Source: The Daily Manabzamin
http://www.mzamin.com/details.php?mzamin=MTExMjI0&s=Mg==
নৃশংস হত্যাকাণ্ড। গলাকেটে ও মাথা থেতলে ৫ জনকে হত্যা করা হয়েছে
নারায়ণগঞ্জে। আলোচিত সাতখুনের পর এবার একই পরিবারের ফাইভ মার্ডার নিয়ে
আতঙ্কিত নারায়ণগঞ্জবাসী। এক ঘর থেকেই তাদের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এরমধ্যে ৩
জনকে গলা কেটে হত্যা করা হয়েছে। দুই শিশুকে মাথা থেথলে মারা হয়েছে। হত্যার
পর ঘাতকরা ঘরের বাইরে থেকে দরজায় তালা ঝুলিয়ে পালিয়ে যায়। হত্যাকা-ের
শিকাররা হলো- ওই পরিবারের তাসলিমা বেগম (৩৫), তার শিশু পুত্র শান্ত (১০),
মেয়ে সুমাইয়া (৫), ছোট ভাই মোশারফ ওরফে মোর্শেদুল (২২) ও ঝা লামিয়া বেগম
(২৫)। ঘটনাটি ঘটেছে শনিবার বিকেল থেকে সন্ধ্যার মধ্যে শহরের ২নং বাবুরাইল
খানকা শরিফ সংলগ্ন ১৩২/১১ আমেরিকা প্রবাসী ইসমাইল হোসেনের বাড়ির নীচতলার
ফ্লাটে। ঘনবসতিপূর্ণ এলাকায় এমন হত্যাকান্ডের কিংকর্তব্যবিমুঢ় এলাকাবাসী।
পুরো নারায়ণগঞ্জে আতঙ্ক ও চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে। তবে কেন, কি কারণে এ
হত্যাকা-- তা পুলিশ এবং নিহতদের স্বজনরা কেউই নিশ্চিত করে কিছু বলতে
পারেননি। তবে পুলিশের ধারণা খুনিরা পরিচিত এবং পারিবারিক কোন কারণে এ
হত্যাকা- ঘটে থাকতে পারে। খুনিরা পেশাদার নয় বলেও পুলিশের ধারণা।
খবর
পেয়ে ঘটনাস্থলে ছুটে যান জেলা প্রশাসক মো: আনিসুর রহমান মিঞা, ঢাকা রেঞ্জের
অতিরিক্ত ডিআইজি মোহাম্মদ আলী, জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন,
র্যাব-১১ এর সিও আনোয়ার লতিফ খান, সদর মডেল থানার ওসি আব্দুল মালেক,
ফতুল্লা মডেল থানার ওসি আসাদুজ্জামান, ডিবি পুলিশের ওসি মামুনুর রশিদ ম-লসহ
পুলিশ, র্যাব ও গোয়েন্দা সংস্থার কর্মকর্তারা।
নিহত তাসলিমার খালাতো
বোন নয়নতারা বলেন, ময়মনসিংহ জেলার নান্দাইল উপজেলার ভেলাবাড়ি গ্রামে
তাছলিমাদের বাড়ি। তার বাবার নাম বারেক মিয়া।
নিহত তাছলিমা ও মোশারফের মা
মোর্শেদা বেগম বলেন, এক মাস আগে তারা এ বাড়িতে ভাড়া এসেছে। এর আগে তারা
ঢাকার কলাবাগানে থাকতো। তাছলিমার স্বামী শফিকুল ইসলাম ঢাকায় প্রাইভেট কার
চালক। সে প্রতি বৃহস্পতিবার রাতে বাসায় আসে এবং শনিবার সকালে চলে যায়।
কিন্তু ছুটি না পাওয়ায় তিনি গত বৃহস্পতিবার বাসায় আসেননি। তিনি আরো জানান,
শুক্রবার রাত সাড়ে ১২টায়ও তিনি তার ছেলে মোশারফের সঙ্গে টেলিফোনে কথা
বলেছেন।
শনিবার সকালে মোর্শদা বেগম নারায়ণগঞ্জে থাকা তাদের বিভিন্ন
আত্মীয়কে ফোন করে জানায় যে মোরশেদুল ও তাছলিমা ফোন ধরছে না। তিনি বাসায়
গিয়ে তাদের সঙ্গে কথা বলতে বলেন। দুপুরের পরে আত্মীয়দের কয়েকজন ওই বাসায়
গিয়ে দরজায় তালা দেখে ফিরে আসেন। রাত আটটায় নিহত তাছলিমার দেবর এবং লামিয়ার
স্বামী শরিফুল ইসলাম গ্রামের বাড়ি থেকে এসে দেখেন দরজা বন্ধ। মোবাইল ফোনও
বন্ধ। পরে তিনি রাত সাড়ে ৮টার দিকে আত্মীয় স্বজনদের নিয়ে তালা ভেঙ্গে
ফ্ল্যাটে প্রবেশ করে ঘরের মধ্যে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকা লাশ দেখতে পেয়ে চিৎকার
করেন।
এক তলার পাশের ফ্ল্যাটের বাসিন্দা রহিমা খাতুন জানান, আগের রাত
দশটা পর্যন্ত তারা তছলিমাদের ফ্ল্যাটে মানুষের আসা যাওয়ার শব্দ, কথাবার্তার
শব্দ শুনেছেন।
নিহত তাছলিমার খালাতো বোন নয়নতারার স্বামী মোহাম্মদ মিলন
জানান, নিহত মোর্শেদুল ইসলামের সঙ্গে সুদের টাকা নিয়ে ঢাকার একটি পক্ষের
বিরোধ ছিলো। সে বিরোধের জের ধরে এ ঘটনা ঘটে থাকতে পারে।
নিহত তাছলিমা ও
মোর্শেদুলের মা মুর্শিদা বেগম বলেন, ঢাকার একটি পক্ষের সঙ্গে মোর্শেদের
বিরোধ ছিলো। তবে কি নিয়ে বিরোধ ছিলো তা তিনি বলতে পারছেন না। এ নিয়ে
হত্যাকান্ড ঘটে থাকতে পারে।
নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের প্যানেল মেয়র ও
স্থানীয় কাউন্সিলর ওবায়েদ উল্লাহ জানান, এক কক্ষে দুইটি অন্য কক্ষে তিনটি
লাশ দেখতে পেয়েছি। প্রতিটি লাশ রক্তে লাল হয়ে রয়েছে। গলা কেটে, মাথায় আঘাত
করে তাদের হত্যা করা হয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার ড. খন্দকার মহিদ উদ্দিন
রাত ১২টার দিকে সাংবাদিকদের জানান, আমরা ঘরের ভিতরে গিয়ে ৫টি লাশ দেখিছি
ফ্লোরে পড়ে আছে। ৩ জনকে গলা কেটে ও শিশু দুটিকে মাথা থেঁতলে হত্যা করা হয়।
পুরো মেঝে রক্তাক্ত। প্রাথমিকভাবে ধারনা করা হচ্ছে পারিবারিক কোন ঘটনার
সুত্রধরে ৫জনকে হত্যা করা হয়েছে। এছাড়াও আরো কিছু ক্লু আমরা পেয়েছি। ২জনকে
আটক করা হয়েছে। তাদের জিজ্ঞাসাবাদ করে আরো তথ্য পাওয়া যাবে। সিআইডির একটি
বিশেষজ্ঞ টিম এসেছে। তারা হত্যাকান্ডের নমুনা সংগ্রহ করছে। বিকেল থেকে
সন্ধ্যারাতের মধ্যে হত্যাকান্ডটি ঘটেছে। রাত সাড়ে ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে কেউ
তালা খুলতেও এসেছিল। ধারনা করা হচ্ছে ঘাতকরা নিহতদের পুর্ব পরিচিত। কারণ
দুই রুমের ছোট একটি ঘরে একজন পুরুষ লোক থাকার পরও ৫জন মানুষকে হত্যা করা
হয়েছে। ঘাতকরা ৪ থেকে ৫ জন হতে পারে। খুনের আলামত দেখে মনে হচ্ছে খুনিরা
পেশাদার নয়। এছাড়া ঘরের কোন মালামালও খোয়া যায়নি। সবকিছু ঠিক ঠাক আছে।