Wednesday, November 29, 2017

বসনিয়ার মুসলিমদের বিরুদ্ধে কেন গণহত্যা চালিয়েছিল রাতকো ম্লাদিচ!

মোহাম্মদ আবুল হোসেন: হেগে আন্তর্জাতিক যুদ্ধ অপরাধ আদালত। কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তিরস্কারের হাসি হাসছে বসনিয়ার কসাইখ্যাত রাতকো ম্লাদিচ। সার্বিয়ার সেনাবাহিনীর সাবেক কমান্ডার। এখন বয়স ৭৫ বছর। বয়সের ভারে নুয়ে পড়েছে। বসনিয়ায় নির্বিচারে হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করেছে সে। গত সপ্তাহে তার এ অপরাধের বিচার চলছিল। তিন বিচারকের প্যানেল তার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণা করবেন। এর কয়েক মিনিট আগে সে কাঠগড়ায় দাঁড়িয়ে তুচ্ছতাচ্ছিল্য, মস্করা করছিল বিচারকদের নিয়ে। তার বিরুদ্ধে রায় দেয়ার মাঝামাঝি সময় বসনিয়ার এই কসাই তিন বিচারকদের উদ্দেশে চিৎকার করছিল। বলছিল, ‘আপনারা যা বলেছেন তার সবটাই মিথ্যা। আপনাদের লজ্জা করা উচিত।’ এ অবস্থায় তাকে কোর্টরুম থেকে বের করে দেয়া হলো। তারপর বিচারকরা আনুষ্ঠানিকভাবে তার বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করলেন। গণহত্যার অভিযোগ। যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ। মানবতার বিরুদ্ধে অপরাধের অভিযোগ। দ্বিতীয় বিশ^যুদ্ধের পর ইউরোপে ঘটে যাওয়া সবচেয়ে দানবীয় এসব নৃশংসতায় তার ভূমিকা ছিল। তিন বিচারকের প্যানেলে ছিলেন নেদারল্যান্ডস, দক্ষিণ আফ্রিকা ও জার্মানির জুরিরা। তারা রায় দিলেন। বললেন, রাতকো ম্লাদিচ মুসলিম ও ক্রোয়েটদের ক্ষেপিয়ে তুলেছিল। তারা স্বঘোষিত মিনি রাজ্য সার্ব-এ বসবাস করতে থাকে। রাতকো ম্লাদিচের সেনাবাহিনী নিয়মিতভাবে দলবদ্ধ নারী ও বালিকাদের, যাদের বয়স ১২ বছর এমন মেয়েদের ধর্ষণ করতে থাকে। নৃশংস ছিল সেই ধর্ষণযজ্ঞ। রাতকো ম্লাদিচের নির্দেশে তার অধীনে, তার কমান্ডে কিভাবে সেনারা নিরস্ত্র মুসলিম ও ক্রোয়েট বন্দিদের হত্যা করেছে, নৃশংসতা চালিয়েছে, অনাহারে রেখেছে, তার বিস্তারিত বর্ণনা করছিলেন বিচারকরা। তারা বর্ণনা করছিলেন ২৪ জন বন্দিকে শ^াসরোধ করে হত্যা করা হয়। তারা একটি পরিবহন ট্রাসের ভিতর দম বন্ধ হয়ে মারা যান। একটি ক্যাম্পে সেনারা মেশিন গান থেকে একটানা গোলা ছুড়ে হত্যা করে একশত ৯০ জন বন্দিকে। একটি ঘটনায় বন্দিদের জোর করে ধর্ষণ করা হয়। এক বন্দির সঙ্গে আরেক বন্দি ন্যক্কারজনক যৌন সম্পর্কে লিপ্ত হতে বাধ্য করে। সারাজেভোতে বেসামরিক মানুষের ওপর খেয়ালখুশিমতো গোলা ফেলতে থাকে তার বাহিনী। ছাদ থেকে গুলি করতে থাকে। যখন শহরটির অধিবাসীরা তাদের সন্তানদের নিয়ে হাঁটাহাঁটি করছিলেন, পানি তুলছিলেন, খড়কুটো জড়ো করছিলেন অথবা বাজারে ছিলেন, ঠিক সেই সময় এভাবে গোলা নিক্ষেপ করা হয় তাদের ওপর। ন্যাটো বাহিনীর প্রতিশোধমুলক বিমান হামলা থামিয়ে দিতে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীদের জিম্মি করে ম্লাদিচের বাহিনী। এরপর তারা কয়েক মাসের লড়াইয়ের চূড়ান্ত পর্বে সেব্রেনিৎসা শহর দখল করে। এরপরই সেখানে ধারাবাহিকভাবে বসনিয়ার কয়েক হাজার পুরুষ ও বালককে হত্যা করে তার বাহিনী। মানব সভ্যতার জানা ইতিহাসে সবচেয়ে নিকৃষ্ট হায়েনার মতো সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতা সংঘটিত হয়। রাতকো ম্লাদিচকে যাবজ্জীবন কারাদ- দেয়া হয়। বিচারক প্যানেলে সভাপতিত্ব করেন বিচারক আলফোনস ওরি। তিনিই তার বিরুদ্ধে এসব অভিযোগের খড়গ সামনে আনেন। ম্লাদিচ এই অপরাধ ঘটিয়েছিল ২০ বছরেরও বেশি সময় আগে। তখন বসনিয়ায় যুদ্ধ চলছিল। যুক্তরাষ্ট্রের নেতৃত্বে একটি শান্তিচুক্তি হওয়ার পর যুদ্ধের ইতি ঘটে। তার আগেই শত শত হাজার হাজার মানুষকে হত্যা করা হয়। চুক্তির পরেই রাতকো ম্লাদিচ আত্মগোপনে চলে যায়। গ্রেপ্তারি এড়িয়ে পালিয়ে ছিল ১৪ বছর। ২৪ বছর আগে গঠিত হয়েছিল জাতিসংঘের অধীনে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত। সেখানেই সাবেক যুগোস্লাভিয়ার এই বিচার প্রক্রিয়া পরিচালনা করা হয়। এটা ছিল সর্বশেষ বিচার। এতে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে এক শত ৬১ জন। এর মধ্যে ৬৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তাদেরকে নিয়ে যাওয়া হয়েছে দ্য হেগে কৃতকর্মের ফল ভোগ করতে। বিচারকরা যে লিখিত রায় দিয়েছেন তার বিস্তার দুই হাজার ৫ শত ২৬ পৃষ্ঠা। ৫ বছর বিচার কার্যক্রমের ফল এটা। এতে ৫ শত ৯১ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য নেয়া হয়েছে। প্রায় ১০ হাজারের মতো বিভিন্ন সামগ্রি প্রমাণ হিসেবে সামনে আনা হয়েছে। তবে যারা ম্লাদিচের পক্ষ নিয়েছে তারা এ অভিযোগ, রায়কে তার বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছে। তার আইনজীবীরা বলেছেন, এ রায়ের বিরুদ্ধে তারা আপিল করবেন। ম্লাদিচের ছেলে ডারকো বলেছেন, ট্রাইব্যুনালের রায়ের পর তার পিতা তাকে বলেছে, এই ট্রাইব্যুনাল হলো একটি ন্যাটো কমিশন। গৃহযুদ্ধের সময় আগ্রাসন থেকে সার্বিয়ার মানুষদের রক্ষার জন্য যারা আইনগতভাবে ব্যবস্থা নিয়েছে, তারা তাদেরকেই ক্রিমিনালাইজ বানানোর চেষ্টা করছে। ওদিকে রাশিয়ার রাষ্ট্র পরিচালিত টেলিভিশন আরটি বার বার খবর প্রকাশ করতে থাকে যে, আসলেই কি সেব্রেনিৎসায় হাজার হাজার মুসলিমকে হত্যা করা হয়েছিল কিনা। যেসব কূটনীতিক যুদ্ধ বন্ধে চেষ্টা করেছেন তারা এবং ওইসব সাংবাদিক যারা সেই খবর প্রকাশ করেছিলেন, তারা প্রত্যাশা করেছিলেন, অনিষ্পন্ন বেশ কিছু প্রশ্নের চূড়ান্ত উত্তর এনে দেবে ট্রাইব্যুনাল। এর মধ্যে রয়েছে, কেন ম্লাদিচ এত বেশি মানুষকে, এত খোলামেলাভাবে কসাইয়ের মতো হত্যা করছিল? আদালত তার রায়ে বলেছে, ১২ই জুলাই সেব্রেনিৎসার পতন হয়। এর একদিন পরেই বাতকোভিচ শহরে বন্দিশিবিরে আটক রাখা হাজার হাজার মুসলিম পুরুষ ও বালকদের গৃহায়নের আগের যে পরিকল্পনা ছিল তা ত্যাগ করে বসনিয়ার সার্বরা। এর পরিবর্তে তারা পূর্ব বসনিয়াজুড়ে অর্ধ ডজন স্থানে সামারি এক্সিকিউশন চালায়। বিপুল সংখ্যক বাসে করে মুসলিম পুরুষ ও বালকদের ভরাট করে নিয়ে যাওয়া হয় মৃত্যুদ- কার্যকরের স্থানগুলোতে। এত মানুষ হত্যা করতে অনেক দজ্জাল নিয়োগ করার প্রয়োজন দেখা দিল। তারা নিরস্ত্র এসব বন্দিকে গুলি করে স্বেচ্ছায় হত্যা করবে। হত্যাকা-ের স্থান হিসেবে বেছে নেয়া হলো প্রত্যান্ত মাঠ, কমিউনিটি সেন্টার ও খামার বাড়ি। খনন করা হলো বিশাল বিশাল গণকবর। তাতে পচা মাল নামানোর মতো করে নামিয়ে দেয়া হলো মৃতদেহ। এরপর মাটিচাপা দিয়ে ইতি ঘটানো হলো। উল্লেখ্য, বসনিয়ার ওই গৃহযুদ্ধের সময় রাতকো ম্লাদিচের সঙ্গে সাক্ষাত করেছিলেন ইউরোপীয়ান ইউনিয়ন ও জাতিসংঘ শান্তির দূত কার্ল বিল্ডট। তিনি সেব্রেনিৎসার বন্দিদের সুরক্ষা নিশ্চিত করার আহ্বান জানিয়েছিলেন। রায় ঘোষণার পর সেই কার্ল বিল্ডট বলেছেন, ম্লাদিচের সিদ্ধান্ত এখনও তাকে তাড়িয়ে বেড়ায়। ম্লাদিচের বিরুদ্ধে কিছু সার্ব কর্মকর্তা স্বাক্ষ্য দিলেও তার হত্যার নির্দেশের নেপথ্যে কারণ কি এ বিষয়টি এখনও পরিষ্কার নয়। কেন? এ প্রশ্ন এখনও আমার কাছে রহস্য হয়ে আছে। এক ইমেইল মারফত বলেছেন দ্য নিউ ইয়র্কারের সাংবাদিক ডেভিড রোডিকে। তিনি বলেছেন, হাজার হাজার বন্দির পরিণতি সম্পর্কে তাকে হয়তো তার পরামর্শকরা অতিরিক্ত বুঝিয়ে থাকতে পারে। অথবা তাৎক্ষণিক পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য তারা ক্ষোভ/প্রতিশোধ ও ঘৃণার প্রকাশ ঘটাতে হত্যাকা-কে তখনকার মতো সবচেয়ে সহজ ভেবে থাকতে পারে। হয়তো হতে পারে এমনটা। তবে আমি এখনও এর কারণ উদ্ধারের চেষ্টা করছি। বসনিয়ায় জাতিসংঘের সাবেক সিনিয়র একজন কূটনীতিক ছিলেন ডেভিড হারল্যান্ড। তিনি বলেছেন, গণহারে মৃত্যুদ- কার্যকর করা হয়তো ম্লাদিচের কৌশলগত মারাত্মক ভুল ছিল। কারণ, এই পরিমাণের হত্যাকা-ের ফলে পরিস্থিতিতে হস্তক্ষেপ করতে বাধ্য হয় যুক্তরাষ্ট্র ও ন্যাটো। হারল্যান্ড বলেন, তবু কেন ওই হত্যাযজ্ঞ ঘটানো হয়েছিল তা রহস্যাবৃতই রয়ে গেছে। এটা কেন এত নিষ্ঠুর বিষয়টি তা নয়, এটা হলো এটা এতটা স্টুপিডের মতো ছিল কেন? সেব্রেনিৎসা গণহত্যায় বেঁচে যাওয়া একজন হলেন হাসান নুহানোভিচ। তিনি বলেছেন, জেনারেল ম্লাদিচের উদ্দেশ্য তার কাছে গুরুত্বহীন। তার ভাষায়, ম্লাদিচ কেন এসব করেছিল আমি বাস্তবেই তার পরোয়া করি না। তার যদি কোনো উদ্দেশ্য থাকে তাতেও আমার কিছু যায় আসে না। একটি বিষয়েই আমি মনোযোগ দিই। তা হলো, সে এই নৃশংসতা ঘটিয়েছে। নাহানোভিচের পিতা, মাতা, এক ভাইকে হত্যা করা হয়েছে। ডাচ শান্তিরক্ষীরা তাদেরকে তুলে দিয়েছিল ম্লাদিচের বাহিনীর হাতে। এরপর তাদেরকে হত্যা করা হয়। সেই নুহানোভিচ আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের প্রতি আহ্বান জানান বেসামরিক জনগণকে রক্ষার প্রতিশ্রুতি আরো গুরুত্বের সঙ্গে পালন করার। জাতিসংঘ আশপাশের সব শহরকে নিরাপদ এলাকা ঘোষণা করেছিল। বসনিয়ার মুসলিমরা তাদের আত্মরক্ষার জন্য যেসব ভারি অস্ত্র ব্যবহার করতো তা তাদের কাছ থেকে কেড়ে নিল জাতিসংঘ। এরপর ম্লাদিচের বাহিনী যখন তাদের ওপর আক্রমণ করলো তখন তাদেরকে রক্ষার জন্য কোনো প্রচেষ্টাই নেয় নি জাতিসংঘ। সাধারণ জনগণকে সুরক্ষা দেয়ার পরিবর্তে জাতিসংঘের শান্তিরক্ষীরা তাদেরকে হত্যাকা-ে পৃষ্ঠপোষকতা করে। নুহানোভিচ বলেন, আমি মনে করি বিষয়গুলোকে অতি সাধারণ দৃষ্টিতে দেখা উচিত। ওটা ছিল জাতিসংঘের নিরাপদ এলাকা। এটাকে ধরা হতো গণহত্যা প্রতিরোধের একটি উপায় হিসেবে। দেখা হতো না গণহত্যা অব্যাহত থাকা হিসেবে। রায়ে বিচারকরা ম্লাদিচের হত্যাকা-ের অংশ হিসেবে সে যে বিবৃতি দিয়েছে তাই বর্ণনা করেন। ম্লাদিচ বলে, যুদ্ধ শুরুর পরপরই সেব্রেনিৎসার মুসলিম যোদ্ধারা হত্যা করেছে সার্ব বেমাসরিক লোকজনকে। ( বসনিয়ার মুসলিমরা কয়েক শত সার্ব বেসামরিক মানুষকে হত্যা করেছিল। কিনউ ১৯৯৫ সালে ম্লাদিচের বাহিনী হত্যা করে ১৭ হাজার সাধারণ মানুষকে। এ তুলনায় সে সংখ্যা অনেক অনেক কম। যুদ্ধ চলাকালীন রাতকো ম্লাদিচ অটোম্যান সা¤্রাজ্যের মতো বার বার সার্বদের ওপর নির্যাতন ডেকে এনেছে। সাবেক যুগোস্লাভিয়াকে কয়েক শতাব্দী ধরে দখল করে রেখেছিল অটোম্যান সা¤্রাজ্য। ম্লাদিচের গোয়ার্তুমির দিকে দৃষ্টি দিতে বিচারকরা ১৯৯৪ সালের সার্ব টেলিভিশনের একটি ভিডিওর দিকে দৃষ্টি দেন। তাতে দেখা যায়, উল্লসিত ম্লাদিচ একটি সার্ব গ্রাম পরিদর্শন করছে। ওই গ্রামটি মুসলিম শূন্য হয়ে গেছে। এসব মুসলিমদেরকে সে ‘তুর্ক’ বলে অভিহিত করতো। টেলিভিশন ফুটেজে তাকে বলতে দেখা যায়, এই উপত্যকায় এটা হলো একটি গ্রাম। এটা ব্যবহার করতো তুর্কিরা। এখন আমরা এর ভিতর দিকে প্রবেশ করবো। একজন অচেনা ক্যামরাম্যানের দিকে তাকিয়ে এসব কথা বলতে থাকে সে। আরো বলতে থাকে, আসুন দেখি আমাদের সার্বরা তাদের জন্য কি করেছে। তারা কিভাবে তুর্কিদের সেবাযতœ করেছে। আমরা তুর্কিদের নিষ্পেষিত করেছি। যদি সেব্রেনিৎসায় মার্কিনি, ইংলিশ, ইউক্রেনিয়ান অথবা কানাডিয়ানরা থাকেন, ডাচরাও থাকেন তারা তাদেরকে (সার্ব মুসলিম) রক্ষা করতে পারবে না। অনেক আগেই তারা এই এলাকা থেকে লাপাত্তা হয়ে গেছে। দেখুন তাদের দখলে থাকা একটি গ্রাম। দেখুন দেখুন। এ সময়ে ক্যামেরা ধ্বংস করে দেয়া বাড়িঘরের দিকে ঘোরানো হয়। অমনি ম্লাদিচ বলতে থাকে, আমি কি একটু আস্তে আস্তে অগ্রসর হবো যাতে আপনি এসব বিষয় ভালভাবে ক্যামেরাবন্দি করতে পারেন? এসব দৃশ্য ক্যামেরায় বন্দি করুন। দেখুন এইসব ‘মাদারফাকার’ তুর্কিদের একটি বাড়ি। কেমন ছিল তা। এটা তুর্কিদের একটি বাড়ি। এটা ছিল তুর্কিদের একটি বাড়ি। এ থেকে দৃশ্যত স্পষ্ট হয় যে, শুধু গোঁড়ামি বা অহমিকা বশত নৃশংসতা চালিয়েছিল ম্লাদিচ। রায় দেয়ার সময় বিচারকরা এক ডাচ শান্তিরক্ষীর সাক্ষ্যও নিয়েছেন। ওই সাক্ষী বলেছেন, মুসলিম ও অন্য সম্প্রদায়ের সঙ্গে বসবাস করা কতটা বিপদের সে বিষয়ে তাকে সতর্ক করেছিল জেনারেল রাতকো ম্লাদিচ। কালো চামড়ার একজন ডাচ অফিসারকে ম্লাদিচ বলেছিল, নেদারল্যান্ডসের একটি সমস্যা হলো বহুধর্মীয় সমাজ ব্যবস্থা। তাই ১০ বছরের মধ্যে সে তার সেনাবাহিনীকে নিয়ে পৌঁছে যাবে নেদারল্যান্ডসে। সেখানে গিয়ে মুসলিম ও অন্য সম্প্রদায়দের থেকে ডাচ নাগরিকদের রক্ষা করবে সে। কিন্তু সব দিক দিয়ে ভুল ছিল রাতকো ম্লাদিচ। যে নেদারল্যান্ডসকে সে মুসলিম ও অন্য ধর্মের মানুষ থেকে মুক্ত করার হুমকি দিয়েছিল এখন সেখানকার একটি জেলেই তাকে মৃত্যুর প্রহর গুনতে হচ্ছে। মৃত্যুর পূর্ব পর্যন্ত সেখানেই তাকে নিঃসঙ্গ একাকী অতীতের নৃশংসতাকে স্মরণ করে কাঁদতে হবে। ইতিহাস ফিরে এসেছে তার সামনে। তার অপরাধের শাস্তি তাকে ভোগ করতেই হচ্ছে। মুসলিম ও ক্রোয়েটদের নিশ্চিহ্ন করে রাতকো ম্লাদিচ সৃষ্টি করেছিল শায়ত্তশাসিত সার্ব অঞ্চল। সেখানকার প্রেসিডেন্ট মিলোরাড ডোডিক। তিনি বলেছেন, হেগের আদালতের ওই রায় সত্ত্বেও সাবেক জেনারেল ম্লাদিচ এখনও সার্ব জনগোষ্ঠীর কাছে একজন কিংবদন্তি। সার্বিয়ায় এক সময় জাতীয়তাবাদী রাজনীতিকে অবজ্ঞার চোখে দেখা হতো। কিন্তু এখন সেই ধারাই সেখানে জনপ্রিয় হচ্ছে। ইউরোপজুড়ে জাতীয়তাবাদী অনুভূতির উত্থান ঘটছে। বিদেশীদের বিরুদ্ধে অহেতুক ভীতি নির্বাচনে জয় পাচ্ছে। গত মাসে হাঙ্গেরি ও পোল্যান্ডকে অনুসরণ করে অস্ট্রিয়া। তারা অগ্রসর হয় ডানপন্থার দিকে। কেউ কেউ যুক্তি দেখান যে, একই রাজনৈতিক গতিধারা কাজ করছে যুক্তরাষ্ট্রেও। সুবিধাবাদী নেতারা সব সময় সংখ্যালঘুদের ওপর দোষারোপ করে। তারপর তা সরাসরি অস্বীকার করে। এভাবেই চলছে জীবন।