যৌন বাণিজ্য প্রতিরোধে নিউ ইয়র্কে ট্যাক্সি চালকদের জন্য নতুন আইন

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো নিউ ইয়র্কে বাড়ছে যৌন
বাণিজ্য। এতে যারা জড়িত তারা ট্যাক্সিক্যাব চালকদের নিয়ে গড়ে তুলেছে একটি
চক্র। এই ব্যবসা প্রতিরোধে নিউ ইয়র্ক কর্তৃপক্ষ একটি আইন করছে। এই আইনের
অধীনে কোন ট্যাক্সিক্যাব চালক যদি তার ট্যাক্সির আরোহীকে সন্দেহজনক কোন
নারী হিসেবে চিহ্নিত করতে পারেন অথবা বুঝতে পারেন ওই নারী যৌন বাণিজ্যে
লিপ্ত তাহলে কর্তৃপক্ষকে একটি সংকেতের মাধ্যমে জানাতে বলা হচ্ছে। যদি কোন
ট্যাক্সি চালককে এ ব্যবসায় জড়িত পাওয়া যায় তাহলে তার লাইসেন্স বাতিল করা
হবে। পাশাপাশি তাকে ১০ হাজার ডলার পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। আগামী তিন
মাসের কম সময়ের মধ্যে এই আইন কার্যকর করা হবে। নগর পরিকল্পনা অনুসারে যেসব
ট্যাক্সিক্যাব ভাড়ায় চলে তার চালকদের এ বিষয়ে দেয়া হবে প্রশিক্ষণ। যারা যৌন
ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের কিভাবে ধরতে হবে তা ভিডিও চিত্রের মাধ্যমে
শেখানো হবে। নিউ ইয়র্কের ট্যাক্সিক্যাব চালকরা জানান, যৌন ব্যবসা সংক্রান্ত
আইন প্রয়োগ অবশ্যই দরকার। কিন্তু তা বাস্তবায়ন পদ্ধতি প্রশ্নবিদ্ধ। মাইকেল
ডিক নামের এক ট্যাক্সিচালক বলেন, বুঝতে পারছি না এই আইন কিভাবে আমাদের ওপর
চাপিয়ে দিচ্ছে কর্তৃপক্ষ। এর চেয়ে ভাল পদ্ধতি ছিল হর্ন বাজানো পদ্ধতি। এতে
সহজেই পুলিশ কিংবা কর্তৃপক্ষকে ঘটনা সম্পর্কে বোঝানো যেত। নিউ ইয়র্ক শহরের
ট্যাক্সিক্যাব চালকরা যে যৌন ব্যবসায় জড়িত তার খুব কম ঘটনাই নজরে এসেছে।
যৌন ব্যবসা বিরোধী সংগঠন ‘স্যাংচুয়ারি ফর ফ্যামিলিস’-এর কর্মকর্তা ডর্চেন
লেইডহোল্ট বলেন, যৌন ব্যবসার সঙ্গে নিউ ইয়র্ক শহরের ট্যাক্সিক্যাব চালকদের
সংশ্লিষ্টতা দিন দিন বাড়ছে। এর কারণ, আগে বাড়ি বাড়ি নারী ও যুবতীদের জোর
করে আটকে রেখে তাদের দিয়ে দেহ ব্যবসা করানো হতো। কিন্তু সমপ্রতি পুলিশ এসব
আস্তানায় অভিযান বাড়িয়ে দিয়েছে। ফলে দেহ ব্যবসায় জড়িত চক্র ব্যবসার নতুন
কৌশল অবলম্বন করছে। তারা এক্ষেত্রে ব্যবহার করছে ট্যাক্সিক্যাব চালকদের। এ
ব্যবসা যারা নিয়ন্ত্রণ করে তাদের সঙ্গে কোন কোন ক্ষেত্রে ট্যাক্সি ক্যাব
চালকদের রয়েছে সংশ্লিষ্টতা। ওই চালকরা নারী বা যুবতীদের হোটেল থেকে হোটেলে,
এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায়, এক আস্তানা থেকে আরেক আস্তানায় স্থানান্তর
করে। ফলে নিউ ইয়র্ক সিটি কর্তৃপক্ষের দৃষ্টি এখন ওই ট্যাক্সিক্যাব চালকদের
দিকে। তাই নতুন আইনে তাদেরকেই টার্গেট করা হয়েছে। ডর্চেন লেইডহোল্ট বলেছেন-
যৌন হয়রানির শিকার নারীরা বারবার বলছেন, যৌন ব্যবসায়ী চক্রের কাছে তারা
জিম্মি। ট্যাক্সিক্যাব চালকরা তাদের অনবরত নিরাপত্তাহীন অবস্থায় এক জায়গা
থেকে আরেক জায়গায়, এক রাস্তা থেকে আরেক রাস্তায়, এমনকি পতিতালয়ে পৌঁছে
দিচ্ছে। এই চালকরা সব সময়ই ব্যবসায়ীদের ঘনিষ্ঠতায় থাকে। যেটি শুধু নিউ
ইয়র্ক শহর কিংবা নিউ ইয়র্ক প্রদেশে নয় সারা বিশ্বের একটি বড় সমস্যা।
ট্যাক্সিক্যাব চালকরা যৌন ব্যবসার নেটওয়ার্কের একটি বড় অংশ বলে জানাচ্ছে
যৌন হয়রানির শিকার নারীরা। ডর্চেন লেইডহোল্ট আরও বলেন, চালকরা যৌন ব্যবসার
সঙ্গে জড়িত পুরো নেটওয়ার্ক সম্পর্কে কর্তৃপক্ষ ও পুলিশকে জানাতে বড় ভূমিকা
পালন করতে পারে। এ বাণিজ্য প্রতিরোধ করতে নিউ ইয়র্ক কর্তৃপক্ষ নতুন ওই
আইনটি করার উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু তা নিয়ে সমালোচনা আছে বিস্তর। বিরোধীরা
বলছেন, এক্ষেত্রে ভাষা একটি বড় বাধা হয়ে দাঁড়াবে। কারণ, ট্যাক্সিক্যাবে কোন
নারী বা যুবতী আরোহণ করলে তার ভাষা সবক্ষেত্রে বুঝতে পারবে না
ট্যাক্সিক্যাব চালক। ফলে তার দণ্ডিত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থেকে যায়।
No comments:
Post a Comment