
আফগানিস্তানে ঝটিকা সফর করলেন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা। এর মধ্য দিয়ে তিনি মার্কিনিদের জানান দিলেন- শিগগিরই তিনি আফগানিস্তানের যুদ্ধ শেষ করতে চান। গতকাল ছিল আল-কায়েদা প্রধান ওসামা বিন লাদেন নিহত হওয়ার প্রথম বর্ষপূর্তি। ওবামা সোমবার রাতে আফগানিস্তানে পৌঁছানোর পর প্রেসিডেন্ট হামিদ কারজাইয়ের প্রাসাদে ‘দীর্ঘমেয়াদি সহযোগিতা চুক্তিতে’ সই করেন। এর আওতায় আফগানিস্তানে দীর্ঘ মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রের ভূমিকা নিশ্চিত করা হবে, যাতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সাহায্যের পাশাপাশি ‘পরামর্শও’ পাবে আফগানিস্তান। ২০১১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বর নিউ ইয়র্কে সন্ত্রাসী হামলার পর যে যুদ্ধ শুরু করেছিলেন সাবেক প্রেসিডেন্ট জর্জ ডব্লিউ বুশ সেই যুদ্ধের একটি সমাপ্তিরও সীমারেখা টানলেন ওবামা। বিডিনিউজ জানায়, আমেরিকার জনগণের ক্ষোভের কারণ হয়ে ওঠা এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানার পাশাপাশি আল-কায়েদার প্রতিষ্ঠাতা ওসামা বিন লাদেনকে হত্যার সফল অভিযানের বিষয়টিও যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচনী প্রচারণায় সামনের দিকে রাখছেন ওবামা। কারজাইয়ের সঙ্গে চুক্তি স্বাক্ষরের পর আফগানিস্তানের বাগরাম বিমান ঘাঁটি থেকে যুক্তরাষ্ট্রে সরাসরি সমপ্রচারিত এক টেলিভিশন ভাষণে ওবামা বলেন, আমেরিকান ভাইয়েরা, এক দশকেরও বেশি সময় যুদ্ধের কালো মেঘের নিচ দিয়ে হেঁটে যেতে হয়েছে আমাদের। তারপরও আজ আফগানিস্তানে ভোরের আলো ফোটার আগের এই অন্ধকারে দিগন্তে এক নতুন দিনের আলো ফোটার আভাস পাচ্ছি আমরা। এ সময় টেলিভিশনের পর্দায় ওবামার পেছনে দেখা যায় আমেরিকান ঘাঁটির সামরিক যানের বহর, যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা। তিনি বলেন, দেশের বাইরে যুদ্ধ আর দেশে অর্থনৈতিক সঙ্কট- এই দুই দুর্যোগের মধ্যে একটি দশক কাটানোর পর এখন আমেরিকাকে নবায়নের সময়। আফগানিস্তানে এই যুদ্ধ শুরু হয়েছিল, এখানেই এর শেষ হবে। ২০০১ সালে তালেবান শাসনের অবসান ঘটিয়ে বহুজাতিক বাহিনী আফগানিস্তানে নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠার পর থেকে এ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটোর প্রায় তিন হাজার সেনা নিহত হয়েছে। এক বছর আগে পাকিস্তানে বিন লাদেনের ডেরায় মার্কিন বাহিনীর সফল অভিযানের বিষয়টিও উঠে আসে ভোরের আগে আগে ওবামার এই বক্তৃতায়। তিনি বলেন, আমরা যে কেবল ধীরে ধীরে আল-কায়েদাকে আফগানিস্তান থেকে সরিয়ে দিতে সফল হয়েছি- তাই নয়, তাদের নেতৃত্বের কাঠামোও ধ্বংস করে দিতে সক্ষম হয়েছি। আর শেষ পর্যন্ত এক বছর আগে ওসামা বিন লাদেনকে বিচারের মুখোমুখি করতে পেরেছি আমরা। গত বছর পাকিস্তানের ইসলামাবাদের কাছে অ্যাবোটাবাদে লাদেনের গোপন আস্তানায় ‘অতি গোপন’ অভিযান চালায় মার্কিন নেভি সিল সদস্যরা। ওয়াশিংটনে বসে ওই অভিযান সরাসরি প্রত্যক্ষ ও পরিচালনা করেন বারাক ওবামা। সেই দিনও লাদেনের হত্যাকে তিনি অভিহিত করেছিলেন সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে আমেরিকানদের জন্য ন্যায়বিচার হিসাবে। বাগরাম ঘাঁটি থেকে ওই ভাষণের পরপরই এয়ার ফোর্স ওয়ানে করে আফগানিস্তান ত্যাগ করেন ওবামা। তার ফিরে যাওয়ার ঘণ্টাখানেকের মধ্যে কাবুলে এক গাড়িবোমা হামলায় কমপক্ষে ৬ জন নিহত হন।
ওবামাকে নিহত দেখতে চেয়েছিলেন লাদেন
আল-কায়েদার প্রয়াত নেতা ওসামা বিন লাদেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামা ও জেনারেল ডেভিড পেট্রাউসকে নিহত দেখতে চেয়েছিলেন। তবে, তা লাদেনের কাছে সবচেয়ে মুখ্য বিষয় ছিল না। সংবাদ চ্যানেল এনবিসি’র ‘টুডে’ অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করেছেন ওবামা প্রশাসনের সাবেক কর্মকর্তা মাইকেল লেইটার। এ খবর দিয়েছে অনলাইন টাইমস অব ইন্ডিয়া। অবশ্য, ২০০১ সালের ১১ই সেপ্টেম্বরের মতো আরও একটি বড় ধরনের হামলা চালানোর স্বপ্ন দেখছিলেন আল-কায়েদার প্রয়াত এ শীর্ষনেতা। ‘টুডে’ অনুষ্ঠানটির উপস্থাপক ম্যাট লয়ার তার কাছে জানতে চান, ওবামাকে নিহত দেখতে চাওয়াটা কি কোন পরিকল্পনা ছিল নাকি লাদেনের ইচ্ছার তালিকায় ছিল। এর জবাবে লেইটার জানান, লাদেন এমনটা চাইলেও, এটি তার কোন সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনার মধ্যে ছিল না।
No comments:
Post a Comment