Tuesday, April 3, 2012

সু চির বিজয়ে মিয়ানমারে নতুন যুগের সূচনা


গণতন্ত্রের নেত্রী অং সান সু চির বিজয়ের মধ্য দিয়ে মিয়ানমারে শুরু হয়েছে এক নতুন যুগের। তিনি নিজেও আশা করেছেন মিয়ানমার গণতান্ত্রিক পথে অন্যসব দলকে সঙ্গে নিয়ে সামনের দিনগুলোতে এক সঙ্গে চলবে। রোববারের নির্বাচনে বিজয়কে তিনি মিয়ানমারের জনগণের প্রতি উৎসর্গ করেছেন। বলেছেন, এখন অন্য দলগুলোর সঙ্গে পুনরুজ্জীবিত হওয়ার এক নতুন পথ তৈরি হয়েছে। রোববার মিয়ানমারের ৪৫টি আসনে উপনির্বাচন হয়। এর মধ্যে ৪৪টিতে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করে অং সান সু চির ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। এখনও সরকারিভাবে নির্বাচনের ফল ঘোষণা করা না হলেও এনএলডি দাবি করেছে তারা যে ৪৪টি আসনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিল তার সবটাতেই জয় পেয়েছে। এর মধ্যে দলের কর্ণধার সু চি প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন কাওমু আসন থেকে। সেখানে তিনি খুব সহজেই জিতেছেন। এমন কি তার দল নতুন সৃষ্ট রাজধানী ন্যাপিডতেও বিজয়ী হয়েছে বলে দাবি করা হয়েছে। এ সপ্তাহের শেষের দিকে এ নির্বাচনের ফল প্রকাশিত হওয়ার কথা রয়েছে। নির্বাচনের বেসরকারি ফল যখন আসতে থাকে তখন সু চি  রেঙ্গুনে অবস্থিত তার এনএলডির প্রধান কার্যালয়ে ছিলেন। সেখানে সমবেত জনতার উদ্দেশে তিনি ভাষণ দেন। তিনি বলেন, এ জয় আমাদের নয়। এ বিজয় সেসব মানুষের, যারা সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তারা দেশের রাজনৈতিক স্রোতধারার সঙ্গে জড়িত হবেন। আমি আশা করি এর মধ্য দিয়ে একটি নতুন যুগের সূচনা হলো। আমি আশা করি, এই নির্বাচনে অন্য যেসব দল অংশ নিয়েছে তারা দেশের গণতান্ত্রিক পরিবেশকে আসল চেহারায় ফিরিয়ে আনতে আমাদের সঙ্গে সহযোগিতা করবেন। রোববার অনুষ্ঠিত এ নির্বাচনকে মিয়ানমারের রাজনীতিতে সংস্কার উদ্যোগের একটি পরীক্ষা হিসেবে দেখা হচ্ছে। যদিও মিয়ানমারের পার্লামেন্টের ৬৬৪ আসনে এখনও সেনাবাহিনী ও তার মিত্ররা সংখ্যাগরিষ্ঠ আসন দখল করে আছেন। পার্লামেন্টের শতকরা ৮০ ভাগ আসন রয়েছে তাদের দখলে। সেখানে সু চি নিজে একটি আসন নিয়ে ও তাকে নিয়ে দলের মোট ৪৪টি আসন পেয়ে কতটুকু লড়াই করতে পারবেন গণতন্ত্রের জন্য তা এখন দেখার ব্যাপার। ১৯৯০ সালের পর এই প্রথম মিয়ানমারের নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করলো সু চির এনএলডি। তারা ২০১০ সালের নির্বাচন বর্জন করেছিল। তবে এ নির্বাচনে অন্য ১৭টি বিরোধী দল অংশ নিয়েছিল। তবে এবারের নির্বাচনে অং সান সু চি নিজের জন্য যতটুকু প্রচারণা করেছেন দলীয় প্রার্থীদের জন্যও সমানে সমান খেটেছেন। ওদিকে আসিয়ান সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী উনা মাউং লুইন দাবি করেছেন রোববার মিয়ানমারে যে উপনির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়েছে তা ছিল অবাধ, সুষ্ঠু ও স্বচ্ছ। নির্বাচনের সময় বিদেশী সাংবাদিক ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের নির্বাচন পর্যবেক্ষণের ব্যাপক সুযোগ দেয়া হয়। এমনটা মিয়ানমারের দীর্ঘদিন দেখা যায়নি। এজন্য মিয়ানমারকে অভিনন্দন জানিয়েছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিলারি রডহ্যাম ক্লিনটন। তিনি বলেছেন, এসব সংস্কারকে সমর্থন দিতে যুক্তরাষ্ট্র ছিল প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। ইউরোপীয় ইউনিয়ন ইঙ্গিত দিয়েছে তারা মিয়ানমারের উপর আরোপিত অবরোধ শিথিল করবে। তবে এ ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র কি করবে তা এখনও স্পষ্ট নয়। যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর মিট ম্যাককনেল বলেছেন, এখনও মিয়ানমারে অনেক কিছু করার বাকি আছে। পার্লামেন্টের উপনির্বাচনে সু চির দল এনএলডি জিতেছে এটা সে দেশের জন্য সামনে এগিয়ে যাওয়ার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

No comments:

Post a Comment