Tuesday, March 27, 2012

বাংলাদেশী হাইকমিশনার বললেন- টিপাইমুখ বাঁধ হলে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবে না













টিপাইমুখ বাঁধ হলে বাংলাদেশের কোন ক্ষতি হবে না বরং এর ফলে সুবিধা পাবে বাংলাদেশ। টিপাইমুখ বাঁধের কারণে বাংলাদেশ ভবিষ্যতে মরুভূমিতে পরণত হবে- এমন ধারণা অমূলক। এ বাঁধ নিয়ে বাংলাদেশের প্রায় সব মানুষ যখন প্রতিবাদমুখর, তখন এর পক্ষ অবলম্বন করে এসব কথা বলেছেন নয়া দিল্লিতে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার তারিক আহমেদ করিম। এ বিষয়ে তিনি ‘বাংলাদেশ-ইন্ডিয়া রিলেশন: মাই ভিশন অব দ্য ওয়ে ফরওয়ার্ড’- শীর্ষক একটি প্রতিবেদনে এসব কথা লিখেছেন বলে বার্তা সংস্থা পিটিআইকে উদ্ধৃত করে জানিয়েছে মণিপুরের অনলাইন দৈনিক দ্য সাঙ্গাই এক্সপ্রেস। এতে বলা হয়, তারিক আহমেদ করিম বাংলাদেশের ৪১তম স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ওই প্রবন্ধটি লিখেছেন। এতে তিনি লিখেছেন, টিপাইমুখ বাঁধ কোন আকস্মিক পরিবর্তন আনবে না। এটি একটি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প। এর ফলে বরাক নদীর কোথাও পানির প্রবাহ পরিবর্তন হবে না। এ বাঁধের কারণে পানিপ্রবাহও বাধাগ্রস্ত হবে না। জলবিদ্যুৎ প্রকল্পে যা করা হয় এখানেও তাই করা হবে। এতে প্রথমে একটি নির্দিষ্ট স্তর পর্যন্ত পানি ধরে রাখা হবে। পরে তা থেকে নির্দিষ্ট গতিতে পানি ছাড়া হবে। এর মাধ্যমে উৎপন্ন করা হবে বিদ্যুৎ। এই বিদ্যুতের সুফল পাবে বাংলাদেশ। এর ফলে বন্যার আশঙ্কা কমবে। বাংলাদেশের হাইকমিশনার আশা করেন, দুই দেশের যৌথ সমীক্ষার পর এই প্রকল্প নিয়ে যে বিতর্ক আছে তা আর থাকবে না। দেশে যারা এর বিরোধিতা করছেন তারা বুঝতে পারবেন যে, এ প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে তাতে আমাদেরও স্বার্থ আছে। সেখান থেকে আমরাও বিদ্যুৎ পেতে পারি। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, এ প্রকল্প নিয়ে বাংলাদেশে তীব্র বিরোধিতা আছে বিভিন্ন মহল থেকে। এর মধ্যে রয়েছে বিরোধী দল বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)। তারা অভিযোগ করছেন, এই প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে বরাক নদীতে পানি সঙ্কট তীব্র আকার ধারণ করবে। এই নদীটি বাংলাদেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত হয়। সেখানে পানি সঙ্কটে এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্যের ওপর এর প্রভাব পড়বে। এ বাঁধের বিরোধিতা করেছেন জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান হুসেইন মুহম্মদ এরশাদ। সর্বশেষ গত শনিবার সিলেটের মহাসমাবেশে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এ বাঁধের বিরোধিতা করেন। তিনি বলেন, ক্ষতিকর কিছু হলে টিপাইমুখ বাঁধ হতে দেয়া হবে না। এরপর নয়া দিল্লিতে নিয়োজিত বাংলাদেশের হাইকমিশনারের এমন মন্তব্যে ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। ওই রিপোর্টে বলা হয়েছে, ২০০৯ সালে নয়া দিল্লি সফরে যান বাংলাদেশের সংসদীয় একটি দল ও সরকারি কর্মকর্তারা। তাদেরকে ভারতীয় বিদ্যুৎমন্ত্রী সুশীল কুমার সিন্ধে, বিদ্যুৎ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রতিনিধিরা বলেন, টিপাইমুখ বাঁধ হলে পানির প্রবাহের গতিপথ পরিবর্তন হবে না। এর ফলে বন্যানিয়ন্ত্রণে সহায়তা হবে। হাইকমিশনার তারিক আহমেদ করিম এ প্রকল্প নিয়ে ওই মন্তব্য করা ছাড়াও তিনি তিস্তা বাঁধ নিয়েও কথা বলেন। তিনি আস্থা প্রকাশ করেন, বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে তিস্তার পানিবণ্টন চুক্তি হবে। তবে এক্ষেত্রে তিনি ধৈর্য ধরার পরামর্শ দেন। গত বছর পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাগড়ার কারণে এ চুক্তি শেষ মুহূর্তে ভেস্তে যায়। তারিক আহমেদ করিম লিখেছেন, তিস্তা প্রসঙ্গে আমি আপনাদের আশ্বস্ত করছি, এটা হবে। এক্ষেত্রে আমাদের সামান্য ধৈর্য ধরতে হবে। পশ্চিমবঙ্গ সরকারের সঙ্গে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার ব্যবধান কমিয়ে আনার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন। তাদের সম্পর্ক ঠিকঠাক মতো প্রতিস্থাপিত হলেই বাংলাদেশ ও ভারত সরকার অনিষ্পন্ন এই চুক্তিটি করতে পারবে। ততদিন আমরা আগে দু’দশক যেভাবে এ নদী থেকে পানি পেয়েছি এখনও সেভাবে পানি পেতে থাকবো। তিনি বলেন, বাংলাদেশের একটি মহল তিস্তা চুক্তি না হওয়া ও টিপাই মুখ ইস্যুতে সন্দেহের বাষ্প ছড়িয়ে দিচ্ছেন। এতে মনে হতে পারে বাংলাদেশের প্রত্যাশার গ্লাস অর্ধেকের বেশি খালি। কিন্তু আমি বিনয়ের সঙ্গে বলতে চাই- বাংলাদেশের প্রত্যাশার গ্লাস তিন-চতুর্থাংশের বেশি ভরা। গত সেপ্টেম্বরে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং বাংলাদেশ সফর করেন। সে সময় সীমান্ত চিহ্নিতকরণ ও ছিটমহল বিনিময় চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। তারিক করিম বলেন, ওই চুক্তি শিগগিরই অনুমোদিত হবে। এর ফলে দু’দেশের মধ্যে দীর্ঘদিনের বিদ্যমান একটি সমস্যার সমাধান হবে। সাফটা’র অধীনে বাংলাদেশের ৪৬টি গার্মেন্টস পণ্য ভারতে প্রবেশে বাংলাদেশ যে নেতিবাচক তালিকায় ছিল তা প্রত্যাহার করা হয়েছে। এসব পণ্যকে ভারতে প্রবেশে শুল্কমুক্ত সুবিধা দেয়া হয়েছে। এ প্রসঙ্গে তারিক করিম বলেন, বাস্তবিক অর্থে এটা একপাক্ষিকভাবে বাংলাদেশের পক্ষে গিয়েছে। এর সমান প্রতিদান ভারতকে দিচ্ছে না বাংলাদেশ।

No comments:

Post a Comment