Wednesday, March 28, 2012

ইমফল ফ্রি প্রেসের সম্পাদকীয়- টিপাই নিয়ে বাংলাদেশের শেষ কথা বলে কিছুই নেই


(২৯শে মার্চ দৈনিক মানবজমিনে প্রকাশিত রিপোর্ট)
টিপাইমুখ বাঁধ ইসুতে বাংলাদেশের শেষ কথা বলে কিছুই নেই। মন্তব্য করেছে মনিপুরের অনলাইন ইমফল ফ্রি প্রেস। এতে গত মঙ্গলবার একটি সম্পাদকীয় প্রকাশিত হয়। এর শিরোনাম- ‘বাংলাদেশ হ্যাজ নো সে,  এতে বলা হয়, পরিস্থিতি দেখে মনে হচ্ছে, অবশেষে ভারতের ক্ষমতাসীন ইউপিএ সরকার বহুমাত্রিক টিপাইমুখ বাঁধ ইস্যুতে বাংলাদেশকে বুঝিয়ে রাজি করাতে পেরেছে। বাংলাদেশের বিরোধীদল পরিবেশবাদীদের বিরোধিতা সত্ত্বেও বাংলাদেশ সরকার তার নয়া দিল্লিতে নিয়োজিত হাই কমিশনার তারিক আহমেদ করিমের মাধ্যমে প্রস্তাবিত টিপাইমুখ বাঁধে তার সমর্থন প্রকাশ করেছে। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পররাষ্ট্র উপদেষ্টা গওহর রিজভী সম্প্রতি নয়া দিল্লি সফর করেছেন। তারই ফল এটা। সফরকালে গওহর রিজভীর সহকর্মী ডক্টর মশিউর রহমান এবং বাংলাদেশের হাই কমিশনার তারিক আহমেদ করিম ভারতের প্রথম সারির নেতাদের সঙ্গে নয়া দিল্লিতে সাক্ষাত করেন। তারা সাক্ষাত করেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী, বিদ্যুমন্ত্রী, গ্রাম উন্নয়ণমন্ত্রী, পানি সম্পদমন্ত্রী জাতীয় প্রতিরক্ষা উপদেষ্টার সঙ্গে। ভারত সরকার যে আশ্বাস দিয়েছে তাতে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ সরকার সম্মত হয়েছে যে, সুরমা কুশিয়ারা নদীতে পানির প্রবাহ হ্রাস পাবে না। বাঁধ নির্মিত হলে তাতে পরিবেশের বা জীব বৈচিত্রের ওপর কোন প্রভাব পড়বে না। বর্ষা মৌসুমে আকস্মিত বন্যা হবে না। এর পরেও বাংলাদেশ সরকার বাঁধ এলাকা পরিদর্শনের জন্য একটি বিশেষজ্ঞ দল পাঠানোর প্রস্তাব দিয়েছে। ওই দলটি বাঁধ এলাকাটি দেখবে বাঁধের বৈশিষ্ট্যগুলো খতিয়ে দেখবে। বাঁধের কারণে সুরমা, কুশিয়ারার পানি প্রবাহের কোন প্রভাব পড়বে কি না তা পরীক্ষা করবে। তবে একটি বিষয় মনে রাখা উচিত, টিপাইমুখ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের যে সম্মতি তা সর্বজন স্বীকৃত নয়। বাংলাদেশের বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশাল এই বাঁধের ফলে বাংলাদেশে নদীতে যে মৌসুমি প্রবাহ থাকে তা বিঘিœ হবে। তার ফলে বাংলাদেশের কৃষি ৎস্য চাষ খুব বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে।  দেশের প্রধান বিরোধী দলীয় নেত্রী খালেদা জিয়া টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিয়েছেন। তবে আওয়ামী লীগ সরকার বিরোধী দলের বক্তব্যকে আমলে না নিয়ে নিজেদের সিদ্ধান্তে অটল। তারা বিরোধীদের যুক্তিকে গোঁড়া, একগুয়েমি, অসাড় দর্শক মাতানো খেলা বলে বানচাল করে দিচ্ছে। ওই সম্পাদকীয়তে আরও বলা হয়েছে, দলীয় রাজনীতি প্রচারণার কাছে অনেক ভাষ্যকারের সত্য অনুসন্ধান ঢাকা পড়ে গেছে। এতে আরও বলা হয়, এখানে মজার একটি বিষয় হলো ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশকে টিপাইমুখ প্রকল্পে সমান অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে বিনিয়োগ করার বিদ্যুতের ভাগ নেয়ার আহ্বান জানিয়েছেন, যে বিদ্যুত ৎপাদিত হবে। বাংলাদেশ মনে করে, চূড়ান্ত আলোচনার টেবিলে  বিষয়টিতে তাদের নিশ্চয়তা দেয়া হবে। একই সঙ্গে যেকোন অবস্থায় এই প্রকল্প পর্যবেক্ষণের সামর্থ থাকবে বাংলাদেশের। এখানেই মূল কথা নিহিত। মনিপুরে বরাক নদীতে টিপাইমুখ ড্যাম হলো একটি প্রস্তাবিত বাঁধ। এই বাঁধের উদ্দেশ্য, বন্যা নিয়ন্ত্রণ করা এবং পানিবিদ্যুত ৎপাদন করা। এই প্রকল্পের ফলে পানির অধিকার নিয়ে বাংলাদেশ ভারতের মধ্যে বিতর্কের সূত্রপাত। একই রকম বিতর্ক শুরু হয়েছে মনিপুরে এই পানির আধারের ফলে যেসব মানুষ বাস্তুচ্যুত হবেন তাদের নিয়ে। বরাক নদীতে এই বাঁধের দৈর্ঘ্য হবে ৩৯০ মিটার উচ্চতা হবে ১৬২. মিটার। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে এর চূড়ার উচ্চতা হবে ১৮০ মিটার। আর এই জলাধারে ১৭৮ মিটার পর্যন্ত পানি জমা থাকবে। এই বাঁধটি প্রাথমিকভাবে তৈরি করা হয়েছিল বরাকের নিম্ন উপত্যকায় বন্যার পানি ধরে রাখার জন্য। কিন্তু পরে পানিবিদ্যুত ৎপাদনের বিষয়টি প্রকল্পে অঙ্গীভূত হয়েছে। প্রকল্পটি ১৫০০ মেগাওয়াট বিদ্যু ৎপাদনের জন্য স্থাপন উপযোগী। ৬টি ২৫০ মেগাওয়াট ফ্রাঁসিস টার্বাইন জেনারেটরের সাহায্যে তা সরবরাহ করা হবে। আমাদের মনে রাখতে হবে যে, টিপাইমুখ বাঁধের বিষয়ে বাংলাদেশের সমর্থনের অর্থ এই নয় যে সকল বাধা দূর হয়েছে। কর্তৃপক্ষকে অবশ্যই মনে রাখতে হবে যে, শুধু ওই সব আন্দোলনকারীরাই নন এই বাঁধের বিরুদ্ধে মনিপুরের জনমত। এটা একটি ভূমিকম্পন প্রবণ এলাকা হওয়া ছাড়াও এই প্রস্তাবিত বাঁধের জলাধারের কারণে অঞ্চলে উদ্ভিদ প্রাণিকুলের মারাত্মক ক্ষতি হবে। এই বাঁধের জন্য অনেক গ্রামবাসীকে তার বাস্তুচ্যুত হবে হবে। কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদেরকে অন্যত্র পুনর্বাসন করা হবে। কিন্তু এর পুরোটাই মানবিক যুক্তির বিরোধী। এতে আরও বলা হয়, আমাদেরকে ভূমির সঙ্গে মানুষের যে সম্পর্ক তাও বিবেচনায় নিতে হবে। মানুষ যে স্থানে জন্মে সেখানকার সঙ্গে তার যে টান তাও বিবেচনায় নিতে হবে। কেউ চাইলেই বসতি স্থাপনকারী মানুষকে অন্যত্র সরিয়ে দিতে পারে না। হ্যাঁ, মনিপুরের বিদ্যুতের দরকার আছে। কিন্তু তা উদ্ভিদ প্রাণিকুলের বিনাশ ভূমির সঙ্গে মানুষের সম্পর্ককে উপেক্ষা করে নয়।

No comments:

Post a Comment