অং সান সু চি আর গণতন্ত্র যেন সমার্থক হয়ে উঠেছে। সামরিক জান্তার অমানসিক চাপ আর গৃহবন্দিত্ব মোকাবিলা করে তিনি এখন গণতন্ত্রের মূর্ত প্রতীকে পরিণত হয়েছেন। গণতন্ত্রের জন্য তিনি নিজের ছেলে অরিসের মৃত্যু ও তার মৃতদেহটি শেষবারের মতো স্পর্শ করতে পারেননি। তিনি গণতন্ত্রের জন্য কোন অপশক্তির কাছে মাথা নত করেননি। ২১ বছরের মধ্যে ১৫ বছর কাটিয়েছেন জেলে। তবু দেশ ছেড়ে যাওয়ার জান্তাদের প্রস্তাবে তিনি রাজি হননি কখনও। তার কাছে দেশ, দেশের মাটি- নিজের জীবন, স্বামী, সন্তানদের চেয়েও বেশি প্রিয় হয়ে উঠেছিল। তাই তিনি সুবিধা নিয়ে দেশ ছাড়েননি। কারাগার থেকে তাই তার এখন স্থান হয়েছে পার্লামেন্টে। গণতন্ত্রের জন্য তার এই অবদানকে বিশ্ব শ্রদ্ধার চোখে দেখে। সেই সু চি কেমন, কেমন তার জীবনধারা- তা একনজরে সংক্ষিপ্ত আকারে এখানে তুলে ধরা হলো- অং সান সু চির জন্ম ১৯৪৫ সালের ১৯শে জুন। তিনি মিয়ানমারের বিরোধী দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)-এর প্রধান। ১৯৯০ সালের সাধারণ নির্বাচনে তার এনএলডি পার্টি শতকরা ৫৯ ভাগ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়। পার্লামেন্টে তখন আসন ছিল ৪৮৫টি। এর মধ্যে এনএলডি এককভাবে জয় পায় ৩৯২টি আসনে। মোট ভোটের শতকরা ৮১ ভাগ ভোট যায় তাদের বাক্সে। কিন্তু মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সেই ফল মেনে নেয়নি। উল্টো সু চিকে করে গৃহবন্দি। নির্বাচনের আগে পর্যন্ত তাকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়। ২০১০ সালের ১৩ই নভেম্বর তিনি গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি পান। ১৯৮৯ সালের ২০শে জুলাই তাকে গৃহবন্দি করা হয়েছিল। এর মাঝে ২১ বছরের ১৫ বছরই কেটেছে তার বন্দি অবস্থায়। এর ফলে সারা বিশ্বে খুব নামকরা রাজনৈতিক বন্দির মর্যাদা লাভ করেন তিনি। তিনি ১৯৯০ সালে পেয়েছেন র্যাপটো প্রাইজ, সাখারভ প্রাইজ। এর পরের বছরই শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পান। ১৯৯২ সালে তাকে ইন্টারন্যাশনাল আন্ডারস্ট্যান্ডিংয়ের জন্য ভারত সরকার দেয় জওয়াহার লাল নেহরু পুরস্কার। একই বছর তাকে ভেনিজুয়েলা সরকার দেয় ইন্টারন্যাশনাল সিমন বোলিভার প্রাইজ। ২০০৭ সালে কানাডা সরকার তাকে সম্মানসূচক কানাডার নাগরিকত্ব দেয়। এ যাবৎ এ পুরস্কার পেয়েছেন মাত্র ৫ জন। ২০১১ সালে তাকে দেয়া হয় ওয়ালেনবার্গ মেডেল। এ বছরের ১লা এপ্রিল অনুষ্ঠিত পার্লামেন্টের নিম্ন কক্ষ, যার নাম পিথু হ্লথাউ-এর সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন। তিনি এ নির্বাচনে কাউমু আসন থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন। মোট ৪৫ আসনে এ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে ৪৪টিতে প্রার্থী দিয়েছিল এনএলডি। ৪৪ জন প্রার্থীই বিজয়ী হয়েছেন।
অং সান সু চি নাম কিভাবে হয়েছে
অং সান সু চি একটি নাম। কিন্তু এ নামটি তার তিন নিকটজনের নামের অংশ ব্যবহার করে বানানো হয়েছে। এর মধ্যে অং সান অংশটি নেয়া হয়েছে তার পিতার নাম থেকে। সু শব্দটি নেয়া হয়েছে তার দাদির কাছ থেকে এবং চি শব্দটি নেয়া হয়েছে তার মা খিন চি এর নাম থেকে। তাকে কখনও কখনও ডাকা হয় ড. অং সান সু চি। এখানে উল্লেখ্য, ড শব্দটি তার নামের অংশ নয়। এ অংশটি সম্মানসূচক। যেমন ম্যাডাম, মিসেস বা মিস ইত্যাদি। তিনি যথেষ্ট প্রজ্ঞার পরিচয় দেয়ায় তাকে মিয়ানমারের মানুষ ড সু নামেও ডেকে থাকে। এর অর্থ ‘মা সু’। তবে বিদেশী মিডিয়ার কাছে তিনি অং সান সু চি নামেই বেশি পরিচিত।
ব্যক্তিগত জীবন
অং সান সু চির জন্ম রেঙ্গুনে। তার পিতার নাম অং সান। তাকে আধুনিক মিয়ামনারের সেনাবাহিনীর প্রতিষ্ঠাতা বলা হয়। ১৯৪৭ সালে বৃটিশ সাম্রাজ্যবাদের সঙ্গে দরকষাকষি করে তিনি মিয়ানমারের স্বাধীনতার সূর্য বয়ে আনেন। এজন্য তাকে মিয়ানমারের জাতির পিতাও বলা হয়ে থাকে। কিন্তু সেই ১৯৪৭ সালেই তাকে তার প্রতিপক্ষ গ্রুপ হত্যা করে। পিতৃহীন অং সান সু চি দু’ভাইয়ের সঙ্গে বেড়ে উঠতে থাকেন মা খিন চির সঙ্গে। তা দু’ভাইয়ের নাম- সান লিন এবং অং সান ও। মাত্র ৮ বছর বয়সে বাড়ির কাছেই সুসজ্জিত একটি পুকুরে পানিতে ডুবে অং সান লিন মারা যান। সু চির বড় ভাই দেশান্তরী হয়ে চলে যান স্যান ডিয়েগো, ক্যালিফোর্নিয়া। এর মাধ্যমে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকত্ব লাভ করেন। ভাই অং সান লিনের মৃত্যুর পর সু চির পরিবার ইনয়া লেকের পাশের একটি বাড়িতে চলে যান। সেখানে তিনি বিভিন্ন গোত্রের, ধর্মের বর্ণের, রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের সঙ্গে সাক্ষাৎ দিতে শুরু করলেন। অং সান সু চি মিয়ানমারে থাকা অবস্থায় তার শিক্ষাজীবনের বেশির ভাগ সময় কাটান মেথোডিস্ট ইংলিশ হাই স্কুলে। সেখানে তাকে ভাষা শিক্ষায় প্রচণ্ড মেধাবী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। ধর্মীয় দিক থেকে তিনি থেরাভাদা বৌদ্ধ। এক পর্যায়ে নতুন গঠিত মিয়ানমার সরকারে তার মা খিন চিকে একটি রাজনৈতিক পদ দেয়া হয়। তাকে ১৯৬০ সালে ভারতে ও নেপালে রাষ্ট্রদূত করে নিয়োগ দেয় মিয়ানমার। মায়ের সঙ্গে সঙ্গে সু চিকে সেখানে যেতে হয়। সু চি পড়াশোনা করেন নয়া দিল্লির কনভেন্ট অব যিশাশ অ্যান্ড মেরি স্কুলে। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করেন নয়া দিল্লিরই লেডি শ্রীরাম কলেজ থেকে। সেখান থেকেই তিনি ১৯৬৪ সালে রাজনীতিতে ডিগ্রি অর্জন করেন। এরপর সু চি সেন্ট হাগস কলেজ, অক্সফোর্ড থেকে দর্শন, রাজনীতি ও অর্থনীতিতে ১৯৬৯ সালে অর্জন করেন বিএ ডিগ্রি। গ্র্যাজুয়েশন সম্পন্ন করার পর নিউ ইয়র্ক সিটিতে পারিবারিক বন্ধুদের সঙ্গে বসবাস করতে থাকেন। এ সময়ে তিনি ৩ বছর জাতিসংঘে কাজ করেন। প্রথমেই তিনি তার হবু স্বামী ড. মাইকেল অরিসের জন্য বাজেট সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে লেখালেখি করতে থাকেন। ১৯৭২ সালে তিনি এই অরিসকে বিয়ে করেন। মাইকেল অরিস ভুটানে তিব্বতীয় সংস্কৃতি ও জীবনধারার একজন গবেষক। পরে বছরই সু চি তার প্রথম সন্তান আলেকজান্দার অরিসের জন্ম দেন লন্ডনে। ১৯৭৭ সালে তার দ্বিতীয় ছেলে কিমের জন্ম হয় লন্ডনে। স্কুল অব ওরিয়েন্টাল থেকে তিনি অর্জন করেন পিএইচডি। একইভাবে ইউনিভার্সিটি অব লন্ডন থেকে আফ্রিকান স্টাডিজে অর্জন করেন পিএইচডি। ভারতের শিমলায় অবস্থিত ইন্ডিয়ান ইনস্টিটিউট অব এডভান্সড স্টাডিজে তিনি দু’বছর ফেলো হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। এছাড়া তিনি মিয়ানমার সরকারের পক্ষেও কাজ করেন। ১৯৮৮ সালে সু চি ফিরে যান দেশে। এত দিন বিদেশে কাটানোর পর তার অসুস্থ মাকে দেখতে এই প্রথম তার দেশে ফেরা। কিন্তু তারপরই তিনি গণতান্ত্রিক আন্দোলনের সঙ্গে জড়িয়ে পড়েন। তারপর তিনি আর মিয়ানমার ছেড়ে যাননি। ১৯৯৫ সালে বড়দিনের সময় তাকে শেষ বারের মতো দেখতে যান তার ছেলে অরিস। সেই মায়ের সঙ্গে তার শেষ দেখা। এর পর সু চি মিয়ানমারে অবস্থান করায় অরিসকে সামরিক জান্তারা আর কখনও ভিসা দেয়নি। ১৯৯৭ সালে অরিসের মূত্রথলিতে ক্যান্সার ধরা পড়ে। এ অবস্থায় তাকে একটি ভিসা দিতে মিয়ানমারে সামরিক জান্তাকে যুক্তরাষ্ট্র, জাতিসংঘের তখনকার মহাসচিব কফি আনান, পোপ দ্বিতীয় জন পলসহ বিশ্বের প্রথম সারির নেতারা অনুরোধ করেন। কিন্তু মিয়ানমার এর জবাবে জানান দেয়, তাদের কাছে অরিসকে দেখাশোনা করতে দেয়ার মতো লোকবল বা সুবিধা নেই। এর পরিবর্তে মিয়ানমারের সামরিক জান্তা সু চিকে ছেলের সঙ্গে দেখা করতে দেশ ছাড়তে বলে। ওই সময় সু চি ছিলেন অল্প সময়ের জন্য মুক্ত। কিন্তু তা সত্ত্বেও তিনি সামরিক জান্তাদের ওই প্রস্তাব মেনে নেননি। এর কারণ, তার মধ্যে এক রকম আতঙ্ক ছিল- একবার মিয়ানমার ছাড়লে তাকে হয়তো আর দেশে ফিরতে দেবে না জান্তারা। ফলে দেশের জন্য, দেশের মানুষের কথা ভেবে সু চি দেশেই রয়ে গেলেন। অরিসের সঙ্গে তার আর কোনদিন দেখা হলো না। ১৯৯৯ সালের ২৭শে মার্চ অরিস তার ৫৩তম জন্মদিনে মারা যান। এভাবেই একের পর এক ঝড় বয়ে গেছে গণতন্ত্রের এই নেত্রীর ওপর দিয়ে। কিন্তু তিনি তাতে কোনদিন ভেঙে পড়েননি। ২০০৮ সালের ২রা মে ঘূর্ণিঝড় নার্গিস সু চিকে যে বাড়িতে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল তার ছাদ উড়িয়ে নিয়ে যায়। ওই বাড়িটি বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। লেকের পাশে ওই বাড়িতে তিনি একা একা দিন কাটাতে থাকেন। রাতে এ সময় তার সঙ্গী একটি মোমবাতি। তাকে জেনারেটরের কোন সুবিধাও দেয়া হয়নি। ঘূর্ণিঝড়ের অনেকদিন পরে ২০০৯ সালের আগস্টে তার ক্ষতিগ্রস্ত ওই বাড়িটি সংস্কার করা হয়। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে ২০১০ সালের ১৩ই নভেম্বর
তাকে গৃহবন্দিত্ব থেকে মুক্তি দেয়া হয়। এদিন যেন মিয়ানমারের আকাশে গণতন্ত্রের একটি শ্বেত পায়রা উড়ে জানান দিয়ে যায়- আর বেশি দূরে নয়। মিয়ানমারে গণতন্ত্র ফিরবে। তোমরা অপেক্ষা করো আর কয়টি দিন। গণতন্ত্রের মানসকন্যা এখন মুক্ত।
রাজনৈতিক জীবনের শুরু
১৯৮৮ সালে অং সান সু চি মিয়ানমারে ফেরেন। কাকতালীয়ভাবে দীর্ঘদিনের সামরিক জান্তা সরকার প্রধান হেনারেল নি উইন তার দল থেকে পদত্যাগ করেন। এরপর গণতন্ত্রের জন্য ১৯৮৮ সালের ৮ই আগস্ট বিশাল র্যালি হয়। এদিনটিকে অনেকেই ৮৮৮৮ বিদ্রোহ বলে অভিহিত করেন। ১৯৮৮ সালের ২৬শে আগস্ট সু চি ঐতিহাসিক শোয়েডাগাঁও প্যাগোডার সামনে কয়েক লাখ মানুষের সামনে ভাষণ দেন। তিনি দেশে গণতান্ত্রিক সরকার প্রতিষ্ঠার আহ্বান জানান। কিন্তু সেপ্টেম্বরে নতুন সামরিক জান্তা ক্ষমতা গ্রহণ করে। মহাত্মা গান্ধীর অহিংস আন্দোলনের এবং বৌদ্ধ ধর্মের ভীষণ অনুরাগী অং সান সু চি। তিনি রাজনীতিতে প্রবেশ করেন রাজনীতিকে গণতন্ত্রায়ণের জন্য। এজন্য তিনি ১৯৮৮ সালের ২৭শে সেপ্টেম্বর তিনি গঠন করেন ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। কিন্তু ১৯৮৯ সালের ২০শে জুলাই তাকে গৃহবন্দি করা হয়। সামরিক জান্তা তাকে প্রস্তাব পাঠায় তিনি যদি দেশ ছেড়ে যেতে রাজি হন তাহলে তাকে মুক্তি দেয়া হবে। কিন্তু যে সু চির রক্তমাংসে মিশে গেছে মানুষের শ্বাস-প্রশ্বাস, মানুষের সুখ-দুঃখ তিনি তো নিজের স্বার্থের জন্য দেশ ছেড়ে চলে যেতে পারেন না। গণতন্ত্রের ধর্ম এটা নয়। তিনি নিজের দেশের মানুষকে ভালবেসে সামরিক জান্তার ওই প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন।
১৯৯০-এর সাধারণ নির্বাচন
১৯৯০ সালে দেশে সাধারণ নির্বাচন আহ্বান করে সামরিক জান্তা। এতে সু চির এনএলডি দল অংশ নেয়। তারা মোট ভোটের শতকরা ৫৯ ভাগ ভোট পায়। এর ফলে এনএলডি পার্লামেন্টের শতকরা ৮০ ভাগ আসনে বিজয়ী হয়। তখন অনেকেই ধরে নিয়েছিলেন সু চি এবার প্রধানমন্ত্রী হতে যাচ্ছেন। কিন্তু তার কপালে তা সইলো না। তাকে আটকে দিল সামরিক জান্তারা। শুধু তা-ই নয়। তার দলের বিজয়কে প্রত্যাখ্যান করল সামরিক জান্তা। তারা ক্ষমতা হস্তান্তরে অস্বীকৃতি জানালো। এতে সারাবিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে। রেঙ্গুনে ইউনিভার্সিটি এভিনিউতে সু চিকে তার বাসায় গৃহবন্দি করা হলো। ঠিক ওই সময়ে তাকে মত প্রকাশের স্বাধীনতার জন্য সম্মানজনক সাখারভ প্রাইজ দেয়া হয়। ওই বছরের শেষের দিকে তিনি শান্তিতে নোবেল পুরস্কার জেতেন। কিন্তু সেই পুরস্কার নিজ হাতে গ্রহণ করতে তিনি দেশের বাইরে যাওয়ার অনুমতি পাননি। তার পক্ষে পুরস্কার গ্রহণ করেন তার দু’ছেলে আলেকজান্দার ও কিম। সু চি নোবেল কমিটির দেয়া ১৩ লাখ ডলার দিয়ে প্রতিষ্ঠা করেন স্বাস্থ্য ও শিক্ষা বিষয়ক ট্রাস্ট। এ সময়ে তিনি রাজনীতিতে অহিংস নীতি অবলম্বন করতে থাকেন।
১৯৯৬-এর হামলা
১৯৯৬ সালের ৯ই নভেম্বর সু চি তার এনএলডির নেতা তিন ও এবং উ চি মাউংকে নিয়ে একটি গাড়িবহরে করে যাচ্ছিলেন ইয়াঙ্গুনের রাস্তায়। ঠিক ওই গাড়িবহরে হামলা চালানো হয়। এ সময় সু চি যে গাড়িতে ছিলেন তাতে হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীরা তার জানালার কাচ ভাঙচুর করে। ভাঙচুর করা হয় আরও অনেকগুলো গাড়ি। ধারণা করা হয়, হামলাকারীরা সামরিক জান্তা পোষা বাহিনীর সদস্য। তারা ইউনিয়ন সলিডারিটি এবং ডেভেলপমেন্ট এসোসিয়েশনের সদস্য। এই হামলা চালানোর জন্য তাদের প্রত্যেককে দেয়া হয়েছে ৫০০ কায়েত করে। এ ঘটনায় এনএলডি পুলিশের কাছে লিখিত অভিযোগ দেয়। ফলে সরকার একটি তদন্ত চালু করে। কিন্তু কোন পদক্ষেপ নেয়া হয়নি।
গৃহবন্দিত্ব
২১ বছরের মধ্যে বিভিন্ন সময়ে সু চি ১৫ বছর কাটিয়েছেন গৃহবন্দি অবস্থায়। রাজনৈতিক জীবন শুরুর পর থেকেই অত্যাচারের খড়গ হিসেবে সামরিক সরকার তার বিরুদ্ধে এই অস্ত্র ব্যবহার করতে থাকে। তখন থেকেই তাকে তার দলীয় সমর্থকদের ও আন্তর্জাতিক পর্যবেক্ষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয় না। এক সাক্ষাৎকারে সু চি বলেন, গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় তিনি পড়েছেন দর্শন, রাজনীতি ও জীবনীগ্রন্থ। এসব বই তার স্বামী পাঠিয়েছিলেন। এছাড়া গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় তিনি পিয়ানো বাজাতেন। তবে কখনো কখনো তিনি বিদেশী কূটনীতিকদের সঙ্গে ব্যক্তিগত চিকিৎসক নিয়ে ঘুরতে বেরুতে পারতেন। সু চির সঙ্গে সাংবাদিকদের সাক্ষাৎ নিষিদ্ধ করা হয়। ১৯৮৮ সালে মাউরিজিও গিয়লিয়ানো নামে এক সাংবাদিক সু চির ছবি তোলেন। কিন্তু এক পর্যায়ে তার ফিল্ম কেড়ে নেয়া হয়। টেপ কেড়ে নেয়া হয়। তিনি যে নোটবুকে সু চির সঙ্গে কথাবার্তা টুকে রেখেছিলেন তাও নিয়ে নেয় সরকার। ১৯৯৪ সালের শরতকালে সু চি সরকারের প্রতিকনিধিদের সঙ্গে সাক্ষাৎ পান। ওই বছর ২০শে সেপ্টেম্বর তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন সামরিক সরকারের নেতা জেনারেল থান শ এবং জেনারেল খিন নিউন্ট। সু চিকে গৃহবন্দি করার পর এটাই ছিল তাদের সঙ্গে প্রথম বৈঠক। গৃহবন্দি থাকা অবস্থায় অনেকবারই সু চি অসুস্থ হয়ে পড়েছেন। ফলে তাকে হাসপাতালে ভর্তি করতে হয়েছে।
জাতিসংঘের ভূমিকা
সু চি যখন গৃহবন্দি থাকতে থাকতে আস্তে আস্তে জীবনের শেষ প্রান্তে পৌঁছে যাচ্ছিলেন ঠিক তখনই এগিয়ে আসে জাতিসংঘ। তারা মিয়ানমারের সামরিক জান্তা ও সু চির সঙ্গে আলোচনা চায়। এ বিষয়ে গোপনে সমঝোতা প্রক্রিয়া চালাতে থাকে জাতিসংঘ। তারই ধারাবাহিকতায় সরকার তাকে মুক্তি দেয়। মিয়ানমার সরকারের এক মুখপাত্র বলেছেন, আমরা পরস্পর পরস্পরের সঙ্গে বোঝাপড়ার মাধ্যমে চলব এমন সমঝোতার মাধ্যমে সু চিকে মুক্তি দিয়েছি। ১৯৯৬ সালের মতো করে ২০০৩ সালের ৩০শে মে তার ওপর একইভাবে হামলা হয়। সরকার সমর্থিত দাঙ্গাকারীরা তার গাড়িতে হামলা করে ডিপায়িন গ্রামে। এ সময় সু চির অনেক সমর্থক নিহত ও আহত হন। ঘটনাস্থল থেকে সু চি কোনমতে তার গাড়ির চালক কো কিউয়া সোয়ে লিনের সহায়তায় তিনি পালিয়ে যান। কিন্তু ইয়ে-উ এলাকায় পৌঁছানোর পরই তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় সরকার সু চিকে রেঙ্গুনের কুখ্যাত ইনসেইন কারাগারে বন্দি করে। ২০০৩ সালে তার জরায়ুতে সমস্যা দেখা দেয়। এজন্য তাকে সরকার ফের রেঙ্গুনে গৃহবন্দি করে। একপর্যায়ে তার সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন মিয়ানমারে নিয়োজিত জাতিসংঘের বিশেষ দূত রেজালি ইসমাইল। রেজালি ইসমাইলকে মিয়ানমারে ঢুকতে দেয়া হচ্ছিল না, তিনি জাতিসংঘে কর্মরত বলে। তাই তিনি ওই পদ ত্যাগ করেন। এখান থেকেই শুরু হয় জাতিসংঘের জোরালো দূতিয়ালি। কয়েক বছর পরে ২০০৬ সালে জাতিসংঘের ডিপার্টমেন্ট অব পলিটিক্যাল অ্যাফেয়ার্স-এর আন্ডারসেক্রেটারি ইব্রাহিম গাম্বারি প্রথম সাক্ষাৎ পান সু চির। ২০০৪ সালের পর এটাই বিদেশী কোন কর্মকর্তার সঙ্গে সু চির সাক্ষাৎ। এই বছরের শেষের দিকে ইব্রাহিম গাম্বারি ফের সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। ২০০৭ সালের ২রা অক্টোবর মিয়ানমারের সামরিক জান্তা প্রধান শান শয়ের সঙ্গে আলোচনার পর সু চির সঙ্গে ফের সাক্ষাৎ করেন। এ সময় থান শয়ের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন তার সরকারের কয়েকজন শীর্ষ নেতা। ওই বৈঠকটি অনুষ্ঠিত হয় নবসৃষ্ট রাজধানী ন্যাপিড’তে। গাম্বারির সঙ্গে সু চির ওই বৈঠকের খবর প্রচার করে রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন। তাতে বলা হয়- তারা দুবার বৈঠক করেছেন। ২০০৭ সালের নভেম্বরে বলা হয়, সু চি তার রাজনৈতিক দল এনএলডি ও এর মিত্রদের সঙ্গে দেখা সাক্ষাৎ করতে পারবেন। দেখা করতে পারবেন সরকারের মন্ত্রীদের সঙ্গেও। সামরিক জান্তা রাষ্ট্রীয় টেলিভিশন ও রেডিওতে এই কথা প্রচার করে ইব্রাহিম গাম্বারির দ্বিতীয় দফা মিয়ানমার সফরের পরেই। এ সময় এনএলডি নিশ্চিত করে যে, তারা সু চির সঙ্গে আলোচনার দাওয়াত পেয়েছেন। ২০০৯ সালের ৩রা জুলাই জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন মিয়ানমার সফরে যান। এর মাধ্যমে তিনি সামরিক সরকারের ওপর সু চিকে মুক্তি দেয়ার জন্য চাপ বাড়াতে চেষ্টা করেন। তিনি মিয়ানমার থেকে ফিরে বলেন, সামরিক জান্তা সরকার থান শয়ের সঙ্গে সাক্ষাতের পর তিনি হতাশ হয়েছেন। কারণ তাকে সু চির সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে দেয়া হয় নি। বান কি মুন বলেন, এর মাধ্যমে মিয়ানমার বড় একটি সুযোগ হাতছাড়া করল।
আটকাদেশের সময়কাল
১৯৮৯ সালের ২০শে জুলাই: সামরিক শাসকরা রেঙ্গুনে সু চিকে গৃহবন্দি করে। এ আইনে কোন অভিযোগ বা বিচার ছাড়াই যে কাউকে ৩ বছর আটক রাখা যায়।
১৯৯৫ সালের ১০ই জুলাই: এ দিন তাকে গৃহবন্দি অবস্থা থেকে মুক্তি দেয়া হয়।
২০০০ সালের ২৩শে সেপ্টেম্বর: ফের তাকে গৃহবন্দি করা হয়।
২০০২ সালের ৬ই মে: ১৯ মাস পর সু চিকে মুক্তি দেয়া হয়।
২০০৩ সালের ৩০শে মে: দিপায়ন হত্যাকাণ্ডের পর সু চিকে আটক করা হয়। তিন মাস তাকে গোপন কারাগারে আটক রাখা হয়। এরপর তাকে গৃহবন্দি করা হয়।
২০০৭ সালের ২৫শে মে: মিয়ানমারের সামরিক শাসক জেনারেল থান শয়ের প্রতি সু চিকে মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান জাতিসংঘের তখনকার মহাসচিব কফি আনান। কিন্তু তা সত্ত্বেও সামরিক জান্তা সু চির আটকাদেশ ১ বছর বর্ধিত করে।
২০০৭ সালের ২৪শে অক্টোবর: গৃহবন্দিত্বের মেয়াদ ১২ বছর হয়। এ দিন তার প্রতি সহমর্মিতা প্রকাশ করে বিশ্বের বিভিন্ন স্থান সহ ১২ শহরে বিক্ষোভ হয়।
২০০৮ সালের ২৭শে মে: সু চির গৃহবন্দিত্বের মেয়াদ আরও এক বছর বাড়ানো হয়। আন্তর্জাতিক ও মিয়ানমারের আইনের লঙ্ঘন এটি।
২০০৯ সালের ১১ই আগস্ট: সু চির গৃহবন্দিত্বের মেয়াদ বাড়ানো হয় আরও ১৯ মাস।
২০১০ সালের ১৩ই নভেম্বর: সু চিকে মুক্তি দেয়া হয়।
অনাকাঙ্ক্ষিত এক ঘটনা
২০০৯ সালের ৩রা মে। এ সময়ে অং সান সু চিকে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছিল ইনয়া লেকের ভিতরে একটি বাড়িতে। এদিনই মার্কিন নাগরিক জন ইয়েত্তা পানি সাঁতরে হাজির হন সু চির বাড়িতে। এ দিনই তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর দুই বছর আগে তিনি একই রকম পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কিন্তু অজ্ঞাত কারণে তিনি সেবার ফিরে এসেছেন। পরে তিনি দাবি করেন, সু চির ওপর সন্ত্রাসী হামলা হতে পারে এ বিষয়টি তিনি তাকে জানাতে ওই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এ ঘটনায় আইন লঙ্ঘন করার জন্য সু চিকে ১৩ই মে গ্রেপ্তার করা হয়। অভিযোগ দাঁড় করানো হয়, জন ইয়েত্তাকে তিনি তার বাড়িতে অবস্থান করার অনুমতি দিয়ে আইন লঙ্ঘন করেছেন। এরপরই সু চিকে নিয়ে যাওয়া হয় কুখ্যাত ইনসেইন কারাগারে। সেখানে সু চি ও তার দুই গৃহপরিচারিকার বিচার শুরু হয় ১৮ই মে। এ দিন এ বিচারের প্রতিবাদে কিছু সংখ্যক মানুষ জেলের বাইরে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানাতে থাকেন। বিচারে কোন কূটনীতিক বা সাংবাদিকের উপস্থিতি নিষিদ্ধ ছিল। তবে এক বার সু চির সঙ্গে রাশিয়া, থাইল্যান্ড, সিঙ্গাপুরের কূটনীতিক ও সাংবাদিকদের দেখা করতে দেয়া হয়। ওই বিচারে ২২ প্রত্যক্ষদর্র্শীকে ডেকে নেয়া হয়। অভিযোগ আনা হয় জন ইয়েত্তা মিয়ানমারের ভাবমূর্তিতেও আঘাত হেনেছেন। বিচারে সু চি দাবি করেন, তিনি নির্দোষ। এ বিচারেও জান্তা সরকার সু চিকে ফের জেলে পাঠানোর পরিকল্পনা করেছিল। ইয়েত্তা দাবি করেন, তিনি সু চিকে তার জীবন সম্পর্কে সচেতন করতে লেক সাঁতরে তার বাড়িতে গিয়েছিলেন। মিয়ানমারের পুলিশ প্রধান নিশ্চিত করেন সু চির এই মামলায় মূল অপরাধী জন ইয়েত্তা। এ অবস্থায় জেলের ভিতরেই সু চি তার ৬৪তম জন্মদিন পালন করেন। জেলের ভিতরে প্রহরীদের সঙ্গে তিনি এদিন বিরিয়ানি ও চকোলেট কেক শেয়ার করেন। তবে সু চির এই আটক ও বিচারের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বে নিন্দার ঝড় ওঠে। নিন্দা জানান জাতিসংঘের মহাসচিব বান কি মুন, জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদ, পশ্চিমা সরকারগুলো, দক্ষিণ আফ্রিকা, জাপান এবং আসিয়ান। কিন্তু মিয়ানমার সরকার এ রকম নিন্দা জানানোর নিন্দা করে। বলে, এটা রীতিবিরুদ্ধ একটি কাজ। মিয়ানমারের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে হস্তক্ষেপ করায় এর কড়া সমালোচনা করেন সামরিক জান্তা। মিয়ামনারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী নিয়ান উইন রাষ্ট্র মালিকানাধীন সংবাদপত্র নিউ লাইট অব মিয়ানমারকে বলেন- এতে মিয়ানমারের ওপর আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ পর্যায় থেকে প্রচণ্ড চাপ সৃষ্টি হয়। এর ফলে দেশের রাজনীতিতে পরিবর্তনের ইতবাচক পথে সরকারকে হাঁটতে হয়। কিন্তু এ বিষয়ে বান কি মুনের সব সুপারিশ জেনারেল থান শয়ে উপেক্ষা করেন। অবশেষে ২০০৯ সালের ১১ই আগস্ট সু চির বিচার শেষ হয়। তাকে কঠোরশ্রমসহ ৩ বছরের আটকাদেশ দেয়া হয়। এক পর্যায়ে তা কমিয়ে ১৮ মাস করা হয়। ওই বছরের ১৪ই আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর জিম ওয়েব মিয়ানমার সফর করেন।
তিনি সাক্ষাৎ করেন সামরিক জান্তা জেনারেল থান শয়ের সঙ্গে। পরে তিনি বৈঠক করেন সু চির সঙ্গে। এই সফরের সময় জিম ওয়েব তার দেশের নাগরিক জন ইয়েত্তার মুক্তির জন্যও তদবির করেন। তাকে দেশে ফেরত পাঠানোর বিষয়টিও তার আলোচ্য সূচিতে ছিল। আদালত সু চির বিরুদ্ধে রায় দেয়ার পর তার আইনজীবীরা বলেন, তারা সু চির বিরুদ্ধে দেয়া ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবেন। ১৮ই আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা মিয়ানমারের সব রাজবন্দির মুক্তি দাবি করেন। তাতে অং সান সু চির নামও ছিল। ওদিকে সু চির শাস্তির রায়কে চ্যালেঞ্জ করে দায়ের করা আপিল ২০০৯ সালের ২রা অক্টোবর মিয়ানমারের আদালত প্রত্যাখ্যান করে। তবে এক্ষেত্রে আদালত এও বলে যে, ১৯৭৪ সালের যে আইনের অধীনে সু চিকে অভিযুক্ত করা হয়েছে তা বাতিল হয়ে গেছে। তবে ১৯৭৫ সালের নিরাপত্তা বিষয়ক একটি আইন এক্ষেত্রে বলবৎ আছে। ওই রায়ের ফলে সু চিকে ২০১০ সালের নির্বাচন করতে পারেননি। দুই দশক পরে মিয়ানমারে ২০১০ সালের ওই নির্বাচনই ছিল প্রথম নির্বাচন।

২০১০ এর নির্বাচন
একপর্যায়ে সামরিক জান্তারা সাধারণ নির্বাচনের আগে ঘোষণা দেয় যে, অং সান সুচিকে মুক্তি দেয়া যেতে পারে যাতে তিনি নিজের দল গুছিয়ে নিতে পারেন। তবে সু চিকে নির্বাচন করতে দেয়া হয়নি। ২০১০ সালের ১লা অক্টোবর সরকার ঘোষণা দেয় ওই বছরের ১৩ই নভেম্বর সু চি মুক্ত পাবেন। রাজবন্দিদের মুক্তির ক্ষেত্রে মিয়ানমার নমনীয় অবস্থান নেয়। তারা যুক্তরাষ্ট্র ও অন্যান্য গণতান্ত্রিক দেশের কর্মকর্তাদের গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে মিয়ানমার সফরের অনুমতি দেয়। এর মাধ্যমে সামরিক জান্তারা মিয়ানমারকে গণতান্ত্রিক সংস্কারের পথে এগিয়ে যাওয়ার পথ করে দেয়। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা অং সান সু চি সহ সব রাজবন্দিদের মুক্তি দেয়ার আহ্বান জানান আসিয়ান সম্মেলনে। গণতান্ত্রিক দেশগুলো আশা করতে থাকে, এই সাধারণ নির্বাচনের মাধ্যমে মিয়ানমার সত্যিকার অর্থে গণতন্ত্রের পথে এগিয়ে যাবে। অং সান সু চিকে এই নির্বাচন উপলক্ষে মুক্তি দেয়া হলে মিয়ানমার সরকারকে ২.৮২ বিলিয়ন ইয়েন সহায়তার কথা বলে হাতোইয়ামা সরকার। এটাই মিয়ানমারে জাপানের বড় ধরনের অর্থ খরচ। যুক্তরাজ্যের প্রধানমন্ত্রী গর্ডন ব্রাউন ব্যক্তিগত একটি চিঠি লেখেন সু চিকে। ২০১০ সালের নির্বাচনের আগে জান্তা সরকার তার দল এনএলডিকে ভেঙে দেয়। ফলে সু চির দল নির্বাচনে অংশ নেয় ভিন্ন নামে। তাতে তেমন সফলতা আসেনি।
২০১২ সালের উপনির্বাচন
২০১১ সালের ডিসেম্বরে খবর ছড়িয়ে পড়ে যে, সু চি ২০১২ সালের উপনির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেন। এ বছরের ১৮ই জানুয়ারি তিনি পার্লামেন্টের নিম্নকক্ষ পিথু হ্লুত্তাওয়ের কাউহমু আসনে নির্বাচনের জন্য মনোনয়ন পত্র জমা দেন। এ আসনে ১লা এপ্রিল উপনির্বাচন হয়। এতে সু চি নির্বাচিত হন। শুধু তাই নয়- উপনির্বাচন হয় মোট ৪৫টি আসনে। এর মধ্যে ৪৪টি আসনে তার দল প্রার্থী দেয়। তাদের মধ্যে প্রায় সবাই নির্বাচিত হন।
No comments:
Post a Comment