ভারতে কি অভ্যুত্থানের চেষ্টা করেছিল সেনাবাহিনী! গতকাল ইন্ডিয়ান
এক্সপ্রেস পত্রিকা খবর দিয়েছে- ১৬ই জানুয়ারিতে ভারতীয় সেনাবাহিনীর দু’টি
গুরুত্বপূর্ণ ইউনিট সরকারকে আগেভাগেই কোন নোটিশ না দিয়ে রাজধানী নয়া
দিল্লির খুব কাছে চলে এসেছিল।
এ ঘটনা প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে জানানো হলে সতর্কতা জারি করা হয়। ওই দু’টি
ইউনিটের অগ্রযাত্রা বিলম্বিত করতে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টির কৌশল নেয়া হয়।
বিদেশ সফররত প্রতিরক্ষা সচিবকে সফর সংক্ষিপ্ত করে দেশে ডেকে পাঠানো হয়। এ
খবর ফাঁস হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ভারতজুড়ে তোলপাড় চলছে। গুজব ছড়িয়ে পড়েছে সারা
ভারতে। আর ঘটনাটি এমন এক সময়ের যখন সেনা প্রধান ভি কে সিংয়ের সঙ্গে তার
জন্মতারিখ নিয়ে সরকারের টান টান উত্তেজনা চলছে। ফলে ওই আশঙ্কাকে অনেকেই
গুরুত্ব দিয়ে তা বিচার বিশ্লেষণ করছেন। এই যখন অবস্থা তখন প্রধানমন্ত্রী
মনমোহন সিং-ও এ ইস্যুতে কথা বলেছেন। তিনি ওই রিপোর্টকে উদ্বেগজনক আখ্যায়িত
করেছেন। তিনি বলেছেন, এ রিপোর্টকে গুরুত্ব দিয়ে দেখা ঠিক হবে না।
প্রতিরক্ষামন্ত্রী একে অ্যান্থনি ওই রিপোর্টকে ভিত্তিহীন বলে উড়িয়ে
দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, ভারতীয় সেনাবাহিনীর দেশপ্রেম নিয়ে কোন সন্দেহ নেই।
বার্তা সংস্থা আইএএনএস-এর উদ্ধৃতি দিয়ে গতকাল এ খবর দিয়েছে অনলাইন জি নিউজ।
এতে বলা হয়, ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস সেনাদের দু’টি ইউনিটের নয়া দিল্লির কাছে
চলে আসা নিয়ে একটি রিপোর্ট প্রকাশ করে। গতকাল ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন
সিং রাষ্ট্রপতি ভবনে পদ্ম পুরস্কার বিতরণ করছিলেন। তারই এক ফাঁকে তিনি
বলেন, প্রতিরক্ষামন্ত্রী তো এ বিষয়ে তার অবস্থান পরিষ্কার করেছেন। এ রকম
রিপোর্ট উদ্বেগজনক। এগুলোকে গুরুত্ব দেয়া ঠিক হবে না। সেনাপ্রধান জেনারেল
ভি কে সিং ও সরকারের মধ্যে যে টানাপড়েন চলছে সে প্রসঙ্গেও তিনি মুখ খোলেন।
মনমোহন সিং বলেন, সেনাপ্রধানের অফিস কাউকে তোষামোদ করার অফিস নয়। আমাদের
সবার উচিত হবে যাতে এই প্রতিষ্ঠানটির মর্যাদা হানি হয় এমন কিছু না করা।
ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস লিখেছে- গত ১৬ই জানুয়ারি জন্মতারিখ নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায়
সেনাপ্রধান ভি কে সিং সুপ্রিম কোর্টে হাজিরা দিয়েছিলেন। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা
সংস্থাগুলো রিপোর্ট করেছে- ওই দিন দিবাগত রাতে হরিয়ানার হিসারের মেকানাইজড
ইনফ্যান্ট্রির একটি সেনা ইউনিট ৩৩তম আর্মার্ড ডিভিশনের অংশ
অপ্রত্যাশিতভাবে রাজধানীর দিকে যাত্রা শুরু করে। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন,
এটা ছিল পরিপূর্ণ একটি ইউনিট। এতে ছিল পরিপূর্ণ মেকানাইজড ইনফ্যান্ট্রি।
ছিল রাশিয়ায় তৈরী আর্মার্ড ফাইটিং ভেহিকেল, তাতে ছিল ৪৮টি ট্যাংক
ট্রান্সপোর্টস। এর যাত্রা ছিল রাজধানীর দিকে, যা ব্যতিক্রমী ঘটনা। এমনটা
ঘটবে তা কেউ জানতেন না। এর আগের দিনই (১৫ই জানুয়ারি) ছিল সশস্ত্র বাহিনী
দিবস। এ ঘটনা নিয়ে উদ্বেগের চেয়ে বেশি কৌতূহল ও কিছু দ্বিধার সৃষ্টি
হয়েছিল। এর কারণ, দশকের পর দশক নয়া দিল্লি তার সামরিক নেতাদের রাজনৈতিক ও
পেশাগত সঠিক আচরণের দিকে পরিপূর্ণভাবে আলগাভাব অবলম্বন করেছে। ওই রিপোর্টে
আরও বলা হয়, সেনাবাহিনীর ওই ইউনিটটি যাত্রা করার পর পরিস্থিতি দ্রুত পাল্টে
যায়। খবর আসতে থাকে সেনাবাহিনীর আরেকটি ইউনিট নয়া দিল্লির দিকে অগ্রসর
হচ্ছে। এই ইউনিটটি আরও বড়। এটি ছিল আগ্রার এয়ারবর্ন ৫০ প্যারা ব্রিগেডের।
প্রত্যক্ষদর্শীরা এ সময় ছিলেন দিল্লির দক্ষিণে। এ সময় তারা দু’টি ইউনিটই
দেখতে পায়। এ অবস্থায় হতাশা দেখা দেয়। খবর জানানো হয় প্রতিরক্ষামন্ত্রীকে।
অবিলম্বে কেন্দ্র ওই দু’টি ইউনিটের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করতে পুরনো একটি
পরিকল্পনামতো পদক্ষেপ নেয়। কেন্দ্র সঙ্গে সঙ্গে একটি সন্ত্রাসী সতর্কতা
জারি করে পুলিশকে নির্দেশ দেয় তারা যেন দিল্লিগামী মহাসড়কের সবগুলো গাড়ি
সতর্কতার সঙ্গে তল্লাশি করে। এর ফলে ওই মহাসড়কে গাড়ি চলাচল স্তিমিত হবে।
ফলে সৃষ্টি হবে যানজট। এভাবেই ওই দু’টি সেনা ইউনিটের অগ্রযাত্রায় বাধা
সৃষ্টি করা হয়। ঘটনাটি প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংকে জানানো হয় পরের দিন ১৭ই
জানুয়ারি। তড়িঘড়ি করে ওইসব স্থানে তল্লাশি চৌকি বসানো হয়। বিশেষ করে
উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলীয় অঞ্চলগুলোতে এ পদক্ষেপ জোরালো করা হয়। কোন কিছুকেই
খাটো করে না দেখতে বলা হয়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস আরও জানায়, এ সময় প্রতিরক্ষা
সচিব শশীকান্ত শর্মার মালয়েশিয়া সফর সংক্ষিপ্ত করতে নির্দেশ দেয়া হয়। তিনি
নির্দেশ পেয়ে দেশে ফিরে আসেন। তিনি দেশে ফিরেই রাতে অফিসে ছুটে যান।
সেখানে ডেকে পাঠান মিলিটারি অপারেশনস-এর মহাপরিচালক লেফটেন্যান্ট একে
চৌধুরীকে। কি ঘটেছে তা সবিস্তারে জানতে চান তার কাছে। জেনারেল চৌধুরী
প্যারা ব্রিগেডের অগ্রযাত্রা সম্পর্কে জানতেন। তিনি সচিবকে বলেন, এটা ছিল
একটি নিয়মিত মহড়ার অংশ। এরপর প্রতিরক্ষা সচিব তাকে নির্দেশ দেন মেকানাইডজ
ইউনিটের অগ্রযাত্রা সম্পর্কে পূর্ণ তথ্য নিয়ে ফিরে গিয়ে তাকে জানাতে।
জেনারেল চৌধুরী খুব তাড়াতাড়ি তা সম্পন্ন করেন। এবারও তিনি একই ব্যাখ্যা
দেন। তিনি বলেন, ঘন কুয়াশার ভিতরে দ্রুত মোতায়েন করার নির্দেশ এলে তা পালনে
সেনাবাহিনী কতটা পারঙ্গম তা যাচাই করাই ছিল এই অগ্রযাত্রার উদ্দেশ্য। এ
সময় জেনারেল চৌধুরীকে প্রতিরক্ষা সচিব নির্দেশ দেন- তিনি যেন তাদেরকে
অবিলম্বে ফিরে যেতে বলেন। এরপর দুটি ইউনিটকেই থামিয়ে দেয়া হয় এবং তারা কয়েক
ঘণ্টার মধ্যে ব্যারাকে ফিরে যায়। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস জানায়, সূত্রগুলো
বলেছে- মেকানাইজড ইউনিটটি পার্ক করা হয়েছিল নয়া দিল্লির নাজাফগড়ের
বাহাদুরগড়ের কাছে শিল্প এলাকায়। প্যারা ব্রিগেড অবস্থান করছিল একটি
আর্টিলারি রেজিমেন্ট- ৭৯ মিডিয়ামে। এটি পালাম থেকে খুব দূরে নয়।
সেনাবাহিনীর ব্যাখ্যা- এটি ছিল কুয়াশার সময় দ্রুত মোতায়েনের বিষয়ে তাদের
একটি মহড়া। সরকারের উপরি মহলও বিষয়টিকে মেনে নিয়েছে। ইন্ডিয়ান এক্সপ্রেস
প্রশ্ন করেছে- যদি তাই হয়, যদি এটি একটি প্রটোকল হয় যে, সেনাবাহিনী যে কোন
সময় মুভমেন্ট করতে পারবে, কিন্তু কেন তারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়কে বিষয়টি
আগে থেকে জানাবে না?
No comments:
Post a Comment