সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ৩৪টি দেশ নিয়ে ইসলামিক সামরিক জোট গঠনের ঘোষণা দিয়েছে সৌদি আরব। এই জোটে রয়েছে বাংলাদেশও। সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদ থেকে যৌথভাবে এ জোটের অপারেশন পরিচালনা করা হবে। এ বিষয়ে বিরল এক সংবাদ সম্মেলন করেছেন সৌদি আরবের ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান। সচরাচর তাকে এভাবে সংবাদ সম্মেলন করতে দেখা যায় না। এ ঘোষণা দিয়ে সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থা সৌদি প্রেস এজেন্সিতে (এসপিএ) একটি যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করা হয়েছে। এতে বলা হয়, উল্লিখিত দেশগুলো সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়তে সৌদি আরবের নেতৃত্বে একটি সামরিক জোট গঠনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। রিয়াদ থেকে জোটের কার্যক্রম সমন্বয় ও পরিচালনা করা হবে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। সৌদি আরব নেতৃত্বাধীন এ জোটে বাংলাদেশ ছাড়া অপর রাষ্ট্রগুলো হলোÑ জর্ডান, সংযুক্ত আরব আমিরাত, পাকিস্তান, বাহরাইন, বেনিন, তুরস্ক, চাদ, টোগো, তিউনিশিয়া, জিবুতি, সেনেগাল, সুদান, সিয়েরা লিওন, সোমালিয়া, গ্যাবন, গিনি, ফিলিস্তিন, কমোরোস, কাতার, আইভোরি কোস্ট, কুয়েত, লেবানন, লিবিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মালয়েশিয়া, মিশর, মরক্কো, মৌরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া ও ইয়েমেন। এছাড়াও ১০টিরও বেশি ইসলামিক দেশ এ জোটের প্রতি সমর্থন ব্যক্ত করেছে বলে বিবৃতিতে উল্লেখ করা হয়। এজন্য দেশগুলো প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে বলেও জানিয়েছে। এর মধ্যে রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। বিবৃতিতে বলা হয়, দুর্নীতি ও ধ্বংসাত্মক কাজ নিষিদ্ধ করেছে ইসলাম। মানুষের মর্যাদা, অধিকার, বিশেষ করে জীবন ও নিরাপত্তার অধিকারকে মারাত্মকভাবে লংঘন করে সন্ত্রাস। রিয়াদ ভিত্তিক ইসলামিক সামরিক জোট গঠনের বিষয়টি নিশ্চিত করেন সৌদি আরবের ডেপুটি ক্রাউন প্রিন্স, দ্বিতীয় উপ প্রধানমন্ত্রী ও প্রতিরক্ষামন্ত্রী প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান। গতকাল রিয়াদে বাদশাহ সালমান বিমান ঘাঁটিতে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে প্রিন্স সালমান বলেন, ইসলামিক বিশ্বের সংখ্যাগরিষ্ঠ রাষ্ট্রগুলো এই জোটে অন্তর্ভুক্ত। সার্বিকভাবে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের ওপর প্রভাব ফেলার আগে যে রোগ ইসলামিক বিশ্বের ওপর আগে প্রভাব ফেলেছে, তার বিরুদ্ধে লড়াই করতে মুসলিম বিশ্বের আগ্রহ থেকেই এ পদক্ষেপ। প্রিন্স সালমান বলেন, ইসলামিক বিশ্বের বিভিন্ন অংশে এবং সকল দেশে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে সমন্বয় ও সহায়তা প্রচেষ্টা পরিচালনার জন্য রিয়াদে একটি অপারেশন রুম স্থাপন করা হবে। তিনি আরও বলেন, জোটের দেশগুলো তাদের নিজ নিজ সামর্থ্য অনুযায়ী অবদান রাখবে। এখন প্রতিটি ইসলামিক দেশ পৃথকভাবে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়ছে। প্রচেষ্টার সমন্বয় করাটা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ইসলামিক বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পন্থা ও প্রচেষ্টা গড়ে তোলা হবে। জোট গঠনের ঘোষণা দেয়া বিবৃতিকে উল্লিখিত দশটিরও বেশি দেশের সমর্থন প্রসঙ্গে প্রিন্স সালমান বলেন, এসব দেশ জোটের বাইরে নয়। জোটে যোগ দেয়ার আগে এ দেশগুলোর অনেক পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে। যত দ্রুত সম্ভব এ জোটটি বাস্তবায়নের ৩৪টি দেশের আগ্রহ থেকে এ ঘোষণা দেয়া হয়েছে। আল্লাহ’র ইচ্ছায় বাকি দেশগুলোও ইসলামিক জোটে যোগ দেবে। তিনি আরও বলেন, সন্ত্রাসী সংগঠনগুলোর শ্রেণী যা-ই হোক না কেন আমরা তাদের নিয়ন্ত্রন করবো। পদক্ষেপ বাস্তবায়নে বৈশ্বিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ দেশগুলো ও আন্তর্জাতিক সংগঠনগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ করবে ইসলামিক সামরিক জোট। সামরিক, বুদ্ধিবৃত্তিক ও মিডিয়া পর্যায়ে ইসলামিক সামরিক জোট সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে লড়াই করবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। এই জোট শুধু আইসিসকে মোকাবেলা করবে কিনা এমন প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, শুধু আইসিস নয়, সামনে আসা যে কোন সন্ত্রাসী সংগঠনের বিরুদ্ধে আমরা লড়াই করবো। আমরা পরিশ্রম করবো এবং তাদের বিরুদ্ধে লড়াই করতে পদক্ষেপ নেবো। বার্তা সংস্থা এপির রিপোর্টে বলা হয়, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে নতুন এই জোটে যেমন পাকিস্তান, তুরস্ক ও মিশরের মতো বড় ও প্রতিষ্ঠিত সেনাবাহিনী সম্বলিত দেশ আছে, তেমনি আছে লিবিয়া ও ইয়েমেনের মতো যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ। জঙ্গি হামলার শিকার আফ্রিকার মালি, চাদ, সোমালিয়া, নাইজেরিয়া এ জোটের সদস্য। তবে সৌদি আরবের আঞ্চলিক প্রতিপক্ষ শিয়া অধ্যুষিত ইরান নেই এ জোটে। উল্লেখ্য, সিরিয়া ও ইয়েমেনের লড়াইয়ে সৌদি আরব ও ইরান একে অন্যের প্রতিপক্ষকে সমর্থন করে। ইয়েমেনে এখন শিয়া মতাবলম্বী হুতি বিদ্রোহীদের বিরুদ্ধে সামরিক হস্তক্ষেপে নেতৃত্ব দিচ্ছে সৌদি আরব। জঙ্গি গোষ্ঠী সুন্নী মতাবলম্বী আইসিসের বিরুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে বোমা হামলার জোটেও রয়েছে সৌদি আরব। নতুন গঠন করা ইসলামিক সামরিক জোটের অংশ তুরস্ক। এ দেশটিই একমাত্র সদস্য যে একই সঙ্গে ন্যাটোরও সদস্য। তারা এরই মধ্যে নতুন জোটকে স্বাগত জানিয়েছে। যারা সন্ত্রাস ও ইসলামকে সম্পর্কিত করার চেষ্টা করছেন তাদের বিরুদ্ধে উচিত জবাব এই জোট বলে মন্তব্য করেছেন তুরস্কের প্রধানমন্ত্রী আহমেদ দাভুতোগলু। তিনি বলেছেন, আমরা বিশ্বাস করি এটি মুসলিম দেশগুলোর সঠিক পথে এগুনোর একটি পদক্ষেপ। প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান সংবাদ সম্মেলনে বলেছেন, সন্ত্রাস বিরোধী কর্মপন্থা নির্ধারণে অন্য দেশ ও আন্তর্জাতিক সংস্থাসমুহের সঙ্গে কৌশল প্রণয়ণ করবে নতুন ইসলামিক সামরিক জোট। তিনি আরও বলেন, তাদের এ প্রচেষ্টা শুধু ইসলামিক স্টেটের বিরুদ্ধে সীমাবদ্ধ থাকবে না। তার ভাষায়Ñ এখন প্রতিটি মুসলিম দেশ নিজেদের মতো করে সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। তাই এ কাজে সম্বন্বয় করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। উল্লেখ্য, উপসাগরীয় দেশ কুয়েত, কাতার ও সংযুক্ত আরব আমিরাত এ জোটে যোগ দিলেও বড় করে চোখে পড়ছে ওমানের নাম। কারণ, সৌদি আরবের প্রতিবেশী এ দেশটি এ জোটে এখনও অনুপস্থিত। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ওমান নিরপেক্ষ ভূমিকা বজায় রাখছে। আঞ্চলিক বিভিন্ন সংঘাতে তারা মধ্যস্থতাকারী হিসেবে আবির্ভুত হচ্ছে। এর মাধ্যমে তারা আরব থেকে ইরান পর্যন্ত সেবা দিচ্ছে। এছাড়া এ জোটে নেই ইরাক ও সিরিয়া। তাদের সেনারা ইসলামিক স্টেটের দখল থেকে দখলীকৃত এলাকা পুনরুদ্ধারের লড়াই করছে। এ ছাড়া ইরানের সঙ্গে মিত্রতা আছে এমন দেশও নেই এই জোটে। জর্ডান সরকারের এক মুখপাত্র নিশ্চিত করেছেন যে, তারা এই জোটের অংশ। মুখপাত্র মোহাম্মদ মোমানি এ জোট নিয়ে আলাদা করে কোন মন্তব্য করবেন না। তবে তিনি বলেছেন, জর্ডান সব সময়ই প্রস্তুত। সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে সক্রিয়ভাবে অংশ নিতে তৎপর। মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ না হলেও বেনিন এ জোটে যোগ দিয়েছে।
No comments:
Post a Comment