙিন গ্লাস ওয়ালা যানবাহন বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। কেন হয়নি সে বিষয়েও আদালত দিল্লি পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছেন। আটক চারজনের মধ্যে তিনজন- মুকেশ সিং, পবন গুপ্তা ও বিনয়কে গতকাল সাকেটের এক আদালতে হাজির করা হয়। আদালত পবন ও বিনয়কে চারদিন করে পুলিশি রিমান্ডে দিয়েছেন। মুকেশকে পাঠানো হয়েছে ১৪ দিনের নিরাপত্তা হেফাজতে। বিনয় শর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ সে ধর্ষিতার পুরুষ বন্ধুকে প্রহার করেছে। এ কথা স্বীকার করে বিনয় নিজেকে ফাঁসি দেয়ার আবেদন জানায় আদালতে। পবনও জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু ঘটনার মূল আসামি রাম সিংয়ের ভাই মুকেশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

No comments:

Post a Comment