বৃটেনের মুসলিম কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় নেতা, মুসলিম এইডের নেতা
চৌধুরী মুঈন উদ্দিনকে বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধের দায়ে বিচারের মুখোমুখি হতে
হচ্ছে। তার বিরুদ্ধে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় অপহরণ ও নিখোঁজ করে
দেয়ার বেশ কতগুলো অভিযোগ আনা হয়েছে। কিন্তু তিনি ওইসব অভিযোগকে রাজনৈতিক
উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ও মিথ্যা বলে দাবি করেছেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে তাকে
মৃত্যুদণ্ড দেয়া হতে পারে। বাংলাদেশে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের
প্রধান তদন্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবদুল হান্নান খান বলেছেন, বাংলাদেশে
বুদ্ধিজীবীদের সিরিজ হত্যাকাণ্ডে তার জড়িত থাকার অকাট্য প্রমাণ আছে।
তিনি বলেন, তার বিরুদ্ধে অভিযোগের অনেকটাই অগ্রগতি আমরা করেছি। তাকে
অভিযুক্ত করা হবে না এবং তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হবে না- এমন কোনই সুযোগ
নেই। আমরা তার বিরুদ্ধে জুনের মধ্যে অভিযোগ গঠন করবো বলে আশা করছি। গতকাল
বৃটিশ অনলাইন পত্রিকা দ্য টেলিগ্রাফ এ খবর দিয়েছে। ঢাকা থেকে এ রিপোর্টটি
লিখেছেন অ্যানড্রু গিলিগান। তিনি লিখেছেন- বাংলাদেশের আইনমন্ত্রী
ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ বলেছেন, চৌধুরী মুঈন উদ্দিনের কাছে ছিল বুদ্ধিজীবী
হত্যার সব কলাকৌশল। অবশ্যই তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করা হবে। দীর্ঘ ওই
রিপোর্টে বলা হয়, বৃটেনের কাছ থেকে স্বাধীনতার ২৫ বছর পরে তখনকার
পাকিস্তানের এক অংশ ছিল বর্তমানের বাংলাদেশ। এর নাম ছিল পূর্ব পাকিস্তান।
এর আরেক অংশ ছিল বাংলাদেশ থেকে কয়েক হাজার মাইল দূরে। ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা
যুদ্ধ শুরু হয়। ওই সময় পাকিস্তানের সেনারা কয়েক লাখ বেসামরিক মানুষকে হত্যা
করে। তখন ঢাকার সংবাদপত্র পূর্বদেশ পত্রিকার সাংবাদিক ছিলেন মুঈন উদ্দিন।
তিনি জামায়াতে ইসলামীর একজন সংসদ সদস্যও ছিলেন। এই জামায়াতে ইসলামী যুদ্ধে
পাকিস্তানের পক্ষ অবলম্বন করে। যুদ্ধে যখন স্পষ্ট হয়ে উঠল যে, পাকিস্তান
হেরে যাচ্ছে তখন তাকে বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের সহযোগী আল বদরের সদস্য
হিসেবে অভিযুক্ত করা হয়। এই আল বদর স্বাধীনতা যুুদ্ধের সময় বাংলাদেশের
বুদ্ধিজীবী ও সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বদের নির্যাতন ও হত্যায় সহযোগিতা করে।
এমনই স্বামীহারা এক বিধবা ডলি চৌধুরী। তিনি দাবি করেছেন, তিনি চৌধুরী মুঈন
উদ্দিনকে চিনতে পেরেছিলেন। যে তিনজন লোক তার স্বামী বাংলা সাহিত্যের
প্রথমসারির একজন প্রফেসর মুফাজ্জল হায়দার চৌধুরীকে ১৯৭১ সালের ১৪ই ডিসেম্বর
অপহরণ করে তাদের একজন মুঈন উদ্দিন। তিনি বলেছেন, ওই সময় মুঈন উদ্দিন ছিল
স্কার্ফ পরা। আমার স্বামীকে যখন নিয়ে যাওয়া হয় তখন তিনি ওই স্কার্ফটি টেনে
খুলে ফেলেছিলেন। যখন সে ছাত্র ছিল সে মাঝে মধ্যেই আমার দেবরের বাসায় যেত।
আমার স্বামী, আমার ননদ আমরা সবাই তাকে চিনতে পেরেছি। ওই রাতে আমার স্বামীকে
নিয়ে যাওয়ার পর তাকে আর কখনও দেখা যায়নি। আল বদর বাহিনীর নির্যাতনে স্বামী
হারানো আরেক বিধবা নূরজাহান সিরাজী। তিনি বলেছেন, ১৯৭১ সালের ১০ই ডিসেম্বর
রাতে তার সাংবাদিক স্বামী সিরাজুদ্দিন হোসেনকে একদল লোক অপহরণ করে। সেই
দলে চৌধুরী মুঈন উদ্দিন ছিল। তিনি বলেছেন, এই ব্যক্তি যে তার স্বামীকে
অপহরণে যুক্ত এতে তার বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই। পূর্বদেশ পত্রিকার আরেক
সাংবাদিক গোলাম মোস্তফা নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন স্বাধীনতা যুদ্ধের সময়। তার
ভাই দুলু বলেছেন, তার ভাই নিখোঁজ হওয়ার পর তিনি চৌধুরী মুঈন উদ্দিনের
সাহায্য চেয়েছিলেন। মুঈন উদ্দিন তাকে নিয়ে যায় পাকিস্তানি সেনাদের বন্দি ও
নির্যাতন ক্যাম্পে। দুলু মোস্তফা বলেন, ওই বন্দিশিবিরের সবাই চিনতো মুঈন
উদ্দিনকে। সে সহজেই ওই বন্দিশিবিরে প্রবেশ করতে পারতো। তাকে দেখেই
পাকিস্তানি প্রহরীরা সালাম ঠুকতে থাকে। কিন্তু আমার ভাইকে আর কোনদিন পাইনি।
ওই প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, ওই সময় মুঈন উদ্দিন যে পত্রিকায় কাজ করতেন তার
সম্পাদক আতিকুর রহমান বলেছেন, আল ব্রিগেডের অস্তিত্ব আছে এ ঘটনা মুঈন
উদ্দিনই জানান দেয়। সহকর্মীরা নিখোঁজ হয়ে যাওয়ার প্রেক্ষিতে মুঈন উদ্দিন এক
পর্যায়ে আতিকুর রহমানের বাড়ির ঠিকানা চায়। তখন আতিকুর রহমান তাকে একটি ভুল
ঠিকানা দেন। স্বাধীনতার পরে তিনি জানতে পারেন আল বদরের ডেথ লিস্টে তার
নামও ছিল। তখনই মুঈন উদ্দিনের ছবিসহ একটি রিপোর্ট প্রকাশ করেন তার পত্রিকার
প্রথম পৃষ্ঠায়। ওদিকে ওই রিপোর্টে বলা হয়, মুঈন উদ্দিনের আইনজীবী টবি
ক্যাডম্যান শনিবার বলেছেন, মুঈন উদ্দিনের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে কোন
অভিযোগ গঠন করা হয়নি। ফলে আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কোন মন্তব্য করা ঠিক হবে
না। ওই রিপোর্টে বলা হয়, মুঈন উদ্দিন স্বাধীনতা যুদ্ধের পর পরই যুক্তরাজ্যে
চলে যান। সেখানে তিনি বৃটিশ নাগরিকত্ব পেয়েছেন। সেখানেই তিনি বাংলাদেশী
সমপ্রদায়ের স্বার্থ রক্ষার একজন সফল সংগঠক ও মুসলিম নেতা হয়ে ওঠেন।
Soiurce:http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=40643:2012-04-15-15-10-19&catid=46:2010-08-29-13-50-00&Itemid=77
Soiurce:http://www.mzamin.com/index.php?option=com_content&view=article&id=40643:2012-04-15-15-10-19&catid=46:2010-08-29-13-50-00&Itemid=77
No comments:
Post a Comment