Monday, December 28, 2015

কয়েক দিনের ‘বিয়ে’

সিরিয়ার সাহায্যকর্মীরা একে বলছেন ‘সার্ভাইভাল সেক্স’ বা ‘বেঁচে থাকার জন্য যৌনকর্ম’। লেবাননে আশ্রয় নেওয়া সিরিয়ান শরণার্থী নারী ও মেয়ে, যাদের অনেকের বয়স মাত্র ১২ বছর, বাধ্য হয়ে নিজের শরীর বিক্রি করছেন, যাতে তাদের পরিবার বেঁচে থাকতে পারে। মরিয়া এ মানুষগুলো পাহাড়সম ঋণে জর্জরিত। আরেকটি বছর আসন্ন, কিন্তু সিরিয়ার সঙ্কট সমাধানের নামগন্ধও শোনা যাচ্ছে না। যারা সিরিয়া ছেড়ে লেবাননে গিয়েছেন, তাদের যেটুকু সঞ্চয় ছিল, তা অনেক আগেই শেষ। বেঁচে থাকার তাড়নায়, এখন সিরিয়ান শরণার্থী নারীরা বাধ্য হচ্ছেন পতিতাবৃত্তিতে জড়াতে। সবচেয়ে ভয়ঙ্কর বিষয় হলো, খুবই অল্পবয়স্ক কন্যাশিশুদের ‘বিয়ে’ করানো হচ্ছে, যে বিয়ের মেয়াদ মাত্র কয়েকদিন। লেবাননের বিভিন্ন শরণার্থী শিবির ঘুরে লেখা এমন একটি প্রতিবেদন ছেপেছে ডেইলি মেইল। এতে বলা হয়েছে, সাহায্যকর্মীরা বলছেন, এ ‘বিয়ে’ হলো নকল। বিয়েতে বর যৌতুক বা কিছু অর্থ দেয় কনেকে। মুসলিম সমাজে একে বলা হয় দেনমোহর। কনের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতেই এ অর্থ দেওয়ার বিধান রয়েছে মুসলিম ধর্মমতে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে অল্পবয়স্ক মেয়ের সঙ্গে যৌনতার বিনিময়েই মূলত ওই অর্থ দেওয়া হয়। ওই মেয়ে হয়তো জানেও না, ক’ দিন বাদেই তাকে পরিত্যাগ করবে ‘স্বামী’। বৈধতার মোড়কে এভাবেই চলছে দেহব্যবসা। কর্মকর্তারা দাবি করেছেন, বিদেশীরা এসে এ ধরণের ‘বিয়ে’ করে। স্থানীয় আদালতের রায় মোতাবেক, এ বিয়ে বৈধ। মাত্র ৭২ ঘন্টা পরই তালাকের মাধ্যমে ইতি ঘটতে পারে বিয়ের। কিছু ঘটনার কথা স্মরণ করে শরণার্থী শিবিরে কর্মরত সাহায্যকর্মীরা বলেন, ১৪ বছর বয়সী মেয়ের বিয়ের এক সপ্তাহ পরই তার স্বামী তাকে ত্যাগ করে। মেয়েটিকে বলা হয়েছিল, তাকে আবারও ‘ডেকে নেবে’ তার স্বামী। কিন্তু আর কখনও স্বামীর ডাক পায় নি সে। ৭ সদস্যের পরিবার আর্থিক সঙ্কটে পড়ায়, পরিবারের ১৫ বছর বয়সী মেয়েকে বিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু তার ২৩ বছর বয়সী স্বামীর বারংবার নিষ্ঠুর নির্যাতনের ফলে তাকে নিজেদের জিম্মায় নিতে বাধ্য হয় শরণার্থী শিবির। ৩ বছর আগে সিরিয়ার ইদলিব থেকে বাবার সঙ্গে পালিয়ে লেবাননে পাড়ি জমায় ১২ বছর বয়সী হুরিয়াহ। মেয়েটি স্কুলে পড়ে। কিন্তু তার বাবা তাকে নিয়ে চিন্তিত। কারণ, ১৭ বছর বয়সী একটি ছেলে তাকে নিয়মিত অনুসরণ করার পর থেকেই তাকে নিয়ে অনেক মুখরোচক কথাবার্তা ছড়াচ্ছে। হুরিয়ার বাবা বলছেন, ওই ছেলের কাছেই মেয়ের বিয়ে দেবেন তিনি। কেননা, মেয়েকে সুরক্ষার অন্য কোন উপায় নেই। লেবানিজ পুলিশেরও কিছু করার নেই। কেননা, সিরিয়ান শরণার্থীদের ওপর তাদের কোন ক্ষমতা নেই। এরকম অসংখ্য গল্প ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে লেবাননের সিরিয়ান শরণার্থী শিবিরে। যুদ্ধের নৃশংসতা যে কতরকম হতে পারে, তার একটি উদাহরণ হয়তো এটি। 

No comments:

Post a Comment