সৌদি আরবের নেতৃত্বে গঠিত ইসলামিক সামরিক জোট নিয়ে ঘোর এখনও কাটে নি। জোটের শরিক অনেক দেশই এখনও পরিষ্কার করতে পারে নি তাদের অবস্থান। অনেক দেশ বলেছে তারা এ বিষয়ে কিছু জানেই না। এমন অবস্থায় জোট ঘোষণার ফলে সিদ্ধান্ত নিতে পারে নি নাইজেরিয়া, মালয়েশিয়া, পাকিস্তান সহ আরও কিছু দেশ। পাকিস্তান তেহরিকে ইনসাফ প্রধান ও সাবেক ক্রিকেটার ইমরান খান এ জোটে তার দেশ যুক্ত হওয়ার বিরোধিতা করেছেন। এ নিয়ে পশ্চিমা মিডিয়ায় গত কয়েকদিন ধরে গুরুত্ব দিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হচ্ছে। নাইজেরিয়ার অনলাইন দ্য কেবল লিখেছে, সৌদি আরবের নেতৃত্বে ইসলামিক সামরিক জোটে নাইজেরিয়া অংশ নেবে কিনা সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত হয় নি। এতে বলা হয়েছে, ঘোষণা দেয়ার আগে অনেক দেশের সঙ্গে আলোচনা না করায় বিস্ময় প্রকাশ করেছে কিছু দেশ। তাদের মধ্যে রয়েছে দ্বিধাদ্বন্দ্বও। সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় বার্তা সংস্থার উল্লেখ করে বলা হয়েছে, এই জোটে রয়েছে নাইজেরিয়া। পশ্চিম আফ্রিকার এ দেশটি তার নিজের দেশেই বোকো হারাম নামে একটি ইসলামপন্থি গ্রুপের বিরুদ্ধে লড়াই করছে। নাইজেরিয়ার প্রেসিডেন্ট মুহাম্মাদ বুহারির এক মুখপাত্র গারবা শেহু বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেছেন, এখনও এ জোটে যোগ দেয়ার সিদ্ধান্ত হয় নি। জোটে যোগ দেবে নাকি এর বাইরে থাকবে সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্ত নেয় নি নাইজেরিয়া। ওদিকে ডেইলি পাকিস্তান বলেছে, ইমরান খান এ জোটে তার দেশ যোগ দেয়ার বিরোধিতা করে বলেছেন, পাকিস্তান যদি এতে যোগ দেয় তাহলে পাকিস্তানের ভিতরেই জাতিগত বিভক্তি সৃষ্টি হতে পারে। লাহোর বিমানবন্দরে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন। তিনি বলেন, এ ইস্যুতে সরকারের উচিত পার্লামেন্টে আলোচনা করে পার্লামেন্টের অনুমোদন নেয়া। মঙ্গলবার সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী ও প্রিন্স মোহাম্মদ বিন সালমান ৩৪টি দেশের সমন্বয়ে ইসলামিক সামরিক জোটের ঘোষণা দেন। ইমরান খান বলেন, অপরাধী চক্রের বিরুদ্ধে করাচিতে আধাসামরিক বাহিনী যে অভিযান চালাচ্ছে তাতে এখানকার মানুষ সন্তুষ্ট। পাকিস্তান পিপলস পার্টি ও মুক্তাহিদা কওমি মুভমেন্ট৬ গণতন্ত্রের নামে নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি। ওদিকে লন্ডনের দ্য ইন্ডিপেন্ডেন্ট লিখেছে, এ সপ্তাহের শুরুর দিকে সৌদি আরবের প্রতিরক্ষামন্ত্রী মোহাম্মদ বিন সালমান এই জোটের ঘোষণা দেন। এই জোটের লক্ষ্য হলো ইরাক, সিরিয়া, লিবিয়া, মিশর ও আফগানিস্তানে জঙ্গিগোষ্ঠী, বিশেষ করে আইএসের বিরুদ্ধে লড়াই করা। কিন্তু জোট গঠনের পরই কয়েকটি দেশ এ নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে। এর মধ্যে রয়েছে মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, পাকিস্তান, নাইজেরিয়া, লেবানন সহ আরও কিছু দেশ। তারা বলেছে, এ বিষয়ে তারা অবগতই নয়। পাকিস্তানের পররাষ্ট্র সচিব ইজাজ চৌধুরী বলেছেন, তিনি এ জোটের কথা প্রথম একজন সাংবাদিকের কাছেই শুনতে পেয়েছেন। বিষয়টি জানতে তিনি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পাকিস্তানের দূতাবাসে ফোন করেছেন পরিষ্কার ধারণা পাওয়ার জন্য। সিনিয়র সরকারি কর্মকর্তারা বলেছেন, তাদের সঙ্গে এ নিয়ে আগে কোন শলাপরামর্শ করা হয় নি। সৌদি আরবের দীর্ঘ দিনের মিত্র হওয়া সত্ত্বেও এই ইসলামিক সামরিক জোটে যোগ দেয়া থেকে বিরত থাকার কথা জানায় পাকিস্তান। নভেম্বরে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর মুখপাত্র লেফটেন্যান্ট হেনারেল অসিম বাজওয়া বলেন, আমরা আমাদের দেশের বাইরে কোন সামরিক অভিযানে যোগ দিতে চাই না। একই রকমভাবে কিংকর্তব্যবিমূঢ় হয়ে পড়েছে লেবানন। এমনটাই বলেছে লেবাননের মিডিয়া নাহারনেট। সেখানকার প্রধানমন্ত্রী সালমান এ খবরকে স্বাগত জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আগে থেকেই লড়াই করছে লেবানন। পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জোর দিয়ে বলেছে, তাদের সঙ্গে এ বিষয়ে কোনই আলোচনা করা হয় নি। না কোন ফোন করা হয়েছে, না কোন চিঠিপত্র বিনিময় করা হয়েছে। সন্ত্রাস বিরোধী ইসলামিক কোট জোট গঠন নিয়ে তাদের কাছে কোন তথ্য নেই। এতে যোগ দিলে তা তাদের পররাষ্ট্র বিষয়ক সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতার সীমা লংঘিত হবে হতে পারে- এমনও প্রশ্ন তোলা হয়েছে। লেবাননের পাশাপাশি জোটে যোগ দেয়া নিয়ে অনিশ্চয়তায় রয়েছে ইন্দোনেশিয়া। মালয়েশিয়া যেকোন রকম সামরিক অভিযানে যেতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। তবে এ জোট ঘোষণার পর একে ইতিবাচক পদক্ষেপ আখ্যায়িত করেছে যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র ও কমনওয়েলথ বিষয়ক মন্ত্রী ফিলিপ হ্যামন্ড। তিনি এক টুইটে বলেছেন, সন্ত্রাস বিরোধী ইসলামিক জোট গঠনের ঘোষণাকে স্বাগত জানাই। সারাবিশ্বে আমরা আমাদের অভিন্ন জঙ্গি শত্রুদের বিরুদ্ধে লড়াই করছি। আমরা তা চালিয়ে যাব। তবে জোট ঘোষণার পর বিশ্ব জুড়ে যে প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে সে বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় কোন কথা বলে নি। উল্লেখ্য, ঘোষিত জোটে যে দেশগুলোর নাম বলা হয়েছে তা হলো: বাহরাইন, বাংলাদেশ, বেনিন, চাদ, কমোরোস, আইভরি কোস্ট, জিবুতি, মিশর, গ্যাবন, গিনি, জর্ডান, লেবানন, লিবিয়া, মালদ্বীপ, মালি, মালয়েশিয়া, মরক্কো, মৌরিতানিয়া, নাইজার, নাইজেরিয়া, কাতার, ফিলিস্তিন, পাকিস্তান, সেনেগান, সুদান, সিয়েরা লিয়ন, সোমালিয়া, টোগো, তিউনিশিয়া, তুরস্ক, সংযুক্ত আরব আমিরাত ও ইয়েমেন।
No comments:
Post a Comment