Sunday, April 1, 2012

সু চি বিজয়ী



মিয়ানমারের উপনির্বাচনে শান্তিতে নোবেলজয়ী মিয়ানমারের গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী অং সান সু চি বিজয়ী হয়েছেন। এ দাবি করেছে তার দল ন্যাশনাল লীগ ফর ডেমোক্রেসি (এনএলডি)। তবে এ বিষয়ে সরকারি কোন সিদ্ধান্ত জানা যায়নি। কোন অঘটন যদি না ঘটে বা সরকারের কোন দুরভিসন্ধি না থাকে তাহলে দৃশ্যত ইতিহাস সৃষ্টি করলেন সু চি। গতকাল অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনে প্রথমবারের মতো তিনি পার্লামেন্ট সদস্য হিসেবে স্বীকৃতি পেতে যাচ্ছেন। গণতন্ত্রের আপসহীন এ যোদ্ধাকে এর জন্য নিরন্তর লড়াই করতে হয়েছে। দীর্ঘদিনের সামরিক শাসনের পর রাজনৈতিক সংস্কারের অংশ হিসেবে ৪৫টি আসনে অনুষ্ঠিত উপনির্বাচনের ৪৪টিতে অংশ নেয় তার দল এনএলডি। এর আগে ১৯৯০ সালের নির্বাচনে তার দল জয়ী হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতা কুক্ষিগত করে রাখা সামরিক জান্তা সেই নির্বাচনের ফল মেনে নেয়নি এবং ক্ষমতাও ছাড়েনি। তবে ৯০-এর ওই নির্বাচনে অংশ নিতে পারেননি সু চি। কারণ তখন তিনি গৃহবন্দি ছিলেন। গতকালের উপনির্বাচনে এনএলডির ৪৪ আসনের মধ্যে কাওহমু নামক আসনে প্রার্থী হয়েছে সু চি। সেই আসনের ভোটাররা খুবই উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে প্রিয় নেত্রীকে ভোট দিতে যান। ৪৩ বছর বয়সী ভোটার সান সান উইন বলেন, আমি মাদার সু চি’কে ভোট দিয়েছি। কারণ আমি তাকে ভালবাসি। তার জন্য প্রার্থনা করি। নির্বাচন চলার সময় নিজ আসনের কয়েকটি কেন্দ্র পরিদর্শন করতে যান সু চি। এ সময় উচ্ছ্বসিত জনতা ও সাংবাদিকরা তাকে দেখতে হুমড়ি খেয়ে পড়েন। ভোটার উইন বলেন, আমরা তার কাছে কিছুই চাই না। তিনি আমাদের অঞ্চলে নির্বাচন করছেন এটাই অনেক বেশি। এ নির্বাচনে সু চি’র দল জিতলেও শাসক দলের সংখ্যাগরিষ্ঠতায় কোন হেরফের হবে না। তবুও প্রথমবারের মতো বিরোধী নেত্রীর একটি আসন মিয়ানমারের পার্লামেন্টকে পূর্ণতা দেবে। পর্যবেক্ষকরা বলছেন, সামরিক মদতপুষ্ট বর্তমান শাসক দলও চায় গণতন্ত্রপন্থি নেত্রী একটি আসনে জয়ী হয়ে আসুক। এতে সংস্কারের প্রতি তাদের ভেতরে বিশ্বাসযোগ্যতা তৈরি হবে।

একই সঙ্গে পশ্চিমা নিষেধাজ্ঞা তুলে নিতে এটি অনেক সহায়ক হবে। গতকাল স্থানীয় সময় সকাল ৬টা থেকে বিকাল ৪টা পর্যন্ত ভোট অনুষ্ঠিত হয়। আগামী এক সপ্তাহের মধ্যে ভোটের ফলাফল ঘোষণা করা হবে। এর আগে ২০১০ সালের নির্বাচনে সামরিক সমর্থনপুষ্ট রাজনৈতিক দল নির্বাচনে জয়ী হয়। ওই নির্বাচনে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ ওঠে। একই সঙ্গে সু চি’কে নির্বাচনের বাইরে রাখা হয়। তখন প্রায় ২২ বছরের গৃহবন্দি থেকে সদ্য মুক্ত হয়েছিলেন ৬৬ বছর বয়সী সু চি। গতকালের উপনির্বাচন নিয়ে শুক্রবারে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, আমরা এই নির্বাচনকে অবাধ ও সুষ্ঠু বিবেচনা করতে পারি না। তবে আমরা সামনের দিকে এগিয়ে যেতে বদ্ধপরিকর। কেননা, আমরা মনে করি এটাই জনগণের প্রত্যাশা। অসুস্থ হয়ে পড়ায় খুব বেশি নির্বাচনী প্রচারণা চালাতে পারেননি সু চি। তবে তার দল এনএলডি’র মুখপাত্র নায়ান উইন বলেন, তিনি অসুস্থ হলেও আমরা ভীত নই। এই প্রথম সরকার দেশটিতে নির্বাচন পর্যবেক্ষণের জন্য বিদেশী সাংবাদিক ও পর্যবেক্ষকদের অনুমতি দিয়েছে। ফলে এ নির্বাচন আন্তর্জাতিকমানের হবে বলে আশা করা হচ্ছে। জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক দূত টমাস ওঝা বলেন, মিয়ানমারের ইতিহাসের জন্য এটা এক স্মরণীয় মুহূর্ত। গণতন্ত্রের রাজকন্যাকে পার্লামেন্টে দেখার অপেক্ষায় মিয়ানমারসহ গোটা বিশ্ব।

No comments:

Post a Comment