Tuesday, September 18, 2012

ওয়েবক্যামে ব্লাকমেইল

ওয়েবক্যামে ডেটিং নিয়ে নানা সমালোচনা। কেউ বলেন, এর মাধ্যমে অসৎ সম্পর্ক গড়ে উঠছে। সরাসরি অসামাজিক কর্মকাণ্ডে মেতে উঠছে যুব সমাজ। তবে অন্য একটি চিত্রও আছে, তা হলো- ওয়েবক্যাম ব্যবহার করে প্রতারণার ফাঁদ পাতা হচ্ছে। এই ফাঁদে ফেলে হাসিল করা হচ্ছে অসৎ উদ্দেশ্য। অনেক সুন্দরী এমন প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছেন। আবার অনেক পুরুষ সুন্দরী বান্ধবীর ফাঁদে পড়েছেন। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সুফলও মিলছে। ওয়েবক্যামে দেখাশোনার মাধ্যমে সাত সমুদ্র তের নদীর পাড়ের কোন সুন্দরীর সঙ্গে বিয়ে হয়ে যাচ্ছে তার পছন্দের পাত্রের। ইত্যকার গল্প আছে এ নিয়ে। তবে সমপ্রতি বিবিসি এক প্রতিবেদনে জানিয়েছে, সুন্দরীরা প্রেমের ফাঁদ পাতছে ওয়েবক্যামে। তার ফাঁদে পা দেয়া পুরুষের কাছে দাবি করা হচ্ছে অর্থ। তা দিতে না পারলেই তাকে ফাঁসিয়ে দেয়া হচ্ছে। এমন ঘটনা ফ্রান্সে ঘটছে হরহামেশা। ফ্রান্সের আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীরা বলেছেন, তাদের কাছে এমন ঘটনা প্রায়ই আসে। কিন্তু বাস্তবে এর হার অনেক বেশি। সমপ্রতি ২৮ বছর বয়সী এক যুবক এমন এক প্রতারণার ফাঁদে পা দিয়েছিলেন। তিনি নিজের অভিজ্ঞতা বর্ণনা করে বলেন, অনলাইনে আমি ডেটিং করছিলাম। তখন একটি মেয়ে আমাকে একটি বার্তা পাঠায়। তার এ বার্তা পেয়ে আমার খুব ভাল লেগেছিল। সে আমাকে জানিয়েছিল তার বাড়ি ফ্রান্সের একটি বড় শহরে। তবে ওই সময়ে সে ফ্রান্সে ছিল না। ছুটি কাটাতে গিয়েছে আইভরি কোস্টে। চ্যাটিংয়েই আমাদের পরিচয় হয়। আমরা অনেকক্ষণ চ্যাট (আড্ডা) করি। সে আমাকে তার ভিডিও দেখায়। তাতে তাকে অদ্ভুত সুন্দরী দেখতে পাই। সে আসলেই খুব সুন্দরী ছিল। সে আমাকে প্রস্তাব দিল। জানতে চাইল আমি এ সম্পর্ককে আরও সামনে এগিয়ে নিতে চাই কিনা। আমি প্রথমে বুঝতে পারিনি সে আমাকে বিবস্ত্র হয়ে শরীর দেখাতে বলছে। আমি কিছু বলার আগেই সে আমার সবকিছু দেখতে চায়। এ সময় সে দ্বিতীয় ভিডিওটি চালায়। সেখানে তাকে দেখা যায় অন্য চেহারায়। সে আস্তে আস্তে সব কাপড় খুলে ফেলতে থাকে। এতে আমি হতবাক হয়ে যাই। আসলে এটা যে আমাকে প্রতারণার ফাঁদে ফেলা তা আমি বুঝতেই পারিনি। আমি ধরে নিয়েছিলাম, সে বুঝি সত্যি সত্যি সম্পর্ক গড়তে চায় আমার সঙ্গে। এরপর ৫ মিনিট কেটে যায়। সে আমাকে আরেকটি বার্তা পাঠায়। তাতে লেখা- আমি তোমার ভিডিও ধারণ করেছি। তা একবার দেখ। যদি এই ভিডিও’র প্রচার আটকাতে চাও তাহলে এখনই আমার একাউন্টে ৫০০ ইউরো পাঠাও। সে আমাকে হুমকি দিতে থাকে। বলে শিগগিরই অর্থ না পাঠালে ভিডিওটি সে ইউটিউবে প্রচার করে দেবে। তিনি বলেন, ওই সুন্দরী আমার যে ভিডিও ধারণ করেছে তাতে আমাকে পরিষ্কার চেনা যাচ্ছে। আমাকে যে হুমকি দেয়া হয়েছে তাতে এরকম অনেক ভিডিও রয়েছে। তাতে দেখা যায়- সে প্রতারিত পুরুষের ব্যক্তিগত তথ্য জুড়ে দিয়ে তার বিরুদ্ধে যৌন হয়রানির অভিযোগ আনে। ফ্রান্সের সাইবার অপরাধ বিশেষজ্ঞ ভিনসেন্ট লিমোইর জানিয়েছেন এ ধরনের ঘটনা দিন দিন বাড়ছে। অনেক ক্ষেত্রেই মান সম্মানের ভয়ে প্রতারিত ব্যক্তি তা প্রকাশ করেন না। এরকম ওয়েবক্যামে ব্লাকমেইলের শিকার পুরুষরা তাই চোখমুখ বন্ধ করে সহ্য করেন সব। আবার কোন সময় অর্থ দিয়ে কোনমতে রক্ষা পান। প্রতারকরা নিজেদের বিভিন্ন নামে পরিচয় দেয়। তারা কখনও পুলিশ, কখনও ইন্টারপোলের সদস্য কখনও ফরাসি পুলিশ পরিচয় দেয়। এর পর অর্থ ছাড়ের হুমকি দিতে থাকে। পর্নোগ্রাফির অভিযোগ আনে। তাদেরকে ধরে নিয়ে বিচার করার ভয় দেখায়। শেষ পর্যন্ত অনেক প্রতারিত মানুষ আত্মহত্যা করতে বাধ্য হয়। ফ্রান্সের ‘লা মন্ডের’ পত্রিকা লিখেছে, অনেকেই প্রতারণার এ বিষয়টি ধরতে পারেন না। শুরুতে তারা বিষয়টিকে হালকাভাবেই নেন। ‘লা মন্ডের’ সাংবাদিক লরি বেলট জানান, ল্যাপটপ বা কম্পিউটারের ওয়েবক্যামের সামনে কাপড় খোলার ঘটনা আমরা নির্বোধ লোকের কাজ বলে মনে করতে পারি। কিন্তু ভুললে চলবে না, আমাদের সমাজ একাকিত্বের সমাজ। অনেকেই রাতের বেলা তাদের ঘরে একা থাকেন। তার সঙ্গে থাকে ইন্টারনেটযুক্ত কম্পিউটার। আমাদের একাকিত্বের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে অনলাইন ডেটিংয়ে এ ধরনের প্রতারণা বাড়ছেই। যে ব্যক্তি এ ধরনের প্রতারণার শিকার হন তার উচিত কাছের মানুষের কাছে তা খুলে বলা। কারণ একাকী এ ধরনের ঘটনায় বিষণ্নতা ও উদ্বেগ বাড়াতে পারে। এ ধরনের ঘটনা তরুণদের ক্ষেত্রে সবচেয়ে ঝুঁকির। তাই তাদের সচেতনতা জরুরি। কর্নেল ইউনিভার্সিটি ও ইউনিভার্সিটি অব উইসকনসিন-ম্যাডিসনের গবেষকরা জানিয়েছেন, অনলাইন ডেটিং মানেই মিথ্যার বেসাতি। ডেটিং সাইটগুলোতে যে তথ্য দেয়া থাকে, তাতে প্রকৃত তথ্যের চেয়ে মিথ্যাই থাকে বেশি। গবেষকরা অনলাইনে ডেটিং সাইট ব্যবহার করেন এমন ৭৮ জনের প্রকৃত তথ্য এবং তাদের আলাদা চারটি অনলাইন ডেটিং সাইটে দেয়া বয়স, উচ্চতা ও অন্যান্য তথ্য তুলনা করে দেখেছেন, সেখানে মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে। বিস্তারিত লেখার বদলে সেখানে সংক্ষিপ্ত আকারে তথ্য দেয়া হয়েছে বা আসল তথ্য দেয়ার পরিবর্তে ঘোরানো-প্যাঁচানো কথা সাজানো হয়েছে। গবেষকরা দেখেছেন, ৬৫ শতাংশ ক্ষেত্রেই মিথ্যার আশ্রয় নেয়া হয়েছে।

No comments:

Post a Comment