Monday, December 31, 2012

কাকভোরে চুপিসারে শেষকৃত্য রাতের বাসে ফের যৌন নিগ্রহ লজ্জার দিল্লিতে



বিবার ভোর সাড়ে ৬টা। দ্বারকা শ্মশানে গণধর্ষিতা তরুণীর মুখাগ্নি করলেন বাবা। শোকে জ্ঞান হারালেন মা। কান্নায় ভেঙে পড়লেন ভাই।
এর ঘণ্টা সাতেক আগেই আবার একটি ১৬ বছরের মেয়েকে যৌন নিগ্রহ করা হল। আবার রাতের বাসযাত্রায়। যা দেখিয়ে দিল, দিল্লির কোনও বদল নেই।
পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ১৬ বছরের ওই নাবালিকাকে যৌন নিগ্রহ করা হয় দিল্লি ট্রান্সপোর্ট কর্পোরেশন বা ডিটিসি-র একটি বাসে। কী ঘটেছিল কাল রাতে? পুলিশ জানিয়েছে, রাত সাড়ে ন’টার সময় খেয়ালায় নিজের বাড়ি থেকে বেরোন তরুণীটি। তার আগে তাঁর সঙ্গে বাবা-মায়ের সম্ভবত কথা কাটাকাটিও হয়েছে। কারও কারও ধারণা, সম্ভবত তিনি রাগ করেই বেরিয়ে যান। কিছু ক্ষণ কেটে যাওয়ার পরেও মেয়ে ফিরছে না দেখে উদ্বিগ্ন বাবা পুলিশে খবর দেন। স্থানীয় থানায় একটি অপহরণের অভিযোগ দায়ের করা হয়। তার পরেই শুরু হয় খোঁজ।
পুলিশ জানিয়েছে, এর মধ্যেই রাত এগারোটা নাগাদ মেয়েটিকে মধ্য দিল্লির মান্ডি হাউসের কাছে দাঁড়িয়ে থাকা বাসে খুঁজে পাওয়া যায়।
নয়াদিল্লির বাড়ির বাইরে অ্যাম্বুল্যান্সে ওই তরুণীর দেহ। রবিবার। ছবি —এএফপি
ওই বাসের চালক ও কন্ডাক্টরের কাছ থেকে জানা যায়, কী ঘটেছিল। তাঁরাই জানিয়েছেন, ওই বাসে অন্য একটি বাসের কন্ডাক্টর যাচ্ছিল। তার নাম রণজিৎ সিংহ। বাস যখন খালি হয়ে গিয়েছে, তখন সে-ই উঠে গিয়ে মেয়েটির উপরে হামলা চালায়। তাঁর যৌন নিগ্রহ করে। ওই চালক ও কন্ডাক্টরই পরে পুলিশের কাছে সাক্ষ্য দেন। তাঁদের কথার ভিত্তিতে রণজিৎ সিংহের বিরুদ্ধে ভারতীয় দণ্ডবিধির ৩৫৪ এবং ৫০৯ ধারায় মামলা দায়ের করা হয়। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে তাকে গ্রেফতারও করে পুলিশ। রণজিতের ১২ দিনের জেলহাজত হয়েছে।
কিন্তু তাতেও থামানো যাচ্ছে না প্রশ্ন। যেখানে দিল্লির সেই তরুণীর ধর্ষণ ঘিরে এত প্রতিবাদ, যা শুধু রাজধানীতেই নয় ছড়িয়ে পড়েছে গোটা দেশে, তাতে কি মানসিকতা আদৌ বদলাচ্ছে? শনিবারই পশ্চিমবঙ্গের বারাসতে এক মহিলাকে গণধর্ষণ করে খুন করা হয়। একই দিনে মুম্বইয়ের জুহু বিচে স্বামীর সঙ্গে বেড়াতে বেরিয়ে হেনস্থা হতে হল এক মহিলাকে। সেই ঘটনায় কাউকে এখনও ধরাই সম্ভব হয়নি।
পাছে এই সব সূত্র ধরে আবার আছড়ে পড়ে বিক্ষোভের ঢেউ, তাই কাকভোরে চুপিসারে ওই তরুণীর শেষকৃত্য সেরে ফেলল সরকার। এবং সেটা দেশের ঘুম ভাঙার আগেই।
গোপনীয়তার ইঙ্গিত গত কাল সিঙ্গাপুরে ভারতীয় রাষ্ট্রদূত রাঘবনের কথাতেই ছিল। তিনি বারবার বলেছিলেন, “মৃতার পরিবার চাইছেন গোপনীয়তা রক্ষা করতে। সেই আবেগকে মর্যাদা দেওয়া হোক।”
তার পর থেকে আজ শেষকৃত্য সম্পন্ন হওয়া পর্যন্ত সবটাই হয়েছে সুপরিকল্পিত ভাবে। সিঙ্গাপুর থেকে মৃতদেহ ও তরুণীর পরিবারের সদস্যদের বিশেষ বিমানে দিল্লি আনা হয় প্রায় শেষ রাতে। বেসরকারি সংবাদমাধ্যমগুলির সঙ্গে আলোচনায় বসে কেন্দ্রীয় তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রী মণীশ তিওয়ারি প্রতিশ্রুতি আদায় করে নেন, বিমানবন্দর থেকে সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা পিছু নেবেন না।
দেহ দিল্লি পৌঁছনোর পর আজ ওই শেষ রাতেই বিমানবন্দরে গিয়ে তরুণীর পরিবারের সঙ্গে দেখা করেন প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংহ ও কংগ্রেস সভানেত্রী সনিয়া গাঁধী। সান্ত্বনা দেওয়ার পাশাপাশি তাঁরা জানান, দোষীদের যাতে দ্রুত শাস্তি হয়, সে জন্য সব রকম ব্যবস্থা নেবে সরকার। এর পর বিমানবন্দর থেকে তরুণীর মৃতদেহ নিয়ে যাওয়া হয় দিল্লিতে তাঁর বাড়িতে। সেখান থেকে শ্মশানে। গোটা পথে ছিল ৩০-৪০টি গাড়ির কনভয়। এবং টানটান নিরাপত্তা বেষ্টনী।
শেষকৃত্য যে দ্বারকায় হবে, তা-ও গত কাল প্রায় মধ্যরাতে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে জানায় পুলিশ। সেই সঙ্গে এ-ও জানায়, আলো ফোটার আগেই শেষকৃত্য সম্পন্ন করতে হবে। কিন্তু পরিবারের সদস্যরা এবং পুলিশ মৃতদেহ নিয়ে পৌঁছলে এই নিয়ে আপত্তি তোলেন শ্মশানের পুরোহিত। বলেন, সূর্যোদয় পর্যন্ত অপেক্ষা করা হোক। শেষ পর্যন্ত সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়।
শুধু শেষকৃত্যে গোপনীয়তাই নয়, প্রতিবাদ-বিক্ষোভের আশঙ্কা থেকে দিল্লিকে আজও অবরুদ্ধই রাখে প্রশাসন। সেই আশঙ্কা যে পুরোপুরি ভুল ছিল না, সেটা বোঝা যায় যখন ঘুম থেকে উঠে ফের প্রতিবাদে নেমে পড়ে দিল্লি। দুপুরে বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে পুলিশের কিছুটা ধাক্কাধাক্কিও হয়। কিন্তু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ ছাড়ায়নি।

ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট বাড়ানোই দাওয়াই মমতার

রাজ্যের আদালতগুলিতে ধর্ষণ, শ্লীলতাহানি-সহ নারী নির্যাতন সংক্রান্ত মামলার সংখ্যা দেড় লক্ষ ছুঁতে চলেছে। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশ, মামলা দ্রুত মেটাতে আরও বেশি ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালু করতে হবে। কিন্তু এই সিদ্ধান্তকে বিরোধীরা দিল্লির ঘটনার পর তৃণমূলের কৌশল হিসেবেই দেখছেন। তাঁদের মতে, দেড় বছরে ধর্ষণের ঘটনায় কড়া মনোভাব নেওয়ার বদলে তাকে অস্বীকার করার ঝোঁকই বেশি দেখা গিয়েছে রাজ্য সরকারের মধ্যে। তা সে পার্ক স্ট্রিট কাণ্ডই হোক, অথবা কাটোয়া বা বারাসত।
ন্যাশনাল ক্রাইম রেকর্ড ব্যুরোর হিসেবমতো, ২০০২-এ রাজ্যে নারী নির্যাতন মামলা ছিল ৩৯,৪৬২টি। ২০১১-তে তা হয় ১,৩১,৮২৪। ’০৫ সালে সব রাজ্যে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট চালুর জন্য প্রায় ৫০৯ কোটি টাকা বরাদ্দ করে কেন্দ্র। তার পর রাজ্যে প্রায় দেড়শো ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট খোলা হয়। তবে ২০১১-এর মার্চের পরে ওই খাতে আর বরাদ্দ হয়নি।
এখন নতুন করে ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট খুলে দ্রুত নারী নিগ্রহ মামলার নিষ্পত্তি করা যাবে কিনা, সেই প্রশ্ন উঠছে। কারণ, রাজ্যে যত ধর্ষণের মামলা চলছে, তার প্রায় এক তৃতীয়াংশে চার্জশিট দিতে পারেনি পুলিশ। মামলাকারীদের অনেকেরই অভিজ্ঞতা, তদন্তে দেরি হচ্ছে, অনেক ক্ষেত্রে পুলিশ তদন্ত শেষও করতে পারছে না। আবার পুলিশের একাংশের যুক্তি, নারী নির্যাতন মামলায় অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ফরেন্সিক রিপোর্ট যথাসময়ে মিলছে না। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের এক কর্তার মতে, অধিকাংশ জেলা হাসপাতালে অভিযোগকারিণীকে পরীক্ষা করানোর উপযুক্ত সরঞ্জাম, বিশেষজ্ঞ না থাকাতেও সমস্যা হচ্ছে। আইনজীবীদের একাংশ সময় চাওয়ায়ও মামলার গতি শ্লথ হচ্ছে।
নারী নিগ্রহ ২০১১
• ধর্ষণ ১৩,০৩২
• অপহরণ ১০,৯৫৪
• পণের বলি ২,৩২৪
• শ্লীলতাহানি ১৩,০৯২
• যৌন নির্যাতন ১১৯
• বধূ নির্যাতন ৯২,৩০৩
গত এপ্রিলে জাতীয় মহিলা কমিশনের প্রতিনিধিরা মুখ্যমন্ত্রীর সঙ্গে দেখা করে স্বরাষ্ট্র, আইন, স্বাস্থ্য দফতরের মধ্যে সমন্বয় বাড়ানোর সুপারিশ করে বলেন, অভিযুক্তদের গ্রেফতার করে সময়ের আগেই চার্জশিট দেওয়া নিশ্চিত করতে হবে। মানবাধিকার সংগঠন এপিডিআর-এর এক পদাধিকারীর বক্তব্য, “তার আট মাস পরেও রাজ্য পদক্ষেপ করেনি। অথচ, মুখ্যমন্ত্রী ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট গড়ার কথা বলছেন। এটা আশ্চর্যের।”
সরকারি সূত্রের অবশ্য খবর, খুব সম্প্রতি নারী নির্যাতন সংক্রান্ত যাবতীয় মামলার দ্রুত নিষ্পত্তি করতে জরুরি ভিত্তিতে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন মুখ্যমন্ত্রী। এই মামলায় ডাক্তারি পরীক্ষা, ফরেন্সিক বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা মাথায় রেখে স্বাস্থ্য দফতরকেও ওই প্রক্রিয়ায় সামিল করা হয়েছে। সব ঠিক থাকলে হাইকোর্টের সম্মতি সাপেক্ষে ২০১৩-র গোড়ায় রাজ্যের সব জেলায় আরও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট খোলা হবে। খোদ মুখ্যমন্ত্রী বলেছেন, “আমরা এটা করব।”
মুখ্যমন্ত্রীর এই প্রত্যয় নিয়ে অবশ্য প্রশ্ন তুলছেন বিরোধীরা। প্রশ্ন তুলছেন রাজ্য সরকারের মানসিকতা নিয়েও। বামফ্রন্ট চেয়ারম্যান বিমান বসুর অভিযোগ, “গত দেড় বছরে বহু ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। কিছু প্রকাশ্যে এসেছে। বহু ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে।” কংগ্রেসের আইনজীবী নেতা অরুণাভ ঘোষ বলেন, “আরও ফাস্ট ট্র্যাক কোর্ট তৈরির টাকা রাজ্য কোথা থেকে দেবে? এ সব হচ্ছে পয়সা খরচ না করে সংবেদনশীল সাজার চেষ্টা!  Taken From Anandabazar.com

Thursday, December 27, 2012

আল জাজিরার রিপোর্ট: তত্ত্বাবধায়ক ইস্যুতে বাংলাদেশে অচলাবস্থা



আগামী নির্বাচনে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা নিয়ে ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী দলের মুখোমুখি অবস্থানের কারণে বাংলাদেশে অচলাবস্থা দেখা দিয়েছে। রাজনৈতিক তিক্ততায় সৃষ্টি হয়েছে গোলমেলে পরিস্থিতি। গতকাল অনলাইন আল জাজিরায় প্রকাশিত ‘বাংলাদেশ রিলস ফ্রম পলিটিক্যাল বিকারিং’ শীর্ষক রিপোর্টে এসব কথা বলা হয়েছে। এতে বলা হয়, ধর্মঘট ও রাজপথে কখনও তা সহিংস রূপ পাওয়ার পর বাংলাদেশ সরকার রাজনৈতিক অচলাবস্থা মীমাংসার দিকে তাকিয়ে আছে। বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি)-এর নেতৃত্বাধীন বিরোধীরা বলছে, আগামী বছরের শেষের দিকে দেশে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। এর আগেই সরকারকে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠা করতে হবে। যতদিন তা না হবে ততদিন তারা রাজপথ ছাড়বেন না। কিন্তু বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার তা মেনে না নিতে বদ্ধপরিকর। তারা পিছু হটবেন না। বাংলাদেশের সমাজবিজ্ঞানী গোলাম সারওয়ার খান বলেছেন, ক্ষমতাসীন দল ও বিরোধী জোট একে অন্যকে ঘায়েল করছে। এতে যে অচলাবস্থা সৃষ্টি হয়েছে তা ব্যবসা থেকে শুরু করে সামাজিক শৃঙ্খলা সব কিছুকেই প্রভাবিত করছে। সিনিয়র এক গোয়েন্দা কর্মকর্তা বলেছেন, বর্তমানে রাজনৈতিক যে পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে তা শোচনীয় পরিণতি বয়ে আনতে পারে। তিনি বলেন, রাজনৈতিক এই অচলাবস্থার যদি অবসান না হয় তাহলে সামনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়তে পারে। ঘটতে পারে ব্যাপক সহিংসতা। বাংলাদেশে এসব ঘটনা এমন এক সময়ে ঘটছে যখন দেশের অর্থনীতি ঊর্ধ্বমুখী। নারীর ক্ষমতায়ন, জনস্বাস্থ্য ও দারিদ্র্য প্রভৃতি ক্ষেত্রে বাংলাদেশের প্রশংসা করা হয়েছে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, সামরিক স্বৈরশাসক হুসেইন মুহাম্মদ এরশাদকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয়ার পর ১৯৯১ সালে বাংলাদেশে নির্বাচনী গণতন্ত্র ফিরে আসে। তখন থেকেই অন্তর্বর্তী নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচনে একবার বিএনপি, একবার আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় এসেছে। কিন্তু ২০০৬ সালে বিএনপি সরকার যখন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের হাতে ক্ষমতা তুলে দেয় তারা দু’বছরেরও বেশি সময় নির্বাচন দিতে পারে নি। বিশ্লেষক সব্যসাচী বসুরায় চৌধুরী ব্যাখ্যা করেন, বিএনপি ক্ষমতা থেকে যাওয়ার পর যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ক্ষমতায় আসে তাতে ছিল সেনাবাহিনীর প্রভাব। তারা দেশ থেকে দুর্নীতিমুক্ত করতে থাকেন। তখন বিএনপি ও আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদের দুর্নীতির অভিযোগে আটক করে জেলে দেয়া হয়। তত্ত্বাবধায়ক সরকার নির্বাচনের জন্য, কিন্তু তারা পরিষ্কারভাবে তাদের সীমা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। ২০০৮ সালের ডিসেম্বরে এই সরকারের অধীনে নির্বাচনে ভূমিধস বিজয় পায় আওয়ামী লীগ। তার কিছু পরে বাংলাদেশ সুপ্রিম কোর্ট তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থাকে অবৈধ ঘোষণা করে। তবে তারা রায়ে এ-ও বলেন যে, আগামী দু’টি পার্লামেন্ট নির্বাচন এ ব্যবস্থার অধীনে করা যেতে পারে। আওয়ামী লীগ আদালতের রায় মেনে নেয়। তারা পার্লামেন্টে সংবিধানের ১৫তম সংশোধনীর মাধ্যমে তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা বাতিল করে দেয়। এ ঘটনা ঘটে গত বছরের জুন মাসে। ওই সংশোধনী ২৯৭-১ ভোটে পাস হয়। তবে ভোট দেয়া থেকে বিরত থাকেন বিএনপির সদস্যরা। প্রতিক্রিয়ায় বিএনপির চেয়ারপারসন ও সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া বলেন, গত বছর থেকেই তিনি বলে আসছেন আওয়ামী লীগ জালিয়াতির মাধ্যমে ক্ষমতা ধরে রাখার চেষ্টা করছে। এর মাধ্যমে তারা দেশকে একদলীয় শাসন কায়েমের দিকে নিয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন, তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ভেঙে দিয়ে সমঝোতার সব পথ বন্ধ করে দিয়েছে সরকার। আমাদের রাজপথে বিক্ষোভ করা ছাড়া কোন বিকল্প নেই। তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা ছাড়া নির্বাচন অবাধ ও সুষ্ঠু হবে না। খালেদা জিয়া গত সপ্তাহে এমন এক সময়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন যখন তার দলীয় সমর্থকরা রাজপথে ধর্মঘট ও সড়ক অবরোধ করেছিল। জেলে ঢোকানো হয়েছে তাদের কয়েক শ’ সমর্থককে। তাদের বিরুদ্ধে ভাঙচুর, সহিংসতা ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ আনা হয়েছে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন বিরোধীদলীয় জোট শুধু বিক্ষোভ দেখানোর মধ্যেই নিজেদের সীমাবদ্ধ রাখেনি। পাশাপাশি তারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা না দিলে নির্বাচন প্রত্যাখ্যান করার ঘোষণা দিয়েছে। বিএনপির মুখপাত্র তরিকুল ইসলাম বলেন, সরকার গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ, জনমানুষের মুক্তভাবে ভোট দেয়ার অধিকারকে নষ্ট করেছে। তাই গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম ছাড়া আমাদের কোন বিকল্প নেই। কিন্তু কোনভাবেই তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থায় ফিরে না যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ আওয়ামী লীগ। মুক্তিযোদ্ধা বিষয়ক প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের নেতা তাজুল ইসলাম বলেন, বিশ্বের সবচেয়ে গণতান্ত্রিক দেশ ভারতের নির্বাচন যদি ক্ষমতাসীন সরকারের অধীনে হতে পারে এবং এখনও শান্তিপূর্ণভাবে ক্ষমতা হস্তান্তর হতে পারে তাহলে বাংলাদেশে কেন তা ঘটতে পারবে না? আওয়ামী লীগ অভিযোগ করছে, বিএনপি ও জামায়াতে ইসলামী সহ ইসলামপন্থি জোট যুদ্ধাপরাধের বিচার বিঘ্নিত করার চেষ্টা করছে। এই বিচারের মুখোমুখি হচ্ছে তাদের বেশ কয়েকজন নেতা। তাদের বিরুদ্ধে ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় গণহত্যা, ধর্ষণ ও অন্যান্য অপরাধ সংঘটিত করার অভিযোগ আছে। বর্তমান ও সাবেক প্রধান সহ জামায়াতে ইসলামীর শীর্ষ ৯ নেতা বিচারের মুখোমুখি। এ জন্য দু’টি ট্রাইব্যুনাল গঠন করা হয়েছে। বাংলাদেশ বলে, ১৯৭১ সালে স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় ৩০ লাখ মানুষকে হত্যা করা হয়েছে। ৫ লাখ নারীর সম্ভ্রমহানি করা হয়েছে। তাজুল ইসলাম বলেন, জামায়াতে ইসলামী বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের বিরোধিতা করেছিল। তারা সর্বান্তঃকরণে সমর্থন দিয়েছে পাকিস্তানি সেনাদের। ওই সময় পাকিস্তানিদের সহায়তা করেছে বিএনপির কয়েকজন নেতা। যুদ্ধাপরাধ আদালত তাদেরকে চিহ্নিত করেছে। এতে তারা বেপরোয়া হয়ে পড়েছে। জবাবে বিএনপি নিজেকে জামায়াতে ইসলামী থেকে দূরে দূরে রাখছে। এরাই ছিল ২০০১ থেকে ২০০৬ সালে জোট সরকারে। তবে বিএনপি যুদ্ধাপরাধ আদালতে বিচারের বিরোধিতা করছে না। তাদের দাবি সুষ্ঠু বিচার। বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, তার সরকার কোন সহিংসতা ও বিশৃঙ্খলা সহ্য করবে না। তার মন্ত্রিপরিষদের সদস্য ও দলের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, বিএনপি দেশকে নিয়ে যাচ্ছে গৃহযুদ্ধের দিকে। জনগণ তাদের ক্ষমা করবে না। তাদের উচিত সংসদে যোগ দেয়া এবং নির্বাচনে শান্তিপূর্ণভাবে অংশ নেয়া। কিন্তু তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থা পুনঃপ্রতিষ্ঠিত না হলে বিএনপি ও বিরোধী অন্য দলগুলো নির্বাচনে না যাওয়ার কথা বলছে। ফলে দেশ একটি রাজনৈতিক অচলাবস্থার দিকে যাচ্ছে বলে দৃশ্যত মনে হচ্ছে। এ অবস্থায় গণতন্ত্র প্রশ্নবিদ্ধ হতে পারে। বাংলাদেশে রাজনৈতিক অচলাবস্থা কাটাতে সরকার ও বিরোধী দলগুলোর মধ্যে মধ্যস্থতা করেন ব্যবসায়ী নেতারা। কিন্তু এবার রাজনৈতিক নেতারা ব্যবসায়ীদের সে পথে বাধা দিয়েছেন। হরতাল ও রাজপথের সহিংসতায় কারখানায় উৎপাদন, রপ্তানি, বিদেশী বিনিয়োগ হুমকির মুখে পড়েছে। ফলে বাণিজ্যিক খাত হতাশ হয়ে পড়েছে। এফবিসিসিআই’র  চেয়ারম্যান কাজী আকরামুদ্দিন আহমেদ বলেছেন, ব্যবসার জন্য এই অবস্থা নেতিবাচক। অর্থনীতির জন্য নেতিবাচক। এই সঙ্কট থেকে বেরিয়ে আসার জন্য আমাদের রাজনৈতিক নেতাদের অবশ্যই একটি সমাধানের পথ বের করতে হবে। ওই রিপোর্টে আরও বলা হয়, বিদেশীরা বাংলাদেশের ক্রমবর্ধমান টেক্সটাইল কারখানা, বিদ্যুৎকেন্দ্র ও অন্যান্য অবকাঠামোতে যখন বিনিয়োগ করার সুযোগ খুঁজছে তখন এই রাজনৈতিক টানাপড়েনে তারা ফিরে যাচ্ছে। এ বছরে বাংলাদেশের টাকার মান যুক্তরাষ্ট্রের ডলারের বিপরীতে শতকরা ৫ ভাগ বেড়েছে। গত অর্থবছরে বাংলাদেশের রপ্তানি আয় বেড়েছে শতকরা ৪০ ভাগ। বাংলাদেশের অর্থনীতির বিষয়ে বেশ কয়েকটি সুলক্ষণ আছে। তাহলো প্রবাসী বাংলাদেশীদের পাঠানো রেমিটেন্স ১৪০০ কোটি ডলার ছাড়িয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। ঢাকায় একটি পাতাল রেলে বিনিয়োগ করতে জাপানিরা মুখিয়ে আছে। কিছু দুর্নীতি চিহ্নিত করে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতুতে তহবিল দেয়া স্থগিত রেখেছে। এ নিয়ে দর কষাকষি চলছে। অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, এসবের সময় নয় এখন। যারা এগুলো করছে তারা দেশ ও উন্নয়নের শত্রু।

বছরের রগরগে কেচ্ছা-কেলেঙ্কারি



এ বছর বিশ্বে ঘটে গেছে বেশ কয়েকটি নারীঘটিত কেলেঙ্কারি। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো যুক্তরাষ্ট্রের গোয়েন্দা সংস্থার সাবেক প্রধান জেনারেল ডেভিড পেট্রাউসের গোপন সম্পর্ক উদঘাটনের বিষয়টি। পলা ব্রডওয়েল নামের এক নারীর সঙ্গে বিবাহবহির্ভূত সম্পর্ক গড়ার অভিযোগ মাথায় নিয়ে তিনি সিআইএ থেকে পদত্যাগ করেছেন। বছরের শেষের দিকে এসে ইতালির সাবেক প্রধানমন্ত্রী সিলভিও বেরলুসকোনি (৭৬) নতুন করে প্রেমে পড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। ৫০ বছরের কম বয়সী ফ্রান্সেসকা পাসকেল নামের এক যুবতীর সঙ্গে তার চুটিয়ে প্রেম চলছে বলে প্রকাশ করেছেন। এ বছর ডাচেস অব কেমব্রিজ কেট মিডলটনের নগ্ন ছবি প্রকাশ করে ফ্রান্সের ম্যাগাজিন ‘ক্লোজার’। তা নিয়ে তোলপাড় হয় বৃটেন সহ সারা বিশ্বে। ওই ছবি আর প্রকাশ না করতে আইনি ব্যবস্থা নেয়া হয়। তারপরও কয়েকটি ম্যাগাজিন সেই ছবি প্রকাশ করে। ওদিকে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খার ও ক্ষমতাসীন পিপিপি’র সভাপতি বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির মধ্যে প্রেমের সম্পর্ক নিয়ে রিপোর্ট প্রকাশিত হয় বিভিন্ন গণমাধ্যমে। তবে ওই রিপোর্টকে অসত্য বলে দাবি করা হয়েছে। এ বছরেই আসামের গুয়াহাটিতে এক যুবতীর ওপর প্রকাশ্যে যৌন নির্যাতন চালায় একদল দুর্বৃত্ত। ওই যুবতী একটি বার থেকে বের হয়ে রাস্তায় নামামাত্র তাকে নিয়ে টানাহেঁচড়া করে তারা। তার পোশাক খুলে নেয়ার চেষ্টা করে। তবে এ বছরে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যসভার অধিবেশন চলাকালে মোবাইল ফোনে পর্নো ছবি দেখা অবস্থায় গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়েন তিন মন্ত্রী। তারা হলেন- সহযোগিতা বিষয়ক মন্ত্রী লক্ষণ সাবাদি, নারী ও শিশু উন্নয়ন বিষয়ক মন্ত্রী সি. সি পাতিল এবং বন্দর, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক মন্ত্রী কৃষ্ণ পালেমার। তবে প্রায় সারা বছরই টুইটারে নগ্ন ছবি পোস্ট করার কারণে আলোচনায় ছিলেন সেক্সবোম পুনম পাণ্ডে। এ বছরই তিনি বিবস্ত্র হয়ে প্লেবয় ম্যাগাজিনের জন্য পোজ দিয়েছেন। একেবারে রগরগে সে সব ছবি ছাপা হওয়ার আগেই ইন্টারনেটে প্রকাশিত হয়েছে। এমন আরও অনেক ঘটনা সারা বছর আলোচনায় ছিল।
সিআইএ (সাবেক) প্রধান জেনারেল ডেভিড পেট্রাউসের সঙ্গে তার জীবনীকার পলা ব্রডওয়েলের ছিল ২০১২ সালের সবচেয়ে বড় যৌন কেলেঙ্কারি। এ কারণে তাকে চাকরি হারাতে হয়েছে। সারা বিশ্বে যে গোয়েন্দা সংস্থা সিআইএ দাবড়ে বেড়ায় তার প্রধানের এমন কাণ্ডে হতবাক যুক্তরাষ্ট্র সহ সচেতন মানুষ। তবে তাদের এই গোপন প্রণয়ের কথা ধরা পড়ে জিল কেলি নামের আরেক নারীর কারণে। জিল কেলি-ও পেট্রাউসের ঘনিষ্ঠ। এ জন্য পলা ব্রডওয়েলের ভয় ছিল পেট্রাউস হয়তো একদিন জিল কেলির প্রেমে পড়ে যাবেন। তখন তার পথের কাঁটা হয়ে দাঁড়াবেন। তাই জিল কেলিকে দূরে সরিয়ে দিতে তাকে বিভিন্ন হুমকি দিয়ে ই-মেইল পাঠান পলা ব্রডওয়েল। হুমকি পেয়ে জিল কেলি তা জানান এফবিআই’কে। এফবিআই তদন্ত করতে গিয়ে ধরে ফেলে ডেভিড পেট্রাউসের সঙ্গে পলা ব্রডওয়েলের প্রেমের কাহিনী। গত ৬ই নভেম্বর যুক্তরাষ্ট্রে অনুষ্ঠিত হয় প্রেসিডেন্ট নির্বাচন। বলা হয়, এফবিআই এই নির্বাচনের আগেই পেট্রাউস-পলার সম্পর্কের কথা জানতে পেরেছিল। কিন্তু প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে তার প্রভাব পড়তে পারে এমন বিবেচনায় এফবিআই ওই তথ্য প্রকাশ করে প্রেসিডেন্ট নির্বাচনের পরে। ঘটনা এখানেই থেমে থাকেনি। অনুসন্ধানে দেখা যায় জিল কেলির সঙ্গে আবার ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে আফগানিস্তানে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের কমান্ডার  জেনারেল জন অ্যালেনের। বলা হয়, তাদের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের কয়েক হাজার গোপন ফাইল বিনিময় হয়েছে। এ নিয়ে তদন্ত শুরু হয়। তবে তার শেষ এখনও জানা যায় নি। এ বছরের সেপ্টেম্বর মাসে ভারতের বিভিন্ন অনলাইন মিডিয়া রিপোর্ট প্রকাশ করে বিলাওয়াল ভুট্টো জারদারির সঙ্গে পাকিস্তানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী হিনা রব্বানি খারের গোপন সম্পর্ক নিয়ে। বলা হয়, তাদের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে প্রেম চলছে। তা পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ও বিলাওয়ালের পিতা আসিফ আলী জারদারির নজরেও পড়েছে। কিন্তু বিলাওয়াল ও হিনা বিদেশে পালিয়ে গিয়ে সেখানে বসত করার পরিকল্পনা করেন। রিপোর্টে বলা হয়, হিনা রব্বানি খারের স্বামী ফিরোজ গুলজার। তিনি ওই কথা শোনার পর কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কাছে বিস্তারিত জানতে  চেয়েছেন। ওইসব রিপোর্টে বলা হয়, হিনা রব্বানি তার সঙ্গে বৈবাহিক সম্পর্কে ছেদ ঘটিয়ে বিলাওয়ালকে নিয়ে সুইজারল্যান্ডে চলে যেতে পরিকল্পনা করেছেন। বিভিন্ন সময়ে বিলাওয়ালকে হিনা রব্বানি প্রেমপত্রও দিয়েছেন বলে জানানো হয়। কিন্তু পরে জানানো হয়, ওইসব রিপোর্ট আসলে গুজব। ২০১২ সালের ফেব্রুয়ারিতে ভারতের কর্ণাটক রাজ্যের তিন মন্ত্রীর কর্মকাণ্ডে সবাই হতবাক হয়ে যায়। কারণ, তারা পার্লামেন্ট অধিবেশন চলার সময় মোবাইল ফোনে নীল ছবি দেখছিলেন। ৮ই ফেব্রুয়ারি নয়া দিল্লি থেকে বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, ওই ঘটনার পর পদত্যাগ করেছেন তিন মন্ত্রী লক্ষণ সাবাদি, সিসি পাতিল ও কৃষ্ণ পালেমার। গোপন ক্যামেরায় ধরা পড়ে তাদের পর্নো ছবি দেখার দৃশ্য। এরপর সেখানকার পার্লামেন্টে তোলপাড় হয়। তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত করতে বলা হয়। কারণ, তারা সবাই উগ্র হিন্দুত্ববাদী দল ভারতীয় জনতা পার্টি (বিজেপি)-র নেতা। তাই তাদেরকে নিয়ে বেশ বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে দল। দলেই শুধু তাদের বিরুদ্ধে কথা বলাবলি হয়েছে এমন নয়। তাদের বিরুদ্ধে মাঠে নামে মানবাধিকার বিষয়ক কর্মীরা, ডানপন্থি হিন্দুত্ববাদী গ্রুপগুলো। নারী উন্নয়ন বিষয়ক কেন্দ্রীয় সাবেক মন্ত্রী ও কংগ্রেস সদস্য রেণুকা চৌধুরী এর সমালোচনায় বলেন, আমরা এমন একটি দেশে বাস করছি যেখানে মানসিকতা এরকম। নারীদের এখানে পণ্য মনে করা হয়। এটা দুঃখজনক ঘটনা যে, যারা ক্ষমতায় আছেন, যাদের দায়িত্ব সবকিছু দেখভাল করার তাদের মানসিকতা বাইরের অন্যদের থেকে আলাদা নয়। তারা পর্নো ছবি দেখায় ব্যস্ত থাকেন। অবশেষে ওই তিন মন্ত্রী পদত্যাগ করতে বাধ্য হন। এই ভারতেরই আরেক বিস্ময় পুনম পাণ্ডে। গত বছর তিনি তো ‘স্ট্রিপ কুইন’ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ বছরে তিনি শুধু প্লেবয় ম্যাগাজিনেই নগ্ন পোজ দেননি, পাশাপাশি টুইটারে নিজেই পোস্ট করেছেন নিজের নগ্ন ছবি। তাতে আবার লিখেছেন রগরগে সব বাক্য। আগস্ট মাসে তিনি টুইটারে পোস্ট করেন গোসল করার দৃশ্য। একটি-দু’টি নয়, একাধিক ছবি। ওই দিনটি যেন তারই ছিল। ছবিগুলো পোস্ট করার পর ইন্টারনেট ব্যবহারকারীরা যেন ঝাঁপিয়ে পড়ে তা দেখার জন্য। ওই ছবিতে তাকে দেখা যায় বাথটাবে তিনি গোসল করছেন। তার সারা শরীর ভেজা। তিনি নগ্ন হয়ে গোসল করছেন। এদিন তিনি টুইটারে একটি ছবি পোস্ট করে লিখেছেন- ফ্রেস মর্নিং, জাস্ট হ্যাড এ হট শাওয়ার বাথ। হ্যাভ এ ব্লেসেড সানডে # ফ্রেশ মর্নিং। এভাবে তিনি বেশ কতগুলো ছবি পোস্ট করেছেন। তাতে কোনটাতে তিনি অনুসারীদের উন্মাতাল না হওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। একটিতে লিখেছেন- পুনম পাণ্ডে হট থেকে হটার হয়ে উঠছে। এভাবে তিনি  গোসল করার বিভিন্ন রকম পোজের সঙ্গে লিখেছেন নানা উত্তেজনা সৃষ্টিকারী মন্তব্য। তবে সবচেয়ে বেশি আলোচনায় এসেছেন প্লেবয় ম্যাগাজিনে পোজ দিয়ে। তা নিয়ে হৈ চৈ পড়ে যায় চারদিকে। ওদিকে বিবিসি’র প্রয়াত জিমি স্যাভিলের যৌন কেলেঙ্কারি নিয়ে বিবিসি মহা বিপদে পড়ে। এ ঘটনায় কয়েকজন শীর্ষ কর্মকর্তা পদত্যাগ করে বিবিসি থেকে।

Wednesday, December 26, 2012

মিনি স্কার্ট পরলেই গ্রেপ্তার




নারীরা মিনি স্কার্ট পরলে যদি তার পেট দেখা যায়, শরীরের কোন স্পর্শকাতর অংশ দেখা যায় তাহলে তাকে গ্রেপ্তার করবে পুলিশ। এ ঘোষণা দিয়েছে সোয়াজিল্যান্ডের পুলিশের এক মুখপাত্র ওয়েন্ডি হলেটা। তিনি বলেছেন, কোন নারী অনৈতিক কোন পোশাক পরেছেন- এমন অভিযোগ পেলেই ১৮৮৯ সালের একটি আইনের অধীনে তাকে গ্রেপ্তার করা হবে। এ খবর দিয়েছে অনলাইন বিবিসি। এই সেই সোয়াজিল্যান্ড যেখানকার রাজা তৃতীয় মসাওয়াতি ১৩টি বিয়ে করেছেন। তার আরও স্ত্রী হওয়ার তালিকায় আছেন- ইনখোসিকাতি, লা মাতসেবুলা, ইনখোসিকাতি লামোটসা, ইনখোসিকাতি লামবিকিজা, ইনখোসিকাতি লা নগাঙ্গাজা, ইনখোসিকাতি লাহওয়ালা, ইনখোসিকাতি লা মাগওয়াজা, ইনখোসিকাতি লামাসাঙ্গো, ইনখোসিকাতি লাগিজা, ইনখোসিকাতি লামাগোঙ্গো, ইনখোসিকাতি লামাহলাঙ্গু, ইনখোসিকাতি লানটেনটেসা, ইনখোসিকাতি লাদুবে ও ইনখোসিকাতি লানকামবুলে। সে দেশে এমন নিয়ম ঘোষণা করায় তা আলোচনায় উঠে এসেছে। পুলিশ মুখপাত্র ওয়েন্ডি হলেটাও একজন নারী। তিনি বলেছেন, নারীরা মিনি স্কার্ট পরলে তাতে ধর্ষণকে উসকে দেয়া হয়। ধর্ষকদের অপরাধ সংঘটন সহজ হয়। গত মাসে সোয়াজিল্যান্ডের দ্বিতীয় শহর মানজিনিতে ধর্ষণের প্রতিবাদে নারীরা মিনি স্কার্ট পরে প্রতিবাদ বিক্ষোভ করে। কিন্তু পুলিশ তাদের থামিয়ে দেয়। তবে বার্ষিক রিড ড্যান্সে নারীদের ক্ষেত্রে ঔপনিবেশিক আমলের ওই আইন প্রযোজ্য হবে না। ওই নাচের অনুষ্ঠানে কুমারীরা উন্মুক্ত বক্ষে এবং শরীরের নিম্নাঙ্গে সামান্য এক চিলতে কাপড় পরে নাচেন। সেই অনুষ্ঠানে রাজা উপস্থিত থেকে উপভোগ করেন এবং বেছে নেন সুন্দরী। তাকে তিনি নতুন স্ত্রী হিসেবে ঘরে তোলেন। ২০০০ সালে সরকার সেখানে একটি আইন চালু করে। তাতে বলা হয়, ১০ বছর ও তার বেশি বয়সী স্কুল ছাত্রীদের হাঁটু অবধি স্কার্ট পরতে হবে। কারণ, স্বল্প বসনের কারণে ধর্ষণ উদ্বুদ্ধ হয় এবং তাতে এইডস ছড়ায়। ওয়েন্টি হলেটা বলেন, ১৮৮৯ সালের ওই আইনটি সমপ্রতি প্রয়োগ করা হয়নি। কিন্তু পুলিশ তা মনে করিয়ে দিয়ে নারীদের সচেতন করতে চায়। কারণ, মানজিনি শহর থেকে নারীদের উত্ত্যক্ত ও ধর্ষণের রিপোর্ট আসছে তাদের কাছে। ওই শহরের নারীরা একেবারে স্বল্প আকারের মিনি স্কার্ট পরেন। ওয়েন্টি হলেটা বলেছেন, এই আইন কেউ না মানলে তাকে ১০ পাউন্ড পর্যন্ত জরিমানা করা হবে। এই অর্থ দিতে অপারগ হলে তাদের ৬ মাসের জেল পর্যন্ত হতে পারে। তাই নারীদের উচিত শালীন পোশাক পরা। তিনি বলেন, নারীরা যখন স্বল্প বসন পরিধান করেন তখন তা ধর্ষকের পক্ষে সহায়ক হয়। তাই নারীদের পোশাকের প্রতি যত্নশীল হওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি। তিনি বলেন, নারীদের ক্ষতি হোক এমনটা আমরা চাই না। একই সঙ্গে একে অন্যের প্রতি সম্মান দেখানো উচিত।

Thursday, December 20, 2012

বাসে গণধর্ষণ: ভারতে তোলপাড়


চলন্ত বাসের ভেতরে এক যুবতীকে গণধর্ষণের ঘটনা নিয়ে তোলপাড় চলছে ভারতে। বিষয়টি নিয়ে পার্লামেন্টে উত্তপ্ত বিতর্ক হয়েছে। পরিস্থিতি দেখে কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী নাখোশ। তিনি কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল সিন্ধে ও দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী শিলা দিক্ষীতকে কড়া ভাষায় চিঠি লিখেছেন। তাতে এ ঘটনাকে ‘লজ্জাজনক’ বলে অভিহিত করেছেন। বলেছেন, এ বিষয়ে ত্বরিত পদক্ষেপ নিতে। ওদিকে অল ইন্ডিয়া ডেমক্রেটিক ওমেন্স এসোসিয়েশন নয়া দিল্লিতে বিক্ষোভ করেছে। প্রতিবাদ হয়েছে পুলিশ সদর দপ্তরে ও বহুল আলোচিত যন্তরমন্তরে। গতকাল বার্তা সংস্থা পিটিআই যখন এ খবর জানায় তখনও ধর্ষিতা রয়েছেন সঙ্কটাপন্ন অবস্থায়। এ ঘটনায় জড়িত চারজনকে আটক করেছে পুলিশ। তার মধ্যে গতকাল দিল্লি পুলিশ মুকেশ সিং, পবন গুপ্ত ও বিনয় শর্মাকে আদালতে তোলে। সেখানে এর মধ্যে দু’জন নিজেদের দোষ স্বীকার করেছে। বিনয় আদালতে দোষ স্বীকার করে নিজেই বলেছে- এ জন্য আমার ফাঁসি হওয়া উচিত। ঘটনার মূল নায়ক বাসচালক রাম সিংকে ৫ দিনের জন্য পুলিশি হেফাজতে দেয়া হয়েছে। সোনিয়া গান্ধীর চিঠি পেয়ে গতকালই স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সুশীল সিন্ধে ও দিল্লির পুলিশ কমিশনার নীরাজ কুমার বৈঠক করেছেন। তারা বৈঠকে বেশ কিছু সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার মধ্যে রয়েছে- সব বাস থেকে রঙিন গ্লাস সরিয়ে ফেলা হবে। পর্দাও সরিয়ে ফেলা হবে। সব বাসে এখন থেকে চালকদের মোবাইল ফোন নম্বর ও লাইসেন্স নম্বর মোটা হরফে লেখা থাকবে। সমপ্রতি এক বন্ধুর সঙ্গে বাসে করে বাসায় ফেরার পথে বাসের ভেতরে কমপক্ষে ৬ জন মিলে গণধর্ষণ করে ২৩ বছর বয়সী ওই যুবতীকে। তিনি একটি প্যারামেডিকের ছাত্রী। এ সময় তাকে প্রহারও করে তারা। তার বন্ধুকেও প্রহার করে। তারপর তাদের বাস থেকে বাইরে ফেলে দেয়। ওই যুবতীকে উদ্ধার করে ভর্তি করানো হয়েছে নয়া দিল্লির সফদারগঞ্জ হাসপাতালে। এ নিয়ে সারা ভারতে ব্যাপক প্রতিক্রিয়া হলে মঙ্গলবার রাতে সোনিয়া গান্ধী তাকে দেখতে ওই হাসপাতালে যান। এ সময় তিনি কঠোর পদক্ষেপ নেয়ার ঘোষণা দেন। তিনি দৃঢ়তার সঙ্গে বলেন, এই রকম হায়েনার অপরাধ আর ঘটতে দেয়া যাবে না। তিনি ১৫ থেকে ২০ মিনিট অবস্থান করেন হাসপাতালে। এ সময় কথা বলেন চিকিৎসক ও নির্যাতিতার পিতা-মাতার সঙ্গে। চিকিৎসকরা তাকে জানান, ধর্ষিতার অবস্থা আশঙ্কাজনক। সেখান থেকে ফিরে তিনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীকে চিঠিতে লেখেন- ‘এ ঘটনা আমাদের জন্য লজ্জাজনক। এই দেশের রাজধানীতে একটি চলন্ত বাসের ভেতর একজন যুবতীর ধর্ষিত হওয়ার জন্য দায়ী আমরা, আমাদের নিরাপত্তা। এ ঘটনাকে তিনি দানবীয় অপরাধ হিসেবেও অভিহিত করেন। এ ঘটনায় শুধু বিশ্বজুড়ে নিন্দা জানানো হচ্ছে না, সরকারেরও অতি জরুরি ভিত্তিতে এ বিষয়ে মনোযোগ দিতে হবে। আমাদের মেয়ে, বোন ও মায়েরা প্রতিদিন যেসব বিপদ মোকাবিলা করছেন, সে বিষয়ে পুলিশ ও অন্য সংস্থাগুলোকে সচেতন থাকতে হবে। এ জন্য নিরাপত্তা রক্ষাকারী সংস্থাগুলোকে প্রশিক্ষণ দিতে হবে। প্রয়োজনীয় অস্ত্র দিতে হবে। আমি আশা করব, এসব বিষয়ে আপনি জরুরি ভিত্তিতে পদক্ষেপ নেবেন। শিলা দিক্ষীতকে লেখা চিঠিতেও তিনি একই রকম ক্ষোভ প্রকাশ করেন। ওদিকে এখনও কিভাবে এই অপরাধের রহস্য অনুদঘাটিত থাকে তা জানতে চেয়ে পুলিশের প্রতি সুয়োমোটে জারি করেছেন দিল্লির হাইকোর্ট। প্রধান বিচারপতি ডি. মুরুগেস্বানের সভাপতিত্বে পরিচালিত হাইকোর্টের বেঞ্চ গতকাল শহরের পুলিশ কমিশনারকে দুই দিনের মধ্যে বিস্তারিত রিপোর্ট দেয়ারও নির্দেশ দেয়া হয়েছে। এর আগেই সুপ্রিম কোর্ট সম্পূর্ণ রঙিন গ্লাস ওয়ালা যানবাহন বন্ধ করতে নির্দেশ দিয়েছিলেন। কিন্তু তা বাস্তবায়িত হয়নি। কেন হয়নি সে বিষয়েও আদালত দিল্লি পুলিশের কাছে জানতে চেয়েছেন। আটক চারজনের মধ্যে তিনজন- মুকেশ সিং, পবন গুপ্তা ও বিনয়কে গতকাল সাকেটের এক আদালতে হাজির করা হয়। আদালত পবন ও বিনয়কে চারদিন করে পুলিশি রিমান্ডে দিয়েছেন। মুকেশকে পাঠানো হয়েছে ১৪ দিনের নিরাপত্তা হেফাজতে। বিনয় শর্মার বিরুদ্ধে অভিযোগ সে ধর্ষিতার পুরুষ বন্ধুকে প্রহার করেছে। এ কথা স্বীকার করে বিনয় নিজেকে ফাঁসি দেয়ার আবেদন জানায় আদালতে। পবনও জড়িত থাকার কথা স্বীকার করেছে। কিন্তু ঘটনার মূল আসামি রাম সিংয়ের ভাই মুকেশ অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

পাত্রী চাই-অভিনব বিজ্ঞাপন বৃদ্ধের


বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজার প্রচলিত নিয়মগুলো (পত্রিকায় বিজ্ঞাপন, আত্মীয় বা ঘটকের মাধ্যমে খোঁজা) বাদ দিয়ে অভিনব এক পদ্ধতি অবলম্বন করেছেন ৮২ বছর বয়সী বৃটিশ স্যান্ডি ম্যাককুলখ। ‘একজন স্ত্রী প্রয়োজন (ওয়ান্টেড এ ওয়াইফ)। আগ্রহী প্রার্থীকে অবশ্যই ষাটোর্ধ্ব, বইপ্রেমী ও কৌতুক-রসাত্মক হতে হবে’। ইংরেজি    পৃষ্ঠা ৫ কলাম ৫
বড় হাতের অক্ষরে লেখা প্ল্যাকার্ডটি গলায় ঝুলিয়ে নিজ মনে কাজ করে যাচ্ছেন। একই সঙ্গে প্রেয়সীর জন্য দৃষ্টি আকর্ষণ করছেন সবার। প্রথম দেখে কৌতুক মনে হলেও ম্যাক বলছেন, এটা কোন কৌতুক নয়। সত্যিকার অর্থেই নিজের জন্য পাত্রী খুঁজছেন। তিনি জানান, মানুষ ২০-২৫ বছর বয়সে বিয়ের জন্য পাত্রী খোঁজেন। তবে আমি চাইছি একটা সাহচর্য। প্রথম জীবনে বয়স মাত্র ৪০ বছর হওয়ার আগেই তিনটি বিয়ে করেন ম্যাক। একে একে সব স্ত্রীই তাকে ডিভোর্স দিয়ে চলে যান। ফলে এখন তিনি খুবই সতর্ক। এক সময়ে বিশ্ব ভ্রমণ করা ম্যাক পুরনো ভুল আর করবেন না বলে জানান। যৌবনকালে বেশি আবেগপ্রবণ ছিলেন। কিন্তু এখন তিনি জানেন সম্পর্ক রক্ষায় কি কি কাজ করা উচিত। ডেইলি মেইলকে ম্যাক জানান, নিজের জন্য একটি পাত্রী খুঁজে পাচ্ছিলেন না বহুদিন ধরে। গত মাসে সামারিটান আঞ্চলিক মেডিকেল সেন্টারে সাদা চুলের এক বৃদ্ধ স্বেচ্ছাসেবী তাকে অভিনব এই পদ্ধতি অবলম্বনের পরামর্শ দেন। পরে একই বয়সী আরেকজন স্বেচ্ছাসেবীও একই পরামর্শ দিলে বিষয়টি মনঃপূত হয় তার। স্বেচ্ছাসেবীরা তাকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, কি সহায়তা প্রয়োজন। জবাবে একজন স্ত্রী দরকার জানালে স্ত্রী খুঁজে নেয়ার অভিনব পদ্ধতিটি বাতলে দেন তারা। পরে নিজের সাদামাটা পছন্দ বইপ্রেমী ও কৌতুকপ্রেমী স্ত্রী খুঁজতে পরামর্শমতো গলায় প্ল্যাকার্ড ঝুলিয়ে দেন ম্যাক। বৃটেনের বার্ভালিসে বাস করা বই বিক্রেতা ম্যাক জানান, তার অভিনব বিজ্ঞাপনে সাড়া পড়েছে। বিভিন্ন বয়সের নারীরা তার সঙ্গে কথা বলা শুরু করেছেন। স্ত্রী খুঁজে পেতে সহায়তা করার আশ্বাস দিয়েছেন অনেকে। অনেকে ম্যাকের সঙ্গে ছবি তুলছেন। এর মধ্যে দুই মহিলা তার সঙ্গে নিয়মিত লাঞ্চ করতে আসার ওয়াদা দিয়েছেন। তবে কি একাধিক হবু স্ত্রী বাজিয়ে দেখতে চাইছেন বিশ্বভ্রমণকারীকে। বর্তমানে টুকটাক গল্প লেখা ও বই বিক্রি করে বেশ আয় হয় তার। ফলে সংসার চালাতে কোন সমস্যা নেই। আধুনিক যুগের ম্যাক প্রাচীন নিয়মে বিশ্বাস করেন। ফলে লেখালেখি হাতেই করেন। বাকি জীবনও চ্যাট নয় গল্প করেই হবু স্ত্রীর সঙ্গে জীবন কাটাতে চান তিনি।

Monday, December 17, 2012

বহু পুরুষের সঙ্গে সম্পর্ক, মেয়ে বললো- পুরুষখেকো


বৃটিশ ভারতের সর্বশেষ ভাইসরয় লর্ড লুইস মাউন্টব্যাটেনের স্ত্রী এডুইনা মাউন্টব্যাটেন। বহু পুরুষের সঙ্গে ছিল তার প্রেম ও শারীরিক সম্পর্ক। সম্পর্ক ছিল স্বাধীন ভারতের প্রথম প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সঙ্গেও। এটি গোপন কোন বিষয় ছিল না। পরিবারের স্বামী-কন্যাসহ সবাই জানতো তার এমন বিচিত্র সম্পর্কের কথা। দেখে নিজের মাকে ‘পুরুষ শিকারি’ বলে উল্লেখ করেছেন এডুইনার মেয়ে পামেলা মাউন্টব্যাটেন। সমপ্রতি মাকে নিয়ে নিজের লেখা স্মৃতিকথাতে বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে মায়ের সম্পর্ক, পারিবারিক বিভিন্ন বিষয় খোলামেলাভাবে তুলে ধরেছেন পামেলা। এতে তিনি বলেছেন, ১৯৩০-এর দশকে লন্ডনে এডুইনা মাউন্টব্যাটেন ছিলেন সেলিব্রেটি দম্পতি। ১৯২২ সালে তাদের বিয়ে হয়। মাউন্টব্যাটেন ছিলেন তৎকালীন বৃটিশ সম্রাটের আত্মীয় ও বিশ্বস্ত অনুচর। নৌবাহিনীর সিনিয়র কর্মকর্তা হিসেবে বেশির ভাগ সময় বাইরে থাকতেন তিনি। এ কারণেই চপল এডুইনা পরপুরুষে আকৃষ্ট হয়ে পড়েন। পামেলা লিখেছেন, এমনিতেই অনেকেই পাণিপ্রার্থী ছিলেন তার মায়ের। তবে সবার স্বপ্ন ভেঙে দিয়ে তাকে বিয়ে করেন মাউন্টব্যাটেন। বিয়ের পর স্বামীর অনুপস্থিতিতে বঞ্চিত সে সব যুবককে সঙ্গ দিয়ে তাদের মনোরঞ্জন করেছেন এডুইনা। তার মেয়ের ভাষায় কমপক্ষে ৫ জন এডমিরাল সব সময় মায়ের সঙ্গ পাওয়ার অপেক্ষায় থাকতেন। তিনি শুধু তাদের সঙ্গে থাকতেন, গাইতেন ও আনন্দ করতেন এমন নয়। তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক করতেন, বিছানায় যেতেন। তরুণ অফিসাররা তার সান্নিধ্যের জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করতেন। পামেলার ভাষায় তার মায়ের ওসব প্রেমিকদের কাছে আঙ্কেলের পূর্ণ ভালবাসা পেতেন তিনি ও তার বড় বোন প্যাট্রিসিয়া। তাদের বাবা বেচারা নৌ অফিসার মাউন্টব্যাটেন এসব দেখেও না দেখার ভান করে থাকতেন। নিজেদের তারকা খ্যাতির কারণে বাইরে এসব পারিবারিক সমস্যা বুঝতে দিতেন না। শেষ পর্যন্ত স্ত্রী’র অন্য মানুষদের সঙ্গে প্রেমের বিষয়টি পূর্ণরূপে জেনে দু’জনে একটি চুক্তিতে আসেন। বাইরে স্বামী-স্ত্রী’র মতো আচরণ করলেও তাদের বিছানা ছিল আলাদা। দু’টি জীবন ছিল সম্পূর্ণ ভিন্ন। অথচ মানুষ জানতো তারা সবচেয়ে আকর্ষণীয় ও সুখী দম্পতি। নিজের মায়ের এমন অনৈতিক কর্মকাণ্ডকে সহানুভূতির দৃষ্টিতেই দেখছেন পামেলা। তিনি লিখেছেন, মায়ের এসব আচরণের কারণ ছিল তার একাকিত্ব। কেবল আনন্দ পাওয়ার জন্য ক্রমান্নয়ে নৌ অফিসারদের প্রতি নির্ভরশীল হয়ে পড়েন তিনি। কারণ তিনি তখন ছিলেন কেবলই ২১ বছর বয়সী এক নববধূ। যার স্বামী কর্তব্য পালনে দূরে অবস্থান করছিলেন। তবে পরক্ষণেই পামেলা লিখেছেন, নির্ভরশীল হয়ে পড়া কয়েকজন নৌ-কর্মকর্তার সঙ্গে গভীর প্রেমে জড়িয়ে গিয়েছিলেন তার মা। তাদের মধ্যে বান্নি ফিলিপস নামের এক অফিসারের সঙ্গে একাধিকবার এডভেঞ্চারে আফ্রিকা, এশিয়া, চীনসহ অনেক দেশে বেড়াতে গেছেন। বান্নি ছিলেন সুদর্শন ও চিত্রাকর্ষক। ফিলিপসের উপর এতো বেশি নির্ভরশীল ছিলেন এডুইনা, যে মেয়ে পামেলা বাবার সব আদর সোহাগ পেয়েছেন তার কাছ থেকেই। এমনকি নিজের মেয়ের মতো স্কুলে নিয়ে যাওয়া, চা খাওয়ানো সব কাজই পামেলার জন্য করতেন মায়ের প্রেমিক ফিলিপস। ১৯৩৯ সালে যখন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের কারণে তার প্রেমিক এসব অফিসার বিভিন্ন দেশে চলে যান তখন অনেক বেশি মর্মাহত ছিলেন এডুইনা। এমনকি ফিলিপসের বিরহে ভেঙে পড়েন তিনি। নাওয়া-খাওয়া, কথাবার্তা পর্যন্ত ছেড়ে দেন। সে সময় মাউন্টব্যাটেনকে পাঠানো হয় ভারতের সর্বশেষ ভাইসরয় হিসেবে। সঙ্গে স্ত্রী এডুইনা ও মেয়েদের নিয়ে ভারতে আসেন তিনি। ভারতে এসেও অনেকের সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েন এডুইনা। এ সময় রাজনীতিক থেকে শুরু করে উচ্চপদস্থ স্বদেশী কর্মকর্তাদের সঙ্গে তার সম্পর্ক হয়। তবে সবচেয়ে আলোচিত সম্পর্ক ছিল স্বাধীন ভারতের প্রধান প্রধানমন্ত্রী পণ্ডিত জওহরলাল নেহরুর সঙ্গে। পণ্ডিতজীর সঙ্গে তার গভীর সম্পর্ক তৈরি হয়। পামেলা লিখেছেন, তাদের মধ্যে বোঝাপড়া ছিল ভালো। এডুইনা নেহেরুকে নিজের সঙ্গী ও সমচিন্তক মনে করতেন। এক সঙ্গে তারা অনেক সময় কাটাতেন। ভারতে এসে স্ত্রীকে কোন বাধা দেননি মাউন্টব্যাটেন। এর কারণ ছিল স্ত্রীর উচ্ছৃঙ্খলতা কমে যাওয়া ও নেহরুর প্রতি অগাধ বিশ্বাস। এ সময় অনেকবার এমন হয়েছে এডুইনা, মাউন্টব্যাটেন, পামেলা ও নেহেরু একসঙ্গে হাঁটছেন। তবে পামেলা ও মাউন্টব্যাটেন থাকতেন সামনে। আর পেছনে খোশগল্পে মগ্ন হয়ে পাশাপাশি হাঁটতেন এডুইনা-নেহরু। পামেলা লিখেছেন- তারা এতো মগ্ন থাকতেন যে, আমি ও বাবা ইচ্ছা করে পেছনে চলে গেলেও তারা টের পেতেন না। এডুইনা-নেহরুর অনেক চিঠি পামেলার হাত হয়ে যেতো। তাই তিনি বুঝতে পারেন তাদের মধ্যে কেমন গভীর সম্পর্ক ও ভালোবাসা ছিল। ভারত স্বাধীন হওয়ার পর লন্ডনে ফিরে গিয়েও নেহরুর সঙ্গে তার যোগাযোগ ছিল। ১৯৬০ সালে ৫৮ বছর বয়সে মারা যান এডুইনা। এতো কিছুর পরও স্ত্রীর প্রতি ভালোবাসা কমেনি মাউন্টব্যাটেনের। তাইতো স্ত্রীর মৃত্যুতে কান্নায় ভেঙে পড়েন তিনি।

ভারতে ধর্ষিতারা মুখ খুলছে...

 অন্যসব দেশের মতোই ভারতেও ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর বিষয়টিকে লুকিয়ে চেপে যাওয়ার রেওয়াজ রয়েছে। বিশেষত গ্রামাঞ্চলে বিচার না চেয়ে ধর্ষণের ঘটনা ধামাচাপা দেয়ার প্রচলন বেশি। কারণ এতে ধর্ষিতাকে অবমাননাকর পরিস্থিতিতে পড়তে হয়। সবাই হেয় করে। এমনকি বিয়ে পর্যন্ত হয় না। ফলে মেয়ের ভবিষ্যতের কথা বিবেচনা করে পিতা-মাতাসহ সব আত্মীয়-স্বজন বিচার না চেয়ে চেপে যেত ধর্ষণের ঘটনা। তবে সমপ্রতি হরিয়ানায় একটি গণধর্ষণের ঘটনা প্রকাশ হওয়ার পাল্টে যাচ্ছে এই চেপে যাওয়ার মানসিকতা। হরিয়ানার ঘটনাটি ছিল খুবই হৃদয় বিদারক। মাত্র ১৬ বছর বয়সী দলিত শ্রেণীর হাইস্কুল পাস একটি মেয়েকে পর্যায়ক্রমে গণধর্ষণ করেছে আট দুর্বৃত্ত। দীর্ঘ ৩ ঘণ্টা নিপীড়ন চালায় মেয়েটির উপর। ভিডিও করে রাখে দৃশ্যটি। ধর্ষণের পর তাকে হুমকি দেয়া হয় কাউকে বললে হত্যা করে ফেলবে। মেয়েটিও চুপ করে থাকে সম্মানের ভয়ে। এরই মধ্যে ভিডিও ক্লিপটি ছড়িয়ে দেয় দুর্বৃত্তরা। এটি দেখে ক্ষোভে অপমানে আত্মহত্যা করে মেয়েটির বাবা। তারপরই আলোচনায় আসে বিষয়টি। বিচারের দাবি জানায় দলিত সমপ্রদায়। ভিকটিমের মা বলেন, আমরা দেখলাম স্বামীকে হারিয়ে সম্মান হারিয়েছি আমাদের আর সম্মান হারানোর কিছুই নেই। ফলে চুপ থেকে লাভ কি। ভারতের বিভিন্ন রাজ্যে এভাবেই উচ্চবর্ণের হিন্দুদের হাতে দলিত ও সংখ্যালঘু সমপ্রদায় ধর্ষণ ও নিপীড়নের শিকার হয়ে আসছে। গত ৫ বছরে ধর্ষণের হার উদ্বেগজনকভাবে ২৫ ভাগ বেড়ে গেছে। গায়ে পড়ে প্রকাশ্যে রাস্তায় মেয়েদের উপর নিপীড়নের মতো ঘটনা ঘটে চলেছে। হরিয়ানা সরকারি দল কংগ্রেসের একজন মুখপাত্র বলেন, ৯০ ভাগ ধর্ষণের মতো ঘটনা প্রথমে স্বেচ্ছায় ঘটছে। ফলে তারা মেয়েদের বিয়ের বয়স ১৬ করার পক্ষে। এতে মেয়েরা তাদের চাহিদা স্বামীর সঙ্গে শেয়ার করলে ধর্ষণের মতো ঘটনা কমবে বলে জানান তিনি। হরিয়ানায় ধর্ষণের শিকার হওয়ার ঘটনা অনেক বেশি। আর এতে সবচেয়ে ঝুঁকিতে আছেন দলিত শ্রেণীর মেয়েরা। সর্বশেষ ১৯টি ধর্ষণের ঘটনায় ৬টির ভিকটিম দলিত শ্রেণীর। এতদিন মান-সম্মানের ভয়ে তাদের চুপ থাকাকে সুযোগ হিসেবে নিয়ে আসছিল সুযোগ সন্ধানী দুর্বৃত্তরা। এখন পরিস্থিতির পরিবর্তন হচ্ছে। সর্বশেষ গণধর্ষণের শিকার মেয়েটি সবাইকে সাহস যোগাচ্ছে নির্যাতনের বিরুদ্ধে মুখ খোলার জন্য।
ধর্ষণের শিকার হওয়ার পর এখনও পড়ালেখা চালিয়ে যাচ্ছে সে। সে বলেছে, আমি আমার স্বপ্ন হারিয়েছি। বাবার ইচ্ছা ছিল ডাক্তার বানানোর। এখন সেটা পূরণ করতে পারবো কিনা জানি না। ধর্ষণের বিরুদ্ধে চুপ করে না থেকে মুখ খুলে প্রতিবাদ ও ন্যায় বিচারের দাবি করার পথে উৎসাহী করার জন্য অনেক সংস্থা কাজ করে যাচ্ছে। এর মধ্যে অল ইন্ডিয়া ডেমোক্রেটিক ওমেন এসোসিয়েশনের জাগমতি বলেন, তারা অপরাধ ও অপরাধীকে নিয়ে মানুষের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে।