সাতক্ষীরায় এসিডে পুড়িয়ে দেয়া নূরবানুর কষ্টকথা এখন বিদেশের মিডিয়ায়। তার ওপর তার স্বামী ও তার পরিবার থেকে যে নির্যাতন চালানো হয়েছে তা ফুটিয়ে তোলা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নূরবানু যে স্বামীর সঙ্গে ১৮ বছর ধরে সংসার করেছেন সেই স্বামীকেই একদিন অন্য নারীর প্রেমে মত্ত অবস্থায় দেখতে পান। এরপরই তিনি তার ওই স্বামীকে তালাক দেন। এর ৮ দিন পরেই তার ওই স্বামী তার মুখে, শরীরে এসিড নিক্ষেপ করে তার চেহারা বিকৃত করে দেয়। নূরবানুর দু’টি চোখই অন্ধ হয়ে যায়। তিনি বেঁচে যান কোনমতে। এ ঘটনায় তার ওই স্বামীর ১ বছরের জেল হয়। কিন্তু শাশুড়ি তার ছেলেকে দিয়ে তাকে বাধ্য করে ওই মামলা তুলে নিতে। তার স্বামীকে মুক্ত করাতে বাধ্য করেন তার শাশুড়ি। এরপর জোর করে তাদেরকে ফের ঘর-সংসার করতে বাধ্য করানো হয়। নূরবানু ভেবেছিলেন এবার তার স্বামীসহ শ্বশুরবাড়ির সবার বোধোদয় হবে। কিন্তু না। নূরবানুর কপালে সুখ জোটেনি। এখন তিনি একেবারে অন্ধ হওয়ায় নিজে এক গ্লাস পানিও ঢেলে পান করতে পারেন না। এ নিয়ে হাফিংটন পোস্ট, লন্ডনের ডেইলি মেইল রিপোর্ট করেছে।
সচিত্র ওই রিপোর্টের সঙ্গে নূরবানুর বর্তমান সময়কার একটি ভিডিও জুড়ে দেয়া হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, নূরবানু ১৮ বছর ঘর-সংসার করেছেন তার স্বামীর সঙ্গে। তারপর হঠাৎ একদিন তিনি তার স্বামীকে দেখতে পান অন্য নারীর সঙ্গে। এ ঘটনায় স্বামীর ওপর বিশ্বাস হারিয়ে ফেলেন নূরবানু। তিনি তার স্বামীকে তালাক দেন। এর ৮ দিন পর মোটরসাইকেলে চেপে তার বাড়ি যায় তার স্বামী। তখন নূরবানু রান্না করছিলেন। তার স্বামী এ সময় তার ওপর এসিড নিক্ষেপ করে। এতে নূরবানু অন্ধ হয়ে যান। তার চেহারা বিকৃত হয়ে যায়। নূরবানুর এখন বয়স ৩৬ বছর। তাকে ফের তার স্বামীর ঘরে ফিরিয়ে আনা হয়েছে। তার শাশুড়ি তাকে বাধ্য করেছে স্বামীকে মুক্ত করতে। এজন্য তাকে এফিডেভিট দিতে বাধ্য করা হয়েছে। তার ওপর ভিত্তি করে তার স্বামীকে জেল থেকে মুক্তি দেয়া হয়েছে। নূরবানুর ওপর এসিড নিক্ষেপ করে তার এই স্বামী পালিয়ে ছিল। ঘটনার ১০ মাস পর তাকে আটক করা হয়। তাকে ১ বছরের জেল দেয়া হয়। জেল থেকে তাকে বের করে আনেন নূরবানু। তিনি বলেন, লোকজন হয়তো ভাববে স্বামী হয়তো আমাকে অন্ধ বলে অনেক আদর করেন। অনেক ভালবাসেন। কিন্তু তা আর আমার কপালে জোটেনি। এখনও আমার স্বামী আমাকে প্রহার করে। মারে। এভাবেই আমার দিন কাটছে। বাংলাদেশে নারীদের ওপর এসিড নিক্ষেপের ফলে যে হাজার হাজার নারী অবর্ণনীয় দুর্ভোগের শিকার হন তাদেরই একজন প্রতিনিধি নূরবানু। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, বাংলাদেশে এমন এসিড নিক্ষেপের ঘটনা অনেক। অপরাধী চক্র বেশির ভাগই নাইট্রিক এসিড অথবা সালফিউরিক এসিড নিক্ষেপ করে থাকে। এ বছর এমন ৫৯টি ঘটনা ঘটেছে। ২০১১ সালে এসিড নিক্ষেপের শিকার হয়েছেন ১১৮ জন। এর মধ্যে ৭৫ জনই নারী। আবার ১৩ জনের বয়স ১৮ বছরের নিচে।