Tuesday, April 3, 2012

আরব নিউজের রিপোর্ট: খালাফ হত্যার তদন্তে বাংলাদেশ ব্যর্থ

ঢাকায় সৌদি আরবের কূটনীতিক খালাফ আল আলী হত্যার ঘটনায় তীব্র হতাশা ব্যক্ত করেছে  সৌদি আরব। এই হত্যাকাণ্ডের পর প্রায় এক মাস অতিবাহিত হয়েছে। কিন্তু বাংলাদেশ সরকার এ হত্যার রহস্য উদঘাটনে শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ হয়েছে। এমনকি তারা এ হত্যার কোন অগ্রগতি অর্জনেও ব্যর্থ হয়েছে। গতকাল অনলাইন আরব নিউজে এসব কথা বলা হয়েছে। এ নিয়ে ‘নো ক্লুজ ইয়েট অন সউদি ডিপ্লোম্যাটস মার্ডার ইন ঢাকা’ শীর্ষক এক প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এতে বলা হয়, সোমবার সৌদি আরবের উপ-পররাষ্ট্রমন্ত্রী আলাউদ্দিন আল আসকারি বলেছেন, এ ঘটনায় বাংলাদেশের নিরাপত্তা রক্ষাকারী বাহিনীগুলো কাউকে গ্রেপ্তার বা এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে কারও নামও বের করতে পারেনি। তিনি বলেন, সৌদি আরবের কূটনীতিক হত্যার তদন্তে বাংলাদেশের নিরাপত্তা সংস্থাগুলোকে সহায়তা করার জন্য সৌদি আরবের ৪ সদস্যের একটি দল ঢাকায় পাঠানো হয়েছে। খালাফ আল আলী ঢাকায় সৌদি আরবের দূতাবাসে কনস্যুলার সেকশনে দায়িত্ব পালন করছিলেন। এ বছরের ৬ই মার্চ তাকে তার গুলশানের বাসার কাছেই অজ্ঞাত বন্দুকধারীরা গুলি করে হত্যা করে। তাকে মারাত্মক আহত অবস্থায় ঢাকার ইউনাইটেড হাসপাতালে নেয়া হয়। সেখানে তিনি মারা যান। বাংলাদেশে সৌদি আরবের যে দল পাঠানো হয়েছে তাতে কে কে বা কোন ধরনের কর্মকর্তা আছেন এমন এক প্রশ্নের জবাবে আসকারি বলেন, ওই প্রতিনিধি দলে রয়েছেন সৌদি আরবের স্বরাষ্ট্র ও পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা। আমাদের মূল উদ্দেশ্য হলো- অপরাধীকে শনাক্ত করা এবং তাকে বা তাদের বিরুদ্ধে রিপোর্ট করা। অন্য এক কর্মকর্তা বললেন- খুনিদের ধরতে এ পর্যন্ত বাংলাদেশ পুলিশ ব্যর্থ হয়েছে। তাদের বলার কিছুই নেই। কে খুনি, খুনের নেপথ্য কারণ কি-এসব প্রশ্নের কোন উত্তর নেই বাংলাদেশ পুলিশের কাছে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, গত ২১শে মার্চ বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী দীপুমনি সৌদি আরবের রাজধানী রিয়াদে পৌঁছান। তিনি খালাফ আল আলী হত্যাকাণ্ডের তদন্ত প্রক্রিয়া নিয়ে সৌদি সরকারকে অবহিত করেছেন এবং নিশ্চয়তা দিয়েছেন যে, তদন্তে কোন ত্রুটি থাকবে না। এ সংক্রান্ত খুঁটিনাটি সম্ভাব্যতা তদন্ত করা হবে। এ বিষয়ে সৌদি কর্মকর্তারা বলছেন- কিন্তু কিছুই হয়নি। এ পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন ফলই অর্জিত হয়নি। এক কর্মকর্তা বলেন, বর্বর এই অপরাধের সঙ্গে জড়িতদের ধরিয়ে দেয়ার ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পুলিশের প্রচেষ্টা আরও বাড়ানো উচিত। ঢাকায় নিযুক্ত সৌদি রাষ্ট্রদূত ড. আবদুল্লাহ আল বুশাইরি সমপ্রতি রিয়াদ সফর করেন। এ সময় তিনি তার সহকর্মী খালাফ আল আলী হত্যার ঘটনায় গভীর শোক প্রকাশ করেন। এ সময় তিনি তদন্ত নিয়ে গভীর হতাশাও প্রকাশ করেন। ওই রিপোর্টে ঢাকা থেকে প্রকাশিত সাপ্তাহিক ট্যাবলয়েড ‘ব্লিৎজ’কে উদ্ধৃত করে বলা হয়, প্রকৃতপক্ষে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বর্তমানে খুব খারাপ। সমপ্রতি ক্ষমতাসীন দল ঢাকায় এক সাংবাদিক দম্পতি হত্যার যথার্থ তদন্ত করতে পুরোপুরিভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, রাজধানী ঢাকায় কূটনৈতিক পাড়ায় যখন সৌদি আরবের একজন কূটনীতিককে হত্যা করা হয়, তখন সেখানকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির চিত্র পরিষ্কার হয়ে যায়। এতে বলা হয়, বাংলাদেশে এখন অনিশ্চিত পরিস্থিতি বিরাজ করছে। দেশের মানুষের জীবন ও সম্পত্তির কোন নিরাপত্তা নেই। এমনকি বাংলাদেশে বিদেশীরাও নিরাপদ নন। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশ একটি মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ দেশ। এ জন্য সৌদি আরবের সঙ্গে রয়েছে তার ভাল সম্পর্ক। বাংলাদেশের অভিবাসী শ্রমিকদের প্রধান গন্তব্য হলো সৌদি আরব। বর্তমানে সৌদি আরবে রয়েছেন প্রায় ২০ লাখ বাংলাদেশী। এছাড়াও বাংলাদেশের অন্যতম শীর্ষ দাতাদের একটি হলো সৌদি আরব। এ অবস্থায় যদি বাংলাদেশ সরকার স্বল্প সময়ের মধ্যে খালাফ আল আলী হত্যাকারীদের শনাক্ত করতে ব্যর্থ হয়, তাহলে সৌদি আরবে অবস্থানরত ওই ২০ লাখ বাংলাদেশী কঠিন সমস্যায় পড়তে পারেন। বাংলাদেশ এখন খুব অপরাধপ্রবণ হয়ে উঠেছে। কিছুদিন আগে টেলিভিশনের দু’জন সুপরিচিত সাংবাদিক ঢাকায় তাদের নিজ বাড়িতে খুন হন। সেখানে তাদের সঙ্গে তাদের একমাত্র সন্তানও বাস করতো। অন্য এক ঘটনায় মুন্সীগঞ্জ জেলার গজারিয়া উপজেলার শিমুলিয়ায় নিজ বাড়িতে মার্কিন নাগরিক এক নারীকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়। বাস্তবিক অর্থে, বাংলাদেশ এখন বহুমাত্রিক অপরাধের ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। মাদক পাচার, খুন, মানি লন্ডারিং, চাঁদাবাজি, প্রতারণাসহ সংঘবদ্ধ অপরাধের ঘটনা অহরহ ঘটছে। আরব নিউজ লিখেছে, দেশটিতে অন্য অপরাধের মধ্যে রয়েছে মানবপাচার, দুর্নীতি, কালোবাজারি, অপহরণ, রাজনৈতিক সহিংসতা, সন্ত্রাসবাদ এবং সবার উপরে রয়েছে হত্যা। এছাড়া প্রতিবেশী দেশগুলোতে উৎপাদিত মাদক চোরাচালানের প্রধান ট্রানজিট পথ হিসেবেও পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ। আন্তর্জাতিক মাদক নিয়ন্ত্রণ বোর্ড (আইএনসিবি) প্রকাশিত একটি রিপোর্টের সূত্র ধরে আরব নিউজ জানায়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া থেকে ইউরোপে হেরোইন পাচারের প্রধান ট্রানজিট পয়েন্টে পরিণত হয়েছে বাংলাদেশ।

No comments:

Post a Comment