বিধবা মানে অভিশাপ

‘বিধবা’ মানেই যন্ত্রণা। মনের মধ্যে একাকিত্বের দহন।
একথা পৃথিবীর যে কোন দেশের নারীর জন্যই চিরন্তন সত্য। তবে যুগের কল্যাণে আজ
বিশ্ব অনেকটা কুসংস্কারমুক্ত। বিধবারাও বিয়ে করে নতুন সংসার গোছানোর
স্বপ্ন দেখতে পারেন। কিন্তু এখনও ভারতের বেশ কিছু অঞ্চলে বিধবা হওয়ার অর্থই
যেন অভিশাপ বয়ে বেড়ানো। আজও কুসংস্কারে ছেয়ে রয়েছে ভারতের বিস্তীর্ণ
অঞ্চল। ভারতে বিধবারা বরাবরই অবহেলিত। যদিও এখন ‘সহমরণ’ প্রথা প্রচলিত নেই।
কিন্তু যে অভিশাপের জীবন বিধবারা আজও সেখানে বয়ে বেড়াচ্ছেন, তা সহমরণের
তুলনায় কোন অংশে কম নয়। স্বামী মারা গেলে পুনরায় বিয়ে সেখানে প্রথাগতভাবে
নিষিদ্ধ। সারা জীবন দারিদ্র্যের নিদারুণ কষাঘাতে জর্জরিত হতে হয় তাদের।
সমাজ ও পরিবার-পরিজনদের কাছ থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়। কখনও
অনাহারে, কখনওবা অর্ধাহারে জীবন কাটাতে হয়। ‘সিটি অব উইডোস’ বা বিধবাদের
শহর বৃন্দাবন। উত্তরপ্রদেশের ‘পবিত্র শহর’ বলে পরিচিত বৃন্দাবন। ভারতের
পশ্চিমবঙ্গ, বিহার ও ওড়িশা থেকে ৩শ’ বছরেরও বেশি সময় ধরে পরিবার ও সমাজ
থেকে বিতাড়িত ও পরিত্যক্ত বিধবারা জড়ো হচ্ছেন বৃন্দাবনে। প্রতি মুহূর্তে
তাদের সইতে হয় অপমান, লাঞ্ছনা আর গঞ্জনা। তারা সেখানে বিভিন্ন মন্দিরে
জোটবদ্ধ হয়ে বাস করেন। প্রথা অনুযায়ী, চরম উদাসীনতার শিকার এ নারীদের মোটা
কাপড় ও সাদা থানের শাড়ি পরতে হয়। বৃন্দাবনে সাদা শাড়িতে বিধবাদের দেখতে
পাওয়াটা অতি সাধারণ ব্যাপার। মন্দিরে পুজো করে তাদের সময় কাটে। একমুঠো
খাবারের জন্য হাত পাততে হয়। বৃন্দাবনে উচ্চ-বর্ণের হিন্দুদের সংখ্যা দিনে
দিনে বাড়ছে। কোন কাজ না করেই তাদের সময় কাটে। পশ্চিমবঙ্গে এখনও বেশ কিছু
পরিবার রয়েছে, যারা সনাতন প্রথা মেনে চলেন। বিধবাদের ‘অস্পৃশ্য’ হিসেবে
গণ্য করা হয় সেখানে। স্বামী মারা গেলেই তাদের পরিত্যাগ করা হয়। বাকি জীবনটা
পূজা-অর্চনা করে কাটাতে বাধ্য করা হয় তাদের। সৃষ্টিকর্তার আরাধনা ও
সন্তুষ্টি লাভ তাদের জীবনের প্রধান উপলক্ষ হয়ে দাঁড়ায়। কখনও কখনও মাথা
ন্যাড়া করে দেয়া হয় তাদের। বিধবা নারীদের বাহ্যিক সৌন্দর্য যাতে অন্য কোন
পুরুষকে আকৃষ্ট করতে না পারে সেভাবেই থাকতে হয়। অল্প বয়সে স্বামী হারালেও
প্রথামতে পুনরায় বিয়ে করা নিষিদ্ধ। কোন কোন স্থানে ভরণ-পোষণের দায় এড়াতে
শ্বশুর বাড়ি থেকে স্বামীর মৃত্যুর পর তার বিধবা স্ত্রীকে পাঠিয়ে দেয়া হয়
পিতা-মাতার বাড়িতে। ভারতে প্রায় ৪ কোটি বিধবা রয়েছেন, যা বিশ্বে সর্বোচ্চ।
একই ভারতে রয়েছে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র। কারণ, সেখানে নারীরা এগিয়ে
চলেছেন
আধুনিক বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। সেই একই ভারতে গৃহকোণে বন্দি বিধবারা।
সেখানে একাকিত্বই তাদের নিত্যসঙ্গী। যে কোন অলঙ্কার বা সাজ-সজ্জা তাদের
জন্য নিষিদ্ধ। ধর্মীয় কোন অনুষ্ঠান ও বিয়েতে বিধবাদের উপস্থিতি এখনও
অমঙ্গলসূচক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। মৃত্যুই একমাত্র নিষ্কৃতি পথ।
প্রতিমুহূর্তে মৃত্যু কামনা করেন তারা।
No comments:
Post a Comment