আসামের দাঙ্গায় বাইরের হাত!-সিবিআইয়ের তদন্ত দাবি করলেন তরুণ গগৈ

আসামের দাঙ্গায় বিদেশীদের হাত রয়েছে বলে ইঙ্গিত করেছেন
মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ। এজন্য তিনি ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের কাছে
কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থা সিবিআইয়ের তদন্ত দাবি করেছেন। ওদিকে এ দাঙ্গায়
নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৩। ওদিকে আসামের মূল বিরোধী দল অল ইন্ডিয়া
ইউনাইটেড ডেমোক্রেটিক ফ্রন্টের এমপি বদরুদ্দিন আজমল বলেছেন, আসাম দাঙ্গায়
যারা নিহত হয়েছেন তাদের শতকরা ৯০ ভাগই মুসলমান। তিনি বলেন, আমি যদি এ ঘটনার
গভীরে প্রবেশ করি তাহলে আমি এর জন্য প্ররোচণামূলক বিবৃতি ও স্বাভাবিক
অবস্থা ফিরে আসা প্রতিরোধ করাকে দায়ী করবো। আমার দল এ বিষয়ে যেসব তথ্য
সংগ্রহ করেছে তা আমি জনসমক্ষে প্রকাশ করতে চাই না। কিন্তু আমি মুখ বন্ধ
রাখতে পারি না। কারণ, নিহতের সংখ্যা বেড়েই চলেছে। গতকাল এ খবর দিয়েছে
বার্তা সংস্থা পিটিআই। এতে বলা হয়, তরুণ গগৈ মনে করেন বোরোল্যান্ড
টেরিটোরিয়াল এরিয়াস ডিস্ট্রিক্ট (বিটিএডি) ও ধুবরি জেলায় যে দাঙ্গা চলছে
তাতে আভ্যন্তরীণ ও বহির্শক্তির হাত রয়েছে। তিনি বলেন, এ বিষয়টি উদঘাটনের
জন্য আমি সিবিআইয়ের তদন্ত চেয়েছি। এখন কেন্দ্রীয় সরকার এ বিষয়ে চূড়ান্ত
সিদ্ধান্ত নেবে। বিভিন্ন আশ্রয় শিবিরে বাংলাদেশী অভিবাসীরা আশ্রয় নেয়ার
অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, আমার কাছে রিপোর্ট আছে যে- অন্য দেশের ও
বিটিএডি’র কাছের অবৈধ অভিবাসীরা আশ্রয়কেন্দ্রে ঠাঁই নিচ্ছে। তারা কোথা থেকে
এসেছে বা তাদের পূর্ব পরিচয় কি তা যাচাই করা হবে। তবে কোন বহির্দেশীয়
ব্যক্তিকে পুনর্বাসন করা হবে না। শুধু খাঁটি ভারতীয় নাগরিকদের পুনর্বাসন
করা হবে। তিনি আরও বলেন, অবৈধ অস্ত্র কেড়ে নেয়া হবে। মুখ্যমন্ত্রী আরও
বলেন, গতকাল পর্যন্ত সরকারি হিসাবে এ দাঙ্গায় নিহতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৭৩।
তবে বেসরকারি হিসেবে এ সংখ্যা আরও বেশি। মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, এ পর্যন্ত
আশ্রয় কেন্দ্রগুলোতে ৭টি শিশুসহ মারা গেছে ১৬ জন। দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ার
প্রেক্ষিতে আক্রান্ত এলাকাগুলোতে ৬৫ কোম্পানি আধা সামরিক বাহিনী মোতায়েন
করা হয়েছে। ওদিকে লোয়ার আসাম জেলায় দাঙ্গা এখনও অব্যাহত রয়েছে। স্থানীয়
জনতা ন্যাশনাল হাইওয়ে-৩১’তে কোকরাঝাড়-ধুবরি এলাকার বেলতলিতে অবরোধ সৃষ্টি
করে গতকাল। সোমবার রাতে রানিবুলি গ্রামে একদল দাঙ্গাকারী কিছু লোকের
আশ্রয়স্থলে গুলি করে। এতে সেখানেই ৩ জন নিহত হয়। মারাত্মক আহত হয় দু’জন।
তাদেরকে গোয়াহাটি মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আসামের
আইজিপি (ল অ্যান্ড অর্ডার) এল আর বিষ্ণোই বলেছেন, নিহতরা হলেন
লক্ষ্মীগঞ্জের। ওদিকে সোমবার রাতে ওই ৩ ব্যক্তিকে হত্যার প্রতিবাদে গতকাল
বেলতলিতে জাতীয় মহাসড়কে বিপুল সংখ্যক মানুষ অবরোধ সৃষ্টি করে। এ অবস্থায়
কোকরাঝাড় জেলায় ফের অনির্দিষ্টকালের কারফিউ জারি করা হয়েছে। অন্যদিকে চিরাং
জেলায় গতকাল সকালে উদ্ধার করা হয়েছে একটি মৃতদেহ। রাজাপাড়া এলাকার একটি
ক্ষেত থেকে উদ্ধার করা হয়েছে ওই মৃতদেহটি। এরপর থেকে সেখানে ২৪ ঘণ্টাই
কারফিউ বলবৎ করা হয়েছে। সোমবার রাতে চিরাং জেলায় কয়েকটি বাড়িতে আগুন দেয়া
হয়েছে। এতে জড়িত থাকার অভিযোগে গ্রেপ্তার করা হয়েছে একজনকে। আসাম পুলিশের
আইজিপি (বিটিএডি) এসএন সিং গতকাল বলেছেন, দাঙ্গা যাতে আরও ছড়িয়ে না পড়ে
সেজন্য সব রকম নিরাপত্তামূলক পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। গতকাল সকালেও
সেনাবাহিনীকে ফ্লাগ মার্চ করতে দেখা গেছে তিনটি জেলায়- কোকরাঝাড়, চিরাং ও
ধুবরিতে। এ তিনটি জেলায় বোরো উপজাতি ও স্থানীয় মুসলমানদের মধ্যে বেশ
কয়েকদিন ধরে চলছে মারাত্মক দাঙ্গা। ওদিকে ছাতিপুর এলপি স্কুলের
আশ্রয়কেন্দ্রে উপযুক্ত চিকিৎসা সহায়তা না পাওয়ায় মারা গেছে ৫ বছর বয়সী এক
শিশু। এর আগে ৫দিন ধরে শিশুটি অসুস্থতায় ভুগছিল। এ পর্যন্ত বিভিন্ন
আশ্রয়শিবিরে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ১৪। আসাম দাঙ্গা, বিদ্যুতের ঘাটতিসহ
বিভিন্ন ইস্যুতে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারকে ঘায়েল করার জন্য প্রস্তুত বিরোধী
দল। আজ পার্লামেন্টের বর্ষাকালীন অধিবেশন বসছে। এতে ইউপিএ সরকার দুর্নীতি
বিরোধী বিল ও অন্যান্য আইনি এজেন্ডা সামনে নিয়ে আসবে। ওদিকে আউটলুক
ইন্ডিয়াকে দেয়া সাক্ষাৎকারে আসামের ধুবরি জেলার বিরোধীদলীয় এমপি বদরুদ্দিন
আজমল বলেছেন, প্রশাসনের আশীর্বাদপুষ্ট হয়ে প্রত্যন্ত এলাকাগুলোকে
সুপরিকল্পিতভাবে হত্যাযজ্ঞ চালানো হয়েছে। সেখানে শ’ শ’ মৃতদেহ পড়ে আছে।
তাতে পচন ধরেছে। কোন পরিবারের কে মারা গেছে বা নিখোঁজের সংখ্যা কত তা
নির্ধারণ করতে অনেক সময় লাগবে। অভিযোগ আছে, মুসলমানদের হত্যার বিষয়ে
রাষ্ট্র অন্ধের ভূমিকা নিয়েছে। এর জবাবে বদরুদ্দিন আজমল বলেন,
সাংবিধানিকভাবে যেসব মানুষকে নিরাপত্তা দিতে বাধ্য মুখ্যমন্ত্রী তরুণ গগৈ ও
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী তারা সেই সব মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করেছেন। তাই তার
কোন ক্ষমা নেই। এখন এটা দিনের আলোর মতো পরিষ্কার যে, মুসলমানদের হত্যার
প্রস্তুতির বিষয়ে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে অগ্রিম তথ্য ছিল। কিন্তু তাদেরকে
রক্ষা করতে তিনি কোন পদক্ষেপ নেননি। এখন তিনি ডিসি, এসপি, এসডিও, এসডিপিও
এবং ওসিদেরকে বদলি করছেন। দোষী কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে অবিলম্বে এফআইআর হওয়া
উচিত এবং অবশ্যই তাদের বিচার হওয়া উচিত। মুখ্যমন্ত্রীর যদি বোধ থাকে তাহলে
তার উচিত পদত্যাগ করা। এর জন্য তিনি একাই দায়ী। এখানে উল্লেখ্য, বোরোরা
হলো একটি উপজাতি। তারা ব্রহ্মপুত্র উপত্যকায় বসবাসকারী অধিবাসীদের
উত্তরসূরি। তারা ১৯৮০’র দশক থেকে আলাদা বোরোল্যান্ড প্রতিষ্ঠার দাবিতে
আন্দোলন করছে। ২০০৩ সালে বোরোল্যান্ড একর্ড বা বোরোল্যান্ড চুক্তির মাধ্যমে
শান্তি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এর মাধ্যমে গঠন করা হয় বোরো টেরিটোরিয়াল
কাউন্সিল। তাদেরকে দেয়া হয় চারটি জেলা শাসনের দায়িত্ব। তাদের সঙ্গে যোগ হয়
বোরো ট্রাইবাল এরিয়া ডিস্ট্রিক্ট। সমপ্রতি অবৈধ অস্ত্র বহনের দায়ে সাবেক এক
বোরো জঙ্গিকে ধরিয়ে দেয়ায় এক মুসলিম কনস্টেবল ও তার এক আত্মীয়কে গুলি করে
হত্যা করে বোরোরা। এ ঘটনাকে কেন্দ্র করে শুরু হয় দাঙ্গা।
No comments:
Post a Comment