Sunday, March 31, 2013

আতঙ্কে এলাকা ছাড়ছেন মিয়ানমারের মুসলমানরা


  সমপ্রতি মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলজুড়ে ছড়িয়ে পড়া সামপ্রদায়িক দাঙ্গার কারণে সেখানকার অনেক মুসলিম এলাকা ছেড়ে নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিচ্ছেন। উত্তেজিত বৌদ্ধরা দল বেঁধে সংখ্যালঘু মুসলমানদের মসজিদ, ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান ও বাড়িঘরে হামলা চালাচ্ছে। মিয়ানমারের মধ্যাঞ্চলের সিত কউয়িন গ্রামের দুই হাজার বাসিন্দার মধ্যে মাত্র একশ’ জনের মতো ইসলাম ধর্মাবলম্বী ছিলেন। হামলার পর বেশির ভাগই এলাকা ছেড়ে অজানার পথে পা বাড়িয়েছে। তাদের ঘরবাড়ি, দোকানপাট এবং ধর্মীয় উপাসনালয় (মসজিদ) ধ্বংস করে দেয়া হয়েছে। তারা ছেড়ে কেউ শরণার্থী শিবিরে আশ্রয় নিয়েছেন, কেউবা বন্ধু বা আত্মীয়দের বাড়িতে আত্মগোপন করেছেন। অনেককে হত্যা করা হয়েছে। শুক্রবার গ্রামের অবশিষ্ট মুসলিমদের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। এমনই এক মুসলিম দোকানির কথা বলতে গিয়ে সিত কিউয়িনের ২৪ বছর বয়সী ট্যাক্সিচালক অং কো মাইন্ত বলেন, তারা কোথায় আছে আমরা জানি না, হামলাকারীরা আসার আগ মুহূর্তে সে পালিয়ে যায়।
২০শে মার্চ কট্টর বৌদ্ধরা মধ্যাঞ্চলীয় মিখতিলা টাউনে দাঙ্গার সূত্রপাত করার পর থেকে এখন পর্যন্ত ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এরপর আরও অন্তত ১০টি শহর ও গ্রামে তারা দাঙ্গা বাঁধিয়েছে। মুসলিমবিরোধী উস্কানিতে উত্তেজিত হয়ে ওঠে সাধারণ বৌদ্ধরা। টেলিফোন, ফেইসবুকের মতো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বৌদ্ধ ভিক্ষুদের পরিচালিত ‘৯৬৯ আন্দোলন’ এসব গুজব সাধারণ বৌদ্ধদের মাঝে ছড়িয়ে দেয়। বুদ্ধ থেকে নেয়া এই তিনটি সংখ্যা বুদ্ধের বিভিন্ন রূপ প্রকাশ করে। এরমধ্যে তার শিক্ষা ও ভিক্ষুত্ব অন্যতম। কিন্তু মিয়ানমারে এটি মুসলিমবিরোধী জাতীয়তাবাদী উগ্রপন্থার প্রতিনিধিত্ব করছে। এই আন্দোলন বৌদ্ধদের মুসলিম পরিচালিত দোকানপাট ও সেবা বয়কট করার আহ্বান জানায়। চারদিন আগে থেকে সিত কউয়িনে সমস্যা শুরু হয়। ৩০টি মোটরসাইকেলে চড়ে বহিরাগত কিছু লোক গ্রামের ভেতর দিয়ে যেতে যেতে মুসলিম প্রতিবেশীদের বয়কট করার আহ্বান জানায়। এরপর তারা একটি মসজিদ ও মুসলিম মালিকানাধীন একসারি দোকানপাট ও ঘরবাড়ি ধ্বংস করে। এক ব্যক্তি জানিয়েছেন, গুজবে উত্তেজিত হয়ে তারা এখানে আসে। তিন বৌদ্ধভিক্ষুর নেতৃত্বে ত্রিশটি শক্তিশালী গোষ্ঠী শুক্রবার একটি মসজিদের দিকে রওনা হয় হলে পুলিশ বাধা দেয়। পুলিশি বাধার মুখে ছুরি ও লাঠিধারী এসব দাঙ্গাকারী ছত্রভঙ্গ হয়ে যায়। এরপর এ ধরনের আর কিছু হতে দেব না আমি, বলেন পুলিশ কমান্ডার ফোনি মিন্ত। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণের জন্য গতকাল পুলিশকে কর্তৃত্ব দিয়েছেন প্রেসিডেন্ট। তবে মিয়ানমারে নিযুক্ত জাতিসংঘের মানবাধিকার সংক্রান্ত বিশেষ প্রতিনিধি বৃহস্পতিবার বলেছেন, তারা মিখতিলার সামপ্রতিক সহিংসতায় রাষ্ট্রীয় যোগসাজশ থাকার অভিযোগ পেয়েছেন।

No comments:

Post a Comment