আপত্তিকর ও বিব্রতকর কর্মকাণ্ডের জন্য ছাত্রলীগ নেতা জামাল হোসেনকে সংসদ উপনেতার পিও পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়। এ কারণে সংসদ উপনেতা তার প্রতি ছিলেন রুষ্ট। ২০১০ সালের ৪ঠা জুলাই তাকে অব্যাহতি দেয়া হলেও সে বিভিন্ন স্থানে এখনও সংসদ উপনেতার নাম ভাঙিয়ে অপকর্ম করে যাচ্ছে। রাজকীয় বিয়ের আয়োজনের পর দেশজুড়ে তাকে নিয়ে চলছে তোলপাড়। তিন বছর আগেও ফরিদপুর জেলা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক জামাল হোসেন মিয়া ফরিদপুর শহরের ঝিলটুলী এলাকায় একটি মেসে থেকে পড়াশোনা করতেন ফরিদপুর সরকারি রাজেন্দ্র কলেজে। কৃষিনির্ভর মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান জামাল হোসেনের বাড়ি ফরিদপুর জেলার নগরকান্দা উপজেলার তালমা ইউনিয়নের কদমতলী গ্রামে। জামালের পিতা আবু শহীদ মিয়া তালমা ইউনিয়নে একবার চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছিলেন। গত ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত হয়েছেন।
জামাল হোসেনের রাজকীয় বিয়ের খবরে হতবাক তার পরিচিতজনরাও। মাত্র তিন বছরে এত টাকার মালিক হওয়া কি করে সম্ভব? এত টাকা কোথায় পেলেন তিনি? বিয়েতে দু’টি হেলিকপ্টার, ১৫ হাজার লোকের ভূরিভোজ, বাদশাহী সব খানাপিনা, বউয়ের গায়ে পরতে পরতে স্বর্ণালঙ্কার, ডায়মন্ড, কেবল সেটিই নয়- আরও ছিল আয়োজন। ঢাকা থেকে সাদা মাইক্রোবাসে করে কদমতলী গ্রামে গেছে অতিথি আপ্যায়নের রঙিন সব পানীয়, কার্টুনকে কার্টুন বেনসন অ্যান্ড হেজেস পুড়েছে দমে দমে। বর-কনের নিরাপত্তায় কোন পুলিশ নয়, ছিল প্রাইভেট বাহিনী, বেসরকারি গানম্যান। শাহজাদা বেশে জামাল হোসেন আকাশ থেকে মাটিতে পা ফেলার সঙ্গে সঙ্গে ঠিক যেন বৃটিশ রাজকীয় বাহিনীর নিরাপত্তা কর্মীদের মতো তার দু’পাশে বন্দুক উঁচিয়ে দাঁড়িয়ে যান সুঠাম দেহের দুই গানম্যান। কোথা থেকে কিভাবে ওই গানম্যান এলো সেটা নিয়েও আছে নানা প্রশ্ন। বিয়েতে শোবিজের স্টারদের দাওয়াত করা হয়েছিল হৈচৈ ফেলার জন্য। বর জামাল হোসেন মিয়া নিজেই বলেছেন সেটা। বিয়েতে বিশেষভাবে দাওয়াত করা হয়েছিল ফরিদপুরের প্রিন্ট মিডিয়া ও ইলেক্ট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের। সাংবাদিকদের ফলাও করে রাজকীয় বিয়ের খবর প্রকাশ করতে বিশেষভাবে অনুরোধও করা হয়।
কেবল কোটি দেড়েক টাকা খরচে রাজকীয় বিয়েই নয়, পাল্টে গেছেন জামাল হোসেন মিয়া, একটা নয়, প্রাডো গাড়ি একাধিক। ঢাকায় রামপুরায় বাড়ি। এলাকার সাধারণ মানুষ জানিয়েছে এখন আর আগের জামাল নেই- এখন দু’হাতে টাকা ওড়ান, দান-খয়রাত করেন। দামি গাড়িতে চড়ে হাত নাড়তে নাড়তে ধুলো উড়িয়ে চলে যান। কিন্তু এলাকার মানুষ জানে না ছাত্রলীগ নেতা জামাল হোসেন মিয়া এবং তার বড় ভাই কামাল হোসেন মিয়া কিসের ব্যবসা করেন? তাদের কোন শিল্পকারখানা আছে, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান আছে, এমন কোন খবর নেই এলাকাবাসীর কাছে। এলাকার মানুষ জানে জামালের বড় ভাই কামাল ঢাকায় থাকেন। জামাল ছাত্রলীগের নেতা। কিছু দিন আগে সংসদ উপনেতার পিও ছিলেন। তার আচরণে অসন্তুষ্ট হয়ে সংসদ উপনেতা তাকে তাড়িয়ে দিয়েছেন।
সংসদ উপনেতার পিও থাকতে এলাকায় আলোচিত-সমালোচিত ছিলেন জামাল হোসেন। এলাকার তালমা বাজারে সরকারি জমি নিজেদের নামে লিজ নিয়ে দখল করতে গিয়ে ব্যাপকভাবে সমালোচিত হন জামাল। বিভিন্ন জাতীয় দৈনিকে তার নামে একাধিক সংবাদ প্রকাশিত হয় এলাকার রসুলপুর বাজারের কাছে এক বিধবা মহিলাকে পানি উন্নয়ন বোর্ডের জায়গার বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করে সেটা দখল করতে যাওয়ার কারণে।
ঢাকাতে জামাল-কামাল দুই ভাই আলোচনায় আসেন সংসদ সদস্যের স্টিকার লাগানো একটি গাড়িতে র্যাবের হাতে ইয়াবাসহ ধরা পড়ার পর। ইয়াবাসহ ওই গাড়িতে ধরা পড়ে নগরকান্দা এলাকার কালীবাড়ি গ্রামের তার ফুফাতো ভাই জাকির নামের একটি ছেলে। জাকিরের কাছ থেকে বেরিয়ে আসে ওই ইয়াবার মালিক জামালের ভাই কামাল। কিন্তু সে সময়ে অতিসহজেই উধাও হয়ে যায় সেই ইয়াবার ঘটনা, কারণ সে সময়ে জামাল ছিলেন সংসদ উপনেতার পিও। সংসদ উপনেতার অজান্তে তার নাম ভাঙিয়ে প্রভাব খাটিয়ে ভাইকে সহযোগিতা করতেন জামাল।
গত তিন বছরে ক্ষমতার প্রভাব খাটিয়ে রাজধানী শহরে একাধিক বাড়ি ও জায়গার মালিক হয়েছেন জামাল-কামাল দুই ভাই। ঢাকার রামপুরা এলাকার টিভি সেন্টারের পাশে এক দাগে ৬০ কাঠা জমির মালিক তারা। যে জমির বর্তমান বাজার মূল্য কম করে হলেও ৫০ কোটি টাকা। জামাল-কামাল ওই সম্পত্তির মালিক হয়েছেন এই তিন বছর সময়ে।
সংসদ উপনেতার প্রতিবাদ
ছাত্রলীগ নেতার রাজকীয় বিয়ে শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদের প্রতিবাদ জানানো হয়েছে সংসদ উপনেতার কার্যালয় থেকে। সংসদ উপনেতার পিএস ড. মোহাম্মদ হারুন অর রশিদ স্বাক্ষরিত প্রতিবাদপত্রে বলা হয়েছে ‘মো. জামাল হোসেন মিয়া দীর্ঘ দুই বছরেরও বেশি আগে থেকে কিছু সময়ের জন্য মাননীয় সংসদ উপনেতার ব্যক্তিগত কর্মকর্তা হিসেবে দায়িত্ব পালন করেছিলেন, সহকারী একান্ত সচিব (এপিএস) হিসেবে নয়। তার বিভিন্ন আপত্তিজনক, বিব্রতকর কার্যকলাপের কারণে মাননীয় সংসদ উপনেতা অসন্তুষ্ট ছিলেন এবং সংসদ উপনেতার অভিপ্রায়ে ২০১০ সালের ৪ঠা জুলাই তাকে পিও পদ থেকে অব্যাহতি দেয়া হয়।’
http://mzamin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=39422:2012-04-01-16-24-36&catid=48:2010-08-31-09-43-22&Itemid=82
No comments:
Post a Comment