Monday, May 21, 2012

বিলাসী জীবন থেকে খাদ্যের লাইনে

অর্থনৈতিক সঙ্কটে বিপর্যয়ের শেষ সীমায় গিয়ে পৌঁছেছে গ্রিসের মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অবস্থা। নিজের দু’বেলা খাবার জোগাড় করা অসম্ভব হয়ে পড়েছে তাদের। এমনকি সারা দিনে একবার নিজের খাবার জোগাড় করতে ব্যর্থ হয়ে পড়েছে অনেক মানুষ। ফলে বেঁচে থাকার জন্য একবেলা খাবারের আশায় বিভিন্ন চ্যারিটি সংস্থায় লাইন ধরতে বাধ্য হচ্ছেন অনেকে। সঙ্কটের কারণে বিপদে পড়া এসব মানুষকে বেঁচে থাকার মতো অন্ন সুবিধা দিতে এগিয়ে এসেছে বিভিন্ন সংস্থা, গির্জাসহ অনেক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান। এমনই একটি প্রতিষ্ঠান রাজধানী এথেন্সের ‘স্যুপ কিচেন’। অসমর্থ মানুষদের বিনামূল্যে একধরনের তরল খাবার দিয়ে আসছে তারা। এক সময় বিলাসী জীবনযাপন করা অনেকেই আসছেন সেখানে খাবার সংগ্রহ করতে। লাইন দিয়ে খাবার নিয়ে চলে যাচ্ছেন অবনত মস্তকে। তবে নিজেদের মর্যাদা নিয়ে যথেষ্ট সচেতন তারা। মুখ খুলতে রাজি নয় সংবাদ মাধ্যমে। একইসঙ্গে আইএমএফ ও ইউরোজোনের উদ্ধার পরিকল্পনাকেও ঘৃণাভরে প্রত্যাখ্যান করছেন জীবনের সবচেয়ে কঠিন সময় পার করতে যাওয়া এসব মানুষেরা। এমনই এক ভদ্রমহিলা এসেছেন ‘স্যুপ কিচেনে’। পরিপাটিভাবে সাজানো চুলের সঙ্গে রয়েছে সানগ্লাস। সম্ভ্রান্ত ভদ্রমহিলা এক সময় বিলাসী জীবনযাপন করতেন বলে মনে হয়। এক সময় হয়তো এথেন্সের সবচেয়ে দামি হোটেলে হতো তার লাঞ্চ ও ডিনার। কিন্তু অর্থনৈতিক সঙ্কট আজ তাকে নিয়ে এসেছে চ্যারিটি সংস্থায় লাঞ্চ করার জন্য। একটি প্লাস্টিকের পাত্রে বিনয়ের সঙ্গে স্যুপ নিলেন তিনি। সাংবাদিক তার ছবি তুলছেন। এটা সারা বিশ্বে ছড়িয়ে পড়বে বিষয়টা ভেবে অনেকটা লজ্জায় তার মুখের রঙ পাল্টে যায়। সাংবাদিকের সঙ্গে কথা বলতে অস্বীকার করে চলে যান তিনি। জীবন যুদ্ধে একমাত্র মর্যাদা ছাড়া তার আর কিছুই নেই। স্যুপ কিচেনের একজন স্বেচ্ছাসেবী বলেছেন, তিনি মাত্র কয়েক সপ্তাহ থেকে এখানে আসছেন। ফলে তিনি স্বাভাবিক হননি এখনও। তিনি ছাড়াও সেখানে এমন মানুষের লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। দিন দিন নতুন নতুন মানুষ বেঁচে থাকার তাগিদে নিজেকে সঁপে দিতে বাধ্য হচ্ছে চ্যারিটি সংস্থার হাতে। এক সময় এসব জায়গায় খাবার নিতে আসতো শুধু অভিবাসী, অবৈধ বিদেশী ও গৃহহীন শ্রেণীর মানুষ। কিন্তু এখন আসছেন যুবক শ্রেণী, চাকরিজীবী ও মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষেরা। যতই দিন যাচ্ছে বাড়ছে মানুষের সারি। এরা সচেতন যে তারা কর্মহীন, পেনশন কাটা ও দুর্নীতিবাজ জাতি হিসেবে বহির্বিশ্বে নিজের দেশকে উপস্থাপন করছে। কিন্তু তারা তো নিয়মিত কর দিতো। এখনও এথেন্সে জাঁকজমকপূর্ণ জীবন, উন্নত বিপণন কেন্দ্র সব কিছুই চলছে দেশটিতে। গত তিন বছরে গ্রিসের চার ভাগের একভাগ ফার্ম বন্ধ হয়ে গেছে। বেকার সমস্যা ২২ ভাগ এবং আরও বাড়ছে। নতুন করের হার বাড়ছে। তবে কমছে পেনশন ও জনকল্যাণমূলক বাজেট। সেনথিয়া নামে একজন স্থানীয় সাংবাদিক বলছেন তিনি অনেক ঋণগ্রস্ত হয়ে পড়লেও এখনও স্ট্যাটাস ধরে রাখতে ভালোভাবে চলছেন। তবে এসব বিষয়ে এথেন্সের ভাইস মেয়র ফটিস প্রোভাটাস বলছেন, এখানে চ্যারিটি সহায়তা যা হচ্ছে সেটা কোন বড় প্রশ্ন নয়। একটি গ্রিক প্রবাদ আছে ‘নগর হচ্ছে গরিবদের মা, তাই এটা আমাদের দায়িত্ব’। ‘স্যুপ কিচেন’-এর একজন স্বেচ্ছাসেবী দিমিত্রিয়া বলেন, এখানে চাকরি চলে যাওয়া দম্পতিদের উপস্থিতি বাড়ছে।

No comments:

Post a Comment