Tuesday, March 27, 2012

দ্য হিন্দুর সম্পাদকীয়, বাংলাদেশের কাছে নিঃশর্ত ক্ষমা চান

সীমান্তে বাংলাদেশীকে বর্বর নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশের কাছে নয়া দিল্লির নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত। ২৪শে জানুয়ারি ভারতের অনলাইন দ্য হিন্দু এক সম্পাদকীয়তে এ আহ্বান জানায়। এ প্রতিবেদনটি পরদিন দৈনিক মানবজমিন সহ বাংলাদেশের অনেক পত্রপত্রিকায় ছাপা হয়। এর শিরোনামÑ ব্রুটালিটি অন দ্য বর্ডার। অর্থাৎ সীমান্তে বর্বরতা। এতে বলা হয়, সম্প্রতি একটি ভিডিও প্রকাশিত হয়েছে। তাতে দেখা গেছে, এক বাংলাদেশীর ওপর বর্বর নির্যাতন চালায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী বিএসএফ। এ নির্যাতনের ঘটনায় বাংলাদেশের কাছে নয়া দিল্লির নিঃশর্ত ক্ষমা চাওয়া উচিত। বিস্মিত হওয়ার কোন কারণ নেই যে, ওই ভিডিওটি বাংলাদেশে ব্যাপক ক্ষোভের সৃষ্টি করেছে। অর্থমন্ত্রী প্রণব মুখার্জী এ ঘটনাকে ফুলিয়ে ফাপিয়ে না তুলতে মন্তব্য করেছেন। একই মন্তব্য প্রতিধ্বনিত হয়েছে বাংলাদেশের একজন মন্ত্রীর কণ্ঠে। এতে ক্ষোভ আরও বেড়েছে বলে মনে হয় এবং শেখ হাসিনার সরকার ভারতপন্থি বলে বিরোধীরা প্রচারণায় ঝড় তুলেছেন। এরই মধ্যে একদিন বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দাবি করেছে, ভারত বিরোধী কিছু কর্মকর্তার সরকার উৎখাতের ষড়যন্ত্র নস্যাৎ করেছে তারা। প্রতিবেশী দেশের রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টিতে অনিচ্ছাকৃত কারণ হয়ে উঠার ক্ষেত্রে নয়া দিল্লির আরও দূরদৃষ্টি দেয়া উচিত। গত মাসে বিএসএফ দুটি বিচ্ছিন্ন ঘটনায় সীমান্তে তিন বাংলাদেশীকে হত্যা করেছে। এর পর থেকেই বাংলাদেশে ভারত বিরোধী মনোভাব তুঙ্গে। ২০১১ সালের মার্চে দুই দেশ সীমান্তে অবৈধ কর্মকাণ্ডে লিপ্তদের ওপর মারণাস্ত্র ব্যবহার না করার বিষয়ে চুক্তি করে। তারপর থেকে হত্যার ঘটনা কমে এসেছে। কিন্তু ওই ভিডিওটিই এখন অকাট্য প্রমাণ হয়ে উঠেছে যেÑ বিএসএফ অন্য উপায়ে সহিংসতা চালানোর ক্ষেত্রে বাধাহীন। এ থেকে একটি সত্য বেরিয়ে এসেছে যে, যদি কার্যক্ষেত্রে এই সব নির্যাতনের ঘটনার জন্য যারা দায়ী তাদের মানসিকতা যদি পরিবর্তন করা না যায় তাহলে জটিল সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় দ্বি-পক্ষীয় এ রকম চুক্তি মূল্যহীন। ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়, ১১ দশমিক ৫৬ মিনিটের যে বিদনাদায়ক ভিডিও ফুটেজটি ইউটিউবে প্রচারিত হয়েছে তা পরিষ্কার একটি প্রামাণ্য ভিডিও। তাতে দেখা গেছে, বাংলাদেশী ওই যুবককে নগ্ন করে বিএসএফ সদস্যরা তার হাত ও পা বেঁধে ফেলেছে। তারপর তাকে নির্দয়ভাবে পিটাচ্ছে। এ সময় তারা ওই যুবকের ওপর আর কি কি ধরনের নর্িৃাতন করা যায় তা নিয়ে তারা আলোচনা করছিল। ওই বাংলাদেশীকে গরুচোর হিসেবে সন্দেহ করা হয়। এখানে উল্লেখ্য, সীমান্ত গবাদিপশু পাচারের জন্য ব্যাপকভাবে পরিচিত। বাংলাদেশের মানবাধিকার কর্মীরা অভিযোগ করেছেন, ওই বাংলাদেশী যুবককে বিএসএফ সদস্যরা শাস্তি দিচ্ছিল তাদেরকে ঘুষ না দেয়ার কারণে। ওই বিএসএফ সদস্যদের দেখে মনে হয়েছে, তাদের যেন কোন শাস্তি হবে না বলে তারা ধরে নিয়েছে এবং সে জন্য তারা নির্দয় প্রহার করেছে। তবে এ বেদনাদায়ক ঘটনায় জড়িত থাকার অভিযোগে বিএসএফ তার ৮ সদস্যকে বরখাস্ত করেছে। নির্দেশ দিয়েছে তদন্তের। এখন আধা সামরিক এই বাহিনীকেই প্রমাণ করতে হবে যে, এটা একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। এ রকম ঘটনায় যে দায়মুক্তি দেয়া হয় তার সার্বিক বিষয়টিকে তদন্তকারীদের গুরুত্ব দিতে হবে। নিয়োগকালে কোন প্রশিক্ষণে কোন বিষয় মিস হচ্ছে কিনা, যার জন্য তারা এরকম বর্বরতা চালায় তা বিএসএফকেই বের করতে হবে। এটা করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটা শুধু বিএসএফ এর দুর্নাম বয়ে আনছে তা-ই নয়, একই সঙ্গে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিবেশী দেশের সঙ্গে ভারতের সম্পর্ককে ঝুঁকির মুখে ফেলছে।

No comments:

Post a Comment