Wednesday, April 4, 2012

সুপ্রিম কোর্টকে ক্ষমা চাইতে বললেন বিলওয়াল ভুট্টো


পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট আসিফ আলি জারদারির অর্থ পাচার মামলা পুনরায় চালু করা নিয়ে বিচার বিভাগের সঙ্গে প্রশাসনের এক রকম ঠাণ্ডা লড়াই চলছে। এরই মধ্যে ক্ষমতাসীন দল পাকিস্তান পিপলস পার্টির প্রধান বিলওয়াল ভুট্টো জুলফিকার আলি ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ডে আদালতের ভূমিকার ব্যাপারে সুপ্রিম কোর্টের ক্ষমা চাওয়ার দাবি করেছেন। প্রধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির বিরুদ্ধে আদালত অবমাননার মামলায় আদালত যে কোন দ্বৈতনীতি অবলম্বন করছে না- সেটা প্রমাণের জন্যই বিলওয়াল সুপ্রিম কোর্টের প্রতি এ আহবান জানিয়েছেন। পাকিস্তানের সাবেক প্রেসিডেন্ট জুলফিকার আলি ভুট্টোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে সিন্ধু প্রদেশে আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পিপিপি’র ২৩ বছর বয়সী চেয়ারম্যান এ ধরনের মন্তব্য করেছেন। তিনি বলেছেন, পিপিপি’র জন্য এখন ন্যায় বিচার চাওয়ার সময় এসেছে। ইতিহাসের দৃষ্টিতে দীর্ঘদিন ধরেই পিপিপি এ ন্যায় বিচার পাওয়ার প্রতীক্ষায় আছে। সাবেক প্রেসিডেন্ট মৃত্যুদণ্ডের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করতে পিপিপির দায়ের করা একটি মামলার কথা উল্লেখ করে বিলওয়াল বলেন, আমি বিশ্বাস করি সুপ্রিম কোর্ট এখন সেই আগের মতো অবস্থান নেবে না। আমি সুপ্রিম কোর্টের কাছে অবশেষে ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করছি। জনগণ, পিপিপি এবং শহীদ ভুট্টো পরিবারের পক্ষ থেকে আমরা আশা করছি, শহীদ জুলফিকার আলি ভুট্টোর মৃত্যুদণ্ড দিয়ে সুপ্রিম কোর্ট যে ভূমিকা পালন করেছিল সেজন্য তারা ক্ষমা চাইবে। বিলওয়াল প্রথধানমন্ত্রী ইউসুফ রাজা গিলানির বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আদালত অবমাননার বিষয়টির প্রতি ইঙ্গিত করে বলেন, আমি আশা করি সুপ্রিম কোর্ট এ ধরনের মামলার শুনানির ক্ষেত্রে কোন দ্বৈতনীতির আশ্রয় নেবে না। জারদারির বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা আবার চালু করতে সুইস কর্তৃপক্ষকে চিঠি না দেয়ার প্রধানমন্ত্রীর সিদ্ধান্তের প্রতি সমর্থন জানিয়ে বিলওয়াল বলেছেন, সংবিধানেই প্রেসিডেন্টকে সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করা হয়েছে। এ কাজ করলে প্রধানমন্ত্রী সংবিধান লঙ্ঘনের দায়ে অভিযুক্ত হতেন। ইংরেজিতে দেয়া বক্তব্যে বিলওয়াল বলেন, প্রধানমন্ত্রী আপনি ভিয়েনা সনদ লঙ্ঘন করেননি, আপনি পাকিস্তানের সংবিধান লঙ্ঘন করেননি, আপনি আমাদের শহীদদের আত্মার অসম্মান করেননি। আপনি আপনার পদ হারাতে পারেন। আপনার সরকারের পতন হতে পারে। কিন্তু আপনি সঠিক কাজই করেছেন। সুপ্রিম কোর্টই কেবল বিচারের মানদণ্ড নয়। জনতা এবং ইতিহাসেরও একটি আদালত রয়েছে। বিলওয়াল বলেন, তারা ইউসুফ রাজা গিলানিকে কারাদণ্ড দেয়ার হুমকি দিতে পারে। কিন্তু তিনি শহীদ ভুট্টোর অনুসারী। আমরা কারাগারের ভয় করি না। আদালত অবমাননার দায়ে দোষী সাব্যস্ত হলে গিলানি ছয় মাসের কারাদণ্ড এবং প্রধানমন্ত্রীর পদের জন্য অযোগ্য প্রমাণিত হতে পারেন। আদালতের বিভিন্ন বিতর্কিত রায়ের ব্যাপারে বিলওয়াল সমালোচনা করেন। ধর্ষণের শিকার মুখতার মাইয়ের ধর্ষণকারীদের মুক্তি দেয়ার সমালোচনা করে তিনি বলেন, আদালতে উপস্থাপন করা ৫০ ভাগের বেশি অপরাধীকে মুক্তি দেয়া হয়।
আমাকে বলা হয়েছে, প্রমাণের অভাব এবং বিচার ব্যবস্থার দুর্বলতার কারণে এ ধরনের ঘটনা ঘটছে। একই কারণে আমাদের বোন মুখতার মাইয়ের ধর্ষণকারীও মুক্তি পেয়ে গেছে। বিলওয়াল প্রশ্ন তোলেন জুলফিকার আলি ভুট্টোকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ার জন্য যদি পর্যাপ্ত প্রমাণ থেকে থাকে তাহলে অপরাধী এবং ধর্ষণকতারীদের কারাগারে আটক রাখতে কেন পর্যাপ্ত প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে জুলফিকার আলি ভুট্টোর মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আায়োজিত এক সমাবেশে প্রেসিডেন্ট ইউসুফ রাজা গিলানি গতকাল বলেছেন, পিপিপিকে আক্রমণ এবং তার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগের প্রত্যেকটির জবাব তার কাছে রয়েছে। তার বিরুদ্ধে অর্থ পাচার মামলা আবার চালু করার ব্যাপারে সরকারের ওপর সুপ্রিম কোর্টের চাপ প্রসঙ্গে তিনি বলেছেন, জনতার সিদ্ধান্তই ইতিহাসে জায়গা করে নেয়। কোন বিচারকের রায় ইতিহাসে স্থান পায় না। জারদারি বলেন, আমি যদি আজ লড়াই করে থাকি, প্রধানমন্ত্রীর আইনজীবী যদি আদালতে লড়াই করে থাকেন সেটা জনগণের সমর্থনের কারণেই সম্ভব হচ্ছে। পাকিস্তানের শাসন এখন জনতার হাতে রয়েছে। এরা কখনোই ভুল করতে পারেন না।    

No comments:

Post a Comment